কালের কণ্ঠ ঃঃঃঃঃ
সেনা অভ্যুত্থান পরিকল্পনার অন্যতম মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক গত ১০ জানুয়ারি অবস্থান নিয়েছিলেন রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকায়। ওই এলাকা থেকে একনাগাড়ে প্রায় ৯ ঘণ্টা নিজের মোবাইল ফোন থেকে অনেক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কথা বলার সময় একই এলাকার মধ্যে কৌশলগত কারণে নিজের অবস্থান পরিবর্তনও করেন তিনি। ফোনকলগুলো পরীক্ষা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তবে ১০ জানুয়ারি দুপুর ২টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় বিরামহীনভাবে অভ্যুত্থানের প্ররোচনা দেওয়ার পর থেকে মেজর জিয়ার মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ১০ জানুয়ারি এমনও ঘটনা ঘটে যে, মেজর জিয়া তৌফিক নামে একজন সেনা কর্মকর্তাকে টেলিফোনে বলেন, 'আরিফ অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে, আপনিও বেরিয়ে পড়েন।' তখন আরিফ নামের ওই সেনা কর্মকর্তা তৌফিকের সঙ্গে বসেই চা খাচ্ছিলেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, টেলিফোনে মেজর জিয়া যাঁদের কথা বলেছেন, যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, ফেসবুকে অপারেশন অর্ডার পাঠিয়েছেন- অভ্যুত্থান পরিকল্পনায় তাঁদের সবার সম্মতি ছিল না।
সূত্র আরো জানায়, গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকা সেনানিবাসের লগ এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল রেজা নূর সেনানিবাসের সব কর্মকর্তাকে মেজর জিয়ার ১০ জানুয়ারির টেলিফোন আলাপন শোনান। এ সময় অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার নাম বলেন তিনি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কুমিল্লার ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল কামরুজ্জামান, সাভারের ৩১ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার তারিকুল আলম, এমআইএসটি থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডে যোগ দেওয়া দুই মেজর (একজনের নাম মেজর খালেক), ৭০৩ মিডিয়াম ওয়ার্কশপে কর্মরত অপর একজন মেজর।
পরে সারোয়ার ও জগলুল হক নামের দুজন লে. কর্নেল এবং তানজিদ নামের একজন ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ আরো কয়েকজনকে ঢাকা লগ এরিয়ায় সংযুক্ত করা হয়। ঢাকার বাইরেও অনেককে নিবিড় পর্যবক্ষণে রাখা হয়েছে।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তাদের হাতে সেনা অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনের তালিকা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ গত রবিবার এবং গত রাতে বিমানবন্দর ও আশপাশ এলাকায় তালিকাভুক্তদের খোঁজে অভিযান চালায়।
গত ১৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে পিএস (পার্সোনাল সার্ভিস) পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রাজ্জাক বলেন, গত ৯ ও ১০ জানুয়ারি পলাতক মেজর জিয়া তাঁর কল্পিত দুটি অপারেশন আদেশ/নির্দেশের কপি ই-মেইলের মাধ্যমে চাকরিরত বিভিন্ন অফিসারদের কাছে পাঠান। এ ছাড়া ১০ জানুয়ারি মেজর জিয়া বিভিন্ন ফরমেশন ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত/অধ্যয়নরত সমমনা বা তাঁদের দলভুক্ত কয়েকজন অফিসারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেনা অভ্যুত্থানসংক্রান্ত প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বারবার উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন।