সরকারী চাকুরেদের সন্তান। কোন জায়গার প্রতি তাদের তেমন কোন দরদ পয়দা হয় না; বিশেষ করে যাদের বাবা পোস্টিং জব করে। একটা আলাদা যাযাবর মন তাদের তৈরী হয়ে যায়। আমারো হয়েছে অনেকটা সেরকম। কিছুদিন পর পর স্থান ত্যাগ করতে হোত। যে স্কুলটাতে আমি সবচেয়ে বেশী পড়েছি সেটা হল বিএএফ শাহীন কুর্মিটোলা। ৩য় থেকে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত।
গত ১৮ ডিসেম্বর ২০০৯ প্রথম একটা সাধারণ পুনর্মিলন হল। ৭ম শ্রেণী [১৯৮১] পর সেই সময়কার অনেকের সাথেই আর দেখা সাক্ষাৎ হয় নাই। ২৯ বছর!!!
৪/৫ জন ছাড়া সেসময়কার কারো সাথেই যোগাযোগ নাই। এই যে এখন লিপুর অফিসে গিয়ে রেগুলার আড্ডা দেই ওর সাথেও দেখা হয়েছে ২০০৫ এ। চল্লিশ পেরিয়েও ব্যাটা এখনো বিয়ে করেনি। যার কারনেই ওর অফিস হয়ে গেছে আমাদের কমন আড্ডার জায়গা।
ও ছিল আমাদের ভিতর সবচেয়ে লম্বা ছেলে। উচ্চতা ৬'২"। ওর অফিসে আড্ডা দেয়ার সুবাদে অনেকের সাথেই দেখা হচ্ছে। লিপু যখন বলল কিরে রিইউনিয়নে যাবি না? আমি বললাম নাহ্, আমারে তো কেউ চিনে না রে...। আর আমি তো এখান থেকে এসএসসি দেই নাই। ও সব কিছুই উড়িয়ে দিল। আমার নামে রেজিষ্ট্রেসন-চাঁদা সব দিয়ে ১৮ তারিখ যেন মিস না করি সেই ব্যাপারে ঝারি-ঝুরি দিয়ে রাখল।
আমার ধারনা পাল্টে দিয়ে দেখলাম সেই ২৯ বছর পরও অনেকেই আমাকে চিনল। নষ্টালজিয়া না পড়া মানুষটা নষ্টালজিয়ায় পড়লাম। সবচেয়ে যেটা ভাল লাগল তা হলে আমাদের পিয়ন নূর হোসেন। সে এসে ঝাপটে ধরে বলল, "তুমি এমইএস কলোনী থেকে আসতা না?" আমি তাকে চিনতে একটু দেরি করে ফেলেছিলাম। কয়েক সেকেন্ড। খুব ভাল লাগল। তুহিন, তারিখ, মানিক, শাহিন, মিলু, পারভেজ, রেজাউল, বাবু, হেলাল, তপন, শামীম [জেমস], আহসান শামীম, মশিউর, বিমান - সেই সময়কার সেই বার বছর বয়সের বন্ধুরা। আজ সবাই চল্লিশ পার করে ফেলেছে। মেয়েদের কথা তেমন মনে নেই। আমেনা আপার মেয়ে, আর কচি এদেরকে চিনতে পেরেছি। তাও কথা-বার্তা বলার পর। সেই ক্লাস সেভেন এ থাকতে কচি স্টেজে ফেরদৌস ওয়াহিদের তখনকার হিট গান "মামুনিয়া" স্কুল ফাংশানে গেয়ে ছেলেদের কাছে হট হয়ে গিয়েছিল। চল্লিশ পেরিয়ে সেই কচি আবার স্টেজে গাইল। খানিকটা বেসুরো হলেও ভালই লাগল।
সবচেয়ে ভাল লেগেছে মিলুর আচরনে। মদিনাতে থাকে। ২৯ বছর পর ভাল করেই চিনল; আর মনেও রাখল সব কিছু ভাল ভাবে। ছবি তুলে নিয়েছিল অনেক। গতকাল সেগুলো ইয়াহু মেসেঞ্জারে শেয়ারও করল। মিলু ভাল থাকিস।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৫৮