somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এজেন্ট আরমিন-মৃত্যু গহ্বর

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝকঝকে কাঁচের গ্লাসে মেঘগুলো বিশাল প্রজেক্টরের চলমান ছবির মতো উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে। অনিবার্ণ, রিজভি, সাইমুর, তূর্ণা, নবনীতা দাঁড়িয়ে আছে ক্যাম্পাস বিল্ডিংয়ে। অপেক্ষায় আছে কবে ষষ্ঠজনা আসবে। অবশ্য সে ক্যাম্পাসের কেউ না। তবে তার সাথে এই বাকি পাঁচজনের প্রচুর সখ্যতা কারণ এরা ছয়জনই একই স্কুলে মাধ্যমিক শেষ করেছিলো।
-হেতি আঁইয়ে না কিল্লাই? অধৈর্য হয়ে বলে রিজভি। নোয়াখালির আঞ্চলিক টানে উচ্চারন।
-আই বান্দরের বাচ্চা তোরে না বলছি এইখানে নো রিজিওনাল ল্যাংগুয়েজ। বন্ধুরা এক হলাম কত্তদিন পর। শালা আমার দেশের বাড়ির নাম ডোবাবি। সাইমুর বললো।
-এম্মা তুই দেখি বিদেশি রাইছ কুকারে হুকাই যাওয়া দেশি হেন(ভাতের ফেন)।
-ওই তোরা থামবি? কতোক্ষণ এভাবে দাঁড়ায় থাকবো? মেয়েটা এখনও এলো না। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। আর্মির লোকজন পাংচুয়াল জানি। কিন্তু আজকে কি হলো। অনিবার্ণ বললো।

পাঁচজন অধৈর্য হয়ে গেলো। পাক্কা দশ মিনিট লেইট। বাস কাউন্টারের পথ ধরলো। গন্তব্য খাগড়াছড়ি ছোট মেরুং। পাহাড়ি বাঙালি এলাকায় যাবে। এক রাত থাকবে। দেখতে দেখতে বাস কাউন্টার এসে পড়লো।
-এই ওঠ ওঠ তাড়াতাড়ি। বাস আইসা পড়ছে।
-আরে একজন এখনো বাকী আছে। ধুশ শালা!
-আগে তো ওদের কনসিডার করতে বলি। একজনকে ফেলে কেমন করে যাই।
-বলতে হবে না বেবিজ। আম হিয়্যার।
-আরিইই আরমিন চলে আসছে।

তারপর পেছনে ফেলে পাহাড়ি পথের দিকে চলেছে তারা। অনেকটা চড়াই উতরাই পেরিয়ে বাস ছুটে চলেছে।

খাগড়াছড়ি জেলা শহর। অনেকটা পথ পেরিয়ে টিমটিম করে জ্বলা হলুদ হ্যালোজেনের আলো ভরে গেছে শহর। মৌসুমী ফোঁটা বৃষ্টিতে উত্তপ্ত রাজপথ ঠান্ডা হয়ে গেছে। একটা রেস্ট হাউজে উঠে বিশ্রাম নিয়ে রাতের খাবার খেতে গেলো তারা। হঠাৎ গোলাগুলির আওয়াজ। চাঁই চাঁই ধুপ ধাপ আওয়াজ।
-হোয়াট দ্য...
-ম্যাম ডোন্ট ওরি পোচাররা এদিকে বুনো হাতি মারতে আসে তো তাই ফরেস্ট সিকিউরিটি একটু বাড়তি টহল দেয় এদিকে।
-কোন পোচার? এদিক থেকে তো বন্ধ। কাঁটাতার দিয়ে ঘেরাও করা। বার্মিজ?
-এক্সাক্টলি ম্যাম।
-শালার! দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো আরমিনের।
-এই কিরে চেতি মেতি ফায়ার অইছে হেতি। কেউ হেতিরে ঠান্ডা করিয়ালা।

রিজভির মুখের দিকে তাকিয়ে কটমট করে উঠলো সাইমুর। আধ খাওয়া পানির গ্লাসটার ভেতরের জলীয়টা ছ্যাঁৎ করে ছুঁড়ে দিলো। তারপর গটগট করে রুমের দিকে চলে গেলো।
-কামগান হেতে ভালা করে ন। আঁরে হানি মারি গেছে গই।
-অ্যাই চুপ শালা। হাসি চেপে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে কথাটা বললো তূর্ণা।

যখন রাত দেড়টা, ব্ল্যাক নিনজা স্যুট পড়ে গুটি গুটি পায়ে হলওয়ে ধরে করিডোর উইন্ডোটার সামনে এসে দাঁড়ালো কেউ। একটা ম্যাগহুক সেট উইন্ডোটার অ্যালুমিনিয়ামে আটকে নিঃশব্দে নেমে এলো নিচের দিকে। তারপরই অ্যাক্রোবেট জাম্প দিয়ে বাউন্ডারি টপকে রাস্তায়। রাস্তার একধারে পাহাড়। দ্রুত জঙ্গলে দুপায়ে হেঁটে চলেছে যেখান থেকে শব্দ আসছিলো গুলির।

আধ কিলো পার হয়ে ঘুমিয়ে থাকা বনের মাঝখানে হঠাৎ ফাঁকা জায়গায় চলে এলো সে। হঠাৎ চোখের উপর আলো ঝলকে উঠলো।
-হোল্ড! হু আর ইয়ু? হঠাৎ কেড়ে গলায় কে যেনো বললো।
-আমি ক্যাপ্টেন আরমিন।
-এখানে কি করেন? জানেন না এটা রেস্ট্রিকটেড এলাকা?
-জানি। কিন্তু পোচারদের ধরিয়ে দিতে ইচ্ছা করছিলো। তাই এখানে আসা।
-মাই গুডনেস আপনার দেশপ্রেম দেখে অবাক হচ্ছি ম্যাম। আমি এসআই পলাশ।
-নাইস টু মিট ইউ অফিসার।

পলাশ বিদায় নিয়ে চলে গেলো। সাথে বাকিরাও। আরমিন একটা ইটালিয়ান লেজার পয়েন্টার স্মিথ আ্যন্ড ওয়েসন নিয়ে চলে গেলো আরো সামনের দিকে। যতো দ্রুত সামনে যাওয়া যায় ততো জংগল ঘন হতে থাকে।
-ধর শালিরে।
-হাইইইইয়া। বলেই একচ্ছত্র চাইনিজ শাওলিন মেরে দিলো আরমিন। এতো বড়ো কোপ খেয়ে সেই যে পড়লো আর ওঠার নাম গন্ধ নাই।

আরমিন একটু অবাকই হল। যেখানে সাস্পেক্ট হওয়ার কথা বার্মিজ সেখানে কিনা বাংগালি দেখা যাচ্ছে। তার মানে গভীর ষড়যন্ত্র!

ধুপ!

খাদের কিনারায় পড়ে যেন বোবা হয়ে গেছে আরমিন। কালো কেউটে সাপের আস্তানা!

সাপ বাচ্চা দিয়েছে। বাচ্চাগুলো কিলবিল করছে সামনে। থেকে থেকে ফোঁস ফোঁস করছে মা সাপটা। কেউটের বিষ এতোটাই শক্তিশালী যে এক কামড়েই এক ন্যানো সেকেন্ডে বিষ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিওবা আরমিনের ট্রেণিং নেয়া আছে এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে সামাল দিতে হবে নিজেকে, তবুও সে ভয় পাচ্ছে যদি কামড় খায়। একটা চিকন লাঠির মতো কিছু দেখতে পেলো। সেটা তুলে সাপটার সামনে ধরলো।

ফোঁস!

-আরমিন?
-তোরা?
-আরমিন তুই কখন বের হলি রিসোর্ট থেকে? তূর্ণা প্রায় চিৎকার করে উঠলো ভয়ংকর কেউটে সাপটাকে দেখে।
-এরে তোরে খুঁইজতে খুঁইজতে চলি আইছি আর তুই ইয়ানে সাপের লগে খেলোরে?
-চুপ!
ফোঁস...

হঠাৎ সাপটা পেঁচানো শুরু করলো নিজেকে। মানে সে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে আছে। ছ্যাঁৎ করে ছোবল দিলো। আরমিনও সরে এলো প্রায়। আবার ছোবল দিলো। গোড়ালির একটা অংশে অল্প দাঁত লেগে গেলো। মানে বিষ ঢুকছে শরীরে। টলে উঠলো আরমিন। বিষ দ্রুত ছড়ানোর আগেই উপরে পৌঁছাতে হবে। আগে থেকেই বুঝি বিধাতা প্রস্তুতি রেখেছিলেন। একটা মোটা দড়ির মতো শেকড় পড়লো উপর থেকে।

হাসপাতাল পৌছেই আরমিনকে ধরাধরি করে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হলো। যদিও খুব দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয়েছে তবুও আশংকা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা। সময় যেনো ধীরে বয়ে যাচ্ছে। তবুও যেনো সময় কাটে না।

-ডক্টর কি অবস্থা ওর?
-এখনো বলা যাচ্ছেনা। তবে সব বিষ সরাতে পারিনি। আগামী ৭২ ঘন্টা অবসারভেশনে রাখতে হবে ওকে।

২৪ ঘন্টা পার হওয়ার পর...

-আমি এখানে কেনো?
-আ্যই নড়বি না একদম।
-আরে সময় নেই তো। আমাকে তাড়াতাড়ি আগের জায়গায় ফিরতে হবে। বর্ডার এর অবস্থা খুব বিপদজনক।
-আরে...

আরমিন যখন নেমে এলো ঠিক তখনই একটা অ্যাপাচি ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। খবরটা জেনেই রওনা দিয়েছেন ডিজিএফআই এর মেজর তালহা। আরমিন নামে একজন আর্মি ব্র্যাড বর্ডারের আগে ফাইট দিতে গিয়ে সাপের ছোবল খেয়ে আহত হয়, ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেছে। যাও পরের কথা, এখন আসল কথা হচ্ছে পোচারদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য তার সহায়তা দরকার। এখন সেজন্যই ঢাকা থেকে এদিকে আসা। আর সামনে ডিজিএফআই এর এলিট ফোর্স গঠন করার কথা।

-মিস আরমিন উপর থেকে মেগাফোনে একটা বিশাল আওয়াজ ভেসে আসতেই আরমিন তাকালো সেখানে। একটা অ্যাপাচি ভাসছে সেখানে।
-আমি ডিজিএফআই এর মেজর তালহা। উপরে চলে আসুন।

একটা দড়ি নেমে এলো। আরমিন উপরে উঠে এলো সেটাতে। ভালো একটা এয়ারশীপ। ভালো পাইলট দিয়েছে।

-মিস আরমিন আমরা একটা সিরিয়াস মিশনে নামতে যাচ্ছি। এই মিশনটার জন্য একটা এলিট ফোর্স গঠন করছি। নাম 'এজেন্টস অব ডি'। গেট ইনটু দ্যা পার্টি।
-ওকে আই আ্যম ইন স্যার।

এর পরের ঘটনা ইতিহাস। সাপের মতো সর্পিল আরমিন জায়গা করে নিলো এজেন্টস অব ডি-তে। পোচারদের আখড়ায় হামলা চালিয়ে একাই সব কটাকে পাঠিয়ে দিলো শ্রীঘরে।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×