... তখন এতো কিছু বুঝতাম না। আব্বা কে দেখতাম সব সময় খুব টেনশনে থাকতেন। মন মরা হয়ে অফিসে যেতেন। বিকালে কলোনীর মাঠে অন্যান্য প্রতিবেশীদের সাথে রেডিও শুনতেন। দেশের ভিতর উত্তপ্ত অবস্থা। শহর জুড়ে অস্থিরতা। কয়েক দিন আগে গ্রাম থেকে মনি খালাম্মা ঢাকায় এসেছেন চিকিৎসা করাতে। 24 মার্চ 1971, সকালে ওনার কি যেন একটা অপারেশন হলো ঢাকার এক হাসপাতালে। খালু আর তাদের ছোট দুই ছেলে আমাদের বাসায়। দেশের পরিস্থিতি দেখে আব্বার সাথে পরামর্শ করে খালু রাতেই মনি খালাম্মা কে বাসায় নিয়ে আসলেন। তাছাড়া হাসপাতালে ডাক্তারও পাওয়া যাচ্ছিল না।
রাতে কলোনীর বাসাটাতে শুয়ে আছে দুটি পরিবারের 12 জন মানুষ। মনি খালাম্মার ঘুমের নেশা মাত্র কাটেছে। খালাম্মা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন, দেখ তো বাইরে খটখট আওয়াজ কিসের? আমি জানলা খুলে দেখি পাকিস্তানী আর্মি কলোনীর রাস্তাতে টহল দিচ্ছে। আমি অন্য রুমে গেলাম। আব্বাও উঠে গেছেন। সবাই কে চুপ করে ফ্লোরে বসে থাকতে বললেন। তিনি নিঃশব্দে সিড়ি গেটের লাইট বন্ধ করে দিয়ে আসলেন।
পাকিস্তানী আর্মি বুটের আওয়ার জোড়ালো হচ্ছে। একটু পর পর গাড়ীর শব্দ আসছে। এমনি এক সময় হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হয়ে গেলো বৃষ্টির মত। সেই রাত ভোলার মত নয়। আমারা তো ধরেই নিয়েছি আমরা মরতে যাচ্ছি। আমার ছোট ভাই (8) আর দুই খালাতো ভাই হুমায়ুন (5) ও সেলিম (3) পালঙ্কের নীচে বসে নিঃশব্দে কাঁদছে।
- অসমাপ্ত -
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০