মাথাটা দিন দিন অবশ হয়ে যাচ্ছে। ভাবনাচিন্তাগুলোও আরেকটু বেশি অনুভূতিহীন হয়ে যাচ্ছে প্রতিটা মুহূর্তে। নিজেকে মানুষ ভাবতাম, তা যত ক্ষুদ্র মানুষই হই। আশপাশে দু’পায়ে হাঁটার ক্ষমতা থাকা প্রাণীগুলোকেও মানুষই মনে করতাম। কিন্তু দিন দিন ভুলটা ভেঙ্গে যাচ্ছে। চোখের সামনের কুয়াশাটা কেটে যাচ্ছে অল্প অল্প করে। যাদের মানুষ ভাবতাম তাদের অনেকেরই আসল পরিচয় দেখতে পাচ্ছি এখন, চিনতে পারছি।
চোখের সামনে কুয়াশাটা থাকলে মানুষ আর ‘অ’মানুষগুলোর মধ্যে পার্থক্যটা ঠিক বোঝা যায় না। অবয়বগুলো সব একরকমই লাগে। আফটার অল, সবারই তো দু’টো হাত, দু’টো পা, সোজা মেরুদণ্ডের চূড়োয় একটা ঘোলগাল মাথা…গঠন মোটামুটি একই। কিন্তু কুয়াশার পর্দা কেটে যেতেই বোঝা যায় তাদের আসল চেহারা। তাদের চেহারা কুৎসিত, মুখে পঙ্কিলতার ঘা, হাতে রক্ত, নিজের নয়। কিন্তু নিজ মনের নোংরা-আবর্জনা মেখে অন্যের সেই তাজা লাল রক্তও দূষিত কালো হয়ে আছে। এরা পশু নয়, দানব। এমন মানুষরূপী দানবের সংখ্যা অগণিত। কিন্তু বাইরে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবের খোলস জড়িয়ে রাখায় কেউ তাদের চিনতে পারে না।
অন্যের কথা বলছি শুধু। আমি নিজেও যে মানুষ, তাও কিন্তু নয়। কুয়াশার ঝাপসা ভাবটা চোখ থেকে সরতেই আয়নায় নিজেকে স্পষ্ট দেখতে পাই। সেখানে কোনো মানুষ নেই; আছে মানুষরূপী অনুভূতিহীন এক যন্ত্রমানব। যার অনুভূতি সব সেচে বের করে ফেলা হয়েছে ভয়ঙ্কর আর যন্ত্রণায় ভরা নানা ঘটনা এবং আঘাতের সেচপাম্প দিয়ে। আমার মতো রোবটের সংখ্যাও কিন্তু নেহায়েত কম নয়। নইলে চোখের সামনে দানবেরা তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে মনুষ্যত্বের ওপর, আমাদের বিবেক তাতে নড়ে না কেন? খুব বেশি হলে গায়ে একটু জ্বালা করে, কানটা কেমন ঝাঁঝাঁ করে, চোখের দৃষ্টি ভাবুক হয়ে যায়। কদাচিৎ সেই ভাবুক চোখের কোণে আধফোঁটা স্যালাইন-পানিও জমে। ব্যস! তারপর যে-ই সে-ই। আসলে দানব আর যন্ত্রমানবের জনসংখ্যা বিস্ফোরণে আসল মানুষগুলোই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তারা এখন বিপন্ন প্রজাতি। প্রজাতিটাকে ‘বিপন্ন প্রাণী’র তালিকায় তুলে বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
এই চিন্তাগুলোও একটা যন্ত্রমানবের মধ্যে তেমন কাজ করার কথা না। কিন্তু বিশেষ কিছু ঘটনা তার মাঝেও আবেগ জাগানোর একটা ছোট্ট চেষ্টা করে যায়। তখনই উদ্ভব হয় ওই জ্বালা, ঝাঁঝাঁ আর ভাবুক দৃষ্টির। ১১ জুলাই মামলা হওয়ার পর থেকে গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি বেসরকারি শব্দ প্রকৌশলী আরমান হোসেন সুমনের তার সৎমেয়েকে টানা আট বছর ধর্ষণ করার ঘটনাটি। কিছুদিন আগে তো এক বাবার নিজের ১২ বছরের মেয়েকে দু’তিন বছর ধরে ধর্ষণের নিউজ পড়লাম।
মস্তিষ্ক এই ঘটনাগুলো প্রসেস করতে চাইছে না। তাই ঠিকঠাক কিছু অনুভব করতে পারছি না। শুধু বুঝতে পারছি, সারা গায়ে আগুন ধরার মতো জ্বালা করছে। কমছে না। মস্তিষ্ক এগুলোকে সত্যি হিসেবে নিতে পারছে না, কারণ সে চাইছে না। কিন্তু তারপরও জানি, মানতে না চাইলেও মানতে হবে। কেননা এমন ঘটনা শহরে-গ্রামে-মফস্বলে প্রায়ই ঘটছে। কতবার কতকিছু শুনেছি, কখনো চোখের সামনে প্রমাণ দেখেছি। কিন্তু ব্যাপারটা এতটাই অস্বাভাবিক যে মাথা ঠিকঠাক কাজ করেনি। পিতা বা পিতৃস্থানীয় পবিত্র পরিচয়ের মুখোশে কিছু পিশাচ কাজগুলো ঘটাচ্ছে। নিজের স্বার্থে হোক অথবা সম্মান বা প্রাণের ভয়ে কিছু মা দিনের পর দিন এই অনাচার মেনেও নিচ্ছেন। তার প্রমাণ আমরা পাই আরমানের ঘটনায় সরাসরি। মা সেই ধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। অন্যদিকে ১২ বছরের কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনায় মা প্রাণভয়ে জেনেশুনে সহ্য করে এসেছেন মেয়ের যন্ত্রণা। পরে অবশ্য নিজেই সন্তানকে নিয়ে থানায় গিয়েছেন, মানুষরূপী দানব স্বামীকে গ্রেফতার করিয়েছেন।
ঘটনার শিকার মেয়েগুলো কখনো ভয়ে, কখনো লজ্জায়, কখনো আবার মা অথবা পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে চুপ থাকছে। কখনো ভাবছে: ‘বলব, কিন্তু কীভাবে বলব? কী বলব? কে বিশ্বাস করবে? আমার মুখ দিয়েই বা কী করে বের হবে কথাগুলো?’ জানি, এভাবে ভাবাটাই হয়তো স্বাভাবিক। কারণ ভিক্টিম অসম্ভব জেনেও হয়তো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে চায়, এটা একটা দুঃস্বপ্ন হোক, সে ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠুক।
নানাদিকের এই নানা বাধা, সমাজের ট্যাবু – সব মিলিয়ে পাশবিকতার বেশিরভাগ ঘটনা লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে যায়।
বুদ্ধিজীবী বা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিরা বিষয়গুলোকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন জানি না। হয়তো বলবেন, এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা; দোষী ব্যক্তির চূড়ান্ত সাজা হওয়া উচিত; সমাজে মানুষের নৈতিকতা এবং বিবেকবোধের চরম অবক্ষয় হচ্ছে; জনগণকে সচেতন হতে হবে…… ইত্যাদি ইত্যাদি।
কথা সবগুলোই সত্যি। কিন্তু আমি বিশেষজ্ঞ বা বুদ্ধিজীবী কোনোটাই নই। আমি সাধারণ জনগোষ্ঠীর একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ। তাই আমার মধ্যে এসব ভারী ভারী চিন্তা কাজ করে না। কড়া কিছু আবেগ কাজ করে যখন মানুষ থেকে রোবট হওয়া এই আমি আবার মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি, তখন। এসব ঘটনা আমাকে কিছুটা হলেও ভাবতে বাধ্য করে। যেমন ভাবতে বাধ্য করেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ঘটনাটি। যেমন ভাবতে বাধ্য করল সৎবাবার হাতে বছরের পর বছর ধরে নির্যাতনের এই মেয়ের ঘটনাটাও।
অস্বাভাবিক লাগে না কেমন? অবিশ্বাস্য মনে হয় না? মন কি মানতে চায়? সত্যিই তো, কীভাবে সম্ভব? নিজের মা, নিজের! তিনি নিজেও একজন নারী! মেয়েটা তার নিজের সন্তান। আর ওই লোকটা, হোক সৎ, বাবা তো, পিতৃস্থানীয়, অভিভাবক! এটা কীভাবে করা সম্ভব??? তাও ৮টা বছর!!! আর পরের ঘটনাটা তো… নাহ্, ভাবাই যায় না!
এরা কি মানুষ না পশু? না। পশু বলা যায় না। পশুদের কিছু নীতি থাকে। এরা স্বাভাবিক মানুষও না। এরা সঙ্কর কোনো প্রজাতি। বিকৃত। এরা মানুষ তো দূর, পশুর সঙ্গে থাকলে পশুর চরিত্র নষ্ট হয়ে যাবে! এদের জন্য আলাদা একটা চিড়িয়াখানা তৈরি করা দরকার, যেখানে গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকে তাদের দেখিয়ে সবাইকে জানানো হবে এদের নোংরা, বিকৃত, অস্বাভাবিক মানসিকতা সম্পর্কে।
শুধু কি একজন তনুই ধর্ষিত হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়েছে? আরমানের মতো পিশাচ কি শুধুই একজন এই দেশে? না। এর আগে আরও কত শত-সহস্র ঘটনা ঘটেছে, আরও কত ভয়ঙ্কর, আরও কত মর্মান্তিক। তনু শুধু একটা নাম, আরমান শুধু একটা পরিচয়। এই ঘটনাগুলো আরও অসংখ্য ঘটনার প্রতিনিধিত্ব করে। ঘটনাগুলো আমাকে অনুভব করতে বাধ্য করে, ওই ভয়ানক যন্ত্রণাকর পরিস্থিতিতে মেয়েটার না জানি কেমন লাগছিল, কী ভাবছিল সে। কতটা কষ্ট হচ্ছিল তার? নাকি ঘৃণা, ভয় আর অপমানের জ্বালায় শারীরিক যন্ত্রণা সে টের পাচ্ছিল না, অবশ হয়ে গিয়েছিল তার শরীর? হয়তো আমার মনে এ চিন্তাগুলো আসে, কারণ আমিও একজন মেয়ে।
নিজের কর্মস্থলসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে খবর এবং এর আপডেট মোটামুটি বেশ কয়েকবার পড়া হয়ে গেছে। পড়তে না চাইলেও কাজের খাতিরে পড়তে হয়েছে। আবার সামাজিক মাধ্যমও এমন এক জিনিস, বন্ধু তালিকায় থাকা মানুষগুলোর এ ব্যাপারে দেয়া পোস্ট, মন্তব্য আর শেয়ার করা লিংকগুলো খুঁটে খুঁটে আমার সামনে জড়ো করে এটা। যেন বলতে চায়, ‘দেখতে চাস না? না দেখে যাবি কোথায়? তোকে মুখস্থ করিয়ে ছাড়ব! দেখ, তোর মতো মেয়েরা কত অসহায়, তোর মতো মেয়েরা কত অনিরাপদ। তুই যতই সাহস নিয়ে ঘুরিস, এই সমাজ তোদের নাগরিক তো ভাবে, কিন্তু নিরাপত্তা দেয়ার যোগ্যতা রাখে না!’ চোখে খুব আঘাত করে লেখাগুলো। কানে খুব ধাক্কা দেয় নিউজ বুলেটিনের কথাগুলো……
কীভাবে পারে লোকগুলো আরেকটা মানুষকে এভাবে ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিতে? কীভাবে পারে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আরেকটা মানুষকে আঘাত দিতে, তাও আবার নিজের একটু শারীরিক আরাম, একটু মানসিক শিথিলতার জন্য! জোর করে এভাবে আরেকটা মানুষের শরীর আর শরীরের অঙ্গের সঙ্গে দুর্ব্যবহার মানসিক বিকৃতি ছাড়া আর কিছু না। আর যদি ধর্ষণের জন্য শুধু নারীর পোশাককেই দায়ী করা হয়, হে পুরুষ, শুনে রাখো, তোমার বুদ্ধি বোধহয় তাহলে মাথার খুলির ভেতরের বিশাল জটিল ভাবনা-যন্ত্রের বদলে দু’পায়ের ফাঁকের ছোট মাংসপিণ্ডেই বসবাস করে। ধর্মগ্রন্থ শুধু নারীকে শালীনভাবে চলতে বলেনি, পুরুষকেও দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। শুধুই নারীর পোশাককে দোষ দেয়া জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা আসমানি কিতাবের একই বাক্যের অর্ধেকই শুধু বুঝতে পারেন তবে?! হয়তো তাই।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের এক বন্ধুর টাইমলাইনে একটা লেখা পড়লাম। লেখাটার কিছু অংশ এমন:
“একজন নারী বিবাহিতা, ডিভোর্সী, বিধবা হোক আর অবিবাহিতা হোক সে যদি একা বসবাস করে সে কথাটি কোনো পুরুষকে বলতে পারে না৷ কারণ নারী একা থাকে এই কথাটি শুনলে বেশিরভাগ পুরুষের চরিত্রের লালা ঝরতে থাকে৷ তখন কৌশলে অথবা সহমর্মিতা দেখিয়ে সেই নারীর সাথে সে খাতির জমানোর চেষ্টা করবে৷ তারপর প্রেমের বাক্যবান ছুঁড়বে, সেটা শুধু রঙ্গলীলা সাধনের জন্য৷ তারপর প্রেম-সুধা খাওয়া শেষ হলে সেই নারীকেই নষ্টা বলে আখ্যায়িত করে সরে পড়বে৷ এখন আপনারা বলবেন নারী কেন সেই পুরুষকে সুযোগ দিলো? বিশ্বাস তো মানুষ মানুষকেই করবে, তাই না?
নারী একা থাকবে, নিজের মতন বাঁচবে এই চিন্তাটাও সে করতে পারবে না৷ সর্বভূক প্রাণীর মতো নারীর যোনীর ছিন্দ্র আর দুই খণ্ড মাংসপিণ্ড সন্ধান করাটাই বেশিরভাগ পুরুষদের কাজ৷”
কথাটা বেশ মনে ধরল। অনেকেই হয়তো প্রতিবাদ করতে পারেন। কিন্তু বিশ্বাস করেন, সব পুরুষ এমন সেটা আমি বলব না। কখনোই না। কিন্তু আপনি যদি একজন নারী হন, তাহলে আমি হলফ করে বলতে পারি, প্রতিদিন আপনাকে কোনো না কোনো পুরুষের অস্বস্তিকর দৃষ্টির সামনে পড়তে হয়েছে। আপনি হিজাব করেন বা বোরকা পড়েন, হন কিশোরী বা প্রৌড়া; এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আপনাকে হতেই হয়েছে কখনো না কখনো। কেউ না কেউ আপনি একা জানলেই খাতির জমানোর বিশেষ চেষ্টা করেছে, আপনার জন্য কেয়ার আর ভালোবাসা উথলে উঠছে…. সবাই একরকম নয় অবশ্যই। কিন্তু এমন মানুষেরও অভাব নেই, কোনো মেয়ে সঙ্গীহীন জানলে যাদের মুখে না হোক, মনে সমানে লালা ঝরতে থাকে। অথচ বাইরের চেহারাটা থাকে পাক-পবিত্র নূরানী!
সমাজে জেন্ডার বৈষম্য, নারী অধিকার আর নারী নিরাপত্তা বিষয়ে আমরা প্রায়ই বলি বা বলতে শুনি: মেয়েদের শুধু মেয়ে নয়, মানুষ ভাবুন। আরে বাবা, মেয়েদের যে মানুষ ভাববে, সেই মানুষটা কই এই সমাজে??? দুনিয়াতে মানসিকতা আর চরিত্রের দিক থেকে প্রকৃত মানুষের সংখ্যা কত? এই সমাজে পুরুষ নিজেকে আগে পুরুষ ভাবে। অন্য পুরুষকেও তা ভাবতে শেখায়। তারাই সমাজ-প্রধানের আসনে। আর যে নারীরা ঘরে-পরিবারে-সমাজে নেতৃত্ব বা ক্ষমতা পান, তারাও যেন জেনে-না জেনে পুরুষেরই প্রতিনিধিত্ব করেন। সেটা বোঝা যায় তাদের আচরণে, দৃষ্টিভঙ্গিতে, কাজকর্মের বাস্তবায়নে। এসব দৃষ্টিভঙ্গি উত্তরাধিকারসূত্রে পরের প্রজন্মও উপহার হিসেবে পায়।
তাই নারীদের মানুষ ভাবার চেয়ে মনে হয় পুরুষদের আগে নিজেকে মানুষ ভাবার আহ্বান জানানোটা বেশি দরকার। তারা যতদিন নিজেকে শুধু পুরুষ ভাববে, ততদিন শুধু পুরুষ হিসেবেই কাজ করবে, মানুষ হিসেবে নয়। একবার এক পরিচিতের প্রেমিকা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে তাকে ধমক দিয়ে বলেছিলাম, ‘Think with your head, not with your dick!’ কথাটা একটু কটু শোনালেও এর অর্থ একটাই: আমি তাকে পুরুষ হিসেবে নয়, একজন মানুষের বিচার-বিবেচনা দিয়ে ভাবতে বলেছিলাম। কথাটা তিনি-ও বুঝতে পেরেছিলেন, এবং শেষ পর্যন্ত ঠিক সিদ্ধান্তটাও নিয়েছিলেন। কারণ তিনি শুধু পুরুষ হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে নিজের এবং আরেকজন মানুষের ভালোটা ভেবেছিলেন। একইভাবে সমাজের পুরুষগুলো শুধু পুরুষাঙ্গের তেজ নিয়ে না ভেবে যদি মানুষের বিবেকের ক্ষমতাটা ব্যবহার করে চিন্তাভাবনা করে, নিজেকে পুরুষের আগে একজন মানুষ ভাবতে শেখে, তবে মেয়েদেরও নারী থেকে ‘মানুষ’ হওয়ার পথটা এখনের চেয়ে অনেক বেশি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
শুধু পুরুষই নয়, নারীকেও শিখতে হবে নিজেকে আরও বেশি নিরাপদ রাখতে। জানি সমাজের সমর্থন ছাড়া পুরোটা সম্ভব নয়, কিন্তু তাই বলে তো ‘সমাজ আমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে না’ ভেবে বসে বসে কাঁদলে চলবে না! ‘নারী অধিকার’, ‘সমতা’, ‘নিরাপত্তা’ জিনিসগুলো কেউ হাতে তুলে দেয় না। বগলের ভেতর লুকিয়ে রাখতে চায়। জিনিসগুলো সমাজের বগলের তলা থেকে বের করে আনতে হবে। এছাড়া উপায় নেই। কারণ বিশ্বাস যেমন দামি, তেমনি দামি নিরাপত্তাও।
আর সম্মান? নিজের সম্মান সবার আগে। জান বাঁচানো ফরয; কারণ নিজেকে বাঁচাতে পারলেই আপনি অন্যকে রক্ষার সুযোগ পাবেন। তেমনি নিজের সম্মানকে গুরুত্ব না দিলে অন্যের সম্মানকে মূল্য দেয়া যায় না।।নিজের সম্মান যে বাবা সন্তানকে ‘যৌনপ্রাণী’ ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না, সন্তানের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসাকে লালসায় রূপ দিতে পারে, সে আর যা-ই হোক, বাবা নয়। তার সম্মান রাখতে নিজেকে জলাঞ্জলি দেয়াটা শুধু নিজের না, পৃথিবীর প্রত্যেকটা কন্যা সন্তানের অপমান।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:১০