প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য থেকে বিমানে ফেরার পথে তিনি বিজনেস ক্লাস ছেড়ে ইকোনমি ক্লাসের যাত্রীদের কাছে আসেন এবং তাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন৷ এটা নিয়ে কোন কোন পত্রিকা বেশ ফলাও করে প্রশংসা সূচক সংবাদ ছেপেছে৷
আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন রাজনৈতিক নেতার আলগা আদিখ্যেতায় ততটা গুরুত্ব দেই না৷ কিন্তু এটা নিয়ে অনেকের লাফালাফি দেখে অবাক হয়েছি৷ যদিও কিছু দলীয় দালাল শ্রেণীর লোকেরা ভালমন্দ সবক্ষেত্রেই বাহবা দিয়ে যায়৷ যেমনঃ কিছু চামচা আছে যারা হরতালে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারাকে সমর্থন করে ঠিক তেমনি কিছু চামচা শ্রেণী ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে অন্ধভাবে সমর্থন করে যায়৷ এদের নীতি, জ্ঞান কোনটিই আছে বলে আমার মনে হয় না৷ এদেরকে নিকৃষ্ট শ্রেনীর হীনমনা মানুষ বলে মনে হয়৷
যাইহোক উক্ত শ্রেণীর ঘৃণিত মানুষ সম্পর্কে আমার বেশি কথা বলার কোন ইচ্ছা নাই৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আদিখ্যেতা নিয়ে কিছু না বলে পারছি না৷ প্রধানমন্ত্রী বিশাল কোন মহৎ কাজ করে ফেলেছেন বলে ভাবছেন তাদেরকে বলি- প্রবাসে থাকার সুবাদে এবং ফ্রান্স সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে আমাকে বাংলাদেশে গমন ছাড়াও বিভিন্ন দেশে মাঝেমধ্যেই মিশনে যাওয়ার জন্য নিয়মিতই বিমানে চড়তে হয়৷ দীর্ঘ বিমান যাত্রায় যাত্রীদেরকে মাঝেমধ্যে উঠে দাড়ানো বা হাটা চলার প্রয়োজন হয়৷ এমনও হতে পারে প্রধানমন্ত্রী অনেকক্ষণ বসে থাকার কারণে হাটাহাটির প্রয়োজনেই বিমানটি ঘুরে দেখা সেই সাথে লোকদেখানো আদিখ্যেতা স্বরূপ সবার সাথে কুশল বিনিময়ও করে নিলেন প্রশংসা সূচক সংবাদ শিরোনামে আসার জন্য৷
আমরা দেখেছি, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মাঝে মধ্যে সাধারনের সাথে মিশে যান৷ আবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন মাঝেমধ্যে ট্রেনে চড়ে সাধারণ মানুষের মত ভ্রমণ করেন৷ এমনকি ট্রেনে পর্যাপ্ত আসন না থাকলে দাড়িয়ে যাতায়াত করেন৷ নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধান বাইসাইকেলে চড়ে তার কর্মস্থলে যান৷ এরকম আরও অনেক উদাহরণই দেওয়া যাবে৷ তারা এগুলো করেন মুলতঃ সাধারণ মানুষের সাথে মিশে তাদের চাওয়া পাওয়া সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে বা নিতান্তই নিজেদের দায়িত্বের কারণে৷
আমাদের প্রধানমন্ত্রীও যেহেতু এটা করেছেন এটা যদি তার নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে করে থাকেন তাহলে ভাল কথা৷ এটা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোন কারণ আছে বলে মনে হয় না৷ তবে তার দায়িত্ব হিসেবে যদি করে থাকেন সেটা আমার মেনে নিতে আপত্তি আছে৷ একজন প্রধানমন্ত্রী তখনই উদারতার পরিচয় দিতে পারেন যখন তিনি সাধারণ জনগণের মনের অবস্থা বুঝে সেই অনুযায়ী কাজ করেন৷ আমরা দেখেছি, তিনি সম্পুর্নরূপে জনসাধারণের মতামতকে উপেক্ষা করে প্রহসনের নির্বাচন দিয়ে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছেন৷ এমনকি নির্বাচনের আগে ও অব্যবহিত পরে বলেছেন এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন৷ আগামীতে জনসাধারণ ও সব দলের অংশগ্রহণে শীঘ্রই আরেকটি নির্বাচন দেওয়া হবে৷ এখানে তিনি চরম মিথ্যাবাদীতার পরিচয় দিয়েছেন৷
তার সদিচ্ছা থাকলে বিমানের যাত্রী নয় দেশের সাধারণ মানুষের সাথে মিশে তাদের মনের অবস্থা বুঝার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি৷ জানি সেই সাহস তার হবে না৷ কারণ তিনি জনসাধারণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে গেলে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার সম্ভাবনা থাকবে না৷
আমি আবারও প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব সময় কাটানোর জন্য বিমানের যাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় নয়, দেশের সাধারণ মানুষের মনের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করুন৷ এরপর নিজেকে মহৎ বলে পরিচয় দিলে সেটা গ্রহনযোগ্য হবে৷
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৪০