somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিংকর্তব্যবিমূঢ় সুলতান ভাই

০৯ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কিংকর্তব্যবিমূঢ় সুলতান ভাই
গল্প, সংলাপ ও চিত্রনাট্য: প্রাচ্য পলাশ

কাহিনী সংক্ষেপ


প্রত্যন্ত অঞ্চল রশিকনগরের সেকেলে ধ্যান-ধারণার অতি সহজ-সরল একজন সুলতান আলী। তার সরলতাকে নির্বুদ্ধিতা ও বোকামী হিসাবে ঠাট্টা-উপহাস করে আধুনিক ধ্যান-ধারণা ও সামাজিক সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত এলাকার তরুণরা। তাই এলাকার কিশোর-তরুণ ও রশিকজনদের কাছে তিনি ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ় সুলতান ভাই’ নামে পরিচিত।

পূর্বপুরুষরা এলাকার অত্যন্ত প্রভাবশালী ও দয়ালু ছিলেন। তাই সহায়-সম্বল হারিয়ে ও দুষ্টু কিশোরদের অত্যাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে সুলতান ভাই জঙ্গলে গাছের ওপর বাসা বেঁধে অনেকটা নির্বাসিত জীবন-যাপন করছেন। তার পরিবারের সদস্য বলতে কিছু পোষা পশু ও পাখি। অথচ সুলতান ভাইয়ের জীবন একসময় এমন ছিল না। নিখাদ সংস্কৃতিমনা মানুষ সুলতান ভাই তরুণ বয়সে জবা নামের এক মেয়েকে ভালবাসতো। মেয়েটি তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তার জবা নামের সব কিছুতেই আপত্তি। যেমন জবা ফুল তার পছন্দ না। গরু-হাঁস-মুরগী কে জবাই বলে না, বলে কতল, কোন কিছু জানতে চাওয়ার সময় ‘জবাব দাও’ না বলে বলেন ‘উত্তর দাও’, ইত্যাদি।

একবার তিনি তার অতীতের প্রেম ভুলতে থিয়েটার খুলেন শহরতলীতে। থিয়েটারটির নাম ‘দি থিয়েটার সুপারহিট’। শুরুতে এর নাম ছিলো ‘পান্থজন থিয়েটার’। পরে এলাকায় আকর্ষন ধরানোর জন্য নামকরণ করা হয় ‘দি থিয়েটার সুপারহিট’। তিনি মানে আমাদের সুলতান ভাই এখানকার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আর সাধারণ সম্পাদক করবী আক্তার, তিনি করবী আপা নামে পরিচিত। একদা তিনিও একটি ছেলের প্রেমের প্রত্যাখ্যানের শিকার।

সুপারহিট নাম করণের পর থিয়েটারে দলে দলে নতুন কর্মি আসতে থাকে। তাহের ও কাদের তাদের মধ্যে অন্যতম। তারা পরিশ্রম করতে থাকে নাটক দলটির উন্নতি করার জন্য। তাহের ও কাদের তাদের মধ্যে অন্যতম। তারা পরিশ্রম করতে থাকে নাটক দলটির উন্নতি করার জন্য।

তাহের ও কাদের একটু নারী লোভী, তাই দলে কোন নতুন মেয়ে এলে কৌশলে সেখানে ঘটাতে থাকে নানা মজার ঘটনা। তাহের চায় এলাকায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে নিজেকে গড়তে আর কাদের চায় বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক হতে।

সুলতান ভাই যতোই তাদের বুঝাক নাট্য আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনের একটি অংশ কিংবা নাটক শুধুই শিল্প নয়, শোষণ মুক্তির হাতিয়ার। কিন্তু তারা এটাকে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার কিংবা কিছু উদ্দেশ্য সাধন করার মাধ্যম হিসাবে বেছে নেয়। তাই দলের কর্মি মেয়েদের বুঝায়। যদিও করবী আপা আর সুলতান ভাই দলকে আদর্শগতভাবে চালাতে চাই, কিন্তু সেখানে হোঁচট খায় বারবার।

সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই পথ নাটক উৎসব হবে শহরে ৫ দিনব্যাপী। এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মানিককে তাহের, কাদের ডোনার বানাই। যদিও সেটাতে সুলতান ভাইয়ের আপত্তি ছিল। যা হোক, উৎসবের সব নাটকই সুলতান ভাইয়ের লেখা।

মানিক মূলত এখানে এসেছে তার কিছু স্বার্থ চরিতার্থ করতে। মূলত এলাকায় তার প্রচার হবে। থিয়েটারের মেয়েদের সাথে তার পরিচয় হবে। এটাই ছিল মূল লক্ষ্য।

তাহের ও কাদেরের প্রেম নিবেদনের কারণে উৎসবের কয়েকদিন আগে প্রধান দুই মেয়ে শিল্পী পালিয়ে যায়। সুলতান ভাই চিন্তায় পড়েন। কিন্তু লোভী মানিক কিছু বিনিয়োগ করেছে বলে সুলতান ভাইকে জেলে দেয়। প- হয় নাট্য উৎসবের সব আয়োজন। সুলতান ভাইয়ের নাট্যকার হবার স্বপ্ন সাধ ধুলায় মিশে যায়। সমাজের সাথে তাল মেলাতে না পেরে সুলতান ভাই সত্যি সত্যি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন।

দিন তিনেক পর করবী আপার প্রচেষ্টায় সুলতান ভাই কারাজীবন থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করেন। মনে মনে ভীষণ কৃতজ্ঞ বোধ করলেও করবী আপার সামনে ভাষায় কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পারে না সুলতান ভাই। যায় হোক, কারাগার থেকে ফিরছেন সুলতান ভাই। সুলতান ভাইয়ের ফেরা দেখতে রাস্তার দু’ধারে একাট্টা হয়েছেন রশিকনগরবাসী। সুলতান ভাই গ্রামের পথ অতিক্রম করে বাড়ি ফিরলেন, বাড়ি বলতে জঙ্গলের গাছে বাঁধা বাসাটা, যেখানে সুলতান ভাইয়ের নিত্য সঙ্গী পোষা পশু ও পাখি। ক’দিনের অনুপস্থিতি সুলতান ভাইয়ের আবাসস্থল এলোমেলো করে দিয়েছে।

সবকিছু গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টায় রত সুলতান ভাই। এমন সময় গ্রামের দু’জন যুবক মিজানুর ও রাশেদ সুলতান ভাইয়ের কাছে এসে এলাকায় সাংস্কৃতিক জাগরণের কথা বলে একটা ‘রিয়েলিটি শো’ আয়োজনের কথা জানালো। সদ্য কারাবরণের তীক্ততা স্মরণ করে সুলতান ভাই তাদের সাফ ‘না’ জানিয়ে দেয়। কিন্তু নাছোড় বান্দা মিজানুর ও রাশেদ বিশ্বব্যাপী রিয়েলিটি শো’র জয়-জয়কার সম্পর্কে তুলে ধরে নিজেদের প্রিয় গ্রামটিকে এগিয়ে নিতে সুলতান ভাইয়ের প্রতি মিনতি করে। বৃহৎ চিত্তের সংস্কৃতিমনা সুলতান ভাই শেষ পর্যন্ত এড়িয়ে যেতে পারলেন না, সম্মতি জানালেন রিয়েলিটি শো আয়োজনে।

মিজানুর ও রাশেদ এলাকার আরো ক’জন তরুণকে সাথে নিয়ে অর্ধ্ব ভগ্ন ‘দি থিয়েটার সুপারহিট’ এর কার্যালয়টি মেরামত ও ধোয়া-মোছা করে ব্যবহারের উপযোগী করে। রিয়েলিটি শো আয়োজনে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে সভা আহ্বান করা হয়। করবী আপা খানিকটা দেরিতে সভায় উপস্থিত হন এবং রিয়েলিটি শো আয়োজনের ঘোর বিরোধীতা করে সভাস্থল ত্যাগ করেন। সুলতান ভাই শুরুতেই এমন হোচটের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। মিজানুর ও রাশেদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে সভার প্রতি সকলকে মনোযোগী করে। রিয়েলিটি শো’র বিষয়বস্তু নির্ধারণে সুলতান ভাই গুণীজন, কর্মবীর, সাদা মনের মানুষ প্রভৃতি বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলেও মিজানুর ও রাশেদ জানায়- রশিকনগরের সবাই উচ্চশিক্ষিত নয়। সঙ্গতকারণে এসবের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশেষ কোন আকর্ষণ নেই। তাই ‘শ্রেষ্ঠ বধু’, ‘শ্রেষ্ঠ কর্তা’, ‘শ্রেষ্ঠ শালিকা’, ‘শ্রেষ্ঠ শ্যালক’ এমন বিষয়গুলোকে গ্রহন করা হয়। রিয়েলিটি শো’র অর্থের সংস্থান এবার কোন মহাজনের কাছে থেকে নেয়া যাবে না বলে সুলতান ভাই জানালেন। তাই নবান্নের সময় রশিকনগরের সাধারণ মানুষের কাছে থেকে উত্তোলনকৃত অর্থ দিয়ে আয়োজন করা হলো রিয়েলিটি শো।

রিয়েলিটি শো’র আয়োজনকে ঘিরে রশিকনগরের প্রত্যেক বাড়িতে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। ক্ষেত-খামার, হাট-ঘাট থেকে শুরু করে পথের বাঁকের ক্ষুদ্র দোকানে সর্বত্র আলোচনা শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমী এ আয়োজনকে ঘিরে। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যক্তির বউ ও শালিকাদের নিয়ে রসাত্মক আলোচনা রশিকনগরের দৈনন্দিন জীবনে এনে দিয়েছে ভিন্নমাত্রার বৈচিত্র্য। আসন্ন রিয়েলিটি শো নিয়ে রশিকনগর যখন মেতে ওঠেছে তখন এ আয়োজন থেকে আর দূরে থাকা হলো না করবী আপারও। করবী আপার নেতৃত্বে স্কুল মাস্টার, ইউপি মেম্বার ও সভ্যসমাজের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বিচারক ম-লী গঠিত হলো।

মিজানুর ও রাশেদ চাঁদার যৎসামান্য এদিক-সেদিক করলেও আয়োজন সাড়ম্বরে এগিয়ে চলেছে দেখে সুলতান ভাই তা নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য না করে ধৈর্য্য ধারণ করলেন। এভাবে ঠিকঠিক নির্ধারিত সময়ে উদ্বোধন হলো প্রতীক্ষার এ আয়োজনের। উদ্বোধনী অধিবেশনে আমন্ত্রিত বিশিষ্টজনদের প্রশংসায় সুলতান ভাই লাজুক হয়ে ওঠলেন এবং সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলেন। এলাকার চেয়ারম্যান বিদায় নেবার সময় সুলতান ভাইয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন, আপনার ভাবি সাহেবা অংশ নিয়েছেন, ঘরের ইজ্জত রক্ষার দায়িত্ব এখন আপনার হাতে। চেয়ারম্যান সাহেবের কথা সুলতান ভাইয়ের কাছে দূর্বোধ্য ঠেকে।

উদ্বোধন শেষে এক এক করে শুরু হলো শ্যালক, কর্তা, শালিকা ও গৃহবধু বাছাই পর্ব। বাছাই পর্বগুলোও যথারীতি বৈচিত্র্যপূর্ণ। যেমন- শ্যালক বাছাই পর্বে কোদাল-ডালি ব্যবহার করে গ্রামের কাঁচা রাস্তা মেরামত করা, কর্তা বাছাই পর্বে এলাকার বিপথগামী যুবকদের উচিত শিক্ষা দিয়ে সুপথে ফিরিয়ে আনা, শালিকা বাছাই পর্বে এলাকায় নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান এবং গৃহবধু বাছাই পর্বে হাঁস-মুরগী, গবাদীপশু পালন, হাতের কাজ করে পারিবারিক জীবনমান বৃদ্ধি ও একটি পূর্ণাঙ্গ সুখী পরিবার নিশ্চিত করায় ভূমিকা রাখা- ইত্যাদি ইত্যাদি।

দিন যতো যাচ্ছে আয়োজন এলাকায় আরো বেশি বেশি উদ্দীপনা ছড়াচ্ছে। যারা বিজয়ীর বেশে এক-একটা রাউ- অতিক্রম করছেন তাদের যেন খুশির সীমা নেই। উৎসাহে কমতি নেই কনটেস্ট থেকে বাদপড়াদেরও। কার্যত এটা রিয়েলিটি শো হলেও দর্শক-জনতার পক্ষ থেকে এসএমএস/ভোটিং পদ্ধতি নেই। ফলে বিচারকদের মাধ্যমেই নির্ধারিত হচ্ছে প্রতিযোগিদের ভাগ্য। সেরা শ্যালক ও শালিকা নির্বাচনে চূড়ান্ত পর্বে মঞ্চের সামনে এলাকার যুবক-যুবতীরা ব্যাপক ভীড় জমায়। মাতব্বরের ছেলে মজিদ বন্ধুদের নিয়ে সেরা শালিকা কে হয় তা দেখতে এসেছে। মজিদের ইচ্ছা গ্রামের সেরা শালিকা খেতাব অর্জনকারীকে বউ বানিয়ে ঘরে তুলবে। তবে গ্রামের সকলে কনটেস্ট নিয়ে ব্যাপক মনোনিবেশ করায় মজিদের ইচ্ছার দিকে কেউ কর্ণপাত করছেন না। এক এক করে সেরা শ্যালক, সেরা শালিকা, সেরা কর্তা নির্বাচন শেষ হলো। সেরা গৃহবধু নির্বাচনের সময় অল্পের জন্য বিগত স্থানীয় নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী রহিম উদ্দিনের স্ত্রী রাহেলা বেগমের কাছে পরাজিত হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান আক্কাস আলীর স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশে তার লাঠিয়াল বাহিনী এসে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান প- করে সুলতান ভাইকে নাকানী-চুবানী দিয়ে আবার শ্রীঘরে প্রেরণ করে। আকস্মিক এমন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ভাবে নিতে না পেরে দীর্ঘ সময়ের জন্য নির্বাক হয়ে পড়েন সুলতান ভাই। ঘটনার তদন্তে শহর থেকে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি আসে। এ নিয়ে নতুন নতুন নাটকীয় ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। অবশ্য এতো এতো নাটকীয় মোড় সত্ত্বেও শেষতক সুলতান ভাইকে কারাগার থেকে নিঃশর্ত মুক্তি ও পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানের আজ্ঞা প্রদান করে তদন্ত কমিটি চলে যায়।

কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করলেও সুলতান ভাইয়ের মনে শান্তি নেই। এলাকার মানুষের মনে যতো জটিলতা, এর চেয়ে তার পোষা পশু-পাখিগুলো ঢের ভাল। আর যায় হোক, চেয়ারম্যানের লাঠিয়াল বাহিনী এমন অতর্কিত আক্রমন কিছুতেই স্বাভাবিক ভাবে নিতে চান না সুলতান ভাই। এই পরিস্থিতিতে সুলতান ভাই খানিকটা একরোখা হয়ে পড়েছেন। এলাকার মানুষ-জনের সাথে কোন কথাই বলছেন না তিনি। লবন ফুরিয়ে গেছে, তবু গ্রামের দোকানীর সাথে কথা বলবেন না বলে বিনা লবণেই রান্না করা তরকারী দিয়ে খাবার খাচ্ছেন। তেল-মসলাও প্রায় শেষের পথে। ঘাটের মাঝি একই গ্রামের মানুষ। তার সাথেও কথা বলবেন না সুলতান ভাই। তাই নদী সাঁতার কেটে গঞ্জে থেকে জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে আনলেন। কিন্তু এভাবে বারবার নদীর ওপারে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। তাই সুলতান ভাই অনেক কষ্ট করে কারো কোন সহযোগিতা ছাড়াই একটা ডিঙি নৌকা তৈরি করলেন। গ্রাম থেকে নিজেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রাখতে আর যা যা করা দরকার তার সবকিছুই করলেন সুলতান ভাই। আর কথা বলা কেবল পশু-পাখিদের সাথে। এভাবে তিনি নিজেকে গ্রাম থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন। অবশ্য নিজের দিক থেকে সুলতান ভাই গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও গ্রামবাসীর মনে ঠিক তার উল্টো প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে, তদন্ত কমিটি চেয়ারম্যানের মুখে ছাইপাস লেপে দিয়ে সুলতান ভাইকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়ায় গ্রামবাসীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানীত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন তিনি। তাছাড়া সুলতান ভাইয়ের সাম্প্রতিক কর্মকা- গ্রামের শিশু-কিশোররা জঙ্গলে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো আর তা নিয়ে পরিচিতদের সাথে মজা করতো।

গ্রামের সর্বত্র সুলতান ভাই চর্চা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ সুলতান ভাই গ্রাম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। এমন সময় সুলতান ভাইয়ের জঙ্গলের বাড়িতে হাজির হলেন করবী আপা। সুলতান ভাই করবী আপাকে দেখে হতবম্ব হয়ে পড়েছেন। তিনি একটা কাগজে লিখে জানালেন- ‘আমি গ্রামের মানুষের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছি। আপনি গ্রামের মানুষ গ্রামে চলে যান।’ কিন্তু করবী আপা এবার চলে যাবার জন্য আসেননি, এসেছেন সুলতান ভাইয়ের সাথে জীবনভর থাকার জন্য। তাই তিনিও অভিমানের সুরে বললেন, ‘আমিও গ্রামের মানুষের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে চলে এসেছি। এখন থেকে আমি এখানেই থাকবো।’ করবী আপা ধীরে ধীরে বদলে দেন সুলতান ভাইয়ের জীবন। জঙ্গলের গড়ে তোলা আবাসে করবী আপার কল্যাণে আধুনিক জীবন-যাপন শুরু করেন সুলতান ভাই।

করবী আপার ভালোবাসা সুলতান ভাইয়ের অতীত জীবনের তিক্ততা ভুলিয়ে দিয়েছে। এখনও তাদের বাড়িতে গ্রামের অন্য মানুষের আনাগোনা শুরু না হলেও করবী আপার নিকটজনদের আসা-যাওয়া চলছে। এভাবে ধীরে ধীরে সুলতান ভাই আবার সমাজবদ্ধ জীবনে প্রবেশ করেন এবং যথারীতি গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করতে উদ্যত হন পুনশ্চ। এভাবে কখনো দেশজ খেলাধূলা বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে, কখনো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রক্ষায়, কখনো ইভটিজিং ও সব ধরনের পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে, কখনো নারীর ক্ষমতায়নে, আবার কখনো সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে ঝাপিয়ে পড়েন সুলতান ভাই। আর ঘটতে থাকে নানান যতোসব বিচিত্র, মজাদার, তিক্ত ঘটনা। তবু থেমে থাকে না রশিকনগর গ্রামে সুলতান ভাইয়ের জীবন চলা।

প্রকাশিত সংবাদের শো-রিল দেখুন

প্রাচ্য পলাশ : চলচ্চিত্র নির্মাতা
e-mail: [email protected]
YouTube: PRAKRITA TV
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×