somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃত্তিবাসের রামায়ণের সহজ গল্প

০৯ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্থান -স্বর্গ ( চারিদিকে সূর্য-চাঁদ একসাথে দেখা যাচ্ছে,খুব সুন্দর পরিবেশ)একদিন নারায়ণের কী খেয়াল হল তিনি নিজেকে চারটি ভাগে ভাগ করে ফেললেন।নারদ সেখান দিয়ে যেতে যেতে দেখলেন লক্ষ্মী দেবী বাঁ দিকে নিজের জায়গায় বসে আছে আর লক্ষ্মণ সেজে এক খন্ড ছাতা ধরে আছে,এক খন্ড শত্রুঘ্ন সেজে চামর দোলাচ্ছে আর হনুমান (কোত্থেকে উড়ে এল তার ব্যাখ্যা নাই) দুহাত জোর করে বসে আছে সামনে।এইটা দেখে নারদের এত ভালো লাগল যে তিনি ব্রহ্মাকে সঙ্গে নিয়ে শিবের কাছে গেলেন বিষয়টা জানতে।শিব তখন বললেন যে আসলে নারায়ন চার ভাগে ভাগ হবেন।রাম নাম হবে তার প্রথম ভাগের।আর রাম নাম নিলেই সব পাপ মুক্ত হবে।কে খুউউউব পাপী আছে ভেবে দেখো,তাকে গিয়ে আমরা রাম বলিয়ে আসি।
তখন ভেবে দেখা গেল যে চ্যবন মুনির ছেলে রত্নাকর ,প্রচুর খুন-টুন করে ,ডাকাতি করে সেরা পাপীর খেতাবের অধিকারী।কাজেই প্রথমে তাকে দিয়েই রাম বলানো যাক।তখন ব্রহ্মা ও নারদ দুজনে সন্ন্যাসী সেজে সেই বনে গেল।একটা লোহার মুগুর নিয়ে সেখানে অপেক্ষা করছিল রত্নাকর।ব্রহ্মাকে যেই মারতে যাব অমনি তার হাত অসাড় হয়ে গেল।তখন সে বলল সন্ন্যাসী ,তোমাকে মেরে তোমার জামা-কাপড় আমি চাই,জিনিসপত্রও।ব্রহ্মা হেসে বলল তুমি কী জান পাপ কী? বলেই তিনি বলতে শুরু করলেন পাপ কী,পুণ্যেরও আগে পাপের কথা এল
--একশ শত্রু মারলে যত পাপ তার চেয়ে বেশি পাপ একটি গরু মারলে,একশ গরু বধের পাপ একটি নারীকে মারলে,একশ নারীকে=একটি ব্রাহ্মণ আর ১০০ ব্রাহ্মণ=একজন সন্ন্যাসী।তুমি এত পাপ করছ কে তোমার পাপের ভাগ নেবে ? রত্নাকর বলল আমার বাড়ির চারজন লোক,বাবা-মা,আমি আর বউ,চারজনে ভাগ করে নেব পাপের ভাগ।ব্রহ্মা বলল জেনে এসো তারা নিতে রাজি কি না।রত্নাকর বললে, তুমি ব্যাটা পালিয়ে যাবার ধান্দা করছ।ব্রহ্মা বললো সত্যিই বলছি বসে আছি,যাও
-রত্নাকর বাড়ি এসেই বাবা চ্যবণের কাছে গেল,গিয়ে বলল আমি যা রোজগার করি তা তুমিও খাও-নিশ্চয়ই তুমি আমার পাপের ভাগও নেবা?বাবা বলল যখন তুমি ছোট ছিলে আমি ছিলাম বাবা,কীভাবে তোমাকে খাইয়েছি তা তোমার জানার কথা নয়।এখন আমি ছেলে হয়ে গেছি তুমি বাবা কাজেই তুমি কীভাবে খাওয়াচ্ছ আমি জানব না।তুমি তোমার কর্তব্য করেছ মাত্র।
এরপর সে গেল মার কাছে তিনিও বললেন মাতৃঋণ শোধ কর আগে খাইয়ে-পরিয়ে তারপর ওসব কথা শুনব,বউও বলল,বিয়ে যহন করস আমার খাওয়া পরা দিতেই হইব,পাপ করে আনলা না পুণ্য করে আনলা আমার কনসার্ণ নয়।এইসব শুনে রত্নাকর কাঁদতে বসল।তারপর ব্রহ্মার কাছে আবার গেল জানতে যে এই পাপ কেউই নেবে না কাজেই আমিও করুম না।রোজগারই করব না।তখন ব্রহ্মা তাকে রাম বলতে বলল।কিন্তু হায় সেই পাপ মুখে রামনাম উচ্চারণ হল না।তখন ব্রহ্মা বলল মৃত মানুষকে যা বলে ডাক তাই বলে যাও অনবরত,তাইলেই হবেনে।তখন থেকে রত্নাকর কেবল মরামরা মরা করতে করতে কখন যেন বলে ফেলছে রাম রাম...বলতে বলতে...ষাট হাজার বছর পর আবার ব্রহ্মা ফলাফল দেখতে এল সেই বনে এসে কিছুই দেখতে পায় না,তখন সে বৃষ্টি নামাল ও একটি বল্মীক বা উঁই ঢিপির মাটি ধুয়ে কঙ্কালসার রত্নাকরকে দেখতে পেল ও নাম দিল বাল্মিকী।এবং এও বলে গেলেন যে তুমি এবার কবিতা লিখতে পারবে।এই কথা শুনে বাল্মীকি ভাবতে বসল আবার,ভাবতে ভাবতে একদিন এক ব্যাধ এসে হঠাৎ মিলনাবদ্ধ একটি বকযুগলকে এক তীরে মারলে তার চোখের সামনে তখন সেই দৃশ্য দেখে তার মুখ থেকে অজানিতে বেরিয়ে এল--"মা নিষাদ"-

বাল্মীকি তো হঠাৎ মনের দুঃখে লিখে ফেললেন,পর পর চারটে লাইন লিখেই তার মনে হল কাকে শোনানো যায়।এগুলোর মানেই বা কী দাঁড়াল। চলবে কি না,এইসব।সব কবিদেরই এই একই রোগ ,লিখেই শোনানো দরকার,আসপাশের লোকের ঝকমারির একশেষ ,শুনে খারাপ বললেও বিপদ আবার...যাক গে ,বাল্মীকি তখন সেই চারটে লাইন নিয়ে গেলেন সেখানে ,যেখানে ভরদ্বাজ ও তার শিষ্য বসে আছে ,এদিকে গল্রর লোভে নারদও সেখানে এসে উপস্থিত,বেশ একটা সুন্দর আড্ডায় সকলেই বলল যে এটা ভালো লাইন,আর লেখাটার মধ্যে বড় লেখার সম্ভাবণা প্রচুর।নারদ একটা আউটলাইনও বলে দিল,যে এভাবেও লিখে ফেলতে পারেন,যদি দাঁড়িয়ে যায়...সেই কথায় বাল্মিকীও উৎসাহ পেলেন খুব।প্রথমেই চন্দ্র বংশের কথা লিখলেন।চন্দ্রের অনেক প্রজন্ম পরে মিথি নামে এক রাজা মিথিলা নামে একটা নগর বানালেন,আর সেই মিথিতেই মুখ্য স্ত্রী চরিত্র অর্থাৎ লক্ষ্মী দেবীর জন্ম হবে।............
এদিকে সূর্যবংশের প্রথম রাজা নিরজ্ঞন ।তার বংশের এক রাজা যুবনাশ্ব।সে বিয়ে করল এক রাজার মেয়ে কালনিমিকে।বিয়ে করলেও সে বউ এর কাছে যায় না,মেশে না।কালনিমি খেপে লাল,সোজা গিয়ে বাপের বাড়ি নালিশ করে দিল,যে বাবা,এমন লোকের সঙ্গে বিয়ে দিলে সে একটি অপদার্থ।তখন শ্বশুর এসে যুবনাশ্বকে তো গালি দিয়ে ভূত ভাগিয়ে দিইয়ে মেয়েকে নিয়ে চলে গেল।যুবনাশ্বের প্রেস্টিজে কেরোসিন,সে তখন গেল মুণীদের কাছে তপস্যায়,পুজোয় খুসী করতে(সম্ভবত এরা কবিরাজী করত)।ব্রাহ্মণেরা সন্তুষ্ট হয়ে জানতে চাইলে যুবনাশ্ব পুত্র চান,মুনিরা বলে বউই নাই তোমার ,ছেলে হইব কীভাবে।যজ্ঞ করলে নিশ্চিত রেজাল্ট পাবা,কিন্তু সেই ওষুধ বউকেই খাওয়াতে হবে।যুবনাশ্ব রাজি হয়ে যজ্ঞ করল,যজ্ঞজল পেল,এটা বউকে খাওয়াবে বলে ঘরে রেখে ঘুমাতে গেল।মাঝরাতে এত তেষ্টা পেয়েছে,বেচারি নিজেই সেই জল খেয়ে ফেলেছেন।আর উপায় নেই,পুরুষ গর্ভের সন্তান জন্মালো কিন্তু যুবনাশ্ব বাঁচলেন না।শ্বশুরের প্রতি অভিমানে আর গর্ভ যন্ত্রণায় তিনি মারা গেলেন একটি ছেলের জন্ম দিয়ে।সেই সুন্দর শিশুর নাম হল মান্ধাতা।মান্ধাতা বড় হয়ে অযোধ্যার রাজা হল ও বিখ্যাত হল(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৩০
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×