লীগ, বিএনপি,জামাত না করলেও দেশের উন্নতি হতে বাধ্য যদি হতে পারেন এরকম
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বছরের পর বছর গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। জনদুর্ভোগ খুঁজে বের করে আর ১০ জনের সহায়তায় ঝাঁপিয়ে পড়ছেন সমাধানে। বগুড়ার জাহিদুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে বানিয়েছেন সাঁকো, ঈদগাহ, লাগিয়েছেন ৩০ হাজার ফলদ বৃক্ষ ।
বাড়ির পাশেই দিগদাইড় বিল। বিল পেরিয়ে ওপাশে গঞ্জের বাজারে প্রতিদিন নানা কাজে যাতায়াত করতে হয় শত শত মানুষকে। ঘাটের ছোট্ট ডিঙি নৌকাটির খোঁজ থাকে না অনেক সময়ই। সারা বছর গ্রামবাসী দুর্ভোগ পোহালেও মাথা ঘামায় না কেউ। এ অবস্থায় এগিয়ে এলেন জাহিদুল ইসলাম। নিজের ঝাঁড় এবং আশপাশের মানুষের কাছ থেকে চেয়ে নিলেন বাঁশ। ছোট ভাই জুয়েলকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করলেন প্রায় ২৫ ফুট লম্বা সাঁকো। স্বস্তির নিঃশ্ব্বাস ফেলল উভয় পারের মানুষ।
কিছুদিন পর গ্রামের যুবকদের নিয়ে হাড়ভাঙা শ্রমে পাশের পাঠানপাড়া গ্রামে বিল পারাপারে বানিয়ে ফেললেন প্রায় ৬০ ফুট লম্বা আরেকটি বাঁশের সাঁকো। আশপাশের মানুষের চোখমুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ দেখে জাহিদুলকে পেয়ে বসল উপকারের নেশায়।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের সোনাতলা উপজেলার নিভৃতপল্লী দিগদাইড় গ্রামে তাঁর বাস। ৪৫ বছর বয়সী জাহিদুল ইসলাম পেশায় মসজিদের ইমাম। তিন দশক ধরে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রাম থেকে গ্রামে। গ্রামে ঢুকে প্রথমেই বের করছেন জনদুর্ভোগের কারণ। তারপর সে সমস্যা সমাধানে সংঘবদ্ধ করছেন মানুষকে। যমুনাপারের সোনাতলা, সারিয়াকান্দি আর গাবতলীর অবহেলিত গ্রামগুলোতে নিজ উদ্যোগে, স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করেছেন প্রায় ৫০০ সাঁকো। সম্প্রতি গাবতলী উপজেলার কাঁকড়া বিলের ওপর প্রায় ৭০০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। তিন মাস ধরে চলেছে নির্মাণকাজ। সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ হাজার বাঁশ ও ১২ মণ লোহার পেরেক। সাঁকোটি বানানো শেষ হলে বগুড়ার নেপালতলী ইউনিয়নের শেখহাটি, জাতহলিদা, নারচী, বাঁশগাড়ি, পাড়কাঁকড়া, কুড়িপাড়া, ময়নাতলা, নিচকাঁকড়া, কাজলাপাড়া, ধলিরচর, চকরাধিকা, কদমতলী, সুখানপুকুরের লাখো মানুষের দুঃখ লাঘব হবে।
কেবল সাঁকো বানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই জাহিদুলের কার্যক্রম। দিগদাইড় গ্রামের পাশেই পাঠানপাড়ায় ৩০ ফুট গভীর গর্ত পূরণ করে তৈরি করেছেন ঈদগাহ। বাড়ির টিউবওয়েল থেকে পানি এনে ভিজিয়ে দেন রাস্তা। কাদায় পিচ্ছিল হয়ে বিপজ্জনক হয়ে পড়ে চলাচল। যেখানেই এসব চোখে পড়েছে সেখানেই পাইপ লাগিয়ে পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সুখানপুকুর সৈয়দ আহম্মদ কলেজ থেকে পাঠানপাড়া পর্যন্ত সাত কিলোমিটার জুড়ে লাগিয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার বনজ-ফলদ বৃক্ষ। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করেছেন তালের আঁটি। তাদের নিয়েই সেসব আঁটি লাগিয়েছেন রাস্তার ধারে। পরিকল্পনা করছেন শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা থেকে সারিয়াকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় তালগাছ লাগানোর।
কেন এই নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো_প্রশ্নের জবাবে শান্ত, সাদাসিধে মানুষটির মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল_'মানুষকে ভালোবাসার এসব দৃষ্টান্ত পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর বাংলাদেশ তৈরিতে উদ্বুব্ধ করবে।' ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, 'যদি আরো কিছুদিন বাঁচি আর আমাকে গ্রামের মানুষ সাহায্য-সহযোগিতা করেন, তাহলে এলাকায় পাবলিক লাইব্রেরি, এতিমখানা, গণকবরস্থান প্রতিষ্ঠা করব।' তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুখানপুকুর এমআরএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আহসান উল্লাহ বলেন, 'আমরা আগে তাঁকে চিনতাম না। কিন্তু এত এত ভালো কাজ করায় জাহিদুল এখন শুধু আমাদেরই নন, আশপাশের গ্রামগুলোরও আপনজনে পরিণত হয়েছেন।' ছেলের এ ধরনের কাজের ব্যাপারে মা জোহুরা জানালেন, 'আমার ছেলেটা কাজপাগল। তার এমন সেবামূলক কাজে গর্বে আমার বুক ভরে যায়।
' স্ত্রী শাহিন স্বামীর কাজকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, 'গরিব বলে আমাদের কোনো দুঃখ নেই। তবে দুঃখ পাই যেদিন কোনো মানুষের উপকার করতে না পারি।'
২৬টি মন্তব্য ৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ
গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন