somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প: ২০তম সিগারেট

২৯ শে মে, ২০১৫ সকাল ৭:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০তম সিগারেটটা না ধরালেই নয়। কিন্তু এখন পুরো রাত পরে আছে। তারাগুলো ভাল করে চোখ মেলে তাকাতে শুরু করেনি। শুকতারা পাইনি খুঁজে তার প্রিয় মানুষটিকে। অভিমানী কিছু তারা আকাশ থেকে কোথায় যেন ছুটে চলেছে। প্যাকেটের শেষ সিগারেট এখন আমার হাতে। এতক্ষণে সব দোকান হয়ত শাটার নামিয়ে ফেলেছে। শফিকের কাছে একটা ফোন দিয়ে দেখা যেতে পারে। এক রাত বিড়ি না খেলে বেটা মরবে না। কিন্তু আমি নিকোটিন্ ছাড়া রাত পার করার কথা ভাবতেই পারি না। বেটা শফিক প্রয়োজনের সময় মোবাইলটা রিসিভ করে না। সৃষ্টিকর্তা শালাকে মেয়ে বানাতে গিয়ে ভুলে ছেলে বানিয়ে ফেলেছে। যেমন রুমকিকে জীবনে প্রথমবার রিং-এ কখন পাওয়া যায় না। এই সমস্যা বাংলার সকল মেয়ের। ভারতীয় সিরিয়ালগুলো থেকে মুক্তি পেলে না মোবাইল ধরবে। একবার রাগ করে ল্যান্ড ফোনে কল দিয়ে সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছেদের পর্যায় পৌছে গিয়েছিল। আজ আবার তিনি প্রথম রিং হতেই রিসিভ করল।

- হ্যালো রুমকি।

- কেনো অন্য কেউ ধরবে ভেবেছিলে না'কি।

- এটা কেনো হবে?

-সুযোগ তো নেয়া যেতেই পারে। আজকাল ঝিনুকের সাথে ভালোই কথা চলছে।

ঝিনুক ওর ছোট বোন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বর্ষের ছাত্রী। ওর বোনটি একদম রুমকির উলটো। আর রুমকি হল একটা লৌহ মানবী। যার মাঝে সৃষ্টিকর্তা মন নামক সফটওয়্যার প্রবেশ করাতে ভুলে গিয়েছিল। আর সেই জন্য তার প্রেমে পরেছিল আমার মত অ্যান্টি গালস্ টাইপের ছেলে। হ্যা আমি। যে মেয়েদের কাছ থেকে ১০০ না ২০০ হাত দুরে থাকার চেষ্টা করতাম।

- রুমকি আমি একটা বিপদে পরেছি।

- এ আবার নতুন কি।

- তোমার কাছে সিগারেট হবে।

অন্য কেউ হলে হয়ত চমকে যেত। কিন্তু রুমকি কখন কোনোকিছুতে চমকায় না। কারণ সে লৌহ মানবী।

- হ্যালো রুমকি..... হ্যালো

রুমকি লাইন কেটে দিল। এটা ওর খুব স্বাভাবিক আচরণের মধ্যে পরে। আর এমন একটা সময় খুব স্বাভাবিক থাকাটা আমি ওর কাছ থেকেই শিখেছি। তাই বলে সে আমাকে ভালবাসে না বিষয়টি এমন না। একবার কলেজের এক মেয়ের সাথে ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছিলাম। রুমকি এসে আমাদের চায়ের কাপ মেঝেতে ফেলে দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে ক্যান্টিনের মামাকে ডেকে এবার তিন কাপ চা আনালাম। সে কাপগুলোও সাথে সাথে ফেলে দিয়ে চলে গেল। তার কথা একটাই,

- আমি ছাড়া অন্য মেয়ের সাথে টাক্কি মারতে দেখলে তোমার পা কাইটা হাতে ধরায় দিব।

কিন্তু আমার পা কাটাকাটির মধ্যে সে কখন যায়নি। তার ভয়ে কলেজের কোনো মেয়ে আমার সাথে কথা বলত না। এতে মেয়ে থেকে ২০০ হাত দুরে থাকাটা সম্ভব হয়েছিল। আর সবকিছুর ব্যতিক্রম আছে। রুমকি না হয় থাকল ১ হাত দুরে বা তার চেয়েও কম। আমি আবার রুমকিকে ফোন দিলাম।

-তোমার শাড়ির রঙ ভালো হয়নি। ঝিনুক কাল ছবি পাঠিয়েছিল। তোমার মত একটা লৌহ মানবীকে এমন মিষ্টি রঙ মানায় না। তোমার রঙ হবে ধূসর কালচে।

রিমকি মোবাইলটা এবারও কেটে দিল। তার একটা গুণ হল আমি যতই বিরক্ত করি না কেনো সে মোবাইল কখন অফ করে না। তাই তাকে কিছুক্ষণ পর আবার বিরক্ত করা যাবে। ২০ তম সিগারেটটা না ধরিয়ে উপায় নেই। ভাবছি রুমকির বাসায় গিয়ে সিগােরট নিয়ে আসি। ১০ টাকার পবিত্র সিগারেট। একবার সত্যি সত্যি রাত ২টার দিকে ওর বাসায় গিয়ে উঠেছিলাম। বেল টিপতেই রুমকি দরজা খুলল। যেন সে জানত আমি আসব। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

- মদটা কি কম খেলে হয় না?

- একটা সিগারেট হবে?

রুমকির বাবা এসে দাঁড়াল। রুমকি খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল,

- বাবা ওকে একটা সিগারেট দিয়ে বিদেয় কর।

সে এই বলে তার রুমে চলে গেল। আমি সত্যি সত্যি সিগারেটের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। রুমকির বাবা সেদিন আমাকে ১ পেকেট সাদা বেনসন সিগারেট দিয়েছিল। কিন্তু ১০ টাকা মূল্যের সিগারেট খেতে কেনো জানি খুব মায়া হল। শ্বশুর আব্বার অন্ন ধ্বংস মারকা ফিলিং। সিগারেটের পেকেটটা আজও আমার পুরনো আলমারির ভেতরে রয়েছে।

শফিক অবশেষে কল বেক করল । শালা মনে হয় মাল খেয়ে পরে আছে। কলটি রিসিভ করতে শফিক বলে উঠল,

- দোস্ত ভাললল... আছিস দো..স্ত।

আমার আর কিছু বুঝার বাকী থাকল না। আমিও রুমকির মত মোবাইলটা কেটে দিলাম।

রাস্তায় আমি আর কিছু কুকুর ছাড়া কোনো প্রাণীর চিহ্ন নেই। ২০ তম সিগারেটটা এখন জ্বালান হয়নি। সোজা হাটতে থাকলাম। কুকুরগুলোর সাথে সম্পর্ক ভাল রাখার সুবিধা হল মধ্যরাতে হাঁটার অভ্যাস থাকলে তারা কখন বিরক্ত করতে আসবে না। রুমকি একবার রাত ১২টার দিকে আমার বাসায় এসে হাজির। তার ড্রাইভার সাদা বি.এম.ডাবলিউ গাড়ীতে নামিয়ে দিয়েছিল। সেদিন ছিল আমাবস্যা রাত। আমি এতদিন জেনে এসেছি যে প্রেমিক প্রেমিকেরা পূর্ণিমায় জ্যোৎস্নায় স্নান করে। কিন্তু আমাবস্যার রাতে সারারাত ঘুড়ার মধ্যে এমন কি লুকিয়ে আছে বুঝিনি। তাও নিয়ম হল শরীরের কোনো কাপড় থাকা যাবে না। আমি এমন বিব্রতকর অবস্থায় কোনদিন পরিনি। দুজন হাতধরে সারারাত হাতির ঝিলে হেটেছিলাম সেদিন। আমাদের পায়ের জুতগুলো ছুঁড়ে ফেলেছিলাম ঝিলের বুকে। শুধু আমার কষ্টের টিউশনির টাকায় কেনা মোবাইলটি দান করতে হয়েছিল। তবু এমন একটি রাতের জন্য হাজারটা মোবাইল বিসর্জন দিতে রাজি আছি।

২০তম সিগারেটটা এখন জ্বালান হল না। পকেটে রুমকির বাবার সেই ১০ টাকা দামের সাদা বেনসনের পেকেট। রুমকিকে ফোন দেয়া দরকার। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ মোবাইল ধরছে না। আমি রিং দিতে থাকলাম। হঠাৎ ঝিনুকের গলা পেলাম।

- ভাইয়া আপনি প্লিজ আপুকে কল দিবেন না। আপনার পায়ে পরি।

মনে হল পাশে আমার লৌহ মানবী কাঁদছে। এটিও হয়ত ১ হাত দুরে থাকার মত ব্যতিক্রম কিছু।

রুমকির বাসাটি নীল আলোর জালে ঢেকে আছে। বাইরে সেই বি.এম.ডাবলিউ গাড়ীটি। কাল সকালে আমেরিকার গ্রীনকার্ড ছেলের সাথে বড়লোক বাবার সুন্দরী মেয়ে রুমকির বিয়ে। আর আমি জীবনে একটাই কার্ড পেয়েছিলাম স্কুলে ফুটবল ম্যাচে লতিফ স্যারের দেয়া রেডকার্ড। গেটের সামনে যেতেই দেখি রুমকির বাবা দাঁড়িয়ে আছে। সে জানত আমি আসব। শুধু রুমকিকে কোথাও পেলাম না।

রুমকির বাবার হাতে সেই সাদা বেনসন সিগারেটের পেকেট। লৌহ মানবী চোখের জলে অপেক্ষা করছে আমাকে একবার শেষ দেখবে বলে। শফিক হয়ত এখন বাথরুমে বমি করছে। আমি আমার ২০তম সিগারেটটি ধরিয়ে হেঁটে চললাম আমার পথে।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৫ সকাল ৭:০৯
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×