সখিনাকে কি রা করা যাবে?
ইরানের কয়েকজন নারী আর কয়েকটি সমানবাধিকার সংগঠনের মত যদি এখনই আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় সোচ্চার হয়, কেবল তাহলেই বাঁচানো সম্ভব তুর্কি ভাষী ইরানের সখিনা আসতিয়ানিকে। ৪২ বছর বয়সী এই নারী এখন ইরানের কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত সংখ্যাগরিষ্ট বিচারকের মতামতের ভিত্তিতেই তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে বলে সখিনার আইনজীবি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। সখিনার মৃত্যুদণ্ড ঠেকানো না গলে তা কার্যকর করা হবে মধ্যযুগীয় বর্বরতার মাধ্যমে। তাকে মারা হবে বুক সমান মাটিতে পুতে পাথর নিপে করে। এখনো সখিনাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মানবাধিকারকর্মীরা৷কয়েকটি দেশ ইরানের উপর কূটনীতিক চাপও প্রয়োগ করেছে। এখন সখিনাকে বাঁচাতে প্রয়োজন ইরানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ। সখিনার অপরাধ ছিলো, তিনি বিয়ে বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক গড়েছিলেন৷ আর এই অপরাধেই তাঁকে পাথর ছুড়ে মারার আদেশ দিয়েছে ইরানের আদালত৷
আদলত তার রায়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো। ইরানের আইন অনুযায়ী, সখিনা আসতিয়ানি যে অপরাধে মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হতে যাচ্ছেন সেই ধরনের অপরাধ প্রমাণের জন্য কমপে চারজন প্রত্যদর্শীর স্যা প্রয়োজন হয়৷ তবে সখিনার েেত্র সেই নূন্যতম সা্িয পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিরোধিতাকারী আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রধান মিনা আহদি৷ উল্টো সখিনাকে নির্যাতন করে তার নিকট থেকে জোড়পূর্বক অপরাধ স্বীকার করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মিনা আহদি নিজেও একজন ইরানি নারী।
ইরানের নিম্ন আদালত ২০০৬ সালে সখিনাকে এই অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়৷ ২০০৭ সালে দেশটির উচ্চ আদালত সে রায় বহাল রাখে৷ সখিনার আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তাফি বলেন অপরাধ স্বীকারের জন্য সখিনাকে তখন ৯৯টি বেত্রাঘাতও করা হয়। মোস্তাফি সিএনএনকে বলেন, ‘সখিনা পরে তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করলেও তা আমলে আনেনি আদালত৷ আর আদালতের এই রায় স্যা প্রমাণের ভিত্তিতে হয়নি৷ হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতের জোরে৷’ পাথর ছুড়ে হত্যার এই আইন বর্বরোচিত বলে মনে করেন আইনজীবী মুস্তাফি৷ তিনি জানান, সখিনার দুই সন্তান তাদের মায়ের মৃত্যুদন্ড কার্যকর না করার জন্য আদালতের নিকট আবেদন জানিয়েছিলো৷ সেই মানবিক আবেদনেও সাড়া মেলেনি৷
সখিনা এখন আছেন ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর তাবরিজের কারাগারে৷ তার আইনজীবী জানান, সর্বশেষ পাঁচমাস আসে তাঁর দেখা সখিনা দেখা হয়েছিলো ৷ এরপর আর তিনি সখিনার দেখা পাননি৷ মুস্তাফি বলেছেন, সখিনাকে বাঁচাতে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন৷ ওদিকে চেষ্টা করছেন মিনা আহিদও৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকেও দাবি উঠছে সখিনা রার৷ মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে সখিনার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রও বলছে সখিনাকে বাঁচানোর কথা৷ সখিনাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পি জে ক্রাউলিও৷ নরওয়ে তাদের দেশে অবস্থান করা ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে নরওয়ে প থেকে এই ধরনের মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থানের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ একই সঙ্গে সখিনাকে অব্যাহতি দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে নরওয়ে৷
৪২ বছর বয়সি সখিনার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন যে কোনো দিন তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে বলে আশঙ্কা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর৷ রায় কার্যকর করা হলে সখিনাকে বুক সমান মাটিতে পুঁতে নিপে করা হবে পাথর। সেই বর্বরাতা দেখার আগেই সখিন জন্য সহায়তা প্রয়োজন। মানবাধিকার কর্মী মিনা বলেন,‘ সখিনা এই মৃত্যু ঠেকানোর আর বেশি সময় হাতে নেই৷ এখন আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় যদি সোচ্চার হয়, তাহলেই কেবল সখিনাকে বাঁচানো সম্ভব।’