somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জল কড়চা

২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
-



রাজধানী শহর ঢাকাতে বসবাস করিলেন অথচ আজিকে সন্ধ্যার পরে নিজ নীড় হইতে বাহির হইলেন না, তাহারা ঘরকুনো তো বটেই আমি তো বলিব কাপুরুষও বটে! এমন আনাড়ী বৃষ্টির তুমুল পতনের পরে গুপ্ত প্রকৃতি যে কতটা উন্মুক্ত হইয়াছে তাহা যাহারা আজিকে বাহিরে ছিলেন তাহারাই দর্শন করিয়াছেন এবং সুখের সে বাতাসে অবগাহন করিয়াছেন। টানা বর্ষনের পরে ভূমি উপরিমণ্ডল ছিল কাচের ন্যায় স্বচ্ছ, বায়ু ছিল নির্মল ও ভরপুর যৌবনবেগ প্রাপ্ত। রাস্তাঘাটে জল কিছুটা জমিয়া ছিল বৈকি তবে বায়ুর তীব্র বেগের সাথে তাল মিলাইয়া সে জল যেন সমুদ্রের ঊর্মীর মতই দোল খাইতেছিল। এমন বাতাস ও জলের উপস্থিতে নগরের রাস্তাঘাট, বাজার, অফিস আদালাত সবকিছুই ছিল শীতল। শীত যে আসি আসি করিতেছে তাহার অন্য আরও একটি লক্ষণ অবশ্য দেখা যাইতেছিল নগরের রাস্তায় রাস্তায়। পিঠা বিক্রেতা ছেলে বৃদ্ধ্বাদের ভ্যান গাড়ি মাটির চুলায় পিঠা সমেত দৃশ্যমান হইতেছিল যায়গায় যায়গায়। ডুবন্ত তেলে ময়দা ভাজিয়া ও সরষে ভর্তাযোগে তাহা পরিবেশনের দৃশ্য ছিল চোখে পরিবার মতই।

রাজপথে ছিল না ট্রাফিকপুলিশের বাড়াবাড়ি রকমের ব্যস্ততা, ছিল না একতলা কিংবা দ্বিতল বাসের ঘনঘন যাতায়েত। রিক্সার আধিক্য ছিল চোখে পড়িবার মতই। টুং টাং বেলের শব্দে পথঘাট যেন ফিরিয়া গিয়াছিল সত্তর কিংবা আশির দশকেই।

চা প্রিয় বাঙালীর সমস্ত আড্ডা আজ জমিয়াছিল সন্ধ্যার পরে চায়ের দোকানগুলোতে। দোকানিরা আজ চা বানাইতে বানাইতে হিমশিম খাইতেছিল বটে তবে অধিক বিক্রির হেতু উহাদের মনে যে বাড়তি খুশির বাতাস দোল খাইতেছিল তাহার কিছুটা ছাপ চোখেমুখেও দেখা যাইতেছিল। যা খাওয়াইয়া এবং খাইয়া দোকানী ও খরিদদার উভয়েই ছিল বেশ তুষ্ট।

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যাহারা নিয়মকরেই খিচুড়ি খাইয়াছেন তাহারা আজ আর খিচুড়ির দিকে না যাইয়া রাত্রের খাবারের মেন্যুতে যোগ করিয়াছেন সবজীর বাহারী পদ। তবে ব্যাচেলদের কাহারও কাহারও সাথে কথা বলিয়া জানা গিয়াছে যে তাহারা তাহাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যতালিকায় কোনরূপ পরিবর্তন না আনিয়া আজিকেও ডিম দিয়াই হাত কচলাইয়াছেন।

টানা দুই দিনের সাপ্তাহিক বন্ধ ও যুগপৎ বৃষ্টির এই ছন্দময় পতনে বাস ও মিনিবাস যেমন ছিল প্রায় ফাঁকা তেমনি নগরীর শপিংমলগুলোতেও ছিলনা তেমন কোন হৈহুল্লোড়। তবে আজিকে সন্ধ্যার পরে কিছুটা শোরগোল দেখা যাইতেছিল স্থানে স্থানে। ইহা যে রাজনৈতিক আয়োজন নয় বরং প্রাকৃতিক আহ্বানের ফল তাহা বুঝিতে হইলে ফেলু মিত্তির হইতে হইবে না।

বৃষ্টির হরেক রকম দুর্ভোগের সাথে সবথেকে উল্লেখযোগ্য দুর্ভোগ ছিল রাস্তায় জল জমিয়া গিয়া তাহা সড়ক হইতে নদীতে রূপান্তরিত হওয়া এবং ইন্টারনেট সংযোগ ক্যাবলে জল জমিয়া গতি ধীর হইয়া যাওয়া।
নগরবাসীর তাই আশা, বৃষ্টি যেমন ছুটির দিনে ভালই রোমাঞ্চকতা দিয়াছে তেমনি কর্মময় দিনে যেন বেরসিকতা না ঘটায়। রাত পোহালেই আবার বৃষ্টি হইবে কি হইবে না তাহা জানিবার জন্য আবহাওয়া অফিসের নিকট ধরনা দিতে হইলেও উহাদের উপরে যে জনগন খুব একটা আস্থা রাখিতে পারিতেছেন না তাহা তো সকলেরই জানা কথা। আস্থাটা তাই এবার বাড়িয়া গিয়াছে রেইনকোট ও ছাতা বিক্রেতাদের উপরেই।


কথাকেথি ও শায়মা হকের সাহিত্য খচখচানিতে অনুপ্রাণিত হইয়াই যে এহেন বঙ্কিমীয় সাহিত্যের উৎপত্তি হইয়াছে তাহা আর বলিবার প্রয়োজনীয়তা দেখি না। তাই উহাদিগকেই এই লেখা উৎসর্গ করা হইলো।


- ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৫
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×