বেশ কিছু দিন আগে আমি পথে চলন্ত অবস্থায় একটা গল্পের বীজ খুঁজে পেয়ে মনের মধ্যে রোপণ করি। হাতে কিছুটা সময় থাকায়, আর চলন্ত অবস্থায় সন্ধ্যার অন্ধকারে আমার সঙ্গী বইটিকে পাঠ করতে না পারায় সেই বীজ থেকে একটি শীর্ণ চারা গজায়। আমি নিজেকে চারাটিকে লালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। একসময় আমার ড্রাইভার আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়ে জানায়, আমরা গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছি।
তারও কিছুদিন পর আমি সুযোগ পেয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে সেই শিশু গল্পটিকে আঁকার চেষ্টা করি। খানিক চেষ্টার পর একটা আবছা কাঠামোর মত তৈরি হয়, এবং আমার কাছে সেটিকে ভালো লাগতে শুরু করে। শারীরিক ক্লান্তির কারণে আমি তখন কম্পিউটার বন্ধ করে ঘুমাতে চলে যাই।
অসমাপ্ত গল্পটি সেই থেকে অস্পৃষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। আমি মাঝে মাঝেই সেটিকে খুলে পড়ি, দেখি, চেষ্টা করি আরো কিছু লিখতে, কিন্তু হয় না। আমি বই পড়তে পড়তে সেই গল্পের ছানাটার কথা ভাবি, ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যাই, দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে উঠে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকি, সকালে উঠে ট্রাফিক জ্যামে বসে আবারও গল্পের গায়ে রক্তমাংস যোগের কথা ভাবি। এক একটা চিন্তা যুক্ত হয়ে গল্পভাবনা পুষ্ট হতে থাকে, কিন্তু আমার লেখার খাতায় আর কিছু যোগ করা হয়ে ওঠে না। এই জঘন্য গ্রীষ্মে ঘাম মুছতে মুছতে আমি মাঝে মাঝে আয়নায় তাকিয়ে দেখি, আমার সমস্ত চেহারায় সেই অসমাপ্ত গল্পের পায়ের ছাপ। রিকশা ডাকতে গিয়ে আমার গলার স্বর আর উচ্চগ্রামে বাজে না, অটোরিকশাচালককে আমি ঠিকানা বলতে ভুল করে লজ্জা পাই, ফোনের ওপাশে কয়েকবার উৎকণ্ঠিত হ্যালোধ্বনি শুনে আমি আবার মাটির পৃথিবী মেঘের পৃথিবীতে ফিরে আসি। আমার ভেতরে সেই গল্প কোন ভয়ঙ্কর পরজীবীর মত আমার সমস্ত ভাবনা শুষে খেয়ে একটু একটু করে মনের ভেতরে বাড়ছে।