somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তখন রমজানের পুরো মাসটা আমাদের শিশুদের জন্য একটি উৎসবের মাস ছিলো।

০৩ রা জুন, ২০১৮ রাত ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখনো মনে পড়ে নব্বই দশকের শেষের দিকে বয়সে ছোট থাকায় আমার বাবা-মা রোজা থাকতে দিতেন না। অনেক জেদ ধরতাম, কেন আমি রোজা রাখতে পারবোনা? তাছাড়া সেসময় একটি গান শুনে খুব আবেগী হয়ে উঠতাম গানটি ছিলো এরকম...

ঘুম থেকে কেউ ডাকলো না যে তাকে
ভোরে উঠে বল্লো ছেলে মা কে,
কেন আমায় ডাকোনি ঘুম থেকে
রাখলে রোজা আমায় ঘুমিয়ে রেখে,
পরের রাতে ঘুমায় না সে আর
রাখবে রোজা ভাবনা শুধু তার…

এ গানটি আজো আমার প্রিয় একটি গান। তখন যখন এ গানটি শুনতাম তখন মনে হতো আমিই সেই ছোট্ট ছেলেটি যাকে তার মা-বাবা সাহরীর সময় ডেকে দেন না। একদিন তো আমি নিজে নিজেই ঘুম থেকে উঠলাম রাত তিনটার সময় (আমি অবশ্য জানতাম না ঠিক ক’টায় উঠেছি পরে আম্মুর কাছ থেকে শুনেছি)। উঠে দেখি সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ভাবলাম সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে গেছে আমাকে ডাকেনি। আমি রান্না ঘরে ঢুকে খাওয়া শুরু করে দিলাম। খাওয়া যখন প্রায় শেষ তখন মা ঘুম থেকে জাগলেন। ঘুম থেকে উঠে মা আমাকে খেতে দেখে অনেক অবাক হলেন। তিনি প্রথমে ভাবলেন আমার বড্ড বেশী খিদে পেয়েছিলো। কিন্তু যখন জানলেন আমি কেন এভাবে একাই খেতে বসেছি তখনতো আমার মায়ের সেকি হাসি =D এরপর অনেক দিন আমার আত্বীয় স্বজনের হাস্য-কৌতুকে এই ঘটনাটি নিমেষেই এসে যেতো।

ছোটকালে রোজা আমার মা কখনই রাখতে দেন নি। মা-বাবা অনেক সুন্দর করে আমাকে বুঝাতেন। বলতেন দেখ, শিশুদের জন্য প্রতিদিন দুইটি রোজা হয়ে থাকে। সাহরীর পর থেকে দুপুর পর্যন্ত একটি রোজা। আবার দুপুর থেকে ইফতার পর্যন্ত আরেকটি রোজা। এই বলে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমাকে দুপুরে খাইয়ে দিতেন তারা। আমিও এ কথাটা খুব বিশ্বাস করতাম। ভাবতাম আসলেই দিনে দুটো রোজা হচ্ছে আমার। আমি যখন পাড়া-প্রতিবেশীদের বলতাম যে আমি দিনে দুইটি রোজা রাখছি তখন তারা অনেক হাসতো আর আমাকে উৎসাহ দিতো। তাদের সেই হাসির অর্থ তখন না বুঝলেও এখন ঠিক বুঝি।

আসলে তখন রোজার পুরো মাসটা আমাদের শিশুদের জন্য একটি উৎসবের মাস ছিলো। রোজা এলেই আমরা আনন্দে দুলে উঠতাম। ধার্মিক পরিবার আর অধার্মিক পরিবার নির্বিশেষে সকল পরিবানের শিশুদের কাছে রমজান একটি অতি কাংখিত মাস ছিলো। আমরা বাচ্চারা পরস্পর দেখা হলেই একে অপরের খোজ নিতাম যে কে কয়টা রোজা রাখলো। আর বড়রাও খুব আদর করে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করতেন কয়টা রোজা রেখেছি। আর ইফতার, তারাবীহ ও সেহেরী তো আছেই। এসব কারনে রোজা মানেই আমাদের কাছে আনন্দ ঘন একটি মাস ছিলো। এখন আর বাচ্চাদের মাঝে সেই উৎসব উৎসব রব এখন উঠতে দেখিনা। শুধুমাত্র ধার্মিক পরিবারের বাচ্চাদের মাঝেই যা একটু উচ্ছাস পরিলক্ষিত হয়।

আসলে দিন মাস আর বছর পেরুতে পেরুতে আমাদের বিশ্বাস ও কর্মের জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, যে পরিবর্তন অবশ্যই সুখকর নয় বরং আতংকের! আসলে রমজানের মাস আমাদের সময় একটি অতি কাংখিত মাস হয়েছিলো শুধু মাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতা আর বড়দের নিষ্ঠার কারনে। আজকে এদুটো কোথাও খুজে পাওয়া যায় না, তাই রোজা আসে যায় কিন্তু রোজার সমঝদার তৈরী হয় না!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×