বিশিষ্ট ব্লগাররা ভুত দেখছেন! মডারেশনের ভুত!
বিস্তর মাথা ঘামিয়েও কুল কিনারা পাওয়া যাচ্ছে না কেন ১০০% নিরাপদ পোস্টও মুছে ফেলা হচ্ছে, কেন কারও কারও স্ট্যাটাস অবনমিত হচ্ছে? বিন্দুমাত্র বিরুদ্ধাচরনও কেন আগের মতো প্রশ্রয় পাচ্ছে না? এর মাঝে এমন কি ঘটনা ঘটে গেল? অকস্মাৎ কেন আমাদের ব্লগ জীবন অমসৃণ আর কঠিন হয়ে গেল।
কৃতজ্ঞতা বিশ্বস্ততা শব্দগুলার বানান কি মডারেটররা ভুলে যেতে চাচ্ছেন?
সামহোয়ারের সেই সব পাঠক প্রিয় বিশিষ্ট ব্লগারদের সঙ্গীসাথীরা (যারা নিজেরাও যথেষ্ট জনপ্রিয়) ঘন ঘন অভিযোগ তুলছেন—তারা ইদানীং ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে যথেষ্ঠ মাত্রার গুরুত্ব এবং সম্মান পাচ্ছেন না। জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ হিসাবে সামহোয়ারের আজকের এই অবস্থানে উঠে আসার পিছনে এই সব শীর্ষস্থানীয় ব্লগারদের যা অবদান, ব্লগ কর্তৃপক্ষ আজ তা ভুলে যেতে চাইছেন—উপেক্ষা করতে চাচ্ছেন। তাদের ঘাম ঝরানো শ্রম আর নিষ্ঠা আজ ব্লগ পরিচালকদের কাছে হয়ে উঠছে মুল্যহীন। ক্রুদ্ধ ব্লগাররা অভিমানে আহত হয়েছেন—এই ক্রোধ আরও পুঞ্জিভুত হলে কেউ কেউ নিজ নিজ একাউন্ট ক্লোজ করে সামহোয়ার ছাড়ার ঘোষনাও দিচ্ছেন। ব্লগ কার্যক্রমে সাময়িক যতি টেনে সীমিত করে ফেলেছেন সক্রিয়তা। ব্লগ কর্তৃপক্ষের সাথে মুখোমুখি সংঘাতের চরম মাত্রায় পৌছে গেছেন—ক্ষুব্ধ অপমানিত আর হতাশ এই সব বিশিষ্ট ব্লগার বৃন্দ।
বিশিষ্ট ব্লগারদের কেউ কেউ সুন্দরবনের বাঘ বাঁচাও প্রকল্পের মতো এ সমস্ত তারকা ব্লগারদের সংরক্ষনের দাবীতে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী তুলেছেন ব্লগের সম্পদ এ সব ব্লগারগন যেন কিছুতেই নিষ্ঠুরতার শিকার না হোন, এমন কোন পরিস্থিতি যেন উদ্ভব না হয় যা এই সব ব্লগারদের কুসুমকোমল অনুভুতিকে আহত করে। কারন তা তাদের সৃজনশীলতা কে খর্ব করবে, চুড়ান্ত অর্থে তাদের অবদান থেকে বঞ্চিত হবে সামহোয়্যার।
হিসাব দেওয়া হচ্ছে কোন কোন বিশিষ্ট ব্লগারদের শুন্যস্থান পুরন করতে কয়েক গুনিতক নতুন ব্লগারও যথেষ্ট নয়...।
আমি কিন্ত ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সামহোয়ার ইন আজ যে জায়গায় এসে পৌছেছে তার পিছনে কিছু ব্লগারদের (বিশেষ করে যারা প্রথমিক দিনগুলোতে সক্রিয় ছিলেন)একটা বিশাল অবদান অবশ্যই আছে। তারা নিজেরা ক্রিয়াশীল থেকেছেন, পরিচিত বন্ধুদের ডেকে এনেছেন, ব্লগ জিনিষটার সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, ব্লগ লেখায় উৎসাহ দিয়েছেন, ধৈর্য্য নিয়ে মন্তব্য করেছেন, প্রানবন্ত বিতর্ক দানা বাধতে উদ্যোগ নিয়েছেন, পরস্পরের সাথে খুনশুটি দুষ্টুমি করেছেন—যা দেখে আবার নতুন ব্লগাররা এর সাথে যুক্ত হতে আগ্রহী হয়েছেন। এরই মধ্যে আবার কিছু কিছু ব্লগার তার নিজস্ব একটা স্টাইল, রীতি, ধারা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন এবং সহব্লগাররা বিপুল ভাবে তার পোষ্টে গিয়ে তাদের উৎসাহ উচ্ছাস জানিয়ে এসেছেন। নতুন ব্লগারদের জন্য যা ছিল একই সঙ্গে উদ্দীপনা এবং প্রনোদনামুলক। তারাও সচেষ্ট হয়েছেন নিজস্ব লেখার ষ্টাইল দাঁড় করাতে।
সামহোয়ার তার প্রাথমিক দিনগুলো ঠিক এভাবেই পাড়ি দিয়েছে বিশিষ্ট কিছু ব্লগারএর হাত ধরে। তাদের কেউ কেউ এই ব্লগ থেকে বিদায় নিলেও, অনেকেই এখনও আছেন, যারা তাদের শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টিশীলতা অদ্যাবধি সামহোয়্যারেই নিয়োজিত রেখেছেন। নিঃসন্দেহে আজকের বাংলা ব্লগ জগতে সামহোয়্যারের যে অবস্থান তার পেছনে এই সব ব্লগাররা প্রধান ভুমিকা পালন করেছেন। আর এভাবেই আজ পুরো দেশ এবং দেশের প্রান্তসীমা ছাড়িয়ে বিশাল এক বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী এই ব্লগকে কেন্দ্র করে একস্থানে জড়ো হয়েছেন।
সেই সব শীর্ষস্থানীয় বিশিষ্ট ব্লগারদের অবদানকে ভুলে যাওয়া ঠিক কাজ হবে না।
তবে এই সব শীর্ষস্থানীয় বিশিষ্ট ব্লগারদের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং সে অনুযায়ী কিছু দ্বায়ীত্বশীলতার কথাও এই সুত্রে আমি তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই।
কোন সন্দেহ নাই বিশিষ্ট ব্লগারদের মধ্যে সবাই কমবেশী সুলেখক, ভাল বিশ্লেষক আর তাদের অনেকের সাংগঠনিক ক্ষমতাও প্রশ্নাতীত। সমস্যা হয়েছে- যখন বাস্তবজীবনের মতো অনেকেই তাদের এই সব গুনাবলীকে কাজে লাগিয়ে ব্লগের ভার্চুয়াল পরিবেশে নিজ নিজ প্রভাববলয় গড়ে তোলায় সচেষ্ট থেকেছেন। এরপর সেই গোষ্ঠিবলয়ের মাঝখানে বসে নতুন ব্লগারদের স্বাধীন চিন্তাকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছেন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশিত পথে আনতে চেয়েছেন, ব্লগারদের ব্যাখা বক্তব্যের সীমানা টেনে দিয়ে, প্রগতি-প্রতিক্রিয়ার সংজ্ঞা নির্ধারন করে দিয়ে—সর্বোপরী দেশপ্রেমের তকমা দেওয়ার একমাত্র শীলমোহরটি মুঠোর মধ্যে নিয়ে দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে এই ব্লগে মৌরসি পাট্টা গেড়ে বসেছিলেন।
নবীন ব্লগারদের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল দুই ধরনের- একদল এই আধিপত্য মেনে নিয়েছিল বিনা দ্বিধায়, এমনকি কখনও কখনও এই সাফাই গেয়েও—যে, আমার চিন্তার স্বতঃস্ফুর্ততা যদি কখনও কখনও বাঁধ ভাঙ্গা বন্যায় ভেসে যায়—কখনও যদি তা তোমার কাছে বেলাইন মনে হয়, আমার এ চপলতা মাফ করে দিও। আনুগত্যের পরীক্ষায় ফেলো না, শেষ বিচারে আমি কিন্ত তোমাদেরই লোক।
আর দ্বিতীয়দল কপালে দেশদ্রোহীর তকমা নিয়ে ব্লগে সক্রিয় থেকে তাদের নিষ্ঠার প্রমান দিয়ে গেছে। এর বাইরে খুব কম সংখ্যক লোক তাদের এই গোষ্ঠি-কর্তৃত্বকে দ্বন্দ্বে আহবান করেছে।
এই আধিপত্যকে মেনে নেওয়া এবং গোষ্ঠির অনুসারী হয়ে যাওয়াকে অনেক শীর্ষমানের ব্লগারই ন্যায্য এবং উচিত কাজ হিসাবে মনে করেছেন। চমৎকার কাব্য রচনা করেন এবং গদ্যের হাত অসম্ভব ঝরঝরে এরকম অনেক ব্লগারই দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেন, প্রতিক্রিয়াশীল এবং ক্ষতিকারক রাজনৈতিক মতবাদের বিরুদ্ধে মতাদর্শিক সংগ্রাম চালানো কোন লড়াকু কাজ নয় বরং তা শুশীল (নেতিবাচক) পন্থা। বরং দলবেধে গালিগালাজ দিয়ে কাউকে কোনঠাসা করেই যে কোন ক্ষতিকারক রাজনৈতিক মতবাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে হয়।
ব্লগ কর্তৃপক্ষ এতদিন এই সব দেখেও না দেখার ভান করেছেন, মৃদু প্রশ্রয় মৃদু ভৎসনা এই মডারেশনের স্ট্রাটেজি নিয়ে ব্লগ চালিয়েছেন। কারন তখন ছিল ব্লগের দানা বেধে উঠবার প্রাথমিক কাল, ব্লগ তখন আকারেও যথেষ্ট সীমিত, ফলে সক্রিয় একদল ব্লগার এর কিছু কিছু তুঘলগি মেনে নেওয়া, এবং তা নিয়ে উদাসীন থাকতে তাদের তেমন কোন সমস্যা হয় নাই।
আমার ধারনা প্রাথমিক সেই প্রয়োজন ফুরিয়ে কর্তৃপক্ষের চোখে, সামহোয়ারের প্রেক্ষিতটা এখন বদলে গেছে। বদলে গেছে হয়তো যৌক্তিক কারনেই-- আকার এবং অবস্থান জনিত পরিবর্তনের কারনে। ব্যাপক আকার এবং বিশাল সংখ্যক ব্লগারের উপস্থিতির কারনেই, এমনকি ব্লগ কর্তৃপক্ষ এখন চাইলেও হয়তো আর আগের মতো অনেক কিছু উদাসীন ভাবে ছাড় দিতে পারে না।
যে কোন উদ্যোগের প্রাথমিকাবস্থায় অনেক বিষয়ই ইনফর্মাল থাকে, কিন্ত পরবর্তীতে তা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হলে তাকে কিছু নর্মস কিছু ফর্মালিটি মানতেই হয়। না হলে তা আর পেশাদারী কার্যক্রম থাকে না। কর্তৃপক্ষের এই পেশাদারীত্ব নিয়ে আসা এবং মডারেশনের স্ট্রাটেজী বদলকেই শীর্ষব্লগাররা কর্তৃপক্ষের একগুয়েমী, কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব হিসাবে ভুল ভাবে চিহ্নিত করতে চাইছেন।
আমার মনে হয়েছে- সামহোয়্যার ব্লগ তার পরিনত অবস্থায় পৌছে এখন আর কোন গোষ্ঠিতন্ত্রকে উৎসাহ দিতে চায় না, গোষ্ঠিতন্ত্রকে কেন্দ্র করে যে কোন ধরনের উত্তেজনা বা হানাহানিকে বরদাস্ত না করার কড়া বার্তা সে শীর্ষ ব্লগারদের কাছে পৌছতে চায়। গোষ্ঠিতন্ত্রকে বিনাশ করার তার এই স্ট্রাটেজীর বিরুদ্ধে একটা সমালোচনার অক্ষরও সে পড়তে চায় না, নিরাপদ পোস্টের কোন বিদ্রুপ তো নয়ই। এটা স্রেফ তার ব্লগ পরিচালনার নতুন কর্মকৌশল (মডারেশনের স্ট্রাটেজী)। এখন অধিক সংখ্যক নতুন ব্লগারদের জন্য যা অনুকুল সেই ধরনের স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবেশ তারা নিশ্চিত করতে চায়।
এটা পরিস্কার, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ভার্চুয়াল জগতের জন্য নিজদের আরো বেশি প্রস্তুত ও পেশাদারী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামহোয়ার। বোঝাই যাচ্ছে তার সেই সব অনাগত ব্লগারদের জন্য অনুকুল পরিস্থিতি নির্মান করার জন্য অনেক কিছুই সে বিয়োজন করার জন্য মানসিক ভাবে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
ফলে আমার অনুসিদ্ধান্তঃ হে শীর্ষব্লগার গন, ক্যারিয়ার ব্লগার হতে চাইলে সামহোয়্যারের কর্তৃত্ব মেনে নেন, এবং মেতে উঠেন নিত্য নতুন পোস্ট দিয়ে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে। বিনিময়ে পাবেন আপনার এযাবৎকালের শত সহস্র মুগ্ধ পাঠক আর তাদের প্রতিক্রিয়া এবং সেই সাথে আগামী অগনিত বিপুল পাঠকের আপনার ব্লগে আগমনের নিশ্চয়তা। কোন সিরিয়াস ক্যারিয়ার ব্লগার এর কাছেই পাঠক সংখ্যা ফেলনা বিষয় নয়—ধারনা করি।
আমার সাথে দ্বিমত পোষন করলে করনীয় একটাই, সেক্ষেত্রে সামহোয়্যারকে খুদাপেজ বলেন- আর খুলে ফেলেন নিজস্ব ব্লগ স্পট। কি করবেন ভাইব্যা দেখেন- চয়েশ ইজ নাউ ইয়োর্স...