somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'পজিটিভ বাংলাদেশ'র নামে দুর্নীতি ও অনৈতিকতার পক্ষাবলম্বন!

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ॥ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস। পেশায় একজন অধ্যাপক। অর্থনীতি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। শান্তিতে নোবেল জয়ের পর তিনি গোটা দুনিয়াজুড়ে পরিচিতি পান। ক্ষুদ্র ঋণের স্রষ্টা বলে স্বীকৃত ড. ইউনুস! ইউরোপ ও আমেরিকায় আছে যার শক্ত খুঁটি।
বাংলাদেশের এই 'শিক্ষিত ভদ্র সুশিল' মানুষটি মূলত: গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের দারিদ্র্যতা নিয়েই ব্যবসা করছেন! এই ব্যবসা চলছে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। দারিদ্র্যমুক্তির স্লোগান নিয়ে পরিচালিত এই ব্যবসার মাধ্যমেই যিনি ইউরোপ-আমেরিকার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। বাংলাদেশে স্বাভাবিক নিয়মে ১৬ শতাংশের বেশি কোন সুদের প্রচলন নেই। অথচ নোবেলজয়ী ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার ৪০ শতাংশের অধিক। তবে কারও মতে, এই সুদের হার আরও কয়েকগুণ। এমনও খবর বেরিয়েছে যে, সুদের হার ১২৫ শতাংশ!
বাংলাদেশের বড় দুইটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতা নিয়ে কামড়া-কামড়ি করতে গিয়ে ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করে। এই সুবর্ণ সুযোগে ডক্টর ইউনুস দেশ শাসনের স্বপ্নও দেখেছিলেন। অবশ্য তার এই অভিলাষ শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রুপ নেয়নি। বেশ কিছুদিন আগে এই 'মহান' ব্যবসায়ি বলেছিলেন যে, 'বাংলাদেশের দারিদ্র্যতাকে জাদুঘরে দেখতে হবে'। কিন্তু বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। বরং দিন দিন দারিদ্র্যতা ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
নোবেল জয় করলেই অনৈতিকতা ও দুর্নীতির উর্দ্ধে উঠা যায়? ক্ষুদ্র ঋণের নামে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষকে দারিদ্র্যতা ও অনিশ্চয়তার জালে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। দীর্ঘ তিন দশক ধরে এই কাজটি অত্যন্ত সুচতুরভাবে করে আসছেন এই ইউনুস। দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তির নামে এই সামাজিক ব্যবসার কথা বলা হলেও দারিদ্র্যতাকে জিইয়ে রাখাই ড. ইউনুসদের মূল উদ্দেশ্য।
আর গ্রামের অতি সহজ-সরল দরিদ্র মানুষ তথা নারীদের দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসার ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করা হচ্ছে। শত শত, হাজার হাজার পরিবার আজ নি:স্ব, সহায়-সম্বলহীন। এসব নারীদের অধিকাংশই জানেন না লেখাপড়া। শুধুমাত্র স্বাক্ষরজ্ঞান আছে। অথচ তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় সিরিজ স্বাক্ষর ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে। ক্ষুদ্র ঋণদাতারা শুধু ঋণই দেয় না, ঋণগ্রহিতাদের সঞ্চয় গ্রহণ করে থাকে। অস্বাভাবিক আকাশচুম্বি চড়া সুদ আর সঞ্চয়ের টাকায় ঋণদাতারা চুটিয়ে ব্যবসা করছে। দরিদ্রদের ঘর খালি করে, সর্বশান্ত করে; ঋণদাতারা সেই দরিদ্র মানুষের টাকায় এসি বাড়ি, গাড়িসহ বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে থাকে। এছাড়া দুর্নীতি আর অনৈতিকতা যাদের নিত্যসঙ্গী।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা টম হাইনমান। এই সাহসী সাংবাদিকই বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণের নামে যে দুর্নীতি ও অনৈতিকতা চলছে তার প্রামাণ্য চিত্র তুলে ধরেছেন। জার্মানি, নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডের দেয়া ৭ কোটি ডলার ড. ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংক খেকে সরিয়ে নিয়েছেন। ইউনুসের বিরুদ্ধে গুরুতর এই অভিযোগসহ বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা ও দারিদ্র্যতার প্রামাণ্য চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন প্রায় ৫০ মিনিটের ডকুমেন্টারিতে।
ঈধঁমযঃ রহ গরপৎড় উবনঃ বা 'ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে' নামের এই ডকুমেন্টারিটি ৩০ নভেম্বর, ২০১০ নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন (এনআরকে) এ প্রচারিত হয়। এরপরই বিশ্বময় ইউনুস ও তার দারিদ্র্য ব্যবসা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ব্যাপক হৈ-ছে পড়ে গেছে। যার ছাপ সামাজিক গণমাধ্যমেও লক্ষ্যণীয়। অবশ্য ইউনুস ভক্তরা দারুণভাবে মর্মাহত, মুষড়ে পড়েছেন এই কঠিন অনৈতিকতা ও দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ায়। কেউ কেউ রীতিমতো ইফনুসের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য নরওয়েতে মিডিয়া সন্ত্রাসে ইউনুস 'নিহত' বলেও চিৎকার শুরু করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশে একদল মানুষ আছেন, যারা পজিটিভ বাংলাদেশের নামে বা ভাবমূর্তি নষ্টের জিগির তুলে দুর্নীতি এবং মানবাধিকার লংঘণ এবং অনৈতিকতার ঘটনাগুলিকে যেকোন উপায়ে ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লাগেন। এই পক্ষটি বিনা বিচারে মানুষ হত্যার পক্ষ নেয়। দুর্নীতিবাজ, ভন্ড, নীতিহীনদের সাফাই গাইতে সদা তৎপর। ড. ইউনুস নোবেল পেয়েছেন, তাই তার শত দুর্নীতি ও অনৈতিকতাতেও যেন দোষের কিছু নেই'। জ্ঞানপাপী এই মানুষগুলি পজিটিভ বাংলাদেশের নামে পরোক্ষভাবে দুর্নীতি ও অনৈতিকতার পক্ষেই দাঁড়িয়ে যায়।
একটা কথা স্মরণে রাখা দরকার। আর তা হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, দুর্নীতি ও সর্বগ্রাসী অনৈতিকতার সুতো ছিড়তে না পারলে সোনার বাংলার নাগাল পাওয়া যাবে না কোনদিনই। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা নিরাশাবাদি। শুধু দিন বদলের স্লোগান দিলেইতো আর রাতারাতি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়ে যাবে না। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাইলে সবার আগে বদলাতে হবে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, দুর্নীতি আর অনৈতিকতাকে। অবশ্যই এটা রাজনীতিকদেরই কাজ। কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় এই কাঙ্খিত ইতিবাচক পরিবর্তনটি সম্ভব কি করে তা আমরা বলতে পারি না?

জাহাঙ্গীর আলম আকাশ
সম্পাদক, ইউরো বাংলা
http://www.eurobangla.org/
[email protected]
http://jaakash.wordpress.com/
http://youtube.com7user/jaakashbd
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×