somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের অধিকার ও একজন লিমন-শেষ অংশ

০৬ ই মে, ২০১১ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিএসবি নিউজ চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যাবার পর প্রশাসন যেন সিএসবির ওপরের পুরো রাগ-আক্রোশ আমার ওপর দিয়ে পুষিয়ে নিলো। প্রশাসনের সাথে রাজনৈতিক দুর্নীতিবাজ-স্বার্থান্বেষী চক্রও যোগসাজশে মেতে উঠলো। দুর্নীতির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করায় সিএসবি নিউজ বন্ধ হয়ে যাবার আগেই ২০০৭ সালের ২০ জুন বোয়ালিয়া মডেল থানায় আমার নামে একটি কথিত চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে এজাহার দাখিল করেন নব্য আওয়ামী লীগার বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার মাহফুজুল আলম লোটন। সেই অভিযোগটি পুলিশ জিডি আকারে রেকর্ড করে (জিডি নং-১১৬০, তারিখ-২০/৬/২০০৭)। এই জিডির বিষয়টি আমি বুঝতে পারি একই বছরের আগষ্টের শেষ দিকে। শুনেছি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা অভিযোগটি ডাহা মিথ্যা বলে মামলা হিসেবে রেকর্ড করেননি। সেই জিডি তদন্ত করে পুলিশ কি পেয়েছিল তার রিপোর্ট আজও জানতে পারিনি। কিন্তু পরবর্তীতে র‌্যাবের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে রাজশাহীতে বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও তাঁর চাচা মাহফুজুল আলম লোটন পরিকল্পনামাফিক পুনরায় অভিযোগটি এজাহার হিসেবে বোয়ালিয়া মডেল থানায় জমা দেয়ার ব্যবস্থা করেন সিএসবি বন্ধ হয়ে যাবার দিনই অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৭। এরপর র‌্যাবের রাজশাহী-৫ এর তৎকালিন কমান্ডার লে.কর্ণেল শামসুজ্জামান খান, মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদ ও মেজর হুমায়ুন কবিরের চাপ ও হুমকিতে পুলিশ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে বাধ্য হয়।
হয়রানিমূলক পরিকল্পিত মামলা ও আমার গ্রেফতার, নির্যাতনের সাথে কাকতালীয়ভাবে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে যায় ২০০৭ সালের ২৩ অক্টোবরের পূর্বে। ২০০৭ সালের ২১ আগষ্ট রাবি ক্যাম্পাসে একদল দেশপ্রেমিক শিক্ষক ঢাবির ঘটনার প্রতিবাদে মৌন র‌্যালী বের করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় একটি শায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হয়। ঢাবির ঘটনার প্রেক্ষিতে মৌন প্রতিবাদ করা কোন দোষের কিংবা অন্যায়ের ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর সেনা সদস্যদের নির্যাতনের ঘটনার জের ধরে ২২ আগষ্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-বিক্ষোভকালে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ছাত্রশিবির ক্যাডার ও ৫৪৪ খ্যাত কর্মচারীদের একটি অংশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাংচুর, ধ্বংসযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। সংঘর্ষকালে ক্যাম্পাসে রিকশাচালক আফজাল হোসেন নিহত হন পুলিশের গুলিতে। ক্যাম্পাসের ভেতরে যখন ধ্বংসলীলা চলছিল ঠিক তখন রাজশাহী ডিজিএফআইয়ের একটি গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করছিল। ভেতরে বিক্ষুব্ধ অবস্থা বিবেচনা করে এখন ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে না বলে ডিজিএফআইয়ের সহকারী পরিচালককে বহনকারী গাড়িটিকে ভেতরে যেতে নিষেধ করেছিল সেখানে কর্মরত পুলিশ। কিন্তু ডিজিএফআইয়ের ওই কর্মকর্তা সেদিন পুলিশের অনুরোধের কর্ণপাত করেননি। ক্যাম্পাসের ভেতরে উপাচার্য ভবনে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা উপাচার্য মহোদয়ের সাথে কথাবার্তা বলে গাড়িতে ওঠে ফিরে যাচ্ছিলেন শহরে। এমন সময় উল্টো দিকে থেকে প্যারিস রোড দিয়ে নিহত রিকশা চালকের লাশ নিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা উপাচার্য ভবনের দিকে আসতেছিল। উপাচার্য ভবনের মূল ফটক অতিক্রম করামাত্র ডিজিএফআইয়ের গাড়িটির স্টার্ট রহস্যজনকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ওইসময়ই লাশ বহনকারী বিক্ষুব্ধরা ডিজিএফআইয়ের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতিতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পায় ডিজিএফআই তথা সেনাবাহিনী। জামায়াত নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা বাহিনী খুঁজে খুঁজে প্রগতিশীল শিক্ষকদের শায়েস্তা করতে ছাত্র-বিক্ষোভের ঘটনায় শিক্ষকদের বিরাট ষড়যন্ত্র আবিস্কার করতে সমর্থ হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নির্বাচিত উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল দলের তৎকালীন আহবায়ক অধ্যাপক আবদুস সোবহান ও প্রথাবিরোধী খ্যাতিমান নাট্যকার প্রগতিশীল শিক্ষকদলের অন্যতম নেতা মলয় ভৌমিককে তাঁদের নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা। এই গুণি শিক্ষকদের সেদিন কালো পোশাক পরা মানুষগুলো চোখ-মুখ ও হাত বেঁধে ধরে নিয়ে যায় সেনা ক্যাম্পে (র‌্যাবের টর্চার কেন্দ্র)। এরপর শিক্ষকদের সাথে সামান্য লে.কর্ণেল, মেজর ও ক্যাপ্টেন পদর্যাদার র‌্যাব সদস্যরা যে অসভ্য-অশোভন আচরণ করেছে তা ভাষায় বর্ণনা করার মত নয়। শুধু কি তাই? একাত্তরের সেই কঠিন দিনগুলোতেও পাক সেনারা যা করতে পারেনি তাই করেছে স্বাধীন দেশের র‌্যাব নামক এক দানব বাহিনী। যে বাহিনীর কর্মকান্ড মূলত: সরাসরি সংবিধান পরিপন্থি। গ্রেফতারকৃত তিন শিক্ষকের মধ্যে মলয় ভৌমিককে চরম অমানবিকভাবে নির্যাতন করে র‌্যাব সদস্যরা। তারা মলয় ভৌমিকের দু’পায়ের হাঁড় ফাটিয়ে দেয় লাঠি দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নম্র-ভদ্র সবার প্রিয় অধ্যাপক সাইদুর রহমান খানকে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে ঘুরানো হয়েছে। এরপর তিনি যখন চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়েছিলেন তখন তিনি গল গল করে বমি করেন। কিন্তু তবুও হায়েনাদের মনে এতটুকুও ভালবাসার প্রকাশ ঘটেনি এই গুণি শিক্ষকের ওপর নির্যাতন চালাতে। মিষ্টভাষী অধ্যাপক আবদুস সোবহানকেও নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে র‌্যাবের নির্যাতন ক্যাম্পে। অথচ জনগণের টাকায় যাদের খাওয়া ও পোশাক পরা হয় সেই র‌্যাব সদস্যদের মধ্যে এমনকি সেনাবাহিনীতেও অনেক বড় বড় পদমর্যাদার কর্তাব্যক্তি আছেন যারা এই তিন শিক্ষকের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৮ জন শিক্ষককে জেলে যেতে হয়। ক্যাম্পাসে চলমান আন্দোলনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নির্দেশনানুযায়ী রাবির জনসংযোগ দপ্তরের কর্মকর্তা জনাব সাদেকুল ইসলাম সেদিন ভিডিও চিত্র ধারণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তার নামেও গোয়েন্দারা সেদিন ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পেয়েছিল। সাদেকুল ইসলামকেও গ্রেফতার করে ডিজিএফআইয়ের গাড়ি পোড়ানো মামলায কারাগারে বন্দী জীবন কাটাতে হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অপর দুই শিক্ষক চৌধুরী সারোয়ার জাহান সজল ও গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু যাঁরা ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী। ধারণা করা হচ্ছে, এই একটিমাত্র কারণে এই দুই শিক্ষককে ডিজিএফআই সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় গাড়ি পোড়ানো মামলায় জেলে ঢুকিয়েছিল। সবমিলিয়ে যে মনে হচ্ছে যে, সেই স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক জামায়াত-শিবির চক্রকে খুশি করতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের নামে মামলা চাপানো ও গ্রেফতার করা হয়েছিল। একই ঘটনা ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক হারুন-অর রশিদ, অধ্যাপক সাদরুল আমিন, অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক প্রমূখের ক্ষেত্রেও। ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সেই অকুতোভয় দেশপ্রেমিক কর্ণেল আবু তাহেরের সহোদর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মিক্ষকদের বিরুদ্ধে করা চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর তথাকথিত প্রহসনের বিচার শুরু হয়েছে। আদালতে উৎসুক মানুষের ভীড়। পেশাগত কারণেই মামলার বিচার কার্য চলাকালে অনেকের মত আমিও প্রতিদিনই আদালতে গিয়েছি। সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরার বিষয়গুলোর পুংখানুপুংখ নোট নিয়েছি। সম্ভবত এই ঘটনার রেশ ধরেই আমার গ্রেফতারের আগে আরও একটি ঘটনা ঘটে রাজশাহীর আদালতে। ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আমি সকাল থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগে মতিহার থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ফেরদৌস আহম্মেদের করা বহুল আলোচিত মামলার জেরার শুনানি ছলছিল। আমি শুনানিকালে নোট নিচ্ছিলাম। আদালতের ভেতরে ছিলেন রাবির শিক্ষক ও মহিলা পরিষদ রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবা কানিজ কেয়া, শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ নাসের, রাবির দর্শন বিভাগের শিক্ষক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এস এম আবু বকরসহ রাবির বেশকিছু শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ জনতা। বেলা সোয়া দু’টায় রাজশাহী মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আদালতে প্রকাশ্য বিচার কার্যক্রম চলাকালে আমাকে পুলিশ লাঞ্ছিত করলো। আদালত মূলতবি অবস্থায় আমাকে টেনে-হিঁচড়ে গলা ধাক্কা দিয়ে আদালতের কক্ষ থেকে বের করে দিল পুলিশ। ঘটনার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তৎকালীন মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) মো. আফজাল হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলাম।
রাবির ঘটনায় ডিজিএফআই কর্মকর্তা শওকত আলী ও মতিহার থানার ওসি খোন্দকার ফেরদৌস আহম্মেদের করা মামলার চার্জ গঠনের দিন থেকেই আমি পেশাগত প্রয়োজনে প্রতিদিনই আদালতে যাই এবং সংশ্লিষ্ট মামলার সাক্ষী, জেরা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আদালতের ভেতরেই থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সকালে আইন-শৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আদালতের বিচারক মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম ফজলুল করিম চৌধুরীর আদালতে গেলাম। সকাল থেকেই সাক্ষী তথা বাদী ওসি ফেরদৌসের জেরা চলছিল। এ অবস্থায় বেলা দু’টায় ম্যাজিষ্ট্রেট কুড়ি মিনিটের জন্য আদালত মূলতবি করেন। এসময় আমি আদালতেই বসেছিলাম। এক পর্যায়ে সিএসআই কামালউদ্দিনসহ চার/পাঁচজন পুলিশ সদস্য এসে আমাকে আদালত থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পরিচয়পত্র দেখালাম। কিন্তু তারপরও পুলিশ সদস্যরা আমি টেনে-হিঁচড়ে গলা ধাক্কা দিয়ে আদালতের ভেতর থেকে বাইরে বের করে দেন। (সূত্র: দৈনিক ভোরের কাগজ, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৭, “রাজশাহীর আদালতে পুলিশের হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত”)।
২০০৭ সালের ২ অক্টোবর বোয়ালিয়া মডেল থানায় আমার বিরুদ্ধে জনাব লোটনের করা চাঁদাবাজি মামলা রেকর্ড হয়। আদালতে পুলিশ কর্তৃক লাঞ্ছনার ঘটনায় আমার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একই দিনে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আফজাল হোসেন (স্মারক নং-সিএমএম/রাজ/গো/১-১/৯৭-১১০৯, তারিখ-০২/১০/২০০৭) আমাকে নোটিশ করেন। নোটিশে বলা হয়, ‘২৬ সেপ্টেম্বর জনাব এস এম ফজলুল করিম চৌধুরীর আদালতে দায়িত্বরত পুলিশ কর্তৃক আদালত থেকে বের করে দেয়ার ঘটনার শুনানী ৪ অক্টোবর, ২০০৭ সকাল সাড়ে ৯টায় সিএমএম এর খাস কামরায় অনুষ্ঠিত হবে। আপনি আপনার সাক্ষীসহ উপস্থিত থাকবেন।’ ৪ অক্টোবর, ২০০৭ তারিখে আমি যথারীতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ নাসের, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবা কানিজ কেয়াসহ আরও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীসহ যথাসময়ে সিএমএম আদালতে হাজির হলাম। কিন্তু আদালতে পৌঁছেই খবর এলো যে, আমার নামে বোয়ালিয়া থানায় চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে, পুলিশ এখান থেকে (সিএমএম আদালত হতে) আমাকে গ্রেফতার করবে। এই পরিস্থিতিতে সিএমএম মহোদয়ের কাছে পরবর্তীতে সাক্ষী প্রদান করার জন্য সময়ের আবেদন জানিয়ে আমি দ্রুত আদালতস্থল ত্যাগ করি। ওইদিনই চলে আসি ঢাকায়। উদ্দেশ্য চাঁদাবাজি মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়া। কিন্তু সুপ্রিমকোর্টে চলছে অবকাশকালীন ছুটি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা এবং আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই সৈয়দ মামুন মাহবুব এর শরণাপন্ন হই। উনাকে ফোন করলে তিনি আমাকে তাঁর বাসায় যেতে বললেন। কথানুযায়ী উনার বাসায় গিয়ে মামলার সমস্ত কাগজপত্র দিয়ে আসলাম। উনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আমার জামিনের জন্য হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে ক্রিমিনাল মিসিলেনিয়াস কেস (নং-১৪৪৫৪/২০০৭) করেন। হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ (এ এফ এম আবদুর রহমান) এ এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ১৬ অক্টোবর, ২০০৭। শুনানি শেষে বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান আমার অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করলেন। অবশ্য তিনি শুনানিকালে প্রকাশ্য আদালতে বললেন যে, ‘তিনি (আমি) যে চাঁদাবাজি করেননি তার কি প্রমাণ আছে, আর সাংবাদিকরা কি সাধু চাঁদাবাজি করে না, সাংবাদিকদের উল্টাপাল্টা রিপোর্টের কারণেইতো দেশের আজ এই অবস্থা।’ মহামান্য বিচারপতি যখন উপরিল্লিখিত মন্তব্য করছিলেন তখন আমার ভীষণ লজ্জা পায়। ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগ হচ্ছিল আমার। আমিতো চাঁদাবাজি করিনি, তাহলে উনি এসব কথা কেন বলবেন? মনে মনে বলি, বিচারপতি মহোদয় কিভাবে বললে আপনি বিশ্বাস করবেন যে, আমি চাঁদাবাজ নই, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট। হয়ত বিচারপতি মহোদয়ের কথা ঠিক, কিন্তু সামগ্রিকভাবে কি এই মন্তব্যকে মেনে নেয়া যায়? তবে এটাতো ঠিক যে, আমাদের সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িতরা আমরা বুকে হাত দিয়ে ক’জনইবা বলতে পারি যে, আমি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, নীতিনিষ্ঠ, সত্যের পূজারী। এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, ২০০৩ সালের ১৯ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের পেছন পাতায় ‘রাজশাহীতে সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আমার নামে। এই রিপোর্ট করায় রাজশাহীর সব সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন। আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমারই জয় হয়েছিল। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার চার বছরের মাথায় নিজেই চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগের শিকার হলাম। তাই বিচারক মহোদয়ের কথায় শেষ পর্যন্ত আমার কোন রাগ হয়নি। কিন্তু গুটিকতক দুবৃত্তের জন্যতো আর গোটা পেশার মানুষদের অভিযুক্ত করা অনৈতিক। এই জবাবটা বিচার সাহেবকে দেয়ার সুযোগ ছিল না আমার।
হাইকোর্টে কেন আমার জন্য জামিনের আবেদন জানালেন তারজন্য শ্রদ্ধেয় সৈয়দ মামুন মাহবুবকে রাজশাহীর কৃতি সন্তান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নাকি মোবাইল করে বলেছেন যে, ‘ওতো (আমি) আমাদের পক্ষের লোক নয়। তুমি কেন ওর জন্য জামিন চাইলে?’ সত্যিই দারুণ লজ্জা, কষ্ট আর বেদনার। একজন জনপ্রতিনিধি, জাতীয় নেতার সন্তান এত ছোট মনের হবেন কেন? এটা ভাবতেই আমার কষ্ট, ঘৃণার সৃষ্টি হচ্ছে। হাইকোর্টের আদেশে জামিনে থাকার পরও আমাকে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে গ্রেফতার করে র‌্যাব সদস্যরা। আমাকে যে রাতে গ্রেফতার করা হয় বাসা থেকে, সেই দিনে রাজশাহীর সার্কিট হাউসে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ বিষয়ক জরুরী এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করি আমি নিজেও।
দৈনিক সংবাদ এ ২০০০ সালের ৪ মার্চ ঘটনাস্থল রাজশাহী সন্ত্রাসীদের ভয়ে দুটি পরিবার ঘর থেকে বেরুতে পারছে না মামলা হয়েছে পুলিশ চুপচাপ শীর্ষক শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় আমার নামে। এরই প্রেক্ষিতে ঠিকাদার মাহফুজুল আলম লোটন তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আমাকে হত্যা প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে ভুলবশত অন্য একজন সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ করে। এ ঘটনায় আমি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করি। বোয়ালিয়া থানার জিডি নম্বর ৩১০, তারিখ- ০৭/০৩/২০০০। এই ঘঁনাই মেয়র লিটন ও উনার চাচা লোটনের সঙ্গে আমার শত্রতার সূত্রপাত। ২০০২ সালের ৯ এপ্রিল একই পত্রিকায় ’দুর্নীতির অভিযোগে রাজশাহীর দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ্ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী পরিবর্তন’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্ট। এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি মেয়র লিটনদের পারিবারিক। এবং এই দুর্নীতির সঙ্গে মেয়র লিটনপক্ষই জড়িত। ২০০৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত হলো ’দেলোয়ার হোসেন ওয়াকফ্ এস্টেটের নয়া মোতাওয়াল্লীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ’ শীর্ষক শিরোনামে আরেক রিপোর্ট।
বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে রাজশাহীর পুঠিয়ায় মহিমা গণধর্ষণ ও আত্মহনন ঘটনা কারও অজানা নয়। সেই পুঠিয়ায় আবারও ধর্ষণ। ধর্ষণের ঘটনায় জনতার হাতে ধৃত ছাত্রদল ক্যাডার এই শিরোনামে ২০০২ সালের ২০ এপ্রিল প্রকাশিত হলো আরেক রিপোর্ট। রাজশাহীতে ধর্ষিতার পিতাকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের শিরোনামে আরেক রিপোর্ট প্রকাশিত হলো ২০০৫ সালের ৭ মে। রাজশাহীর পুঠিয়ার চাঞ্চল্যকর কিশোরী ধর্ষণ মামলার বাদী আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুল হালিমকে জিলাপির মধ্যে বিষ মিশিয়ে খাওয়ায়ে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত হালিমের ভাই হইদর আলী। ম্যাজিষ্ট্রেট পুঠিয়া থানার ওসিকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় মোট ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরা হলো অভিযুক্ত ধর্ষক হারুনের পিতা আবদুল জলিল, তার চার ভাই জামাল, জহুরুল, জাফর ও জাহাঙ্গীর, নিহত হালিমের আত্মীয় জহিরউদ্দিন এবং আবদুল হামেদ, তাজুল ইসলাম ও মহাবুল ওরফে মোবুল। আবদুল হামেদ, মোবুল ও তাজুল সরাসরি হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। এই হারুনের পিতাকে দিয়েই র‌্যাব আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করিয়েছিল। দৈনিক সংবাদেই বিভিন্ন সময়ে আমার পরিবেশিত একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয় রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও দলাদলির ওপর। ২০০৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় একটি রাজনৈতিক সন্ত্রাসের রিপোর্ট ’অভ্যন্তরীণ কোন্দল : দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা; সম্মেলন স্থগিত’ শীর্ষক শিরোনামে। ওইদিন তাজুল ফারুক হত্যাপ্রচেষ্টার জন্য মেয়র লিটনকেই দায়ি করা হয়েছিল। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগে পারিবারিকীকরণের প্রক্রিয়া শিরোনামে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালের ১৯ মে। ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারে প্রকাশ্যে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতা আহসান হাবিব বাবুকে। এখানেও ঘটনার নায়ক র‌্যাপিড একশান ব্যাটালিয়ান-র‌্যাব। এই ঘটনায়ও সাধারণ মানুষ র‌্যাবের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল। বাবু হত্যার ঘটনায় র‌্যাবের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তথাকথিত জুডিশিয়াল তদন্তে জায়েজ করা হয়। অর্থাৎ র‌্যাবকে বাঁচিয়ে দেয় বিচার বিভাগ। আর মজনু হত্যা মামলাটি এখনও থানায় ফাইল বন্দি। ঘটনার চার বছর অতিক্রম হচেলও মামলায় পুলিশ চার্জশিট দেয়নি। অথচ অসহায় দরিদ্র নিরপরাথ লিমন হোসেনের নামে করা র‌্যাবের মিথ্যা মামলায় চটজলদি চার্জশিট দিলো পুলিশ।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ এর ৫ অনুচ্ছেদে সুনির্দিষ্টভাবে নির্যাতনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেখানে বলা আছে, ‘কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্ছনাকর দন্ড দেওয়া যাইবে না। কিংবা কাহারো সহিত অনুরুপ ব্যবহার করা যাইবে না।’ আন্তর্জাতিকভাবেও নির্যাতন সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগে বাধ্য করা চলবে না।’ শুধু যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে নির্যাতন নিষিদ্ধ তাই নয় পৃথিবীর সকল ধর্মেই নির্যাতন নিষিদ্ধ। নির্যাতন নিষিদ্ধ পবিত্র কোরআন, বাইবেল, ত্রিপিটকেও। নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ‘কনভেনশন এগেইনেস্ট টর্চার-ক্যাট’ এ বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর অনুমোদন করে ১৪ নম্বর ধারাটি ছাড়া। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রিজার্ভ করা ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দৈহিক নির্যাতনের শিকার কোন বন্দি যাতে আইনগত প্রতিকার এবং যতটা সম্ভব পরিপূর্ণ পুনর্বাসনের বন্দোবস্তসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের সুযোগ পান, সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে। দৈহিক নির্যাতনে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার পোষ্যবৃন্দ উক্ত ক্ষতিপূরণের অধিকারী হইবে। জাতীয় আইনের আওতায় নির্যাতিত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণের কোন অধিকার এই ধারার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বা বাধাগ্রস্ত হবে না।’
নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী সংসদে একটি প্রাইভেট বিল উত্থাপন করেন ২০০৯ সালে। সেটিকে আজও আইনে পরিণত করা হয়নি। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্ষীয়ান নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল বারবার সংসদে ডিজিএফআইয়ের নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরেছেন। তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সংসদ তাঁর কথার কোন মূল্য দেয়নি আজও। এই হলো বাংলাদেশ!
আমার কী দুর্ভাগ্য দেখুন, শুধু আমার কর্মকান্ডের (রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নির্যাতন, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ আর দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী খবর পরিবেশন) কারণে আমার শ্বশুরকে বিগত ২৯ ডিসেম্বরের (২০০৮) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলেন না। শুধু কী তাই, তিনি যাতে স্বতস্ত্রভাবে নির্বাচন করতে না পারেন তার পথটিও বন্ধ করা হয়েছিল। একজন কোটিপতি ব্যবসায়িকে নমিনেশন দিলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে নামেন এবং আন্দোলনের মুখে তাঁকে নমিনেশন দেয়া হয়। কিন্তু ওটা যে ছিল একটা কৌশল তা বোঝা যায় তাঁকে চূড়ান্ত নমিনেশন না দেবার মধ্য দিয়ে। অথচ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এবং বর্তমানে রাজশাহী জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক বিগত ৪৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রগণ করে আসছেন। তিনি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক এবং খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা হারুন অর রশিদ বহুল আলোচিত মাগুড়ার উপনির্বাচনে কারচুপি জালিয়াতির প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন এবং একারণে রাজনৈতিক মামলায় হয়রাণির শিকার হন। আমার শ্বশুরই রাজশাহীতে প্রথম জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। একারণে তাঁকে এবং তাঁরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়ার্কাস পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ রাজশাহীর চারজন সাংবাদিককে বাংলা ভাই ও তার বাহিনী প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহু লোভনীয় অফার পেলেও কখনও আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাননি অন্য কোন দলে। যদিও যারা ফেরদৌস আহম্মেদ কোরেশীর সঙ্গে এবং ডিজিফআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংস্কারপন্থি হয়েছিলেন নিজের ব্যবসা রক্ষায়। তারাও রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নমিনেশন পেয়েছেন এমন নজির আছে। শোনা যাচ্ছে, র‌্যাব, ডিজিএফআই, আর্মি এবং রাজশাহীর মাননীয় মেয়র মহোদয়ের চাপেই নাকি আমার শ্বশুরকে নমিনেশন দেয়া হয়নি। আমরা জানি না এটা সত্য কিনা। কিন্তু যদি সত্য হয় তবে এটা রাজনীতির জন্য শুভ নয়। যার লক্ষণ ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অনেকেই বলছেন, সংসদ নাকি ব্যবসায়িদের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এইতো গত ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস চলে গেলো। আজ থেকে চার বছর আগে ২০০৭ সালের এই দিনে (৩ মে) আমাকে র‌্যাবের মেজর রাশীদ হত্যার হুমকি দিয়েছিল। বিষয়টি তুলে ধরতে চাই। রাজশাহীর এক সময়ের টপ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ বেনজিরকে র‌্যাব সদস্যরা ২০০৭ সালের ২ মে বিকেলে তার বাড়ির শোবার ঘরের বিছানায় গুলি করে। আর র‌্যাব সদস্যরা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে তার শিশুকন্যা ও স্ত্রীর সামনে। এতে তার দুই পা গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর তার বিছানায় পিস্তল রেখে তাকে অস্ত্র মামলায় চালান দেয়া হয়। এই মামলায় বেনজির এর দশ বছরের জেল হয়েছে। তিনি এখন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। বেনজিরের স্ত্রী মিনা জামান (২৬) বলেন, ‘গত ২ মে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সাদা পোশাকে RAB’র ৬ সদস্য আমাদের বাড়িতে আসে। তারা ড্রয়িং রুমে আধা ঘন্টা গল্প করে বেনজিরের সঙ্গে। আমাকে ডাইনিং টেবিলে আটকে রাখে তারা। তারা রান্নাঘর তল্লাশি করে। কিছুক্ষণ পর আরও ৮/৯ জন পোশাক পরা র‌্যাব সদস্য আসে। তারা আসার পরই বেনজিরকে শোবার ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে বিছানায় বসিয়ে RAB সদস্যরা বেনজিরের দু’পায়ে গুলি করে। বেনজিরের ডান পায়ের হাটুতে একটি গোঁড়ালিতে একটি এবং বাম পায়ের হাটুতে একটি গুলি করা হয়। আর ঘরের মেঝেতে তিনটি গুলি করে তারা। এসময় বেনজিরের শিশু কন্যা প্রিয়াংকা (১০) দৌঁড়ে তার বাবার কাছে যেতে চাইলে র‌্যাব সদস্যরা তার গলা টিপে ধরে। আর আমার দুই হাত ধরে আটকে রাখে র‌্যাব সদস্যরা। স্ত্রী ও কন্যার সামনেই র‌্যাব তাদের পকেট থেকে পিস্তল ও গুলি বের করে বিছানায় বেনজিরের হাতের কাছে রেখে দেয়। এরপর কয়েকজন সাংবাদিককে দিয়ে সেই ছবি তোলানো হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেনজির আধাঘন্টা অচেতন ছিলেন। অন্যায় না করেও আমার স্বামীর ওপর এতবড় অত্যাচার করা হলো। আমি সহ্য করছি কিন্তু আল্লাহ সইবে না। র‌্যাবের বিরুদ্ধে কিছু করতে চাই না। কারণ ওরা অনেক ক্ষমতার অধিকারী।’
বেনজিরকে ২০০২ সালে গ্রেফতার করে অপারেশন ক্লিনহার্ট এর সময় যৌথ বাহিনী। বেশ কিছুদিন জেল খাটার পর বেনজির জামিনে বেরিয়ে আসেন। প্রায় সবক’টি মামলায় তিনি খালাস পান। মূলত: তখন থেকেই বেনজির তার অতীত কর্মকান্ড ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে আসন বলে বিভিন্ন মহল থেকে শোনা যায়। এই সমাজ, রাষ্ট্র কাউকে ভাল হবার সুযোগও দেয় না। তার বড় প্রমাণ রাজশাহীর বেনজির। বেনজিরের গুলিবিদ্ধ হবার ঘটনাটি সিএসবি নিউজ এ প্রচারিত হলে ২০০৭ সালের ৩ মে রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদ সিএসবি নিউজ এর রাজশাহী ব্যুরো প্রধান তথা আমাকে মোবাইলে হুমকি দেন। সিএসবির রিপোর্টার ও ক্যামেরাকে RAB-৫ এর অপারেশনসহ সবধরনের কর্মকান্ডের আশেপাশে নিষিদ্ধ করা হলো বলে ঘোষণা দেয় ওই কর্মকর্তা। এই হুমকির বিষয়ে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন একটি আর্জেন্ট অ্যাপিল করে। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তদন্তের জন্য রাজশাহী মহানগর পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়।
রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আমাকে একটি চিঠি দেন (স্মারক নং-আরএমপি/মডেল থানা বোয়ালিয়া/২১২ (২)/১ তারিখ-২/৭/২০০৭) হুমকির বিষয়ে লিখিত বক্তব্য প্রদান করার জন্য। এরপর ২০০৭ সালের ৩ জুলাই বোয়ালিয়া মডেল থানায় সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত জবানবন্দিতে বলি-“গত ২ মে (২০০৭) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আমাদের কাছে খবর আসে যে নগরীর হোসেনীগঞ্জ বেতপট্রিতে মোহাম্মদ বেনজিরের বাসায় একটি ক্রসফায়ার এর ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি, আমার সহকর্মী তোফায়েল আহাম্মাদ এবং ক্যামেরাম্যান মোহাম্মদ মাসুদ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিডিও ফুটেজ সংগহ করি। র‌্যাব সদস্যরা সেখানে বেনজিরের বাড়ির শোবার ঘরে তার স্ত্রী ও শিশু কন্যার সামনে তার পায়ে গুলি করে এমন তথ্য পাই পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে। ঘটনাস্থলে অপারেশন পরিচালনাকারী র‌্যাবের কোন সদস্য ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। সন্ধ্যায় অফিসে ফিরে গিয়ে রিপোর্ট পাঠাই। যা রাত একটা থেকে প্রচারিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৩ মে, ২০০৭ দিবাগত রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে আমার ০১৭২০০৮৪৯৪৪ মোবাইলে র‌্যাব কর্মকর্তা (তৎকালীন) মেজর রাশীদুল হাসান রাশীদ তার ০১৭১৪০৪৯৪৩১ মোবাইল নম্বর থেকে আমাকে ফোন করেন। ফোন রিসিফ করে সালাম দেয়া মাত্র তিনি জানতে চান যে, গতকাল রাতে দুবার রিপোর্টটি প্রচার হয়ে বন্ধ হয়ে গেল কেন? জবাবে আমি বলি সেটা হেড অফিসের ব্যাপার। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে রিপোর্টটি প্রচার করেছেন। আমি বলি, এটা আমার পেশাগত দায়িত্ব, অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। তিনি বলেন, আপনি বেনজিরের স্ত্রীর বক্তব্য এবং তার শিশুকন্যার ক্রন্দনরত ছবি প্রচার করেছেন কেন? জবাবে আমি জানতে চাই, আপনি কি অফিসিয়ালী জানতে চাচ্ছেন? এ পর্যায়ে মেজর রাশীদ রুঢ় এবং মুখে উচ্চারণ করা যায় না এমন ভাষায়প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলেন, আপনি রিপোর্টটি কেন প্রচার করেছেন তার সঠিক জবাব দিতে না পারলে আপনার বিরুদ্ধে আমরাই ব্যবস্থা নেবো। আমি তাকে জনাই, আমি কোন অপরাধ করিনি।
মেজর রাশীদ আবারও জানতে চান এই বলে যে, অন্য কোন চ্যানেল এই রিপোর্ট প্রচার করেনি আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবেই প্রচার করেছেন এবং আপনার এই কাজটি এন্টি ইস্টেট একটিভিটির পর্যায়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, আপনি এবং আপনার কোন সহকর্মী ও সিএসবির ক্যামেরা যেন র‌্যাব ও র‌্যাবের কোন কর্মকান্ড তথা চৌহদ্দীর মধ্যে না আসে। এরপরও যদি র‌্যাবের কোন কর্মকান্ডের কাছে আপনাকে এবং সিএসবির ক্যামেরা দেখা যায় তাহলে র‌্যাব আপনার বিরুদ্ধে একশান এ যাবে। এরপর তিনি ফোনের (মোবাইল) সংযোগ কেটে দেন। পরবর্তীতে জানতি পারি যে, এই রিপোর্টটি সিএসবি নিউজ এ প্রচারিত হবার পর র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা সিএসবি নিউজ এর প্রধান বার্তা সম্পাদক জনাব আহমেদ জোবায়েরসহ কয়েকজন সাংবাদিককে মোবাইল করে হুমকি প্রদর্শন করেন। আমি ওইসময়ই পুলিশের কাছে আশংকা করেছিলাম যে, আমাকে হয়ত ক্রসফায়ার নাটকের শিকার হতে হবে র‌্যাবের দ্বারা! তার পাঁচ মাস পরেই র‌্যাব আমার ওপর প্রতিশোধের আগুন জ্বালায় সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনিভাবে।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা মেজর রাশীদ শুধু শুধু হুমকিই দেননি তিনি যথাযথভাবে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছেন আমার ওপর। আমাকে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে গ্রেফতার করে আমার ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালানো হয়। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী বাংলাদেশে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ সহসাই দেখে না। ঠিক একইভাবে আমাকে মেজর রাশীদের হুমকি প্রদানের ঘটনায় পুলিশ তদন্ত রিপোর্টটিও আজও প্রকাশ্যে আসেনি। আমাকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে তদন্তে কি পাওয়া গেছে, কি সুপারিশ দেয়া হয়েছে, রাষ্ট্রের সামান্য একজন কর্মচারী হয়ে কেন বেআইনীভাবে একজন সংবাদকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীর ওপর বর্বর নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে তার নামে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগের মামলা চাপিয়ে সমাজে হেয় করা হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর কি কখনও দেবে এই রাষ্ট্র, সমাজ।
মানবিকতা, নীতিবোধ, আইনের যথাযথ প্রয়োগ সবকিছুকে গিলে খাচ্ছে অসুস্থ্য রাজনীতি, অনৈতিকতা, সুবিধাবাদিতা ও তোষামদী সংস্কৃতি। এজন্য গুমাধ্যমও তার দায় এড়াতে পারেনা। গণমাধ্যম আছে তার নিজস্ব ব্যবসা ও রাজনৈতিক পছন্দ নিয়ে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। সব অন্যায়, অরাজকতা আর অনৈতিকতা হামলে পড়ছে জনগণ তথা সাধারণ মানুষের ওপর। জনগণের করের টাকায় লালিত রাষ্ট্রীয় বাহিনী হত্যা-নির্যাতন চালাচ্ছে জনগণকেই।
এখনও আমি কালোপোশাকধারী কোন কিছু দেখলেই আঁতকে উঠি। দুঃসহ যন্ত্রণা আর কষ্টের স্মৃতিগুলো এখনও আমাকে তাড়া করে ফেরে। অব্যাহত হুমকি ও আতংকের মুখে ২০০৯ সালে আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। আমার এই অবস্থার জন্য রাষ্ট্রই দায়ি। নির্যাতনকারিদের শাস্তি চাই। আমি বিচার চাই, ন্যায় বিচার। কিন্তু এটা আমি জানি যে, বিচার আমি পাবো না কোনদিনও। কারণ সেখানে বিচারতো অবিচারের হাতে বন্দি। আমার সোনার বাংলায় আইনের কোন শাসন নেই। আছে বিচার বহির্ভূত রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ও হত্যার রাষ্ট্রীয় বৈধতা। সেখানে ন্যায় বিচার আশা করা বাতুলতা ছাড়া আর কিছু নয়।
লেখক: মানবাধিকারবিষয়ক অনলাইন সংবাদপত্র ইউরো বাংলা'র সম্পাদক (http://www.eurobangla.org/, [email protected])
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×