somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাস বিকৃতির দায় নিয়ে সুলতান সুলেমান

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ব্যস্ত জীবনে সময় বের করা অত্যন্ত দুরূহ। কিন্তু উপায় নেই। দুকলম হলেও লিখতে হবে।

বিষয়বস্তু হল: ম্যগনিফিসেন্ট সেনচুরি। বাংলায় সুলতান সুলায়মান। যা দীপ্ত টিভিতে ধারাবাহিক ভাবে দেখানো হচ্ছে।
এই সিরিয়ালের ইতিহাস বিকৃতি মোটামুটি ভাবে প্রমানিত। সিরিয়ালটির নির্মাতারাও তা অস্বীকার করেন নি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুলায়মানের পরিচয় একদম নূতন একজন বলে সিরিয়ালটির ইতিহাস বিকৃতি বাংলাদেশের সাধারন মানুষের কাছে তেমন পরিচিত নয়। এক সাইটে একজনকে দেখলাম ইবরাহিম পাশাকে ধুয়ে ফেলছে নিগারের সাথে সম্পর্ক করার জন্য। নাসু এফেন্দিকে নিন্দা করছে ইবরাহিম নিগারকে সহায়তা করার জন্য। অথচ আসল সত্য হচ্ছে - নিগার এই সিরিয়ালের একটি কাল্পনিক চরিত্র মাত্র - বাস্তবতার সাথে এর নেই কোন যোগসূত্র। বাস্তবের রিসার্চ বরং উল্টোটাই বলে - ইবরাহিম এবং তার স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত চমৎকার।

সুলতান সুলায়মান পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী শাসকদের একজন। ক্ষমতাবান হবার পাশাপাশি তিনি প্রজাবৎসল এবং ন্যায় পরায়ন। প্রজাবাৎসল্যে ধর্ম বর্নের কোন ভেদাভেদ তিনি করেন নি, যদিও সেসময়টাতে অন্যান্য রাজ্যে নানারকম ভেদাভেদ করা হত। সততা এবং ন্যায়পরায়নতার বিষয়গুলোতে তিনি কখনও আপোষ করেন নি। এই কারনে তুর্কী এবং পশ্চিমা ইতিহাসবিদগন একমত হয়ে তাকে "ম্যাগনিফিসেন্ট" উপাধি দেন। সুলায়মানের সুশাসন ইতিহাস স্বীকৃত একটি বিষয় এবং এ নিয়ে দ্বিমত পোষনের তেমন কোন অবকাশ নেই।

কিন্তু "ম্যাগনিফিসেন্ট সেনচুরি" নামক সিরিয়ালটি দেখার পরে অবশ্য মানুষ জনের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে সুলায়মান আসলে কতটুকু "ম্যাগনিফিসেন্ট"? এর কারন এই সিরিয়ালে সুলায়মানকে অনেক ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা হয় নি। খুব সংক্ষেপে আমি "সুলতান সুলায়মান" সিরিয়ালের কয়েকটি ইতিহাস বিকৃতি উল্লেখ করছি:

১। অটোম্যান সাম্রাজ্য হারেম নির্ভর এবং এর পৃষ্ঠপোষক। মধ্যযুগের প্রচলিত হারেম প্রথা অটোম্যান সাম্রাজ্যে প্রায় ১৯০৮ শতক পর্যন্ত চালু থাকে। পরবর্তীতে তুর্কীদের সমালোচনার কারনে এবং দাস প্রথা বিলুপ্তির সাথে সাথে হারেম প্রথাও লোপ পায় (যা অন্য ইতিহাস)। অটোম্যান সাম্রাজ্য বেশ কিছু কারনে এই হারেম কেন্দ্রিক বহুগামিতাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল। সুলতান যাতে কোন একক নারীর দ্বারা বিভ্রান্ত না হতে পারেন এবং সুলতানের যাতে উত্তরাধিকার নিশ্চিত হয়।

সুলতান সুলায়মানের হারেমের নারীদের মধ্যে তার মূল সংগিনী ছিলেন তিন জন: হুররেম, মাহিদেবরান এবং গুলফাম। এক পর্যায়ে হুররেমকে তিনি বিয়ে করেন। হুররেমকে বিয়ের পর সুলায়মানের জীবনে আর কোন নারী ছিল না। হুররেমই ছিল সুলায়মানের প্রকৃত জীবন সংগিনী। এই বিষয়টিকে এই সিরিয়ালে বিকৃত করা হয়েছে "ফিরোযে হাতুন" নামক এক কাল্পনিক চরিত্রকে এনে।

২। নিগার কালফার কাল্পনিক চরিত্র দিয়ে ইবরাহিম পাশার চরিত্র বিকৃতি।

৩। এর পরবর্তীতে দেখানো হবে, শাহ সুলতানা কর্তৃক আয়াজ পাশা খুন হন। কিন্তু এটাও ইতিহাস বিকৃতি। আয়াজ পাশা রোগে ভুগে মারা যান। তিনি খুন হন নি।

৪। এই সিরিয়ালে শাহজাদা মেহমেতকে খুন করেন মাহি দেবরান। এটাও ইতিহাস বিকৃতি। শাহজাদা মেহমেত রোগে ভুগে মারা যান।

৫। সরাই খানায় নাসু এফেন্দি এবং মালকুচোগলো বালি বের মদ্যপান। এটা অসম্ভব কারন সুলতান সুলায়মানের সময় মদ্য পান নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে তার পুত্র সুলতান সেলিম মদ্যপানের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন। সরাইখানায় নর্তকীদের এরকম প্রকাশ্য নাচও অসম্ভব।

এছাড়াও হারেম কেন্দ্রিক যেসব ঘটনা দেখানো হয় তার বেশীর ভাগই কল্পিত। সাদেকা/ভিক্টোরিয়া, নিগার কালফা, প্রিন্সেস ইসাবেলা, ফিরোযে হাতুন - এই সবই কাল্পনিক চরিত্র।

এই সিরিয়ালে যাদের চরিত্র বিকৃত করা হয়েছে তাদের একজন হলেন মালকুচোগলো বালি বে। বালি বে ছিলেন একজন অত্যন্ত সাহসী যোদ্ধা এবং বসনিয়ার সন্জক বে। আপনারা এই সিরিয়ালের বদৌলতে জেনেছেন মোহাক যুদ্ধের কথা। মোহাক যুদ্ধ ইতিহাসের দ্রুততম বিজয়ের যুদ্ধ। অটোম্যন বনাম হাংগেরীর রাজা লুই। ইতিহাসের পাতায় এই যুদ্ধ অদ্বিতীয় হয়ে রয়েছে "দ্রততম বিজয়ের যুদ্ধ" হিসেবে। এই মোহাক যুদ্ধের মূল সেনাপতি ছিলেন ইবরাহিম পাশা। আর বাকী দুইজন ছিলেন বালি বে এবং বাহরাম পাশা। হাংগেরীতে থাকার সময় অটোম্যান কমান্ডার বালি বে একটি মসজিদ তৈরী করেন (ছবিতে সেই মসজিদটি দেখুন)। দৃষ্টি নন্দন এই মসজিদটি অনেক দিন সবার অগোচরে ছিল। হাংগেরীতে ১৯৬৯ সালে তা পুনরায় আবিষ্কৃত হয় অটোম্যান প্রত্নতত্ত্ব হিসেবে। এখন এটি একটি মিউজিয়াম এবং নামকরা পর্যটন কেন্দ্র। ১৯৯৩ সালে এটি ইউরোপের সেরা "আর্কিটেকচারাল মারভেল" হিসেবে নির্বাচিত হয়ে নসট্রা পদক লাভ করে।



আর নাসুবন্দী এফেন্দি? তাকে তো বলা হয় মুসলমান "লিওনার্ডো দ্য ভিনসি"। সিরিয়ালের এই চরিত্র বিকৃতি বড়ই পীড়াদায়ক। নীচে নাসু এফেন্দির ছবি এবং তার আকা একটি শহরের ম্যাপ।





সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১৯
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×