সুশান্ত পাল ওরফে বিসিএস পাল তার একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে রীতিমত আস্তাকূড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বলে বলা যায়।ঢাবির অনেক শিক্ষার্থীর কাছে কয়েকদিন আগেও যিনি ছিলেন একজন ক্যারিয়ার আইডল তিনিই সময়ের আবর্তে ঘৃণিত মানুষ।বস্তুত র্যাগিং নিয়ে পালের ১৮+ কথাবার্তা ঢাবিকে কেন্দ্র করে হওয়াতেই তার এই দশা।যাই হোক,সুশান্ত পাল রেখে এবার র্যাগিং নিয়ে ভাবা যাক।
আমরা যখন মাধ্যামিক পর্যায়ে ছিলাম অনেক সিনিয়র ভাইয়া-আপুদের কাছে র্যাগ শব্দটা শুনতাম।তখন মনে করতাম এটা স্কুল জীবনের শেষ দিন টার কথা বলছে।এটা তো আনন্দের কিন্তু আর একটু সময় যাওয়ার পর র্যাগ সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পেতে লাগলাম।এক্ষেত্রে বুয়েট আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল সবার শীর্ষে। প্রকৌশল বিদ্যায় বুয়েট অনেকটা নাম্বার ওয়ান থাকায় এসব র্যাগিংকে অনেকেই পাত্তা দিতনা।আর ঢাবি এসবের সাথে অনেকটাই দূরে থাকত বলে জাবিকে অনেকেই অপছন্দ করত।তখনকার দিনে সেঞ্চুরিয়ান মানিক বা এ জাতীয় দের অভয়ারণ্য থাকাতে মেয়েদেরকে জাবি তে অভিভাবকরা ভর্তি করাতে ভয়ই পেতেন।অবশ্য র্যাগিংয়ের হাতে খড়িতে ক্যাডেট কলেজের পোলাপানদের উপরে আর কেউ কিন্তু নেই।তবে র্যাগিংয়কে শিল্পের পর্যায়ে নিতে জাবিকে এগিয়ে রাখা যায়।
মূলত সালাম না দেয়া,দেখেও না দেখার ভান করা,ডাক দিলেও না আসা এসব অভিযোগ সাধারণ সিনিয়ররা র্যাগিং দিতে শোনা যায়।আর রাজনৈতিক সিনিয়র রা মিছিলে না যাওয়া,বড়দের সামনে সিগারেট ফুকা, অন্য পার্টিতে যোগ দেয়া এসবের কারণে ধমক বা মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে র্যাগ দিয়ে থাকে।এটা অস্বীকার করার উপায় নেই অনেক জুনিয়র মনে করে সিনিয়রের সাথে আলাদা ভাব নেয়াটা একটা স্মার্টনেস কিন্তু বেশিরভাগই এসব র্যাগিংয়ের স্বীকার যেটা তাদের ভুল বা অপরাধের তুলনায় অত্যন্ত বেশি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অপমানজনক।আপনি জোড় করে সালাম আদায় করতে পারেন,জোড় করে আপনার কথায় উঠাতে বসাতে পারেন কিন্তু শ্রদ্ধস আনতে পারবেন না আপনার প্রতি।কিন্তু সিনিয়রটি বা superiority complex এ আক্রান্তরা বা র্যাগিংয়ে নেশাখোররা এটা উপলব্ধি করতে পারেন না।এক পরিচিত সিনিয়রের কাছে শুনেছিলাম তার র্যাগ প্রীতির কারণ আর এর উৎপত্তির কারণ।তার পরিবারের মধ্যে নৈতিকতা,মূল্যবোধের কোন চর্চা কখনোই হয়নি।শুধু লক্ষ্য ছিল ভাল কোথাও ভর্তি হওয়া।তিনি নিজেও র্যাগিংয়ের ভুক্তভোগী আর এটাই তাকে প্রতিহিংসাপরায়ণ করে তুলেছে আর জুনিয়রদের প্রতি এ ধরণের অবমাননাকর আচরণে উৎসাহ দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা সময় এসব র্যাগিংয়ে মোটেই সম্পর্ক যুক্ত ছিলনা।সুশান্ত পালের এই বিষয়টা ওসব ১৮+ কথা বাদে যদি বিবেচনা করি তবে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন হবেনা।সালাম,দেখা হলে এড়িয়ে যাওয়া বা মিছিলে না আসা এসব ঘটনা থেকে ঢাবি কি মুক্ত?একজন ঢাবি ছাত্র বা ছাত্রী যে কিনা ঢাকার বাইরে থেকে একটা অচেনা শহরে আসে তার হলে সিট পেতে এত সময় কেন লাগে?তাকে কেন সিনিয়রদের চামচামি করে সিট পেতে হবে?কেন তাকে গেস্ট রুমে ফ্লোরে ঘুমাতে হবে?কেন বিরোধী ছাত্রসংগঠনের ছেলে মেয়েদের রাত ব্যাপী নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়?কেন অপছন্দনীয় কাউকে গণধোলাই দিয়ে চুরির অপবাদে পুলিশে দেয়া হয়?সুশান্ত পালকে ঢাবি উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয় কিন্তু নিরীহ এই ছেলেগুলো যারা র্যাগিংয়ের স্বীকার হয় তাদের পিতামাতার কাছে ভিসি কি ক্ষমা চায়?
উত্তরগুলো সাধারণ হলে থাকেনা এমন কারো জানার সুযোগ নেই বা ইচ্ছার সুযোগ নেই।কলা ভবন বা হাকিম চত্তর বা রোকেয়া হলের সামনেই দিন শেষ,ওসব জানার টাইম কই?কিছুদিন আগেও ঠাণ্ডায় ফ্লোরে ক্রমাগত ঘুমাতে ঘুমাতে একজন আবাসিক ছাত্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হল।কেন তার জন্য ফ্লোর?কারণ তার সিটে রয়ে গিয়েছে ব্রিটিশ আমলে পাশ করা সাবেক ছাত্র বা নেতা
পাল সাহেব বা এ এস পি মাশরুফদের সৃষ্টি করেছে মিডিয়া,স্পষ্টভাবে বললে প্রথম আলো।অনেক বিসিএস ক্যাডার যাদের এই পর্যায়ে আসার পিছনে আছে অনেক কষ্টের কথা।আমরা তা জানিনা,কারণ তাদের সাথে প্রথম আলো নেই।নিজের প্রতিষ্ঠানে পড়ে সুশান্ত পাল সেখানকার সমস্যাগুলো না খুজে বাহ্যিকভাবে হিরো হতে গিয়ে ভিলেনে পরিণত হয়েছে।আর তাকে ভিলেন বানিয়ে অনেকের ঢাবি প্রীতি বেড়েছে।তাদের উদ্দেশ্যে,পালকে হেনস্তা করার আগে পাল যে বিষয়গুলো সামনে এনেছে সেগুলোকে সমাধান করুন।আমরা কেউইই চাইনা ঢাবির কপালে র্যাগিংয়ের তিলক পড়ুক।