somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়ন সূত্র

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়ন সূত্র
প্রাচ্য পলাশ


বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী যুগ প্রবাহমান নেই, এখন তা কেবলই অতীত। একটা দীর্ঘ সময় বাংলা চলচ্চিত্র চরম দূর্দিনে নিমজ্জিত ছিল। বর্তমানে সেই দূর্দিনের কালো খোলস থেকে উত্তরণের পথপরিক্রমায় আমাদের চিত্রজগত। উত্তরণ চেষ্টায় এখন পর্যন্ত যে অর্জন তা নিতান্তই নগন্য। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বাজার গতিশীল করতে বছরে ১০০ ছবি দরকার। এগুলোর মধ্যে অন্তত ৬০টি বিগ বাজেটের রুচিশীল ও উচ্চ গুণগতমান সম্মত হওয়া জরুরি। অন্যথায় অবশিষ্ট সিনেমা হল বা প্রেক্ষাগৃহগুলো বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে। আর তাই এ নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী-কলাকুশলী, প্রযোজক-পরিচালক-পরিবেশক, হল মালিক, চলচ্চিত্র গবেষক এমনকি বাংলা চলচ্চিত্রের সুশীল দর্শকদের ভাবনা সীমাহীন।


বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়ন প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট সকলে এক ও অভিন্ন হলেও উন্নয়নে করণীয় নিয়ে মতভেদ রয়েছে। দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গণকে কেউ কেউ বিএফডিসি ঘরনার ও বিএফডিসি’র বাহিরের- এমন দু’ভাগে (ক্ষুদ্র ক্ষদ্র আরো বিভাজন রয়েছে) বিভক্ত করে দেখেন। এক সময় এ দু’পক্ষের মধ্যে যথেষ্ট কাদা ছুড়াছুড়ি চিত্রজগতে বেশ আলোচিত ছিল। তবে আমার লেখার বিষয়বস্তু ও প্রসঙ্গ কাদা ছুড়াছুড়ির প্রসঙ্গ কেন্দ্রীক নয়।
সম্প্রতি আমার নির্মিত তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত পৃথক তিনটি প্রদর্শনী গত ২৪ জানুয়ারি হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে, গত ৩০ জানুয়ারি গ্রীণ ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ে ও গত ৩১ জানুয়ারি নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়। ইউটিউব ভিত্তিক চ্যানেল প্রাকৃত টিভি আয়োজিত ঘন্টাদীর্ঘ এ প্রদর্শনীতে সচেতনতামূলক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য সানসেট, এ্যান আনফিনিসিড ড্রীম’, ‘নিরবধি’ ও ‘দ্য হার্ট ব্রেকার’ দেখানো হয়েছে। চলচ্চিত্র তিনটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয় শিল্পী রোকেয়া প্রাচী, লুৎফর রহমান জর্জ, অবিদ রেহান, লাক্স তারকা স্বর্ণা, নিয়ামুল করিম, নূর মোহাম্মদ রাজ্য, রোমা, চন্দ্র বর্মন, রাজ পারভেজ, প্রীতি, আপন, রাজন, জ.ই ডালিম, সাঈদ হোসেন লাভলুসহ আরো অনেকে।
বাংলা চলচ্চিত্রের মন্দা কাটিয়ে গৌরবোজ্জ্বল নতুন অধ্যায় সূচনা করতে চলচ্চিত্র নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কলাকুশলী-শিল্পী বা চলচ্চিত্র বোদ্ধা ও কর্মিদের যুগোপযোগী সমন্বিত উদ্যোগ শুধু অত্যন্ত জরুরি- এমন নয়; বরং এর কোন বিকল্প নেই। কারণ এক্ষেত্রে বিদেশি সাহায্য-সহযোগিতা, বুদ্ধি-পরামর্শ বা অভিজ্ঞাতা বিনিময় কেবলই সহায়কমাত্র।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পৃথক তিন প্রদর্শনীতে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে, যাদের কেউ সিনেমা হল বা প্রেক্ষাগৃহ কি তা জানে না। মিলনায়তনে বসে বড় পর্দায় চলচ্চিত্র দেখার অভিজ্ঞতা তাদের কাছে এটাই প্রথম, যা ছিল তাদের কাছে দারুণ উপভোগ্য ও একরকম পরম পাওয়া। প্রত্যেক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীরা বারবার এমন প্রদর্শনী আয়োজনের দাবিও জানিয়েছে। আর তাই এই প্রদর্শনীকে বাংলা চলচ্চিত্রের মন্দা কাটিয়ে ওঠার সম্পূরক প্রচেষ্টা হিসাবে দেখতে চাই।
কিন্তু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আর উন্মুক্ত প্রদর্শনী আয়োজন করে তো চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আধুনিক-রুচিশীল দর্শকদের জন্য উপভোগ্য বহু নতুন বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক বড় একটা ধাক্কা দরকার। তবে যতোদিন এমন ধাক্কা চিত্রজগতে না আসে ততোদিন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের এমন প্রদর্শনীর গুরুত্ব অপরিসীম।


বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগে গবেষণা, মতবিনিময়, সভা-সেমিনার ও লেখালেখি অনেক হয়েছে। এসব উদ্যোগের কেন্দ্রে ছিল বাংলা চলচ্চিত্র উন্নয়নের সূত্র নিরূপণ। আলোচনার বিষয়বস্তু অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় সূচনা করতে শিল্পী-কলাকুশলী, প্রযোজক-নির্মাতা, প্রেক্ষাগৃহ সংকটের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের সূত্র নিরূপন। কারণ, বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়নেই সামগ্রিক চিত্রজগতের উন্নয়ন নিহিত।
গতানুগতিক আলোচনার ডাল-পালা বিস্তৃত না করে সরাসরি বলতে চাই- আমাদের চিত্রজগত সমকালীনতা হারিয়েছে। চলচ্চিত্রে সমকালীনতা না থাকার কারণেই দর্শক হল বিমূখ। হয়তো অনেকেই বলতে চায়বেন- বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনে সর্বাধুনিক ক্যামেরা, এডিটিং প্যানেল, ভিএফএক্স-এ্যানিমেশন, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ইত্যাদি ইত্যাদির ব্যবহার প্রমাণ করে আমাদের চিত্রজগত সমকালীন। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাই- চলচ্চিত্রের সমকালীনতা কোন টেকনিক্যাল বা কারিগরি বিষয়ভিত্তিক নয়; বরং চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু কে ঘিরে। নির্মাণ যতোই মনোমগ্ধকর হোক, পর্দায় দর্শক যা দেখবে তার বিষয়বস্তু যদি সমকালীনতা বিবর্জিত হয় তবে এর দীর্ঘমেয়াদী দর্শকগ্রহনযোগ্যতা থাকে না। কুরুচিপূর্ণ চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বর্তমানে হাতেগোনা নির্মাণ নৈপূণ্যম-িত বিগ বাজেটের গুটিকয়েক চলচ্চিত্র আমাদের নতুন করে সুদিনে প্রত্যাবর্তনের যে আশারবাণী সঞ্চয় করেছে, তাও অচিরেই হতাশায় পর্যবসিত হবে- যদি বাংলা চলচ্চিত্র সমকালীনতা পূনরুদ্ধারে ব্যর্থ হয়। (০৬/০২/২০১৭)

প্রাচ্য পলাশ ঃ চলচ্চিত্র নির্মাতা
তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রাচ্য পলাশের একক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনীকে ঘিরে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘নিউইয়র্ক বাংলা নিউজ’ এ একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি’ বিভাগে গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম হলো ‘একক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী : বাংলা চলচ্চিত্রের মন্দা কাটিয়ে ওঠার সম্পূরক প্রয়াস’। ইতোমধ্যে তিনি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগও গ্রহন করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×