somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এপ্রিলফুলঃ অজানা কিছু ইতিহাস, এবং সময়ের বাস্তবতা।

৩১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এপ্রিলফুলঃ অজানা কিছু ইতিহাস,
এবং সময়ের বাস্তবতা।

(পুনঃসম্পাদনা,৩১/৩/২০১৫ঈ)

লেখকঃ জাস্টিস মুফতি তকি উছমানি।
রূপান্তরঃ ইসহাক ওমর।


পশ্চিমাদের নির্বোধ অনুকরণে,আমাদের
সমাজে যে সকল অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ
ঘটেছে,তার মধ্যে অন্যতম হল “এপ্রিলফুল“। এপ্রিলের এক তারিখককে কেন্দ্র করে,মিথ্যা বলে কাউকে ধোঁকা দেয়া,কিংবা প্রতারণার
ফাঁদে আটকিয়ে কাউকে
নির্বোধ বানানোকে বর্তমান
সময়ে আমাদের সমাজের
কিছু মানুষের শুধু অভ্যাসেই
পরিণত হয় নাই;বরং এ
কাজটা করে তারা
নিজেদেরকে “একটা কিছুও” ভাবে।
যে ব্যক্তি এই দিন যত বেশি মানুষকে ধোঁকায়
ফেলে বে-কুব বানাতে পারে,সমাজে
তাকে এই দিনের পরিপূর্ণ
“হক আদায়কারী”র চোখে দেখা হয়।

জানি না এই দিন পৃথিবীতে মিথ্যা আর প্রতারণার মাধ্যমে কতজন নিরপরাধ
মানুষের জান-মাল ধংস করা হয়।
মনে করেন,কেউ এসে হঠাৎ কাউকে একটা মিথ্যা সংবাদ শোনাল।আর বেচারা ঐ সংবাদের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে
হার্টফেল করে মারা গেল।
এই রসমটার মূলভিত্তিই হল মিথ্যা আর ধোঁকার উপর।
চারিত্রিকগতভাবে যা একেবারেই স্পট। কিন্তু,এই দিনের ইতিহাসটা ওই সকল
লোকদের জন্যও মারাত্নক এবং লজ্জার বিষয়,যারা হযরত ঈসা আঃ এর কথিত
“খোদাইয়ত”এর উপর ঈমান রাখে।

(এপ্রিলফুলের মূল)

এই কু-প্রথা-রসমটার গোড়াপত্তন
কোথায়,এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকগনের
ভিবিন্ন বর্ণনা আছে।
কিছু ইতিহাসবিদ বলেন,“ফ্রান্সে সতেরো শতাব্দির আগে বছর গণনা করা হত
জানুয়ারির পরিবর্তে এপ্রিল মাসে।আর
রোমানরা এই মাসটিকে তাদের
দেবতা(venus)বেনুশ এর
দিকে সম্পর্কিত করে পবিত্র মনে করত।ভেনুশ এর তরজমা ইংরেজী ভাষায়
Aphrodite করা হত।হয়ত এই নাম
থেকেই “এপ্রিল “নামের উৎপত্তি।
(ব্রিটেনিকা ১৫তমসংস্করণ,পৃঃ২৯,খঃ৮)

ইতিহাসবিদদের কথার
সারাংশ হচ্ছে এই,” যেহেতু
এপ্রিলের এক তারিখকে বৎসরের প্রথম দিন
হিসেবে গণনা করা হত,এবং এই দিনটা একটা মূর্তি -পূজার-পবিত্রতার সাথেও
সম্পর্কিত ছিল,তাই লোকজন এই
দিনটাকে আনন্দ-খুশির দিবস
হিসেবে পালন করত।আর এই
আনন্দ -খুশির একটা অংশ
ছিল,একে অপরের
সাথে ঠাট্টা –মশকারা করা।
ক্রমান্বয়ে যা এখন 'এপ্রিলফুলে'র রূপ ধারণ করেছে।
ব্রিটেনিকায় এই
অপসংস্কৃতিটার আরো একটি কারণ
বর্ণনা করা হয়েছে।যে,”একুশে মার্চ
থেকে প্রকৃতিতে পরিবর্তন
আসা শুরু করত।আর এই
পরিবর্তনটাকে কিছু লোক
মনে করত যে(নাউজুবিল্লাহ) “কুদরত আমাদেরসাথে ঠাট্টা করে আমাদেরকে নির্বোধ –বোকা বানাচ্ছে। "যার
কারণে তারাও এই দিনে একে অপরকে বোকা
বানানো শুরু করল।”
(বৃটেনিকা পৃঃ৪৯৬,খঃ১)

অন্য একটি কারন খৃস্টানদের
উনিশ শতাব্দির প্রসিদ্ধ
ইনসাইক্লোপিডিয়া 'লারুশ'
বর্ণনা করেছেন।
এবং এটাকেই বিশুদ্ধ –
নির্ভরযোগ্য হিসেবে বলা হয়েছে।
“ইহুদী এবং খৃস্টানদের বর্ণনা অনুযায়ী একে এপ্রিল ঐ তারিখ, যে দিন রোমান
আর ইহুদীদের পক্ষ থেকে হযরত
ঈসা (আলাইহিসালাম) কে ঠাট্টা -মশকারার বস্তু বানানো হয়েছিল।বর্তমান
সময়ের ইনজিলগুলতে এই
ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
'লুকার ' ইঞ্জিল এভাবেই
বর্ণনা করেছে,-”এবং যেই
লোক তাকে(ঈসা আঃ) গ্রেপ্তার করেছিল,এবং তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করেছিল,প্রহার করেছিল।এবং তাঁর চোখ বন্ধ করে তার মুখের উপর থাপ্পড়
মেরে বলেছিল, ”নবুওয়াতের মাধ্যমে বলো,তোমাকে কে প্রহার করেছে? "
এবং টিটকারি করে করে তার সাথে ভিবিন্ন উলটা- পাল্টা কথা বলত।”
(লুকাঃ২২ঃ২৩-৬৫)

ইনজিলসমূহতে বর্ণনা করা
হয়েছে,যে হযরত
ঈসা আলাইহিস সালামকে ইহুদীদের সর্দার
এবং বিচারকদের আদালতে পাঠানো
হয়েছিল।অতঃপর
তারা তাঁর বিচারের জন্য সেখান
থেকে 'পায়লাতুছ' এর
আদালতে পাঠাল।অতঃপর
পায়লাতুছ তাকে 'হায়রুজিস'
এর আদালতে পাঠাল।শেষ
পর্যন্ত 'হায়রুজিস' তাঁকে দিতীয়বার
বিচারের জন্য পায়লুতিছ এর আদালতে পাঠাল।লারুশের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত
ঈসা আঃকে এক আদালত থেকে অন্য
আদালতে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে কষ্ট
দেয়া এবং তার সাথে ঠাট্টা করা।
আর যেহেতু সেই সময়টা ছিল
এপ্রিলের এক তারিখে,তাই
উক্ত লজ্জাকর ঘটনার স্মরণ
হিসেবে এপ্রিলফুল প্রচলন শুরু হয়।

এপ্রিলফুল পালনের সময়
যে ব্যক্তিকে নির্বোধ বানানো হয়,ফরাসি
ভাষায় তাকে poissndavrll
বলা হয়।যার ইংরেজী অর্থ
হল, Aprilfish এপ্রিলের মাছ।
(ব্রিটেনিকা,পৃঃ৪৯৬খঃ১)

অর্থাৎ ধোঁকা দিয়ে যাকে বেকুব
বানানো হয়,তাকে এপ্রিলের
প্রথম মাছ হিসেবে বিবেচিত হয়, যাকে শিকার করা হয়েছে। কিন্তু,লারুশ উপরোক্ত
কথাগুলোর উপর ভিত্তিকরে বলেছেন,”যে
poissn শব্দটা posion শব্দের
বিকৃত রূপ।যার অর্থ হয় কষ্ট দেয়া।
সুতরাং এই রসমটাকে বাস্তবে ঐ
কষ্টকে স্মরণ করার জন্য নির্ধারিত
করা হয়েছে,যা খৃস্টানদের
বর্ণনা অনুযায়ী হযরত ঈসা আঃ কে দেয়া হয়েছিল।
যদি উপরোক্ত
কথাগুলো সত্যি হয়,যা লারুশ
সহ ভিবিন্ন ঐতিহাসিকগ্ণ খুব গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করেছেন।
তাহলে এ কথার মধ্যে কোন
সন্দেহ নায় যে,এই অপসংস্কৃতিটার একমাত্র উদ্ভাবক ইহুদিরাই।এবং এর
উদ্দেশ্য হল হযরত ঈসা আলাইহিসালাম
কে নিয়ে ঠাট্টা করা।

কিন্তু,বিষয়টা খুবই
আশ্চার্যজনক! যেই রসম
ইহুদিরা (নাউজুবিল্লাহ)হযরত
ঈসা আলাইহি সালামকে
ঠাট্টা করার জন্য আবিস্কার
করেছে,সেই রসমকে খৃস্টানরা শুধু
ঠান্ডা মস্তিস্কে গ্রহণই
করে নায়;বরং এটার প্রচার –
প্রসারে তারাও শরিক আছে।
এর কারণ এটা হয়ে পারে,যে
খৃস্টানরা এই রসমের ব্যাপারে অবগত নয়।যার কারণে নির্বোধের মত
তা পালন করে আসছে।
কিংবা এটাও হতে পারে যে খৃস্টানদের
আচার ব্যাবহার খুবই
আশ্চার্জজনক!
যেই ক্রুশের উপর হযরত
ঈসা আঃ কে কষ্ট দেয়ার
কথিত ইতিহাস আছে।
যেটা তাদের নিকট ঘৃণার
বস্তু হওয়া উচিত ছিল।কিন্তু
তাদের নিকট এটা হয়েগেল
একটা পবিত্রবস্তু(বর্তমান
সময়ের খৃস্টানরা এই ক্রুশকেই
বেশি পবিত্র মনে করে)।
অবস্থা যদি এমনিই
হয়,তাহলে এপ্রিলফুল
পালনে তাদের
বাধা কোথায়!
উপরোক্ত আলোচনার
মাধ্যমে একথা স্পষ্ট
হয়েগেল
যে,এপ্রিলফুল চাই 'ভেনিশ'
দেবতার রসম
হিসেবে হোক,কিংবা(
নাউজুবিল্লাহহ)প্রকৃতির
সাথে ঠাট্টার
উদ্দেশে হোক বা হযরত
ঈসা আঃ সাথে ঠাট্টা –
বেয়াদবির উদ্দেশে হোক।
প্রত্যেক অবস্থাতেই এই
রসমটাতে কয়েকটি বড়
গুনাহের সম্মিলন ঘটে।

১ঃমিথ্যা বলা,২ঃধোঁকা
দেয়া,৩ঃঅন্যকে কষ্ট
দেয়া,৪ঃএমন
একটা কুসংস্কার
পালনকরা যার ভিত্তি হয়ত
মূর্তি পূজার উপর, না হয়
শিরিকের উপর
কিংবা নবির
সাথে বেয়াদবির উপর।
এখন আমাদেরকে ফয়সালা করে
নিতে হবে,এই এপ্রিলফুল
পালন আমাদের জন্য কতটুকু
বৈধ।
আমাদের সমাজে কিছু
লোক আছে,যারা না বুঝে না শুনে
এই দিবসটা একে অপরের
মাঝে ভাগ করে। আশা করি তারা এপ্রিলফুল
এর ইতিহাসের দিকে একটু লক্ষ করলে তাদের ভুলের অবসান হবে এবং সঠিক বুঝও আসবে।

(যিকির ও ফিকিরঃ৬৬পৃঃ k.n.d.)
www.facebook.com/ishaqomar19

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×