নামঃ আপাতত এর কোন নাম নেই
-------------------------প্রথম পর্ব----------------------------
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর
চাঁদ
মরিবার তার হল সাধ ;
...বধূ শুয়েছিল পাশে - শিশুটিও ছিল ;
প্রেম ছিল, আশা ছিল - জ্যোৎস্নায় - তবুও সে দেখিল
কোন ভূত ? ঘুম কেন ভেঙ্গে গেল তার ? ...
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল ;
লাশ কাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার ... ... ...
মেজাজটা এতো খারাপ হয়ে আছে!কিছুতেই ঠান্ডা করতে পারছিনা।মুখে গালাগালি কোন ক্রমেই বন্ধ করতে পারছিনা।মেজাজ টা আমার মাঝে মাঝে অনেক গরম হয়ে যায়।এটা থামানো দরকার।
আচ্ছা এটা কিসের লক্ষন?শুনেছি মানুষ যখন সব দিক দিয়ে একে একে ব্যর্থ হতে থাকে তখন সে জগত জীবনের ওপর বিতৃস্না অনুভব করে।একসময় চারপাশের সবাইকে তার শত্রু মনে হয়।তার মনে হয় জগতের সবাই তার বিরুদ্বে ষড়যন্ত্র করছে।তাকে ধংষ করার জন্যে সবাই বোধহয় একাট্টা।
তখন সে দ্রুত রাগে।প্রথমে রাগ থাকে তারপরে সেটা জিঘাংসায় রুপান্তরিত হয়।
একসময় তার মনে হয় জগতে সবাই সুখি আর সেই অসুখি।তখন সে দুই পথের একটী বেছে নেয়।কেউ নিজেকে মারে আর কেউ মারে অন্যকে।
এইধরনের চিন্তাধারা সম্পন্ন মানুষেরাই স্কুলে ঢুকে শিশুদের,কিংবা রাস্তায় পথচারীদের কিংবা সহপাঠিদের খুন করে অবশেষে আত্মহত্যা করে।
এখন প্রশ্ন হল আমার দ্বারা কি সেটা সম্ভব নাকি?
বাস্তবে বাইরে থেকে আমাকে দেখে বোঝার উপায় নেই।সবাই মোটামুটি বিভ্রান্ত হয়।শান্ত-ভদ্র ছেলে।কারোসাথে সমস্যায় যাইনা।কেউ বকা দিলেও জবাব দেই না।কোন জিনিস নিয়ে জিদাজিদি নেই।জিতা জিনিস ঠকে মজা পাই।
কেঊ মনে করে এটা আমার উদারতা,কেউ মনে করে বোকামি।
তবে একব্যাপারে সবাই একমত হবে।আমার দ্বারা বড় কোন অপকর্ম সম্ভব না।
কিন্তু আমি জানি আমার ভিতরে আর বাহিরে কত ফারাক।
আমার ভিতরে একবীর পুরুষ বাস করে।তার হাতে একে সাতচল্লিশ রাইফেল।তার কাজ গুলি করা।সে গুলি করে।সে কাকে গুলি করে?
যে রিকসা ওয়ালা আমার ভদ্রতার সুযোগ নিয়ে আমাকে ঝাড়ি দেয়।
যে দোকান দার আমার ভদ্রতার সুযোগ নিয়ে আমাকে ঠকায়।
যে বন্ধুরা আমাকে নিয়ে ফান করে।
যে মেয়ে আমাকে নিয়ে বান্ধবীদের সাথ মজার গল্প জমায়।
যে আমাকে আমার দেয়া প্রেম পঅত্র ছুড়ে মারে।
আমি তাদের কিছু বলিনা।
কিন্তু আমার ভিতরের জন গর্জে উঠে ।
সে রেগে যায়।
সে শাস্তি দেয়।
যে আমাকে ঠকিয়েছে।
যে আমার সরলতার সুযোগ নিয়েছে।
যে আমাকে বোকা বানিয়েছে।
আমার ন্যায্য জিনিস থেকে যে আমাকে বনচিত করেছে।
সে তাদের কঠোর হস্তে দমন করে।
সে তাদের লাইন ধরে দাড় করায়।তার হাতের একে সাতচল্লিশ গর্জে উঠে।একে একে আমার শ্ত্রুদের সে খতম করে।তারপর সে বিজয়ের হাসি হাসে।
আমি তার কাজ দেখি।আমি তাকে ভয় পাই।
এমনি ভাবে ভালো মানুষির চাদরে ঢেকে আমি পশু নিয়ে ঘুরে বেড়াই।মাঝে মাঝে চাদর ফুরে পশু বেড়ীয়ে আসতে চায়।আমি থামাই।
যেদিন পারবোণা?
যেদিন ভিতর বাহির উলটে যাবে সেদিন কি হবে?
সেদিন কাকে খুন করা হবে তার একটা লিষ্ট অলরেডী বানানো হয়ে গিয়েছে।
এভাবেচলছে আমার দুইজীবন।
-------------------------সেকেন্ডপর্ব-----------------------
আরো একটি রাত কাটলো নির্ঘুম।ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ার পরেও ঘুমানো সম্ভব হলোনা।বিছানায় এপাশ ওপাশ করলাম কিছুক্ষন।মোবাইলে গান শোনার চেষ্টা করলাম।ভাল লাগলোনা।রেখে দিলাম।
কালকে কয়েকজনের সাথে ঝগড়া হয়েছিল।সেখানে নিজের অজান্তেই খারাপ ভাষা চলে আসলো।আমি দিন দিন অসহিঞ্চু হয়ে যাচ্ছি এটাই বোধহয় তার প্রমান।বাল ছাল ছাড়া কথা বলতে ভাল লাগেনা।অকারনে মানুষের সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দিচ্ছি।এটাতো ভাল লক্ষন নয়।ব্যাড,ভেরি ব্যাড।
ফেসবুকে ঢুকলাম সেখানেও কয়েকজনের সাথে লেগে গেল।একজনের ষ্টাটাসে কমেন্ট দিলাম।সে অযথাই উলটা পালটা রিপ্লাই দিয়া মাথা খারাপ করে দিল।সেই রাগ অন্য অনেকের উপর ঝেড়ে বেরিয়ে আসলাম।
শুয়ে শুয়ে সারাদিনের কথা চিন্তা করলাম।গত কয়েকদিনে একটূকুও পড়া হয়নাই,অনেক পড়া জমে আছে।পরীক্ষা চলে আসছে।বোধহয় এই পরীক্ষাটাও খারাপ করব।যাহোক ব্যাপারনা।পরীক্ষা দিয়ে কি লাভ।আমি যেহেতু বেশি দিন বেচে থাকছিনা মিছে এই সব ঝামেলা করে কি লাভ।
অধিকাংশ সাইকোরাই রাতে ঘুমাতে পারেনা।রাতে তাদের অস্থিরতা বেড়ে যায়।আর তাদের মাঝে যারা এক্সট্রিম তারা রাতে মিশনে বের হয়।আমিও বের হই।আমার মিশন কি?
আমার মিশন গভীর রাতে রাস্তায় হাটাহাটি করা।নিশুতি রাতে রাস্তাঘাটে মানুষজন থাকেনা।শহরের বিশাল বিশাল রাস্তা গুলো সাপের মত শুয়ে থাকে।সারাদিন শত সহস্র ভার বয়ে হয়তো তখন সে ঘুমায়।মাঝে মাঝে টুংটাং রিক্সা চলে।আমি হাটি।রাতের রাজপথে আমি সাহিত্যের বাস্তব রুপ দেই।এভাবে তার সাথে আমার এক গভীর ভালবাসা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে।যে ভালবাসার আহবান আমি উপেক্ষা করতে পারিনা।তাই প্রতিনিয়ত ছুটে যাই।
রাস্তায় হাটতে হাটতে আমার বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচয় হয়।ছিচকে চোর,দোকানদার,রিক্সাওয়ালা,পতিতা রাতের শহরের অধিপতি।আমি তাদের একজন হয়ে যাই।
একদিন ইচ্ছে হলো কারওয়ান বাজারের দিকে যাই।হাটতে হাটতে চলে গেলাম।টুকরি বিছানা বানিয়ে ঘুমানো মানুষদের সাথে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে এলাম।
একদিন গিয়েছিলাম কমলা পুর রেলষ্টেশনে।পরনে ছেড়া লুংগী আর গেঞ্জী।অল্প কিছু টাকা।পেপার বিছিয়ে সারারাত ঘুমালাম।সকালে টাকা দিয়ে কয়েকবোতল পানি কিনে বিক্রি করা শুরু করলাম।কিন্তু আমি জানতাম না যে সেখানেও জীবন এত সহজ নয়।কয়েকজন হকার এসে আমার পানি কেড়ে নিতে চাইলো।একজন একটা চড় মারলো।আমি ভ্যাবাচ্যাকার মত দাঁড়িয়ে রইলাম।আমার ভিতর গর্জে উঠলো,বাহির নিশ্চুপ রইলো।
আমার শান্ত রুপ দেখে তাদের দলনেতার দয়া হল।তারপরে নির্দিষ্ট বখরার বিনিময়ে আমি ষ্টেশনে ফেরি করার পারমিশন পেলাম।
দুএক দিনের ভিতরেই আমি তাদের একজন হয়ে গেলাম।সারাদিন ফেরি করি,রাত্রে একসাথে ঘুমাই।আলাউদ্দনিন,ফোকরান,রাজীব এদের সাথে আমার সবচেয়ে বেশি খাতির হয়ে গেল।আমি ভাল হিসাব জানি,শুদ্ব ভাষায় কথা বলতে পারি।তাদের জিজ্ঞাসার জবাবে বললাম আমি বড়লোকের বাসার কাজের ছেলে ছিলাম তাই টুকটাক শিখেছি।
যেহেতু দলে ভিতরে আমি সবচেয়ে চালাক,বুদ্বিমান তাই তারা সব টাকা আমার কাছে জমা রাখতে শুরু করল।এভাবে মাসখানেক চললো।আমি ততোদিনে হকার সমাজে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে ফেলেছি।
তারপর একদিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে চিটাগাঙ্গের ট্রেনে করে চলে গেলাম চিটাগাং,পকেটে সবার সঞ্চয় দশ হাজার টাকা।চিটাগাং পৌছে ভাল জামাকাপড় কিনলাম।এক বন্ধুর বাসায় উঠলাম।তারপর তাকে নিয়ে সেন্টমার্টিন কক্সবাজার ঘুরে একমাস পরে হলে ফিরলাম।
একটা টার্ম মিস হয়ে গেল।
আম্মা বেচে থাকলে এই খবর শুনলে নির্ঘাত হার্ট এটাক করতো।আব্বা মারা গেছে অনেক আগে।আম্মা অনেক কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন।আমার রেজাল্টের খবরে আমার চেয়ে আম্মা বেশি খুশি হতেন।কিন্তু একদিন তিনি টুপ করে মারা গেলেন।
আর এই দুনিয়ায় আমার কোন পিছুটান রইলোনা।আমি হয়ে পড়লাম স্বাধীন।মুক্ত বিহংগের মত ডানা মেলে উড়াল দিলাম আকাশে।জীবনের যত সাধ আহলাদ সব মিটাতে লাগলাম একে একে।
আম্মা যখন ছিল তখন মনে হত আম্মা না থাকলে কি হবে।এই চিন্তায় মাঝে মাঝে ঘুমাতে পারতাম না।যেই পৃথিবীতে আম্মা নেই সেখানে আমি কিভাবে থাকবো সেটা আমার ধারনায় আসতোনা।কিন্তু যেদিন আম্মা মরে গেল সেদিন আমি দুঃখের বদলে আনন্দ অনুভব করলাম।বহুদিনের বাধন ছিড়ার মজা পেলাম।
আম্মার লাশ দেখতে আমি বাড়ি যাইনাই।শুনেছি আম্মা মরার সময় নাকি বারবার আমাকে দেখতে চাইছিল।তখন আমি সিলেটে পিকনিক করছি।একটা লাশ দেখার চেয়ে পিকনিক করা অনেক মজাদার কাজ।
----------------------পর্ব তিন----------------------------------
চিটাগাং থেকে হলে ফিরলাম।খবর পেলাম এডভাইজার স্যার ডেকেছেন।নিজের ভিতরে কোণ তাড়া অনুভব করলাম না।গেলাম না।এদিকে কোর্স রেজিষ্ট্রেশনের টাইম চলে যায়।বন্ধুরা সবাই রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলেছে।আমি করবো কিনা বুঝতে পারছিলাম না।কারন আমার পড়তে ইচ্ছা করেনা।পড়াশোনা করার যে ধৈর্য্য লাগে তা আর আমার মাঝে সামান্য ও নাই।
ভুল বললাম শুধু পড়ালেখা নয় আমার তখন কিছুই ভাল লাগেনা।খাই,খাইনা।সকালে খেয়েছি সারাদিন খাবার খবর নাই।রাতে কোণ বন্ধু দেখা গেল খাবার নিয়ে আসছে।ইচ্ছা হল খেলাম।নাহলে ফেলে দিলাম।গোছল করিনা অনেক দিন।রুমের বাইরে যেতে ভাল লাগেনা।সারাদিন রুমে পড়ে থাকি।চুপচাপ শুয়ে শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকি।
আস্তে আস্তে শরীরের অবস্থা খারাপ হতে থাকলো।গত কয়েকমাস শরীরের ওপর অনেক ধকল গিয়েছে।তার ফল এখন পাওয়া শুরু হয়েছে।তাছাড়া ঠিকমত খাওয়া দাওয়া না করার কারনে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিল।এসব বিভিন্নমুখি কারনে আমি একসময় চরম অসুস্ত হয়ে পড়লাম।
বিছানা থেকে নামা সম্ভব হয় না।একা উঠে দাড়াতে পারিনা।সে সময় আমার বন্ধুরা আমার পাশে ছিল।তারা আমার সেবা যত্নের সাধ্যমত চেষ্টা করেছে।আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
একদিন বিছানায় শুয়ে আছি।রুমে কেউ নাই,আমি অনেকটা সুস্থ।তাই বন্ধুরা আমার আশেপাশে নাই।আমার হঠাত মায়ের কথা মনে পড়লো।
এস এস সি পরিক্ষার আগে একসময় আমাকে পড়ার নেশায় পেয়েছিল।পড়তে পড়তে একসময় আমার মাথা যন্ত্রনা দেখা দিল।তীব্র মাথার যন্ত্রনা।মাথা খাড়া করতে পারিনা।সেই সময় আমার মা আমার জন্যে অনেক কষ্ট করেছিলেন।ভাল ডাক্তার দেখাবেন সেই টাকা নেই।এদিকে আমি অসুস্থ বিছানায় পড়ে আছি।কিছুদিন পরে এস এস সি পরীক্ষা।
মা আমার চিন্তায় পাগলের মত হয়ে গেলেন।সারাদিন আমার পাশে বসে থাকেন।মাথায় পানি দেন।রান্নার ফাকে ফাকে এসে দেখে যান।
নানা জন নানা ধরনের চিকিতসার কথা বললো।কেউ বললো থাঙ্কুনি পাতা মাথায় বেটে দিলে যন্ত্রনার উপশম হয়।মা থানকুনি পাতা কুড়িয়ে বেটে দিলেন আমার মাথায়।পাশের বাড়ির চাচী বললেন বান্দরের হোলা নামের গাছ বেটে মাথায় দিলে নাকি নিশ্চিত ছেড়ে যাবে।
কিন্তু সেটা কোথায় পাওয়া যাবে।একজন খবর দিল পাশের গ্রামে নাকি আছে।মা তখনি রওয়ানা দিলেন।
সেদিন অনেক দিন পড়ে মায়ের কথা মনে পড়ল।যে মাকে আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।একটা সময় আমার জীবনে মায়ের ভুমিকা ছিল আকাশ ছোয়া।আমার সমস্ত জগত জুড়ে মায়ের অবস্থান ছিল।সে অবস্থান থেকে তাকে আমি প্রায় ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
নিজের দিকে তাকালাম।আমি একজন এতীম ছেলে।মেধার জোরে ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।বাবা মা নেই।বোনদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই।আত্মীয় স্বজনরা পরিচয় দেয়না।এই পৃথিবীতে কেউ আমাকে ভালবাসেনা।কেউ আমার কথা চিন্তা করেনা।
আজ যদি আমি মরে যাই তাহলে আমার জন্যে কাদার লোক ও তো নেই।
নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হল।অসহায় মনে হল।এই বিরাট পৃথিবীতে এত মানুষ তাদের কেউ আমাকে নিয়ে ভাবেনা।আমি চলে গেলে তাদের কারো কিছু আসবে যাবেনা।বিশাল শুন্যতা গ্রাস করল আমাকে।
মায়ের মৃত্যুর পর যে স্বাধীনতা অনুভব করেছিলাম সেই স্বাধিনতা আজ আমাকে সাপ হয়ে দংশন করতে লাগল।
বার বার মায়ের মুখ ভেসে উঠতে লাগলো।এই জীবনে আমি মার ছাড়া কারো ভালবাসা পাইনাই।সবার অনাদর আর অবহেলা মা তার ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিলেন।দরিদ্র ছিলাম।সবাই অবহেলা করত।
মা তার স্নেহের বিশাল ছায়া দিয়ে সকল অনাদর অবহেলা থেকে আমাকে সরিয়ে রাখতেন।
আমাকে অন্য জীবনের স্বপ্ন দেখাতেন।বড় মানুষের গল্প বলতেন।তার আশা ছিল তার ছেলে একদিন অনেক বড় মানুষ হবে।সব অবহেলার জবাব দিবে।তার সকল কষ্ট ঘুচিয়ে দেবে।
আমার লেখাপড়ার জন্যে তিনি অনেক কষ্ট করতেন।আমার ব্যাপারে মা ফ্যানাটিক এত মতো আচরন করতেন।আমি ছিলাম তার একমাত্র সম্বল।সারাজীবন তিনি অনেক কষ্ট করেছেন,অনেক অবহেলিত হয়েছেন।আমার মাধ্যমে সে সবের জবাব দিতে তিনে উন্মুখ ছিলেন।
মা নেই।
মরে গেছে।
এক বুক আশা নিয়ে বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে।তার ছেলের বড়মানুষি দেখে যাওয়ার ভাগ্য তার হয়নি,অনেক কথার জবাব দেবার সুযোগ তিনি পাননি।তিনি কি এখন মরে শান্তিতে আছেন।আমার মনে হল অতৃপ্তির বেদনা তাকে অন্ধকার কবরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
আমি সিদ্বান্ত নিলাম আবার পড়ালেখা শুরু করতে হবে।
--------------------------------পর্ব চার----------------------
পরের দিন এডভাইজর স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম।ততদিনে ডেট শেষ।কিন্তু স্যার আমার কথা জানতেন।তাই অনেক ঝামেলা করে রেজিষ্ট্রেশন করে দিলেন।
নতুন ক্লাশ শুরু হল।নিয়মিত ক্লাস করা শুরু করলাম।ক্লাসের পড়া ঐ দিন বাসায় এসে শেষ করে ফেলতাম।সব বই কিনে নিলাম।ক্লাসের যারা পড়ুয়া তাদের সাথে খাতির করে ফেললাম।লাইব্রেরীতে যাওয়া শুরু করলাম।
প্রথম দিকে কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে আমি ধাতস্থ হতে শুরু করলাম।আস্তে আস্তে সবকিছু আয়ত্বের ভিতরে চলে আসতে শুরু করল।স্যার ক্লাস টেষ্টের ঘোষনা দিলেন।কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ভাল নাম্বার পেলাম না।
মন খারাপ করলাম না।স্যারের সাথে দেখা করলাম।সব খুলে বললাম।স্যার কিছু টিপস দিলেন।যার ফল হাতে নাতে পেলাম।পরবর্তী ক্লাস টেষ্টে সবচেয়ে বেশি মার্ক পেলাম।
এভাবে চলতে থাকলো।প্রতিটা সাবজেক্টেই আমি ভাল করতে থাকলাম।ক্লাসে আমার একটা অবস্থান হয়ে গেল।অনেকেই এখন দেখা গেল আমার সাথে খাতির করে,একসাথে বসে।মাঝে মাঝে রুমে আসে।
ক্লাসে অনেক গুলো সার্কেল আছে।সব ছাত্ররাই কোন না কোন সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত।সকল কাজ এই সার্কেল কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়।এক সার্কেলের সাথে আরেক সার্কেলের শত্রুতা না থাকলেও বন্ধুত্ব ও বিরাজিত ছিলনা।
একমাত্র আমিই ব্যাতিক্রম।একা একা ঘুরি।প্রতিদিন প্রথম বেঞ্চের এক কোনে বসি।একা একা চলা ফেরা করি।কারো সাথে শ্ত্রুতা নেই,বন্ধুতা ও জমে উঠেনি।
বেশ কয়েকটা সার্কেল আমাকে দলে ভেড়াতে চেষ্টা করল।আমি কার দলেই ঢুকলাম না।একাকি রয়ে গেলাম।আমার তাতে কোন সমস্যা রইল না।
আমার জীবনে আমি খুব অল্প সময় শান্তিতে কাটিয়েছি,এমন সময় আমার জীবনে কমই ছিল যখন আমার মন স্থির ছিল।কিন্তু এই সময় আমি নতুন ভাবে বেচেছিলাম।এক নতুন সুখের নেষায় আমি পাগল ছিলাম।আমার মাথায় যেন প্রিণ্ট করে পড়ালেখার ভালবাসা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল।
কোন বন্ধু নেই,প্রেমিকা থাকার প্রশ্নই ওঠেনা।আমার সমগ্র ধ্যান জ্ঞান জুড়ে তখন ছিল বই।বইয়ের সাথেই গড়ে উঠেছিল আমার নিবিড় বন্ধুত্ব।এই পৃথিবীতে কত কিছু জানার জিনিস আছে তা না জেনে কিভাবে বাচা যায়!সকল কিছু না জেনে আমার শান্তি নেই।সব জানতে হবে।পাঠ্য বই,এর বাইরে অন্য বই যা পেয়েছি পাগলের মত পড়েছি।
আমি ভাবতাম
আমি অন্যরকম।
আমি দেখতে সুন্দর নই।
আমার শারীরিক যোগ্যতা নেই।
আমার বাবা ধনী নয় ইনফ্যাক্ট আমার বাবা মা কেউ নেই।
অন্যের বিপদে পাশে দাড়ানোর লোকের যেমন অভাব,নেই আমার বিপদে পাশে দাড়ানোর তেমন কেউ নেই।
আমার শুধু একটা জিনিস আছে।
আমার মেধা।
সৃষ্টি কর্তা আমাকে মেধা দিয়েছেন।আর কিছুই দেননাই।সুতরাং আমাকে এই মেধা নিয়েই আগাতে হবে।
আমাকে জানতে হবে এমন কিছু যা কেউ জানেনা।
তারপরে এমন কিছু করতে হবে যা কেউ কখনো করেনি।
আমার অবদানের কারনে আমি হয়তো মানুষের মাঝে চিরদিন বেচে থাকব।
এই কিছু নতুনের নেষাই আমাকে সরিয়ে রেখেছিল বাইরের জগত থেকে।কিংবা স্বাভাবিকতা থেকে।
এই সময় আমি শুধু পড়েছি,দিন রাত্র সারাদিন।দিনের পর দিন।রাতের পর রাত।নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে শুধু পড়া।
আমার একটা বন্ধু ছিল অনেক আগে।আমার কারনে সে সবসময় সেকেন্ড হত।
একবার তার মনে প্রথম হবার ব্যাপক আগ্রহ হয়েছিল।সেই সময় আমি দেখেছিলাম পড়া কাকে বলে।
একদিন তার সাথে দেখা করতে গিয়ে শুনি গত তিন দিন ধরে সে একটানা পড়ছে।এরপরে অনেক দিন তার কোন খোজ নেই।
একসময় সে আমার সাথে দেখা করতে আসল।আমাকে বললো তাকে প্রশ্ন করতে।আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিল সে।তার সকল প্রশ্নে আমি আটকে গিয়েছিলাম।
সে পুরো বই লাইন লাইন মুখস্ত করেছিল।
সেই দিন আমার মনে প্রথম স্থান হারাণোর ভয় চেপে বসেছিল।
কিন্তু আমাকে তা হারাতে হয়নি।কারন আমার সেই বন্ধু জীবনে আর কখনো পরীক্ষা দিতে পারেনি।
অধিক পড়া শোণার কারনে পরীক্ষার আগে তার মাথায় সমস্যা দেখা দেয়।সে আর কোন দিন পরীক্ষার হলে বসতে পারেনি।আমি ও আর সেকেন্ড হইনি।
মাঝে মাঝে তার জন্যে আমার মন খারাপ হয়।জীবনের অনেক বড় কিন্তু ওজনে ক্ষুদ্র এক চাওয়া তার পুরন হয়নি।প্রকৃতি হতে দেয়নি।
আমি তার এত পড়ার কোন মানে খুজে সেদিন পাইনি।বুঝতে পারিনাই তার মনে কি ছিল।আজ আমি বুঝছি।কিন্তু অনেক পরে।
আগের রুপেও আমি একা ছিলাম।এখন ও আমি একা।
আগের রুপে আমি রাস্তার পাগল ছিলাম।
এখন আমি জ্ঞানের পাগল হয়েছি।
এই যা পার্থক্য।
একদিন একদিন করে মাসের পরে মাস চলে গেল।একসময় টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা এল।বিপুল উতসাহ নিয়ে আমি পরীক্ষা দিলাম।
একসময় পরীক্ষা শেষ হল।
দীর্ঘ সময় রেজাল্টের প্রতিক্ষা শেষে রেজাল্ট পেলাম।
(চলবে)