somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর্গো, সত্য, মিথ্যা, আতংক আনন্দ!

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিখেই ফেললাম একটা রিভিউ। কমেন্ট এই দিতাম। কিন্তু কমেন্টে নাকি ৮,০০০ এর বেশী ওয়ার্ড দেয়া যায় না। :D

Argo, এ বছর অস্কার পাওয়া সেরা মুভি। বেন অ্যাফ্লেক আবারো তার অসাধারণ পরিচালনার পরশ দিয়ে গেলেন। ২০০৭ এ gone baby gone এবং ২০১০ এ The Town এও আমেরিকান এই পরিচালক প্রতিভা দেখিয়েছিলেন। স্ক্রীন রাইটার হিসেবে তার কথা আর বলতে হবে না যদি আপনি Good Will Hunting দেখে থাকেন। কথা না বাড়িয়ে Argo এর ব্যবচ্ছেদ শুরু করা যাক।

Argo ছবিটি কিসের উপর বানানো সেটা বলার আগে এর প্রি প্রোডাকশনের কথা বলে নেই। ছবিটি প্রডিউস করেছেন গ্রান্ট হেসলভ (ট্রু লাইস এর ফয়সাল, কিংবা দ্যা স্কর্পিয়ন কিং এর আর্পিড), জর্জ ক্লুনি এবং বেনজামিন গেজা অ্যাফ্লেক বোল্ডট ওরফে বেন অ্যাফ্লেক। আর্গো মুভিটি তৈরী করা হয়েছে ক্যানাডিয়ান ক্যাপার এর উপর ভিত্তি করে, ঘটনা ঘটেছিলো ১৯৭৯-৮০ এ, এর ইরান হস্টেজ ক্রাইসিস এর সময়। আমেরিকান ফিল্ম ডিরেক্টর এবং লেখক ক্রিস টেরিও (২০০৫, Heights) এই মুভির চিত্র নাট্য লিখেছেন, প্রয়াত এলএ টাইমস এর স্টাফ রাইটার এবং সম্পাদক জসুয়া বারম্যান এর Wired ম্যাগাজিনে লেখা How the CIA Used a Fake Sci-Fi Flick to Rescue Americans from Tehran আর্টিকেলের (এপ্রিল ২৪, ২০০৭) উপর ভিত্তি করে। সি আই এ তাদের আর্গো সম্পর্কিত কাগজ পত্র ডি ক্লাসিফাইড করে দেয়ার পর এটা লেখা হয়। প্রডিউসার ক্লুনি, গ্রান্ট এবং ডেভিড ক্লওয়ান এই আর্টিক্যাল নিয়ে একটি মুভি বানানোর চিন্তা ভাবনা করে। বেন কিন্তু তখনো এই প্রজেক্টের সাথে জড়ায় নি। ২০১১ তে এসে তিনি এই প্রজেক্টে যুক্ত হন (Affleck in talks to direct 'Argo' by Dave McNary, Thu., Feb. 3, 2011, Variety)। ঐ বছর জুনেই অ্যালান আর্কিন কে প্রথম কাস্ট করা হয়, বাকি সব রোল কাস্ট শেষ হবার পর ২০১১'র অগাস্টে লস অ্যান্জেলসে শুটিং শুরু হয়। শুটিং কিছু কাজ ধারণ করা হয় ম্যাকলিন, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি এবং ইস্তানবুল এ (Sept. 12, 2011, upi.com)।

প্লটঃ
৪ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে, আয়াতুল্লাহ খোমেনীর মিলিশিয়া বাহিনী তেহরানে ইউএস এম্বাসী তে হামলা চালায়, ইরানে সি আই এর ইনভল্ব থাকার কারণে। ৫০ এর বেশী কর্মকর্তা কর্মচারী কে তারা আটক করে। কিন্তু এর মধ্যে ৬ জন ভাগ্যক্রমে পালিয়ে যেতে পারে। তারা অনেক জায়্গায় ঘুরে বেড়ায়, শেষে ক্যানাডিয়ান এম্বাসি তাদের সাহায্য করতে রাজী হয়। ক্যানাডিয়ান এম্বাসেডর কেন টাইলার (মুভিতে ভিক্টর গার্বার) তাদের নিজের বাসায় আশ্রয় দেন। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট, এই ছয়জনের ব্যাপার্টা গোপন রেখেই কীভাবে তাদের উদ্ধার করে আনা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে থাকে। টনি মেনডেজ (বেন অ্যাফ্লেক), সি আই এর এক্সফিল্টারেশন (শত্রুর বন্দি শালা থেকে বন্দীদের গোপনে উদ্ধার করার উপায়) স্পেসালিস্ট কে নিয়ে আসা হয় এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্যে। ছেলের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে একটা মুভি দেখে সে তাদের উদ্ধার করার একটা উপায় বাতলে ফেলে। মুভিটা ছিলো জে লী থম্পসমের বানানো ১৯৭৩ সালের বিখ্যাত সাই ফাই ব্যাটল ফর দ্যা প্লানেট অফ দ্যা অ্যাপস। সে একটা সাই ফাই মুভি বানাবে, মুভির শুটিং স্পটের জন্যে দরকার মরুভূমি টাইপের জায়্গা। ইরান এর জন্যে উৎকৃষ্ট। সেখানে সে একজন ক্যানাডিয়ান হিসেবে যাবে এবং ঐ ছয় জনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবে।

টনি, তার সুপার ভাইজর ও'ডনেল মেক আপ আর্টিস্ট চেম্বার এবং প্রডিউসার সেইগেল এর সাথে দেখা করেন। স্টার ট্রেক এর আদলে তারা চিত্র নাট্য বানায় এবং টনি এই মুভির পরিচালক হিসেবে ইরানে আসে। ক্যানাডিয়ান এম্বাসি তে ছয় জন হস্টেজের সাথে দেখা করে। তাদের নিয়ে প্লট খুজতে বের হবার উসিলায় সে ইরানের বর্তমান অবস্থা টাও দেখে। দেখে তাকে নিরাশই হতে হয়। এদিকে আমেরিকা থেকে টনি কে জানানো হয় যে মিলিটারি রেস্কিউ মিশন পাঠানো হবে, সে যেন চলে আসে। সরকার আর দেখবে না। কিন্তু টনি সে নিষেধ অগ্রাহ্য করে সেই ছয় জনকে উদ্ধার করে। শেষে যেরকম টান টান ক্লাইম্যাক্স আছে, তা গোটা মুভির উত্তেজনার দ্বিগুন!

যেহেতু এই মুভিটা হিস্টোরিক্যাল ব্যাপার নিয়ে হচ্ছে, তাই মুভিতে বেন এনবিসি, সিবিএস ও এবিসি টেলিভিশনের ঐ সময়কার কিছু আর্কাইবাল ফুটেজ ব্যবহার করেছেন, এবং মুভিটা আশির দশকের প্লটে হবার কারণে যোগ করেছেন ঐ সময়কার কিছু বিখ্যাত গান যেমন রোলিং স্টোনের লিটল টি অ্যান্ড এ, ডায়ার স্ট্রেইটস এর সুলতান অফ সুইং, ভ্যান হেলেন এর ড্যান্স দ্যা নাইট অ্যাওয়ে ইত্যাদি।
এবং আমার ধারণা এই ব্যাপারটাই বেনকে এনে দিয়েছে সেরা এডিটিং এ অস্কার।

এবার একটু কথা বলি আসল ফ্যাক্ট নিয়ে। আসলেই কী এই রকম কিছু ঘটেছিলো। উত্তর হ্যাঁ। তবে ঘটনা মুভির মতো এতো সুন্দর না। ৪ নভেম্বর ঠিকই ইরানে অবস্থিত ইউএস এম্বাসিতে আয়াতুল্লাহ খোমিনীর মিলিশিয়া বাহিনী ঢুকে পড়ে এবং ১০০ জনের মতো লোক ধরে নিয়ে যায়। দুই সপ্তাহ পর ৫৩ জনকে রেখে বাকি সবাই কে ছেড়ে দিয়ে বলা হয়, ইরান থেকে আমেরিকার সব ধরণের গোয়েন্দা নজর দারি তুলে ফেলতে হবে। না হলে এদের খুন করা হবে। জিমি কার্টার ছিলেন তখন ইউএস প্রেসিডেন্ট। তিনি ইরানের সাথে সব ধরণের ইকোনমী স্যাংশান ইম্পোজড করেন এবং ইরানে সব ধরণের ইউএস অ্যাসেটস ফ্রিজ করেন।
এবং এরও বেশ কিছু দিন পর একটা মিলিটারী রেসকিউ মিশন পাঠান, সেই মিশন এর নাম ছিলো অপারেশন ঈগল ক্ল'। এর মধ্যে ঘটে যায় আর্গো এর কাহিনী। কেউ কিছু জানতে পারলো না। সেটা জানা গেলো ২০১২ তে এসে। লাদেন হত্যার কাহিনী নিয়ে লেখা মার্ক ওয়েনের নো ইজি ডে তে এই ব্যাপারে কিছু কথা লেখা আছে। এবং ইউএস নেভীর স্পেশাল ওয়ার ফেয়ার নেভী সীল টিমের উৎপত্তি ঐ ঘটনা থেকেই। যা হোক, আর্গো মিশন ফেল করে ছিলো। কিন্তু ঈগল ক্ল করেনি। ২৪ এপ্রিল ১৯৮০ সালে ৮ টা হেলিকপ্টারে করে ৯০ জন কমান্ডো (সীল টিম) ইরানে যায়। এখানেও পাকিস্তানের মতো কাহিনী ঘটে। বেশ কিছু হেলিকপ্টার নষ্ট হয়, আট জনের মতো হোস্টেজ মারা যায়। কার্টার এর দায়িত্ব স্বীকার করে নেন। যদিও অনেকে মনে করেন এই সুজোগ আমেরিকা পেয়েছিলো কারণ আয়াতুল্লাহ খোমিনী উদারতা দেখিয়েছিলেন তাই। লন্ডন এম্বাসীর মতো প্রতি আধা ঘন্টায় ১ টা মারলে আমেরিকা এদের বাচাতে পারতো কী না সন্দেহ।
এই কারণে অনেকেই আর্গো এর বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনেছিলো। তাতে কিছু এসে যায় না। আর্গো আর্গোই।
রিয়েল লাইফে আর্গো মুভিটা অর্থাৎ সি আই এ ১৯৭৯ এ যে আর্গো মিশনে গিয়ে ছিলো সেটা ছিলো আমেরিকান সাই ফাই ও ফ্যান্টাসি লেখন রজার জিলাজনীর ১৯৬৭ সালের উপন্যাস লর্ড অফ দ্যা লাইট অবলম্বনে। তাছাড়া এই কাহিনী এর আগেও লেমাউন্ট জনসনের বানানো ১৯৮১ সালের টিভি মুভি Escape from Iran: The Canadian Caper এ বলা হয়েছিলো।

পুরষ্কারের ঝুলিটা আর্গোর বেশ ভারী। ৮৫তম অস্কারে আর্গো বেস্ট ফিল এডিটিং, বেস্ট এডাপ্টেড স্ক্রীন প্লে এবং বেস্ট পিকচার এর জন্যে ৩ টা অস্কার জিতেছে, আরো ৭ টা পেয়েছে নমিনী। ড্রামা ক্যাটাগরীতে বেস্ট পিকচার এবং বেস্ট ডিরেক্টর হিসেবে ৫ টা গোল্ডেন গ্লোব পেয়েছে। ৬৬তম ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি ফিল অ্যাওয়ার্ডে বেস্ট ফিল্ম, বেস্ট এডিটিং এবং বেস্ট ডিরেক্টর হয়েছেন।

একনজরে আর্গোঃ
-----------
সালঃ ২০১২
জেনারঃ ড্রামা| হিস্টোরী| থ্রীলার
ভাষাঃ ইংরেজি, পার্সিয়ান
প্যারেন্টাল গাইডেন্স রেটিং : R
পরিচালকঃ বেন অ্যাফ্লেক
প্রোডিউসারঃ জর্জ ক্লুনী, বেন অ্যাফ্লেক, গ্রান্ট হেসলভ
স্টুডিওঃ GK Films, Smokehouse Pictures
পরিবেশকঃ ওয়ার্নার ব্রাদার্স
অভিনয়ঃ Ben Affleck, Bryan Cranston, Alan Arkin, John Goodman
IMDb রেটিং: 8/10 (161301 votes)
রোটেন টমাটো তে-
রোটেন টমাটো মিটার ৯৬% (গড়ে 8.4/10,), অডিয়েন্স ৯৩% (গড়ে 4.3/5, 1,01,399 রিভিউ)
বাজেটঃ $44,500,000
বক্স অফিস: Domestic Total as of Mar. 14, 2013: $134,669,044

Credits and Sources : Wikipedia, Google, The Huffington Post, Reader's Digest from my friend Ashiqul Islam, Box Office Mojo, IMDb, Rotten Tomatoes
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×