প্রিয় তুই,
আমি জানতাম, তোর আর কখনও ফেরা হবে না,
এক জনমে বৃষ্টির জল যেমন,
কখনও ফেরে না ঝরে পড়া মেঘে।
অতলে ডুববার নেশায় যার ঢুলুঢুলু আত্মা,
তার ফিরে আসবার পথে থাকে লাগাতার অবরোধ,
আমি জানতাম, আমরা আমাদের ঠিকই ভুলে যাব একদিন!
নিউরন খেকো ঘুগরো পোকারা ঝিঁঝি ডাকা রাতে
বসাবে ভোজ, ভেজাবে গলা আমাদের ফারমেন্টেড স্মৃতিরসে।
জীবনের মহুয়া মায়া, কামনার জলজ তরী,
এক শঙ্খনীল সৌরঝড়ে, দাঁড় টেনে এলোমেলো পালে,
পথহারানো ক্যানভাসে হাঁপ ছাড়ে ক্লান্ত কাপ্তান।
জল পরীদের তৃষ্ণা নেই, তবু ওর চোখ ভেসে যায় জলে,
জলপরীদের ডানা থাকে না, তবুও ওর চোখে বাজে নূপুরের স্বপ্ন!
আমি জানতাম, ঘুম ভেঙ্গে আর তোর ঘুম রাঙ্গা চোখ দেখা হবে না,
তুই জানতি, তোর জন্য আর আমার মেলায় গিয়ে আলতা কেনা হল না,
তোর কি এখন আর রুদ্রাক্ষ ভোরে বৈশাখী আগুনে জ্বলতে ইচ্ছে করে না?
বাঁশিটা অনেক পোড়ায় জানিস,
ওর কপালে আর কেউ টিপ এঁকে দেয় নি,
ওর মেঘে কেউ পরিয়ে দেয় নি,
রংধনু রেশমী চুরির আদর।
বহুদিন হয়ে গেল,
তোকেও আর কেউ আমার মত দুঃখ দিয়ে,
কেটে ছিড়ে চুর চুর উড়িয়ে দিলো না,
ঘন ঘোর বাউন্ডুলে বাউলা বাতাসে!
আর কি কখনও নদী হবি না?
তুই তো জানিস আমার বুকে সাজিয়ে রাখা ধু ধু বালু চরের অপেক্ষা!
তোর বুকের অন্ধকারে মখমল সুরভিত শয্যায়,
সেই যে হাড় কাঁপানো হিমে, এক বিকাল উষ্ণতার খোঁজে,
আমরা জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম শহরের গোটা উদ্যান।
শুধু তুই, - তোর আঁচলের কোনা ছিড়ে দিয়েছিলি বলে,
তখন আমি তোর হাতে হাত ঘসে আগুন জ্বালাতে জানতাম!
মেঘেদের যদি জন্ম আকাশের অশ্রু হয়ে ঝরবে বলে,
পোড়া যে কাজল কালিমা, সেও তোর চোখে মায়া হল চন্দ্র প্রতাপে,
যার কেউ থাকে না, তারও থাকে নিঃসঙ্গতার গান,
রাঁধাচূড়া রাত্রির লালসালু জোছনায়,
কামনার সন্তুর, যুগলবন্দী কিউপিড কামনীল মুর্ছনায়,
তোর বেঁচে উঠবার প্রতিটি ভোরে,
দেখিস তুই, তোর দলে চলা ঘাসফুলে ঘাসফুলে,
শিশিরের মত এক ফোঁটা দুঃখ হয়ে,-
আমি জেগে থাকবো!
আমি জেগে থাকবো!
আমি জেগে থাকবো!
ইতি,
আমি!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২