somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৃতির সপ্তমাশ্চর্য এবং আমরা (বাংলাদেশীরা)

০৪ ঠা জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুদিন ধরে (বছরের উপরে) ব্লগ সহ সব জায়গাতে প্রকৃতির সপ্তমাশ্চর্যের লিস্টিতে বাংলাদেশের কক্সবাজার আর সুন্দরবনকে ঢুকানোর জন্য অনেক ধরণের লেখা, গ্রুপ, প্রচেষ্টা দেখলাম। দৌড় দেয়ার আগে একটু দাড়ান! আমার কিছু কথা আছে এই ব্যাপারটা নিয়ে। কিছু সত্য আমাদের জানা দরকার।

কারা নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স আয়োজনকারী?
ওদের ওয়েব সাইট থেকে জানা গেল, আয়োজনকারী হলো একটা সুইস কর্পোরেশন যার নাম হলো: নিউ ওপেন ওয়ার্ল্ড কর্পোরেশন। হা! এটা একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যাদের লক্ষ্য হলো টাকা উপার্জন করা। এদের সাথে জাতিসংঘসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কোনো রকমের সম্পর্ক নেই। মোট কথা এটা শ্রেফ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। আর প্রতিযোগীতাটা হলো তাদের ব্যবসায়িক মডেল।

নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স-এর ভোট কিভাবে কাজ করে?
ওদের ওয়েব সাইট থেকে দেখা গেলো, আপনি নিম্নোক্ত ভাবে ভোট দিতে পারবেন:
১। ইমেইল
২। ফোন
৩। এস এম এস
ফোন এবং এস এম এস-এর জন্য তাদের ট্যাকনিকেল বিজনেস পার্টনার আছে। তার মানে, প্রতি কল অথবা এস এম এস-এর জন্য তাদের মুনাফা হয়। ইমেইলে একজন একটা ভোট দিতে পারবে। ফোন এবং এস এম এস-এ যত খুশি তত।

কিভাবে প্রতারণা:
১। তারা বিভিন্ন ওরগানাইজেশন-এর সাথে তাদের সম্পর্কের কথা বলেছে। এরকম কোনো সম্পর্ক কেউ এখনও স্বীকার করেনি। জাতিসংঘ তাদের ২০০৭ সালের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতির সপ্তমাশ্চর্য নিয়ে কিছু বলেনি।
২। কিছুদিন আগে, বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়েছিল, কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল একই আইপি থেকে অনেকগুলো ইমেইল এসেছিল। একই ফোন থেকে যত খুশি কল অথবা এস এম এস করে ভোট দিতে পারবেন। যেহেতু ইমেইল মুনাফা বাড়ায় না, তাই সেটা ইলিগ্যাল, আর ফোন এস এম এস মুনাফা বাড়ায় তাই লিগ্যাল।
৩। বলা হয়েছিল তারা লিস্ট ঘোষনা করবে ০৭.০৭. ২০০৭-এ লিসবনে। এখন ২০০৯-এর ০৭ মাস চলে আসতে যাচ্ছে। এতদিন ধরে এটা খোলা রাখার কারণ কি? এবং কবে এটা অফিশিয়ালি ঘোষনা দেয়া হবে? পরিষ্কার। সময়= মুনাফা = টাকা।
৪। সাইটটিতে ঢুকলেই একটা পপআপ আসে- এডভার্টাইজিং-এর। পপ আপ এর মাধ্যমে মানুষকে এড দেখতে বাধ্য করে রেভিনিও আয় করছে। এছাড়াও আছে, গুগল এড সেন্স সহ অনেক রকমের এড।
৫। তাদের রয়েছে বাহারী রকমের অফিশিয়াল (!) মার্চেন্ডাইজ বিজনেস। সেখানেও মুনাফা কম হ্ওয়ার কথা না।
৬। এই ২-৩ বছরে আমি কোনো জায়গায় (বাংলাদেশী মিডিয়া বাদে) এটার কথা শুনলাম না। এত্ত বড় মহান কাজ ভালো কোনো মিডিয়ায় ত আসার কথা।
৭। এই সংস্থার কোনো স্বীকৃতি নেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল থেকে। কিন্তু সাইটটি বলছে তারা অফিশিয়াল নির্বাচক। কাদের অফিশিয়াল? এরকম লিস্ট হাজারো আছে। প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেল এরকম ভোট করেছে (সিএনএন, বিবিসি)। সাধারণত ইউনেস্কো এ ধরণের কার্যক্রম করে থাকে (ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সহ অন্যান্য প্রজেক্ট)। ইউনেস্কো এদের সাথে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছে সরাসরি।

আমরা বাংলাদেশীরা:
আমরা তো বেজায় খুশি আমাদের দেশের কক্সবাজার আর সুন্দরবন এই লিস্ট-এ আছে। এখন জান প্রাণ দিতে হবে এদেরকে জিতানোর জন্য। সরকার একদিন ছুটিও দিয়ে দিল। সরকারের মত একটা সংস্থা কিভাবে এত বিচারবুদ্ধিহীন হতে পারে তা আমি আজও বুঝলাম না। যাই হোক, অনেকে তো উৎসাহের চোটে হাজারো ওয়েব সাইট বানানো শুরু করেছে। আছে বিভিন্ন ছোট খাট গ্রুপ- মোটা মুটি দেশের উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেল! আমি কয়েকটা জায়গায় কমেন্ট করেছিলাম যে দুই নাম্বারী করার দরকার কি? সবাই তখন আমাকে ধরেছে, দেশের জন্য দুই নাম্বারী করলে কিছু যায় আসেনা (আমি জানতাম এটা পাকবংশীয়দের চিন্তা ভাবনা- দু:খ একটাই এটা আমাদেরও গ্রাস করা শুরু করেছে।)
যাই হোক, প্রতারিত হয়ে আমরা যে কত আনন্দিত হ্ই, তা নিয়ে কথা বলতে গেলে আমার লেখা শেষ হবেনা।

কেন এত কথা?
অনেকদিন ধরে লিখব ভেবেও লিখিনি। ভাবতাম মানুষ আনন্দ পাচ্ছে, মন্দ কি? আমাদের আনন্দের উপলক্ষ যদিও অন্য অনেক জাতির চেয়ে অনেক বেশি.. হুট করে একটা চিটিং করার মেথড-এর লেখায় আরিফ ভাইয়ার একটা কথা মন ধরল। "এইটা চিটিং... এবং এভাবে সামাজিক পরিমন্ডলে চিটিং কে উৎসাহিত করাকে ঘৃনা করলাম। "। মনে হলো আজ আমার কিছু বলা দরকার। অন্যায় যে করে, অন্যায় যে সহে, সম ঘৃণা তব দহে।

শেষটা করি এভাবে:
আমি মিথ্যা বলবনা, আমি কিছুটা রেসিস্ট। আমার অনেক ভাল ২-১ জন পাকি বন্ধু আছে, কোনো কারণে তারাও নিজের দেশকে ঘৃণা করে। যাই হোক, নিতান্ত ভালো অথবা আমার সাথে কিছু করেননি বলে তাদের সাথে বন্ধুত্ব আছে। বাকি কোনো পাকিকে আমি দেখতে পারিনা। বিশেষ করে কিছু উল্টা পাল্টা কিছু হলেই "কইছিলাম এটা পাকি!" বোমা বানানোর প্লট? পাকি। বোমা হামলা? পাকি। আমার পরিচিত কানাডিয়ান মেয়েদের সাথে শুধুই শোয়ার জন্য সম্পর্ক? পাকি... পাকি যেন আমার কাছে সব অসততার প্রতীক। আচ্ছা, এসব ছোট ছোট বিষয় দিয়ে কি আমরাও আমাদের সত্তাকে তাদের কাতারে নিয়ে যাচ্ছিনা? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমার মত অন্যদেশি কারো কাছ থেকে শুনবেনা এই কথাটি: "বাংলাদেশ? ঐটা তো ২-নাম্বারী দেশ!"

আর কিছু বলতে ইচ্ছা হচ্ছেনা। শুধু সুকান্তর সাথে বলব:
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে।
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য ক'রে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


(আমি ভোট দেয়াকে নিরুৎসাহিত করছিনা। দুইনাম্বারীকে নিরুৎসাহিত করতে এই লেখা।)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১২:১৮
৩৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×