somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প:ডগিটা

২২ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিকালবেলা নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে
বাসা থেকে বের হলাম।কিছুক্ষণ
নিলক্ষেতে ঘুরাঘুরি করে বই ঘাটাঘাটি
করলাম।তারপর নিউমার্কেটে বন্ধুদের সাথে
আড্ডা দিতে দিতে রাত্রি ৮.৩০ টা বেজে
গেল।এমন সময় বন্ধু মজিদ যে বন্ধুমহলে
সিনেমা মজিদ নামে পরিচিত সে বলল চল
লাস্ট শো সিনেমা দেখি।নতুন একটা
বাঙালী নায়িকা নাকি খুব ফাটাফাটি
অভিনয় করেছে। স্পাই টাইপের মুভি।সবাই
রাজী দেখে আমিও হ্যা বলে দিলাম।
সিনেমা দেখে ফিরছি।সিনেমা টা
সত্যিই উপভোগ করেছি।বাংলাদেশে
সিনেমা জগৎ এতটা উন্নতি করেছে দেখে
ভাল লাগলো। রাত্রি অনেক হয়েছে।আমার
বাসায় যেতে হলে ইডেন কলেজ পার হয়ে
যেতে হয়।কেমন জানি গা ছমছম করছে। ইডেন
কলেজের এরিয়া টা বেশ বড়।দিনের বেলা
এই এলাকাটা বেশ জমজমাট থাকে।সন্ধে
সাতটা পর্যন্ত ছেলে মেয়েরা গমগম করে এই
এলাকা। কেউ বান্ধবী দের পৌছে দিতে
আসে আবার কেউ নিয়ে যেতে আসে আবার
কারো অভিভাবক আসে।কিন্ত এই রাত্রি এক
টায় মৃত্যুপুরি মনে হচ্ছে।ইডেন কলেজ
সম্পর্কিত বেশ কিছু হরর কাহিনী শুনেছি।
আমি আবার খুব ভীতু। রাত্রে একা একা
বাথরুমে যেতেই ভয় পায়।ইডেন সম্পর্কিত
কাহিনী গুলা মনে আসছে।কলেজের হলের
পিছনে নাকি একটা তেতুল গাছে নাছোড়
বান্দা পিশাচী থাকত।একটা মেয়েকে
নাকি সে রাত্রি বেলা খেয়ে
ফেলেছিল। আবার কিছুদিন পর থেকে
নাকি সেই নতুন মেয়েটাও পিশাচী হয়ে
গিয়েছিল। এর পরে দুই একটা মেয়েকে
খেতে চাইলেও পারেনি।আবার হঠাত করে
আর একটা মেয়েকে দুই পিশাচী মিলে
শিকার বানাই।এর পর থেকে তিন জন হয়।
আবার একটা মেয়ে আত্নহত্যা করায়
চারজনের দল হয়।এভাবে বাড়তে বাড়তে
নাকি এগার জনে দাঁড়িয়েছিল দলটা। এরপর
কতৃপক্ষ তেতুল গাছটা কেটে ফেললেও
পিশাচী গুলা নাকি এখনো কলেজের
আশেপাশে ঘুরে।আমি কতক্ষণ দাড়িয়ে
নিউমার্কেটের দাড়োয়ানের সাথে গল্প
করলাম। দেখি রিকশা পাই কিনা।
পেলামনা। বাধ্য হয়ে হেটেই ফিরছি। ইডেন
কলেজের গেট অতিক্রম করার আগে দেখি
ভোজভাজির মত আমার সামনে কতগুলা
মেয়ে।ভয়ে আমি আধামরা।এই অবস্থায় ও
আমি গুনে দেখি ঠিক এগার টা মেয়ে।
আমাকে দেখে ওরা এগিয়ে আসতে
লাগলো। যেন হেটে নয় বাতাসে ভেসে
আসছে। আমার দুহাত সামনে এসে দাড়াল।
প্রত্যেকের চেহারা সাদাটে টাইপ।চাঁদের
আলোয় জলজল করছে। আমার দম বন্ধ হয়ে এলো।
আজ্ঞান হবার আগমুহূর্ত আমি অনুভব করলাম
পিছনে গড়্গড় আওয়াজ। তারপর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফিরলে দেখি একটা কুকুর আমার পাশ
ঘেসে দাড়িয়ে আছে।এখনো গড়্গড় করছে।
কুকুর টাকে কেমন চেনা মনে হল।হ্যা
তাইতো এটাতো আমাদের সেই ডগিটা।
আমি তখন ক্লাস এইটে।একদিন আমাদের ঘরের
পাশে একটা কুকুরে চারটা বাচ্চা দিল।খুব
সুন্দর তুলতুলে বাচ্চা। আমরা বাচ্চাদের
সাথে খেলতাম। বাচ্চাগুলা একটু বড় হওয়ার
পর আরও সুন্দর হলো।আমরা মায়ের চোখ ফাকি
দিয়ে বিস্কিটের টিন থেকে বিস্কিট চুরি
করে খাওয়াই। একে একে মা কুকুর টা সহ
তিনটা বাচ্চা কোথায় জানি চলে গেল।
কিন্তু একটা বাচ্চা রয়ে গেল।আমরা সবাই
মিলে বাচ্চাটার নাম দিলাম ডগিটা।
ডগিটা আস্তে আস্তে বড় হলো।খুব ভাল ছিল
ডগিটা। একবার ডগিটার খুব অসুখ হল।সারা
শরীরে ঘা।খুব কষ্ট পাচ্ছে। খাওয়া দাওয়া
ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু ঘরের আশেপাশে
আসেনা।ঘরের অপর পাশে পানি খেতে
ঘরের পিছন দিকের কাদাজল ভেঙে
যাতায়াত করে আমরা বুঝতাম যে আমাদের
বিরক্ত করতে চাইতনা।সে বার চিকিৎসক
দেখিয়ে ভাল করেছিলাম।কিন্তু কিছুদিন
পরে একটা ঘাতক ট্রাক আমাদের ডগিটা কে
পিষে দিয়েছিল।আমি সারাদিন কান্না
করেছিলাম। কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে
পড়েছিলাম। হঠাৎ রাত্রে ঘুম ভেঙে
গিয়েছিল। দেখেছিলাম ডগিটা আমায়
বলতেছে না খেয়ে ঘুমানো ভালনা।উঠ
খেয়ে নাও।আমি উঠে মাকে ডেকে বললাম
ডগিটা বলেছে খেয়ে ঘুমাতে সবাই মুখ
টিপে হেসেছিল।আজ আবার সেই ডগিটা।।
ডগিটা আমার চারপাশে ঘুরছে । আয়তনে
এখন একটা বাঘের সমান।আমি ঘড়িতে সময়
দেখি রাত আড়াইটা।ইডেন এর গেইটের
সামনে নাইট গার্ড দাড়িয়ে হাসতেছে।
বুঝলাম এই শালাও পিশাচ। মেয়ে গুলা
চারপাশে ঘুরতেছে।এগিয়ে এসে কোন অদৃশ্য
দেয়ালে বাধা পেয়ে ফিরে যায়।চিন্তা
শক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে,আবার অজ্ঞান হয়ে
গেলাম।জ্ঞান ফিরলে দেখি চারটা
বাজে।একটু পরে ফজরের আজান দিবে। মনে
হয় শেয বারের আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দুইটা নাইট গার্ড ও যোগ দিয়েছে।এমন সময়
দেখি প্রায় দশ,বারটা কুকুর আমার চতুর্দিক
বেষ্টন করে আছে।এমন সময় আজানের সুমধুর
শব্দে রাত্রির নিরবতা ভংগ হলো।সাথে
সাথেই কুকুর বা মেয়ে সব মিলিয়ে গেল।
আমি বিধস্থ শরীরে বাসায় গেলাম।
পরেরদিন বিকালবেলা ইডেনের গেইটে
গেলাম। দেখি সেই নাইট গার্ড দুজন আমার
দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইডেন
কলেজের গেইট পার হওয়ার সময়
দাড়োয়ানের ক্রুদ্ধ দৃষ্টি অনুভব করি।
এখনো মাঝে মাঝে সেই পিশাচী দের
অনুভব করতে পারি। বুঝতে পারি
নাছোড়বান্দা পিশাচী রা আমায় এখনো
চায়।যখন ওদের উপস্থিতি আশেপাশে অনুভব
করি তখন সাথে সাথেই কানে আসে ক্রুদ্ধ
গড়্গড় আওয়াজ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×