ধর্মীয় কট্টরতা পরিবারে না থাকা এবং ছোটবেলা থেকে ধর্মের পাপ পূন্যের চেয়ে ধর্মের ঐতিহ্যকেই সামনে রাখার কারনে ইসলামের প্রতি এই ভালোবাসাটা হয়তো বেশি।
সে হিসেবে যে কোনো কিছুতেই আমার হই হই করে ওঠার প্রবণতা কম। একটু সময় নিয়ে দেখি, বোঝার চেষ্টা করি, তারপর একটা সিদ্ধান্তে পৌছাই। আর আমি ধর্ম নিয়ে কাঁদা ছোড়াছুড়িতেও নেই। কারণ আমি জানি এ কাঁদা একটা সময় আর আমাকে লক্ষ্য করে আসবে না। লক্ষ্যবস্তু একটা সময় ধর্মের দিকে পরিবর্তিত হবে।
যে কারণে ব্লগের কোনো ধর্মীয় পোষ্টে এমন কি আস্তিক নাস্তিক পোস্টে আমার আনাগোনা কম। গেলেও যে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকি।
তবে যারা সরাসরি শুধু ইসলামকে অপবাদ দেবার জন্য পোষ্ট দেয়, আল্লাহ এবং তার প্রেরিত নবীদের বিরুদ্ধে অশালীন কথা প্রচার করে তাদের ব্যাপারে চরম ঘৃণাও পোষণ করি।
২.
এখন ব্লগে আরিফকে নিয়ে চলছে এক ধরণের পোষ্ট, পাল্টা পোষ্ট।
আরিফের অপরাধ?
সে একটা কার্টুন একেঁছে।
কার্টুনটা কি?
একটা প্রচলিত কৌতুককে সে এঁকে দিয়েছে।
এটা যে ছেপেছে তাদের কিছু হয়নি।
এটা যদি পাপ হয় তবে সেজন্য যাদের প্রাশ্চিত্ত করার কথা তারা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরেছে।
অদ্ভুত দেশ। ক্ষমতা থাকলে এদেশে নিজের পাপের প্রাশ্চিত্ত্য আরেকজনকে দিয়ে করানো যায়।
তবে তার আগে দেখা দরকার, এটা আসলে কী? এটা যদি পাপ ধরে মোল্লাগণ, তবে এরও বছর দশেক আগে এটা তাদের সমমনাদের কিশোর কণ্ঠে ছাপা হয়েছিল।
তখন তারা কোথায় ছিলেন? তখন কী তাহলে পৃথিবীতে পাপ পূণ্যের হিসাব সৃস্টি হয়নি?
৩.
আরিফ।
২০০৫ এর কোনো এক সকালে এক ছেলে ফোন করেছিল, ভাই একটা কার্টুন পাঠালাম, দেখবেন।
একটা পত্রিকার সাথে যুক্ত থাকার কারণে তার এই ফোন।
তার ভালো কার্টুন সেদিন ভালো ট্রিটমেণ্ট-এ ছাপাও হয়েছিল। তখন আরিফ, আরিফ ছিলনা। সিরাজগঞ্জের এক তরুণ, চোখে যার বড় শিল্পী হবার স্বপ্ন।
তারপর থেকে তার সাথে কথা হতো। তার সম্পর্কে যতটুকু জানতাম, সব দিকেই ভালো।
ধর্মের প্রতিও তার অনুরাগ কম না।
এরপর কয়েকটি পুরস্কার পাওয়া এবং স্বপ্নের বাস্তবায়নে আরিফের ঢাকা চলে আসা।
হঠাৎ সেই কার্টুন আঁকা।
কোনো ভুল নেই, আরিফ আসলে একই সঙ্গে প্রতিক্রিয়াশীল এবং তথাকথিত প্রগতিশীলদের স্বার্থে বলি হয়েছিল।
৪.
কাল আরিফের বিরুদ্ধে একটা রায় হয়েছে।
দুদিন আগেও তার সাথে ফেসবুকে কথা হয়েছে। আরিফ হয়তো নিজেও জানেনা এই ঘটনা।
যাই হোক, এখন আবার আরিফ ইস্যুতে ব্লগ গরম।
আরিফকে সালমান রুশদী আর তসলিমার লেভেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে এই ধারণা যাদের তারা হয়তো কেউ-ই ব্যাক্তিগতভাবে আরিফকে চেনেন না। যে দোষ আরিফকে দেয়া হচ্ছে, আসলে বিশ্বাস আরিফ নিজেও করে না। তাকে অযথা ইসলামের বিপরীতে দাঁড় করানোর কিছু নেই। সে নিজে ধর্মপরায়ন ছেলে।
যদিও আরিফের এই ধর্ম পরায়ণতার মূল্য এখন এদেশে নাই। ধর্মও এখন শো ডাউনের বিষয়। মোল্লাদের সাথে জুম্মার পর দুয়েকটা বিষয় নিয়ে রাস্তায় পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি ছাড়া ধর্ম পালন পুর্নাঙ্গ হয় না। ঈমানি সার্টিফিকেটও এখন তাদের হাতে।
কিন্তু ব্লগে আমরা সুস্থ মানুষগুলো কেন এই অযথা তর্কে জড়াচ্ছি?
আমাদের যদি সময় থাকে, বিতর্কের বিষয় না থাকে চলেন সবাই ঠিক করে একটা বিষয় নিয়ে বিতর্ক করি। তাও আরিফকে মুক্তি দেই।
কত্ত বিষয় আছে। কত্ত অমীমাংসিত বিষয় আছে। এই ধরেন 'ডিম আগে না মুরগী আগে' মতো বিষয়টার এখনো নিষ্পত্তি হলো না।
চলেন সেসব নিয়ে বিতর্ক করি আর আরিফকে মুক্তি দেই। আর যদি আরিফকে গালি দিতে ইচ্ছে করে একটু কষ্ট করে আগে তার খোঁজখবর নিয়ে নিই।
আরিফও মুক্তি পাবে। আমার ঐতিহ্যের ধর্মও মুক্তি পাবে এইসব কাঁদা থেকে।
আল্লাহ আমাদের জ্ঞান দান করুক।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৩৯