somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওহে পাকনার দল , বাচ্চার বাপ কে এইটা মা নিজেও জানেন না ।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবার প্রথম কথা বইলা নিই । এইখানে যেই মা এর কথা বলা হইছে, তারা হইলো প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগে যারা একাধিক পুরুষের সাথে যৌন সংগম করছে তারা । বিবাহে সৎ অথবা শুধু একজন যৌন সংগী যাদের, তারা খুব ভালোভাবেই জানে তাদের সন্তানের জনক কে ।

দরিদ্র দেশে লোকজনের মধ্যে মিস্টিক জিনিসে বিশ্বাস করার প্রবণতা বেশি । বাস্তবতার ** মারা হয়ত সবসময় খাইতে হয় বইলা মিস্টিক, রহস্যময় জিনিসে বিশ্বাস কইরা বোধহয় লোকজন একটু বাস্তবতা থাইকা মুক্তি চায় । গত কয়েকদিনের পুস্টের পইড়া দেখলাম ধার্মিকদের পাশাপাশি বেশিরভাগ যুক্তিবাদি নাস্তিকও দেখা যায় এইটা স্বীকার কইরাই নিছেন যে, বাচ্চার আসল বাপ কে এইটা কোন এক রহস্যময় কারণে মা নিশ্চিত ভাবে জানেন । অন্য কেউ জানে না ।

কথা হইলো, যেই মা একাধিক যৌন সংগীর সাথে নিয়মিত সংগম করে প্রেগন্যান্ট হইলেন, তার নিজের পক্ষেও কোনভাবে জানা সম্ভব না বাচ্চার বায়োলজিক্যাল বাপ কে । এইখানে কোন মিস্টিক ফিস্টিক নাই । সিম্পল প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন । ব্যাখা করার আগে কিছু প্রাথমিক জিনিস জাইনা নিই আসেন,

গর্ভধারণ কিভাবে হয় > এর জন্য আসেন আগে নারী প্রজননতন্ত্রের ছবি দেখি ।


প্রতিবারের ঋতুচক্রে ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বক (ওভাম) বের হয়ে ফেলোপিয়ান নালীতে আসে । সংগমের মাধ্যমে পুরুষের সিমেন (ধাতু, হাহাপগে) যোনীপথে জমা হয় । যোনীপথ থেকে শুক্রাণুরা সাঁতার কাটতে থাকে উপরের দিকে । বেশীরভাগই বেঘোরে মারা যায়, সারভিক্স এবং যোনীপথের চাপে, এসিডিটিতে । মাত্র ২০০ টার মত ফেলোপিয়ান নালীতে পৌঁছাইতে পারে । ফেলোপিয়ান নালীতে পৌঁছাইলে এরা সেন্সরের মত ডিম্বাণু খুঁজতে থাকে । পাওয়া গেলে সবাই ডিম্বাণুর চারদিক ঘিরে ফেলে । শেষ পর্যন্ত ভিতরে ঢুকার টিকেট পায় একজন । বাকীগুলা ইন্নালিল্লাহ । ভিতরে শুক্রাণু ঢুকার পরে ডিম্বাণু এক্টিভেটেড হয় , জাইগোট তৈরী হয়, এবং এই জাইগোট নীচে নেমে জরায়ুর ভিতরের দিকের পেশীর গায়ে লাগে । জরায়ুর ভিতরের দিকের পেশী আগে থাইকাই প্রস্তুত থাকে । আঠালো, নরম হয়ে । এরপর থেকে এই জাইগোট বড় হইতে হইতে একটা শিশু হয় ।

মোটামুটি এইটা হইলো ফার্টিলাইযেশন বা নিষেকের কিচ্ছা । এই নিষেকের সফলতা কিছু জিনিসের উপর নির্ভর করে । তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হৈলো, ডিম্বাণুটা ঠিক কোনদিন কোনসময়ে ডিম্বাশয় থাইকা বাইর হৈয়া ফেলোপিয়ান নালীতে আসলো ।

গড়পড়তা সুস্থ্য যুবতীর ঋতুচক্র ২৮ দিন । এইটা গোণা হয়, এইবারের রজঃস্রাব শুরু হওয়ার দিন থেকে পরেরবার শুরু হওয়ার দিন পর্যন্ত । এই হিসাবে, ইম্পিরিকাল স্টাডিগুলাতে পাওয়া গেলো, মোটামুটি ঋতুচক্রের ১৩-১৫ দিন হচ্ছে ডিম্বায়নের (ওভুলুশন) সবচে সম্ভাব্য সময় । আরো ব্রডলি , মোটামুটি ১০-১৬ এই ৭ দিন হৈলো ওভুলুশন (ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হয়ে আসে) এর সম্ভাব্য সময় । কিন্তু ঠিক কখন কোনক্ষণে হৈলো, এইটা জানা খুব কঠিন । এখন নিষেকের সফলতার জন্য আরো কয়েকটা তথ্য গুরুত্বপূর্ণ

১. একবার বের হওয়ার পরে একটা ডিম্বাণু বাঁচে সর্বোচ্চ ১ দিন ।
২. নারীদেহের ভিতরে একটা শুক্রাণু বাঁচতে পারে সর্বোচ্চ ৫-৬ দিন (গড়পড়তা ৩-৪দিন)
৩. শুক্রাণু মোটামুটি ঘন্টায় ৮ ইন্চি বেগে সাঁতার কাটে । যোনীপথ, জরায়ু, ফেলোপিয়ান নালী মিলে মোটামুটি ১০-১২ ইন্চির মত জায়গা । তারমানে বীর্যপাতের পর ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছাইতে ১-২ ঘন্টার বেশী লাগে না ।

এইবার নিষেকের সময়ের অনিশ্চয়তার দিক দেখা যাক । ওভুলুশনের অনিশ্চয়তা উপরে দেখলাম ৭ দিন । এখন ডিম্বাণু যেহেতু ১ দিন বাঁচে, তাইলে ৭+১ = ৮ দিন হৈলো ওভুলুশনের দিক থেকে দেখা নিষেকের সম্ভাব্য সময় ।

এখন আবার শুক্রাণু নারীদেহের ভিতরে সর্বোচ্চ ৬ দিন বাঁচতে পারে । এর মানে কি । এর মানে হৈলো, ওভুলুশনের ৬ দিন আগেও যদি সর্বশেষ যৌন-মিলন হয় তাইলেও গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাব্যতা থাইকা যায় ।

এই দুইটা মিলাইয়া দেখা গেলো, নিষেকের সম্ভাব্য রেন্জ হৈলো ৮+৬ = ১৪ দিন । অর্থাৎ পরের ঋতুচক্রে যদি দেখা গেলো একজন গর্ভবতী, তার সন্তানের জনক হৈতে পারে উপরে দেখানো ১৪ দিনের মধ্যে যতজনের সাথে যৌনমিলন হৈছে তাদের যেকোন একজন । কখন কোনদিন কে, এইটা বুঝার কোন উপায় নাই ।

তবে ওভুলুশন কখন হৈছে এইটা বুঝার একটা উপায় আছে । এইটা হৈলো ঋতুচক্রের প্রতিদিনের জন্য শরীরে তাপমাত্রার চার্ট তৈরী করা । চার্ট মোটামুটি এইরকম হয় ।


চার্ট থেকে দেখা যায়, ওভুলুশনের দিন শরীরের তাপমাত্রার একটা লাফ দেখা যায় । এবং ওভুলুশনের আগে ও পরে , তাপমাত্রার দিক থেকে দুইটা আলাদা তাপমাত্রার রেন্জ দেখা যায় । অর্থাৎ প্রতিদিন সকালে শরীরের তাপমাত্রা মেপে মেপে চার্ট করলে ওভুলুশনের সময় মোটামুটি সফলতার সাথেই বের করা যায় ।

কিন্তু চার্টখানা ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে এইখানে যেই কেস দেখানো হৈছে সেইটার জন্য তাপমাত্রার লাফের পরিমান ১.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট । তবে গড়পড়তা এই লাফের পরিমাণ ০.২-০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট । অর্থাৎ নিজের অনুভুতি দিয়া বুঝার কোন উপায় নাই । এমনকি সাধারণ ব্যবহারের থার্মোমিটারের মার্জিন অফ এররের মধ্যেও পড়ে যেতে পারে । এইধরণের চার্ট ব্যবহার করে যারা খুব ডেসপারেটলি গর্ভবতী হৈতে চায়, কিন্তু পারতেছে না তারাই ।

এখন ওভুলুশনের টাইম পিনপয়েন্ট করা গেলেও, শরীরের ভিতরে শুক্রাণুর আয়ুস্কাল পিনপয়েন্ট করার কোন উপায় নাই । এইকারণে ওভুলুশনের টাইম পিনপয়েন্ট কৈরা ওভুলুশন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ৮ দিন বাদ দেয়া গেলেও, শুক্রাণুর আয়ুষ্কাল সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ৬ দিন দূর করার কোন উপায় নাই । অর্থাৎ এই ছয়দিনের মধ্যে যতজনের সাথে যৌনমিলন হৈছে তাদের যে কেউ-ই সন্তানের জনক হৈতে পারে ।

মজার কথা হৈলো, কেউ যদি স্যাবোটাজও করতে চায় , (তসলিমার শোধ উপন্যাসের মত) অর্থাৎ, এই অনিশ্চিত ১৪ দিনে অন্য কারো সাথে যৌনমিলন করে , বাচ্চার জনক বৈলা অন্য কাউরে চালাইয়া দিতে চাইলে, খুব সহজেই মেমোরী ঘাটলে বাইর করা সম্ভব যে এই সন্তানের জনক সে ছাড়া অন্য কেউ ।

এইগুলা ছাড়াও আরো বেশ কিছু ব্যতিক্রম আছে । কারো ঋতুচক্র ৩২ দিন পর্যন্ত হয় । অনেকের ওভুলুশন ছাড়াও রজঃস্রাব হয়, অনেকের গর্ভধারণ ছাড়াও রজঃস্রাব বন্ধ হৈয়া যায় । এইরকম হাজারটা সমস্যা আছে ।

মাগার সকল কথার শেষ কথা হৈলো , পিতা একটা বায়োলজিক্যাল সম্পর্কের চাইতে বরং সামাজিক সম্পর্ক । যে লোক আমাকে কষ্ট করে পালন করলো, শিক্ষা দিলো, বিপদ থেকে রক্ষা করলো, সে আমার জনক না হৈলেও তারে পিতা, বাবা ডাকতে আমার কোন সমস্যা নাই । সে আমার জনক না এইটা জানলেও তার প্রতি আমার ভালোবাসা বা সম্মানে বিন্দুমাত্র ঘাটতি হবে না ।

*এই পোস্টের সব কথা কনডম বা অন্য কোনরকম জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছাড়া যৌনমিলনের জন্য প্রযোজ্য ।*
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪৯
৫০টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×