somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বিজ্ঞান সম্মত হত্যাকান্ড

২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডঃ হিরাম ছিলেন হাডসন ইন্সটিটিউট অভ টেকনোলজির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এপ্লাইড কোয়ান্টাম ফিজিক্সের অধ্যাপক। তিনি সুদীর্ঘ বাইশ বছর ধরে মহাকাশযানে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করে আসছিলেন। মিসিসিপের তীরে বেড়ে ওঠা ছোটখাটো অসম্ভব মেধাবী মানুষটাকে আমি কাছ থেকে চিনতাম কেননা আমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জারনালিজমের ছাত্র। গত সপ্তাহে আমি একটা স্থানীয় পত্রিকাতে যোগদান করি ও আমার সত্যিকারের কর্মজীবন শুরু হয়েছে। ডঃ হিরাম সবসময়ই আমার কাছে কৌতূহলের পাত্র ছিলেন। তিনি পৃথিবীর প্রথম সারির একজন বিদূষক অথচ পাঁচবার মনোনয়ন পাওয়ার পরও তিনি নোবেল জিতেন নি। বিভিন্ন নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির কারণে তিনি বার বার বঞ্চিত হচ্ছিলেন আর তাতেই তার মনে একটা ক্ষোভ ছিলেন। আমার একটা কল্পনা ছিল যে তিনি এমন আলোড়নকারী কিছু করে ফেলবেন যেটা তার প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে আনবে বহুগুনে বর্ধিত করে আর আমিই প্রথম তার স্টোরি কাভার করব। সঙ্গত কারনেই থিসিস ক্লাস শেষে তার গবেষণাগারের সামনে ঘুরাঘুরি করা আমার নৈমিত্তিক অভ্যাসে পরিণত হল।
লাভের লাভ তেমন কিছুই হল না। ডঃ হিরাম সেইরকম মানুষদের একজন যাদের দেহ বাস্তবতায় থাকলেও মন থাকতো আলোকবর্ষ দূরে। আমাকে তার চোখেই পড়ত না, কোন কিছুই তিনি খেয়াল করতেন কিনা তাই নিয়েই আমার মনে সন্দেহ হত। উইকেন্ডের এক অলস সন্ধ্যায় আমার রুমমেটের সাথে ক্যাম্পাসের পাশেই একটা বারে সস্তা উত্তেজক পানীয়র পাত্র হাতে আমার ব্যর্থতার আলোচনা হচ্ছিল।
বুঝলে রিক, জড়ানো গলায় বললাম আমি। শালার প্রফেসর (আমি উনাকে যথেষ্ট সম্মান করি, তবে হতাশা আর উত্তেজক পানীয় আমাকে কাবু করে ফেলেছিল) একটা কঠিন চিজ। দুই মাস ধরে তার ল্যাবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি প্রতিদিন পাক্কা তিন ঘণ্টা, ব্যাটা তবুও গা করে না। কোন কিছুই জানতে পারলাম না, কিচ্ছু না। আমার মত অপদার্থকে দিয়ে সাংবাদিকতা হবে না বলেও মনে হচ্ছে।
হা হা করে ছোট্ট বারের কড়িকাঠ কাঁপিয়ে দরাজ গলায় হেসে উঠল আমার বিশালবপু রুমমেট। তোমার তো অন্য কোন কাজেও হাত পাকা নেই। যদি বুঝতাম ইউনিট জালিয়াতি করে কিংবা কেইনদের দলের সাথে কৃত্রিম অঙ্গ পাচারের কাজ করতে পারতে তাহলে বলতাম এই (ছাপার অযোগ্য) সাংবাদিকতা করে, পড়াশুনা করে লাভ নেই, দুনম্বরি করেই জীবনে কিছু করে ফেলবে।
ভালো বলেছ, হতাশ গলায় বললাম আমি। ইউনিট জালিয়াতি করতে যাই আর স্টেট পুলিশ আমাকে সোজা চৌদ্দ বছরের জন্য ভিতরে পাঠিয়ে দিক। টাকা দিয়ে কি হবে যদি আমি নিজেই ভোগ করতে না পারি?

তোমাকে দিয়ে আসলেই ওসব হবে না, বিরক্ত ভঙ্গিতে যেন মাছি তাড়াল রিক। আরে ওসব করতে গেলে (অশ্রাব্য) লাগে, তোমার মত সমকামীদের জন্য এই লাইন নয়।
মাতাল হলেও এই সমস্ত রুঢ় কথা খুব গায়ে লাগলো। আমি অত্যন্ত কঠিন গলায় বললাম, কেন, আমাকে সমকামী বলছ কেন?
সমকামী বলব না তো কি বলব? খশ খশ করে নির্মম ভঙ্গিতে ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে বলল রিক। তোমার যদি আসল (ছাপার অযোগ্য) থাকতো তবে ডঃ হিরামের কাজের খবর পাওয়া কোন ব্যাপার ছিলনা।

ব্যাপারটা খুলে বলতো, এইবার আমার সাংবাদিক মন সজাগ হয়ে উঠলো।

তুমি ব্যাটা (অশ্রাব্য) শুধু উজবুকের মত ল্যাবের বাইরে দাঁড়িয়ে থাক? ঐ প্রফেসর ছাড়াও যে ল্যাবে অন্য মানুষ থাকতে পারে সেটা চিন্তা করো নাই? জিব দিয়ে একটা শব্দ করল রিক। প্রফেসরের ল্যাবের নতুন মেয়েটাকে দেখেছ? ঐ যে গত সপ্তাহে আসলো। পুরো ফিজিক্সের সবার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে এই মেয়ে। পনের বছরে কলেজে ঢুকেছে, একুশ বছরে ডক্টরেট। আর চেহারা সুরত যা! টাকরা দিয়ে একটা অশ্লীল শব্দ করল আমার রুমমেট। প্রফেসর ল্যাবে তার উপর কি গবেষণা করেন জানতে পারলে বেশ হত!
বেশ, সমঝদারের মত মাথা নাড়লাম আমি। তাহলে প্রফেসরের নতুন সহযোগী একজন প্রডিজি এবং অসাধারণ সুন্দরি। তাতে আমার কাজে কি লাভ হচ্ছে বুঝলাম না।
হতাশার ভঙ্গিতে এত জোরে হাত নাড়ল রিক যে তার পানীয়র অর্ধেক শার্টে চলকে পড়ল। ব্যাটা সমকামী, এত সহজ বিষয়টা বুঝ না বয়স কত তোমার? আমি হলে আগে ঐ (ছাপার অযোগ্য) চিজটার সাথে খাতির করে ফেলতাম। কাজের জন্যও ভাল, শরীর সেহতের জন্যও... হা হা হা।

কিন্তু সে আমার সাথে খাতির করবে কেন? ছেলের কি অভাব পড়েছে ক্যাম্পাসে?

আরে এই ধরনের মেয়েকে সবাই ভয় পায়। আসার পর থেকে ফিজিক্সের সবাই একবার চেয়েছে তার সাথে ডেটে যেতে, কিন্তু সাহস করে কেউ বলতেও পারে নাই। এইধরনের মানুষগুলা যতবড় জিনিয়াসই হোক, এরা খুব নিঃসঙ্গ হয়। আর তোমার ভাল সুযোগই আছে। আয়নার দিকে তাকাও? তুমি সমকামী হলেও চেহারা সুরত খারাপ না, দাঁত বের করে বলল রিক। আমার জায়গায় কোন সমকামী তোমার রুমমেট হলে তোমাকে.........
মাতাল রিকের অসংলগ্ন কুৎসিত কথাগুলো আমাকে আর স্পর্শ করল না। চিন্তায় ডুবে গেলাম আমি। ঠিক করে ফেললাম, আজ ঘরে ফিরেই আমার প্রথম কাজ হবে ডঃ হিরামের সহকারী সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জেনে নেওয়া ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক থেকে।



পরদিনই ল্যাবের সামনে আমার সাথে দেখা হল এমিলি হানের। মেয়েটাকে আগেও আমি দেখেছি ল্যাবে যেতে, কিন্তু আজকেই প্রথম তাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলাম। সুন্দরী তাকে বলাই যায়, তবে উগ্র সুন্দরী নয়, বরঞ্চ তার সৌন্দর্যের মধ্যে কি যেন একটা স্নিগ্ধ ভাব আছে। উচ্চতা মাঝারি হবে, ছোট ছোট কালো চোখ, গভীর বাদামী চুল।
এগিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। কিছুটা হচকিয়ে গিয়ে আমার দিকে তাকাল এমিলি, সম্ভবত তার বয়সী অন্য মেয়েদের মত সে ছেলেদের পথরোধ করার সাথে পরিচিত নয়।
হ্যালো, আমার নাম তাজ। আমি এখানকার জার্নালিজমের ছাত্র। আমি কি তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারি?
বলুন, এমিলির চেহারা দেখেই বুঝা গেল হতভম্ব হয়ে গেছে সে।
আমি কি ইয়ে, আজকে সন্ধ্যায় তোমার সাথে কফি পান করতে পারি? আমি চমৎকার একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
স-সন্ধ্যায়? আহাওয়া ঠাণ্ডাই তবুও এমিলির কপালে চিকন ঘাম দেখতে পেলাম আমি।
কেন নয়? আমি জানি তুমি ব্যস্ত কিন্তু এই চমৎকার ঋতুর একটা সন্ধ্যা ল্যাবের যন্ত্রের সামনে না কাটালে নিশ্চয় বড় অপরাধ হবে না?
এমিলি কোন জবাব দিল না। তার ছোট ছোট চোখগুলো কি একটু বড় হয়ে গেল?
এই নাও আমার নম্বর। একটা কাগজ এগিয়ে দিলাম আমি। সন্ধ্যায় ফোন দিলেই ল্যাবের বাইরে পাবে আমাকে।
আমি হন হন করে চলে আসলাম ওখান থেকে, এমিলি মনে হয় দাঁড়িয়েই ছিল!

কফি শপটা তেমন আহামরি কিছু নয়। শহরের একটু ভিতরে ভালো ভালো কফিশপ থাকা সত্ত্বেও আমরা ছাত্ররা ক্যাম্পাসের কাছের এই কফিশপেই ভীড় করি। আসলে ক্যাম্পাসটা আমাদের কাছে মাতৃগর্ভের মত নিরাপদ মনে হয়, তাই পারতপক্ষে আমরা দূরে যেতে চাইনা।
আমি টেবিলের ওপাশে বসা এমিলির দিকে তাকিয়ে ওর কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করছিলাম। এটা ওর জীবনের প্রথম ডেট। আসলে অন্যদের থেকে আলাদা হওয়াটা অনেক কষ্টের একটা ব্যপার। স্কুলে, কলেজেও তার কোন বন্ধু ছিলনা। তার অস্বাভাবিক মেধার কারণে সবাই তাকে নিয়ে গর্ব করলেও মানবিক সম্পর্কগুলো স্থাপনের জন্য আগ্রহী কেউ ছিলনা। হাসতে হাসতে সে জানালো যে সিনিয়র প্রমের সময় তাকে একাই যেতে হয়েছিল কারণ কোন ছেলে তাকে সঙ্গী হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করেনি।
আমি তার পোশাকের প্রশংসা করলাম। সে জানালো এই পোশাকটা আজকেই কেনা। আমার সাথে কফি খেতে যাওয়ার জন্যই সে বিকেলে শহরের মলে গিয়ে এই পোশাকটা কিনে এনেছে। কোন ছেলের সাথে ডেটে যাওয়ার মত উপযোগী পোশাক সে আগে কখনো পড়েনি।
কফিতে চুমুক দিতে দিতে আমি সহসাই বুঝতে পারলাম, এমিলি হান নামের এই নিঃসঙ্গ সুশ্রী ভীতিকর মেধাবী মেয়েটার জন্য আমার ভালবাসা জন্মে গেছে। কিন্তু আমি তাকে ব্যবহার করতে চেয়েছি ডঃ হিরামের গবেষণার খবর পাওয়ার জন্য। নিজেকে খুব অমানুষ মনে হল আমার। একটা নিঃসঙ্গ মেয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছি আমি। একটা তীব্র ক্ষুদ্রতা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। কিছু না ভেবেই বলে ফেললাম, এমিলি আমি তোমাকে ভালবাসি।




আজকে সেই দিন!
আজ ডঃ ইনাম হিরাম তার আবিষ্কৃত কোয়ান্টাম ইঞ্জিনের আনুষ্ঠানিক বেটা টেস্ট করবেন। নানা দেশের সাংবাদিকে আমাদের ক্যাম্পাস পরিপূর্ণ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রিত অধ্যাপকরাও এসেছেন আশ্চর্য আবিষ্কার দেখতে। মাঠের মাঝখানে কিছুটা গোলাকার খালি জায়গা, সেখানে একটা গাড়ির আকৃতির যানে বসে আছেন ডঃ ইনাম হিরাম।
ডঃ হিরামের তরুণ মেধাবী সহকারী ডঃ এমিলি হানের সহকারীর ফিওসে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে আমিই তাকে প্রথম প্রশ্ন করার সুযোগ পেলাম।
- ডঃ হিরাম, আপনার এই আবিষ্কার সম্পর্কে কিছু বলুন। দয়া করে সহজ ভাষায় কেননা আমাদের এখানে অনেকেই বিজ্ঞানী নন এমন কি আমিও না।
আমার কথায় অনেকে হেসে ফেললেন। ডঃ হিরামের মুখেও হাসি দেখা গেল।
- বলার কি আছে তাজ? এই ইঞ্জিন কিভাবে বানালাম, কিভাবে কাজ করলাম তাতো রিসার্চ পেপারেই লিখা আছে। তাছাড়া বললেও তোমার মত বিজ্ঞান না জানা গণ্ডমূর্খরা বুঝবেনা তাই না? তারচেয়ে বলি এই ইঞ্জিন কি করে। এই ইঞ্জিনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গতিবেগ। এই প্রদর্শনীর আগে একটা মিনিয়েচার ইঞ্জিন দিয়ে আলফা টেস্ট করা হয়েছে। আমরা মোটামুটি একলক্ষ মাইল প্রতি সেকেন্ড গতিবেগ অর্জনে সমর্থ হয়েছি। তাছাড়া তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের কিছু মডিফিকেসন করে এর জন্য একটা নিরাপদ জ্বালানীও আবিষ্কার করেছে আমার টীম।
উপস্থিত সবার মাঝে অবিশ্বাসের গুঞ্জন উঠল। ক্যালটেকের একজন পদার্থবিদ উত্তেজিতভাবে উঠে দাঁড়ালেন।
- ক্ষমা করবেন প্রফেসর। একটা কথা না বলে পারছি না। একলক্ষ মাইল গতিবেগ অর্জন করা নাহয় সম্ভব হল। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর গতিবেগে কি কোন প্রাণী বাঁচতে পারবে? প্রচণ্ড ত্বরণেই তার ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা।
ডঃ হিরাম একটু হাসলেন।
-দেখা যাচ্ছে আমাদের মধ্যে অনেক ভালো জ্ঞানী পদার্থবিদও রয়েছেন। হ্যাঁ এটা একটা বাস্তব সমস্যা। আসলেই শূন্য এত গতি অর্জন করতে যে ত্বরণ হবে তাতেই যাত্রী ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবেন। তাই প্রথমে আমরা ঠিক করেছিলাম বত্রিশটি সহনীয় ধাপে ইঞ্জিনটি গতি সঞ্চার করবে এবং এতে যাত্রিদের উপর কোন ঝুঁকি থাকবেনা। কিন্তু পরে হিসাব করে দেখা গেল, এতে এত বেশি সময় লাগবে যে তাতে কোয়ান্টাম ইঞ্জিন ব্যবহার করাই অবান্তর কেননা এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল অচিন্তনীয় গতিতে চোখের পলকে বিশাল দূরত্ব পাড়ি দেওয়া। তাই তিনমাস গবেষণা করে আমরা একটা শক্তিবলয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি যা g এর চেয়ে চৌষট্টিগুণ বেশি ত্বরণ শুষে নিতে পারে। অর্থাৎ যাত্রীরা বলয়ের ভিতরে থাকলে কোন ভয় নেই। মহাকাশযান নিমেষেই স্থির অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ গতিলাভ করবে।
উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে বিশাল ক্যাম্পাসটাকে সরগম করে তুললেন। প্রফেসর হাত তুলে সবাইকে নীরব হতে অনুরোধ করলেন।
- আমার এই আবিষ্কার এই মহান দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা এই পৃথিবী ছেড়ে পুরো মহাকাশে বিস্তৃত হবে। আমাদের সমকক্ষ কোন শক্তিই অবশিষ্ট থাকবে না। এবার প্রথমবারের মত এই যান একজন সত্যিকারের মানুষ নিয়ে ভ্রমণ করবে। আবিষ্কারক হিসেবে আমিই প্রথম এই সম্মান লাভ করতে যাচ্ছি। পরীক্ষা সফল হলে নব্বই মিনিটের মাঝে বৃহস্পতির ইউএস নেভি বেস থেকে আপনারা আমার শুভেচ্ছা পাবেন।
বিপুল করতালি আর উচ্ছ্বাসের জবাব দিতে দিতে প্রফেসর যানে উঠলেন। উপরের ডালাটা বন্ধ করে দিতেই তাকে ঘিরে প্রতিরক্ষামূলক শক্তি বলয় তৈরি হল। ইঞ্জিন চালু হলেই একটা গুঞ্জনধ্বনি ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে।
পরমুহুর্তে যা ঘটলো তার জন্য প্রস্তত ছিলনা কেউ। বজ্রপাতের মত বিকট একটা শব্দ হল। প্রফেসরের যান আর আশেপাশের প্রায় দশমিটার পরিধির সবকিছু একটা তীব্র আলোর ঝলকানিতে মিলিয়ে গেল। তীব্র শকওয়েভের আঘাতে প্রত্যেকটা ভবনের প্রত্যেকটা কাঁচ চুর চুর হয়ে গেল।
হাত দিয়ে মুখ থেকে রক্ত মুছে চোখ কুঁচকে সামনে তাকানোর চেষ্টা করলাম আমি। চারিদিকে আর্তচিৎকার, পোড়া গন্ধ। অন্ধের মত ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে সামনের যাওয়ার চেষ্টা করলাম। চিৎকার করতে চাইলাম, এমিলি, তুমি কোথায়?
গলা দিয়ে কোন শব্দই বের হলনা।



আমার মত বুদ্ধিমত্তার কেউ বোকা হতে পারেনা। তবে তারা বোকা, সহজ সরল হওয়ার ভান করতে পারে। ছোটবেলা থেকে আমি তা খুব ভালভাবেই পেরেছি। তাতে সুবিধে হল, আমি অস্বাভাবিক একজন মানুষ হওয়া সত্ত্বেও জীবনে কোন সমস্যায় পড়িনি। আমার জীবনে কোন প্রেমিক ছিলনা, কোন ভালবাসা ছিলনা। আমার ছিল একটা পরিবার শুধু আমার বাবা আর মা। যৌবনে আমার বাবা গণচীনের একজন বড় বিজ্ঞানী ছিলেন। গণচীন যখন যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণে ধ্বসে পড়লো, আমার বাবা পালিয়ে আসেন যুক্তরাষ্ট্রেই । বিয়ে করলেন মা কে। আমার মায়াময়ী টেক্সান কিষাণী মা। দুজনে বসবাস করতে লাগলেন নিউ ইয়র্কে যেখানে আমি জন্মালাম। একদিন তিনি পড়ে গেলেন ডঃ হিরামের সামনে। ডঃ ইনাম হিরাম আমার বাবাকে চিনে ফেলেছিলেন। তাকে ল্যাবের সহকারী পদে কাজ করার প্রস্তাব দিলেন। আমার সম্বলহীন ভিনদেশী বাবা ডঃ হিরামের ল্যাবেই ক্রিতদাসের মত গবেষণা করতেন। ডঃ হিরাম যেসব কাজ করেছেন তার সবই আমার বাবার কৃতিত্ব কিন্তু তা কেউ জানলনা।
তারপরই আমার বাবা তৈরি করলেন কোয়ান্টাম ইঞ্জিনের লে আউট। ডঃ হিরাম বোকা ছিলেন না, তিনি বুঝলেন এই মেধার একটা মানুষকে তিনি বেশীদিন জিম্মি করে রাখতে পারবেন না। তাই কোয়ান্টাম ইঞ্জিনের লে আউট হতে যাওয়ার পরপরই তিনি আমার বাবাকে সরিয়ে দিলেন, চিরতরেই, পৃথিবী থেকে।
আমার বয়স তখন পনের। চাইল্ড প্রডিজি হিসেবে বৃত্তি পেয়ে আমি দেশ ছেড়ে ক্যামব্রিজে গেলাম। আমার সহজ সরল মা, যিনি বিশ্বাস করতেন আমার বাবা গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছেন, টেক্সাসের এক খামারিকে বিয়ে করে নিয়ে নিজ জন্মস্থানে ফিরে গেলেন। কিন্তু সত্যটা আমি ঠিকই বুঝতাম। ঠিক করলাম, একদিন ফিরে এসে ডঃ হিরামকে তার প্রাপ্র্য বুঝিয়ে দিব।
আমি পিএইচডি শেষ করে দেশে এসে আবার দেখা পেলাম ডঃ হিরামের। আমার বাবার লে আউট থাকলে কি হবে, তাকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার মত মেধা ডঃ হিরামের মত একজন জোচ্চোর, খুনির ছিলনা। আমি তাকে সাহায্য করার প্রস্তাব দিলাম। তিনি লাফিয়ে রাজি হলেন। তিনি ঘুণাক্ষরেও বুঝেন নি আমি আমার বাবার খুনির পরিচয় জানি। কোয়ান্টাম ইঞ্জিনের ডিজাইন আমারই করা। আলফা টেস্টের ছোট যান আর বেটা টেস্টের সত্যিকার যানের প্ল্যান এক নয়। আমার বাবা মেধাবী ছিলেন বটে, কিন্তু আমার মত প্রডিজি তো আর ছিলেন না । তাই তার প্ল্যান নিজের ইচ্ছামত মডিফাই করা আমার কাছে ছেলেখেলা। ডঃ হিরাম বুঝতেও পারলেন না আমি কি করেছি।আমি তাকে বুঝালাম, বেটা টেস্টে তিনি নিজেই ইঞ্জিন চালালে ভাল হয়। তাতে শুধু বিজ্ঞানী হিসেবে তার মেধাই নয়, সাহসেরও স্বীকৃতি দিবে সবাই। ডঃ হিরাম খ্যাতির জন্য মরিয়া, তিনি রাজি হয়ে গেলেন।
সবকিছুই আমার প্ল্যানমত হল। বেটা টেস্টে তিনি যখন যান চালু করলেন, আমার ছোট্ট মডিফিকেশনের কারণে তাই হল যা কেউ কক্ষনো ভাবেনি।
যানটা আলোর বেগ লাভ করল।
কিন্তু ভর বিশিষ্ট কোন কিছুই আলোর বেগে যেতে পারেনা। তাই ডঃ হিরাম তার যান সহ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে পারটিকেল এনার্জিতে রূপান্তরিত হলেন। সেই এনার্জি আলোর বেগে পৃথিবী পার হয়ে বহুদূর চলে যায় তাই তেমন কোন ক্ষতি হয় নি। হ্যাঁ দশজনের মৃত্যু কিছুই নয় আমার বাবার হত্যার প্রতিশোধের কাছে।
আমি, গণচীনের প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ লী হানের কন্যা, ডঃ এমিলি হান। আজ গর্বের সাথে বলতে পারি, আমার পিতার হত্যাকারীর উপর উপযুক্ত প্রতিশোধই আমি নিয়েছি। শুধু আফসোস আমার ভালবাসা তাজকেও আমি হারিয়েছি প্রতিশোধের আগুনে। বেচারা, ডঃ হিরামের যানের অত কাছে না থাকলেই পারত সে!

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫৩
২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×