আজিমপুর কলোনী তখন এতো জনবহুল ছিল না। বিল্ডিং গুলো ছিল তিন তলা। যুদ্ধের কারনেই হয়তো তখন অনেক বাসা শুন্য ছিল। আমরা সবসময় বাসায় বাড়তি রুটি বানিয়ে রেখে দিতাম। প্রায় সময় ভিক্ষুক, ফেরীওয়ালার ছদ্দবেশে মুক্তিবাহিনীর ছেলে এমনকি মেয়ে সদস্য বাসায় আসতো। আমরা তাদের কে রুটি দিয়ে দিতাম। মা যে কত মুক্তিবাহিনীর ছেলেদের ঘরে এনে ভাত খাওয়াইছে। প্রায় সবার মুখে একটা কমন কথা ছিল 'মা, আজ 2 দিন বা 3 দিন পর ভাত খেলাম"।
মে মাসের দিকে সরকার ঘোষনা দিল 'ইন্টার পরীক্ষা' হবে। দেশের এই অবস্থায় কেউ কি পড়া-লেখা করতে পেরেছে ? কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই পরীক্ষা দিতে গেলাম, শুধুমাত্র জান রক্ষার্থে। আমার সিট পড়েছিল বদরুননেসা কলেজে। নামে মাত্র পরীক্ষা হচ্ছে। সবাই বই খুলে দেখে দেখে পরীক্ষা দিচ্ছে। টিচাররা কেউ কিছুই বলছে না। পাহাড়ারত পাক-আর্মিরা পর্যন্ত পরীক্ষার্থীদের বই এনে দিয়েছে, পরীক্ষায় লেখার জন্য ! পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর এই পরীক্ষা বাতিল ঘোষনা করা হয়। তখন আমরা ভালমত পড়া-লেখা করে আবার পরীক্ষা দিলাম।
নতুন জীবন লাভ আর মৃতু্যর আশঙ্কাই ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী। প্রতিদিন সকালে আব্বা অফিসে যেতেন আমাদের সবার কাছ থেকে 'বিদায়' নিয়ে। একবার তো আব্বা কে ধরে নেওয়ার জন্য পাক-বাহিনী সুপ্রীম কোর্টে হাজির। তখন আব্বা'র এক বিহারী কলিগ রেজা সাহেব পাক-বাহিনীর অফিসার কে বোঝালেন, উনি আমার ভাই, অনেক ভালো মানুষ, ভালো সরকারী অফিসার ......। আল্লাহপাক যেন নিজ হাতে আমার আব্বাকে হেফাজত করলেন।
[link|http://www.somewhereinblog.net/jhorohowa/post/28704598| gv
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০