বিকালবেলা নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে
বাসা থেকে বের হলাম।কিছুক্ষণ
নিলক্ষেতে ঘুরাঘুরি করে বই ঘাটাঘাটি
করলাম।তারপর নিউমার্কেটে বন্ধুদের সাথে
আড্ডা দিতে দিতে রাত্রি ৮.৩০ টা বেজে
গেল।এমন সময় বন্ধু মজিদ যে বন্ধুমহলে
সিনেমা মজিদ নামে পরিচিত সে বলল চল
লাস্ট শো সিনেমা দেখি।নতুন একটা
বাঙালী নায়িকা নাকি খুব ফাটাফাটি
অভিনয় করেছে। স্পাই টাইপের মুভি।সবাই
রাজী দেখে আমিও হ্যা বলে দিলাম।
সিনেমা দেখে ফিরছি।সিনেমা টা
সত্যিই উপভোগ করেছি।বাংলাদেশে
সিনেমা জগৎ এতটা উন্নতি করেছে দেখে
ভাল লাগলো। রাত্রি অনেক হয়েছে।আমার
বাসায় যেতে হলে ইডেন কলেজ পার হয়ে
যেতে হয়।কেমন জানি গা ছমছম করছে। ইডেন
কলেজের এরিয়া টা বেশ বড়।দিনের বেলা
এই এলাকাটা বেশ জমজমাট থাকে।সন্ধে
সাতটা পর্যন্ত ছেলে মেয়েরা গমগম করে এই
এলাকা। কেউ বান্ধবী দের পৌছে দিতে
আসে আবার কেউ নিয়ে যেতে আসে আবার
কারো অভিভাবক আসে।কিন্ত এই রাত্রি এক
টায় মৃত্যুপুরি মনে হচ্ছে।ইডেন কলেজ
সম্পর্কিত বেশ কিছু হরর কাহিনী শুনেছি।
আমি আবার খুব ভীতু। রাত্রে একা একা
বাথরুমে যেতেই ভয় পায়।ইডেন সম্পর্কিত
কাহিনী গুলা মনে আসছে।কলেজের হলের
পিছনে নাকি একটা তেতুল গাছে নাছোড়
বান্দা পিশাচী থাকত।একটা মেয়েকে
নাকি সে রাত্রি বেলা খেয়ে
ফেলেছিল। আবার কিছুদিন পর থেকে
নাকি সেই নতুন মেয়েটাও পিশাচী হয়ে
গিয়েছিল। এর পরে দুই একটা মেয়েকে
খেতে চাইলেও পারেনি।আবার হঠাত করে
আর একটা মেয়েকে দুই পিশাচী মিলে
শিকার বানাই।এর পর থেকে তিন জন হয়।
আবার একটা মেয়ে আত্নহত্যা করায়
চারজনের দল হয়।এভাবে বাড়তে বাড়তে
নাকি এগার জনে দাঁড়িয়েছিল দলটা। এরপর
কতৃপক্ষ তেতুল গাছটা কেটে ফেললেও
পিশাচী গুলা নাকি এখনো কলেজের
আশেপাশে ঘুরে।আমি কতক্ষণ দাড়িয়ে
নিউমার্কেটের দাড়োয়ানের সাথে গল্প
করলাম। দেখি রিকশা পাই কিনা।
পেলামনা। বাধ্য হয়ে হেটেই ফিরছি। ইডেন
কলেজের গেট অতিক্রম করার আগে দেখি
ভোজভাজির মত আমার সামনে কতগুলা
মেয়ে।ভয়ে আমি আধামরা।এই অবস্থায় ও
আমি গুনে দেখি ঠিক এগার টা মেয়ে।
আমাকে দেখে ওরা এগিয়ে আসতে
লাগলো। যেন হেটে নয় বাতাসে ভেসে
আসছে। আমার দুহাত সামনে এসে দাড়াল।
প্রত্যেকের চেহারা সাদাটে টাইপ।চাঁদের
আলোয় জলজল করছে। আমার দম বন্ধ হয়ে এলো।
আজ্ঞান হবার আগমুহূর্ত আমি অনুভব করলাম
পিছনে গড়্গড় আওয়াজ। তারপর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফিরলে দেখি একটা কুকুর আমার পাশ
ঘেসে দাড়িয়ে আছে।এখনো গড়্গড় করছে।
কুকুর টাকে কেমন চেনা মনে হল।হ্যা
তাইতো এটাতো আমাদের সেই ডগিটা।
আমি তখন ক্লাস এইটে।একদিন আমাদের ঘরের
পাশে একটা কুকুরে চারটা বাচ্চা দিল।খুব
সুন্দর তুলতুলে বাচ্চা। আমরা বাচ্চাদের
সাথে খেলতাম। বাচ্চাগুলা একটু বড় হওয়ার
পর আরও সুন্দর হলো।আমরা মায়ের চোখ ফাকি
দিয়ে বিস্কিটের টিন থেকে বিস্কিট চুরি
করে খাওয়াই। একে একে মা কুকুর টা সহ
তিনটা বাচ্চা কোথায় জানি চলে গেল।
কিন্তু একটা বাচ্চা রয়ে গেল।আমরা সবাই
মিলে বাচ্চাটার নাম দিলাম ডগিটা।
ডগিটা আস্তে আস্তে বড় হলো।খুব ভাল ছিল
ডগিটা। একবার ডগিটার খুব অসুখ হল।সারা
শরীরে ঘা।খুব কষ্ট পাচ্ছে। খাওয়া দাওয়া
ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু ঘরের আশেপাশে
আসেনা।ঘরের অপর পাশে পানি খেতে
ঘরের পিছন দিকের কাদাজল ভেঙে
যাতায়াত করে আমরা বুঝতাম যে আমাদের
বিরক্ত করতে চাইতনা।সে বার চিকিৎসক
দেখিয়ে ভাল করেছিলাম।কিন্তু কিছুদিন
পরে একটা ঘাতক ট্রাক আমাদের ডগিটা কে
পিষে দিয়েছিল।আমি সারাদিন কান্না
করেছিলাম। কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে
পড়েছিলাম। হঠাৎ রাত্রে ঘুম ভেঙে
গিয়েছিল। দেখেছিলাম ডগিটা আমায়
বলতেছে না খেয়ে ঘুমানো ভালনা।উঠ
খেয়ে নাও।আমি উঠে মাকে ডেকে বললাম
ডগিটা বলেছে খেয়ে ঘুমাতে সবাই মুখ
টিপে হেসেছিল।আজ আবার সেই ডগিটা।।
ডগিটা আমার চারপাশে ঘুরছে । আয়তনে
এখন একটা বাঘের সমান।আমি ঘড়িতে সময়
দেখি রাত আড়াইটা।ইডেন এর গেইটের
সামনে নাইট গার্ড দাড়িয়ে হাসতেছে।
বুঝলাম এই শালাও পিশাচ। মেয়ে গুলা
চারপাশে ঘুরতেছে।এগিয়ে এসে কোন অদৃশ্য
দেয়ালে বাধা পেয়ে ফিরে যায়।চিন্তা
শক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে,আবার অজ্ঞান হয়ে
গেলাম।জ্ঞান ফিরলে দেখি চারটা
বাজে।একটু পরে ফজরের আজান দিবে। মনে
হয় শেয বারের আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দুইটা নাইট গার্ড ও যোগ দিয়েছে।এমন সময়
দেখি প্রায় দশ,বারটা কুকুর আমার চতুর্দিক
বেষ্টন করে আছে।এমন সময় আজানের সুমধুর
শব্দে রাত্রির নিরবতা ভংগ হলো।সাথে
সাথেই কুকুর বা মেয়ে সব মিলিয়ে গেল।
আমি বিধস্থ শরীরে বাসায় গেলাম।
পরেরদিন বিকালবেলা ইডেনের গেইটে
গেলাম। দেখি সেই নাইট গার্ড দুজন আমার
দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইডেন
কলেজের গেইট পার হওয়ার সময়
দাড়োয়ানের ক্রুদ্ধ দৃষ্টি অনুভব করি।
এখনো মাঝে মাঝে সেই পিশাচী দের
অনুভব করতে পারি। বুঝতে পারি
নাছোড়বান্দা পিশাচী রা আমায় এখনো
চায়।যখন ওদের উপস্থিতি আশেপাশে অনুভব
করি তখন সাথে সাথেই কানে আসে ক্রুদ্ধ
গড়্গড় আওয়াজ।