somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমকামিতা এবং আমাদের পুজিবাদী-ভোগবাদী সমাজ ও চিন্তাধারা

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমেরিকাতে সমকামী বিবাহের বৈধতা দিয়ে বিল পাশ হয়েছে। ব্যাস, ওমনি হৈহৈরৈরৈ পরে গেল। ভালোবাসার জয়জয়কার আর রংধনুর ছড়াছড়ি। যারা এ নিয়ে এত মাতামাতি করছে এদের সবাই-ই উদার এবং প্রগতিশীল চিন্তাধারার লোক হিসেবে পরিচিত, অথবা কিঞ্চিত বাম ঘরনার। সেক্সচুয়াল মাইনোরিটির দোহাই দিয়ে চলছে সমকামীতার পক্ষে লড়াই। অথচ সবাই বেমালুম ভুলে গেছে যে এইটা আসলে আমেরিকা -- যে আমেরিকা মানবাধিকার লঙ্গন করেছে বহুবার, সামান্য অজুহাতে আক্রমন করেছে অনেক দেশে, এবং এই সেদিনও যে দেশে পুলিশের গুলিতে "কালো মানুষে"র মৃত্যু হয়েছে।

সমাকামিতার পক্ষে বার বার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণের দোহাই দেয়া হলেও আদপে কি এতে ভোগবাদী চিন্তাধারাই চরমভাবে প্রকাশ পাচ্ছে না? জেনেটিক কিংবা হরমনাল কারণে সমকামী হওয়ার বিষয়টা কতটা অকাট্টভাবে প্রমাণিত আমার ঠিক জানা নেই। তবে সাধারণভাবে বলা হচ্ছে অধিক সন্তান ধারণ-ক্ষমতা-সম্পন্ন নারীদের একটা বিশেষ জিন নাকি এ আচরণের জন্য দায়ি, তাদের তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে এটা প্রকাশ পায়। সে হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থা বিবেচনায় দেশে সমকামীতে ভরে যাওয়ার কথা! মজার ব্যাপার হল, যমজ সন্তান যাদের জেনেটিক গঠন হুবাহু এক, তাদের ক্ষেত্রে উভয়ে সমকামী হবার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ জিনগত কারণে সমকামী হবার বিষয়টা নিয়ে এখনো সন্দেহ আছে।

হরমোনের সমস্যা কিংবা এক্স-ক্রোমোজোমের ডিফেক্ট হলে অনেক সময় ছেলেদের মেয়েলী আচরণ আর মেয়েদের ছেলেদের মত আচরণ প্রকাশ পেতে পারে। তাদের প্রাইমারী সেক্সচুয়াল বৈশিষ্ট্য (অর্থাৎ যৌনাঙ্গের গঠন) হয়তো কিছুটা দুর্বল হতে পারে, সেকেন্ডারী বৈশিষ্ট্য (আচরণগত) অতটা উন্নত হয় না। খুব সম্ভব এটাকেই সমকামিতার কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু ডিফেক্টের কারণে তাদের স্বাভাবিক যৌন-জীবন একেবারে ব্যাহত হচ্ছে না। আমাদের সমাজে এ ধরণের মানুষ আমরা সহজেই খুজে পাই। এরা অনেক সময়য় হাসির খোরাকও যোগায়। ওই মানুষগুলো কি দিব্যি বিয়ে-থা করে সংসার চালাচ্ছে না? তাদের তো সমকামী হবার দরকার পরে নি!

এবং এ কারণেই সমকামিতাকে পুজিবাদী-ভোগবাদী চিন্তাধারার বাইরে প্রাকৃতিক কোন বিষয় ভাবতে আমি নারাজ। সমকামী আচরণের সাথে নিশ্চিতভাবে শারিরীক সম্ভোগের ব্যাপারটাকেই মূল্য দেয়া হচ্ছে বেশি। সমকামী পুরুষেরা নিজের পছন্দ মত কোন স্বাভাবিক পুরুষকেও নিজের কাছে টানার চেষ্টা করবে, কামনা করবে, সিডিউজ করবে -- সমকামিতা নিয়ে গড়ে উঠবে বিশাল পর্ণ-সাইটের বাজার, নিত্য-নতুন সিনেমা তৈরি হবে, সেগুলো বড় বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভুষিত হবে, সমকামী মানুষের ব্যবহার্য নিয়ে নিত্য-নতুন পণ্যের বাজার সৃষ্টি হবে, পাশাপাশি আরো মানুষকে সমকামিতার ফ্যাশনে ডুকানোর চেষ্টা চলবে। ব্যস, সবাই খুশি!

অথচ সেক্সচুয়াল মাইনোরিটি হিসেবে নিগৃত গোষ্ঠী আসলে হিজড়ারা। হিজড়াদের এমনকি পারিবারিক স্বীকৃতিও নেই, পিতা-মাতা তাদের স্নেহের সাথে আপন করে নিতে পারে না, সমাজে কন সম্মান-জনক কাজ পায় না, সাধারণ মানুষ তাদের ঘৃণার চোখে দেখে, কাছে ভিড়তে দেয় না, ছোয়া লাগা তো দূরের ব্যাপার, পারিবারিক বন্ধন নেই কিছুই নেই। তারা অনেক কিছু থেকেই আজীবন বঞ্চিত রয়ে যায়।

এই হিজড়াদের নিয়ে সেই তথাকথিত উদার মানুষগুলোর কিছু করার নেই, তারা এদের পক্ষে কোন আন্দোলনে দাঁড়ানোর সময়য় পায় না, তাদের জন্য কেউ ফেসবুকে রঙ মাখে না, তাদের পক্ষে এত এত লেখা প্রকাশ পায় না, আইন পাশ হওয়া নিয়ে বিপুল হইচই হয় না, হয়তো দু'একটা স্বাগতম জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করে। আদপেই হিজড়া ইস্যু নিয়ে ব্যবসা ফাদার পথ তেমন নেই। শারিরীক সম্ভোগের কোন ব্যাপার নেই, ভোগবাদের কাছে তাই তারা মূল্যহীন।

এ কারণেই যেই প্রেমের জয় নিয়ে এত মাতামাতি, রঙ মাখামাখি, সেই প্রেমটা মানবিক আর থাকল না, বরং একেবারে চাছাছোলাভাবে শারিরীক এবং বস্তুগতই থেকে গেল। এবং হটকারী মনভাবের কিছু লোক না বুঝে না ভেবেই এই বস্তুগত বিষয়টাকেই পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে গেল। আফসোস!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×