somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বালের ব্যবচ্ছেদ

২৩ শে মে, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাল। বাংলাদেশে বাংলাভাষীদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি রূঢ় শব্দ। এর ব্যবচ্ছেদ খুব একটা সহজ কাজ নয়। বালের চুলচেরা বিশ্লেষণ প্রকৃতপক্ষেই দুরূহ একটি কর্ম।

বাল শব্দটি উর্দু। এর শাব্দিক অর্থ চুল (হিন্দি সিনেমায় আমরা হরবখত নায়ককে নায়িকার বালের গুণগান গাইতে শুনি)। আপাতনিরীহ এই শব্দটি গঙ্গাঅববাহিকায় এসে তার সামগ্রিক চুলার্থ হারিয়ে ঘনীভূত হয়েছে বয়সন্ধি উত্তীর্ণ কেশরাজিতে।

সম্ভবত গুপ্তকেশের ব্যবহারিক তাৎপর্যহীনতা, অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাহুল্য, নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার হ্যাপা এবং আনুষঙ্গিক ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বিবেচনা করেই আমরা একে একটি রূঢ় গালি হিসেবে বেছে নিয়েছি।

অনেকেই শিশু বয়সে, বাল গজানোর আগেই বাল বলতে শিখে ফ্যালে। এটি দুঃখজনক। রূঢ় শব্দের অসচেতন ব্যবহারের কারণেই বাল এর সংক্রমণ ঘটতে থাকে উত্তরপুরুষের চেতনায়। আমাদের উচিত বাল বলার আগে আশেপাশে তাকিয়ে দেখা, এবং কোন শিশুর উপস্থিতিতে বালের পরিবর্তে "চুল", "কেশ", "রোম", "লোম", "কুন্তল", "অলক" ইত্যাদি কারুকার্যমন্ডিত প্রতিশব্দ ব্যবহার করা। শিশুদের অনুপস্থিতিতে বাল বলা যেতে পারে, তবে না বলাই ভালো।

বহুল ব্যবহারে বালের ওজন হ্রাস হতে পারে। আপনি যদি সবসময় বাল বলেন তাহলে সময়মতো শুধু বাল বলে কার্যোদ্ধার করতে পারবেন না। তখন আপনাকে অপাদান ও অধিকরণ কারকে বালের শারীরবৃত্তীয় অবস্থান নির্দেশ করে রূঢ় শব্দের ব্যবহারের যথার্থতা নিশ্চিত করতে হবে। বালের লেজ ধরে তখন আরো খারাপ খারাপ শব্দ তখন ব্যবহার করতে হতে পারে। পচা কথা বলার ধারাই এমন, একবার একটা বললে পেছন পেছন দশটা এসে হাজির হয়।

তবে সাম্প্রতিক বিবর্তনে বালের সাথে ছন্দ মিলিয়ে বালছাল বলছেন অনেকে। বাল আর বালছালের মধ্যে কিছুটা প্রায়োগিক পার্থক্য রয়েছে, কিছু কেস স্টাডি করলে এর সূক্ষ্মতা সহজেই অনুধাব্য।

যারা একেবারেই রূঢ় শব্দ ব্যবহার করেন না, তাদের মুখে বাল একটা বিস্ফোরণের সমার্থক। তাই ঘন ঘন বাল না বলে কালেভদ্রে বললে এটি একটি খুব কার্যকরী এক্সপ্লিটিভ হতে পারে। এছাড়া আদর করে কোন কিছুকে গালি দিতে চাইলে বালটুস, বালটুন, বাল্লু, ইত্যাদি বলা যেতে পারে।

তবে গদ্যে পদ্যে বালের সময়োচিত ব্যবহার অনেক সময় মূল রচনাকে আরো আবেদনময় করে তুলতে পারে। কিছুদিন আগেই যূথচারী বালস্য বাল হরিদাস পাল প্রসঙ্গের অবতারণা করে একটি শক্তিশালী কবিতা উল্লেখ করেছেন তাঁর একটি পোস্টে। এসব ক্ষেত্রে বাল অলঙ্কারবিশেষ।

বালের বহুল ব্যবহারের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে অভ্যাসে পরিণত হওয়া। তখন গুরুজন, সুধীজনের সামনেও এটি নিজের অজান্তে ঠৌঁটের আগল খুলে বেরিয়ে আসতে পারে স্বমহিমা নিয়ে। তখন একটা কেলো হতে পারে।

বহুল ব্যবহারে কিছুটা অস্থির, এলোমেলো হলেও এখনো আমাদের মাঝে বালের ব্যবহারিক উপযোগিতা অবিসংবাদিত, এবং সমাদৃত। বালের উৎস্থস্থলগুলিও গালি হিসেবে কম যায় না, কিন্তু বালের আসন হয়েও তারা বালের আসন দখল করতে পারেনি।

তবে আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, বালের ব্যবহারে পরিমিতিবোধের পরিচয় দিন। একে বেশি ঘাঁটলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। মাঝে মাঝে একটি দুটি উৎপাটন করুন সময় বুঝে, কিন্তু উঠতে বসতে যদি বাল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে ব্যাপারটা চোখে আর কানে কটু ঠেকবে।

২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×