somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলীম বিরুদ্ধে গীবত রচনা-০১

০৯ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অভিমানী বক্তব্য ব্লগের পাতায় আসে, নাস্তিকেরা কেনো ইসলামবিদ্বেষী। তাদের আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু ইসলাম এবং মোহাম্মদই কেনো হতে যাবে? অভিমানী আস্তিকেরা সংখ্যাধিক্যে মুসলিম হলেও তারা আশা করেন ইশা, মুসার গীবত না গেয়ে আস্তিকেরা কেনো শুধুমাত্র মুহাম্মদের গীবত গাইছে। এমন অন্যায় কাজে প্রলুব্ধ হওয়ার পেছনে তারা ইহুদীবাদীদের প্ররোচনা দেখতে পান। অনেকেই এটাকে পয়সার গরজে কৃত কাজ মনে করেন।

মুসলিমপ্রধান একটি জনবসতিতে মুসলিম বিশ্বাস এবং মুসলিম অন্ধবিশ্বাসই প্রসারিত ও প্রচারিত হতে থাকে নানান পদ্ধতিতে। না চাইলেও উগ্র মুসলিমদের সংস্পর্শ্বে আসতে হয়। আজকে দুপুরেও হঠাৎ একজন বলে উঠলেন রমনার কালী মন্দির সোহওয়ার্দি পার্কের পবিত্রতা, মাহত্ব্য এবং ভাবগাম্ভীর্য ধ্বংস করছে। উল্লুকটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছাড়া থাকা কি আর করার থাকে এইসব মুহূর্তে?

আমি কথা হাতরাতে থাকি। অনেক কষ্টে খুঁজে পাই যা বলতে চেয়েছিলাম, রমনার কালী মন্দির অনেক দিনের পুরোনো স্থাপনা। অন্তত ৭ই মার্চের ভাষণ দেওয়ারও ১০০ বছর আগে সেটার উপস্থিতি ছিলো। সেটার উপস্থিতি ছিলো ২৬শে মার্চ, ২৭শে মার্চ ১৯৭১এও। সেদিন সেখানে পাকিস্তানী সৈন্যরা গুলি করে ২০০ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিলো।

বিশেষণ এবং উদযাপনপাগল বাঙালীরা হঠাৎ করেই এই স্থানটিকে পবিত্র ঘোষণা দিয়ে দিলেই হবে না। রমনার মন্দির উচ্ছেদ করে সেখানের জমি দখল করে রাখবার প্রতিবাদ হয়েছে। অনেক আইনী প্রক্রিয়া, জল ঘোলা হওয়ার পরে পুনরায় হিন্দু সম্প্রদায় সেখানে পূজা করবার অধিকার ফিরে পেয়েছে।

পার্কের পরিবেশ নষ্ট করছে এই মন্দির। মন্দিরে আগত পূজারী এবং পূজার্থীরা এমন কোন অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত আমি জানি না। বরং আমার অভিজ্ঞতা বলে সোহওয়ার্দি পার্কে মন্দিরটি স্থাপিত হওয়ার পরে সেখানে ভাসমনা পতিতা এবং পতিতাগমনকারী মানুষদের উল্লসিত শীৎকার মথিত করে না পার্কটিকে। যদিও চারুকলার পাশটিতে এখনও সম্মানিত শিল্পীসমাজ গাঁজা সেবনের নিরাপদ স্থান বানিয়েছে। সেখানের গাছগুলোও নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে সারাদিন। এমন কি সেখানের গাছের পাতা খেয়ে কতিপয় ছাগলকেও দেখা গেছে উল্টাপাল্টা নাটক আর সিনেমা বানাতে, কিন্তু তিন নেতার কবরের পাশের এলাকাটা এখনও অনেক বেশী ছিমছাম।
যুক্তি বিবেচনায় অবশ্য উল্লুকটি মোটেও রাজী নয়। তার বক্তব্য রমনা কালীমন্দিরে আগত মানুষগুলোর জন্যই আদতে পার্কে সাধারণ ভ্রমনার্থীদের স্থান সংকট তৈরি হয়েছে।

ঢাকা শহরের ২ কোটি মানুষের জন্য ২ বর্গ মাইল খোলা পার্ক নেই, বাস্তবতা এমনই, ২০ বছর আগের ঢাকায় পার্কের ছড়াছড়ি ছিলো, ফাঁকা স্থানের কমতি ছিলো না, তারও আগে , মানে বায়তুল মোকাররম তৈরির আগে সেখানেও মানুষ গুলিস্তান পার্কে যেতো বৈকালিক ভ্রমনে, সেখানে মানুষের বিনোদনের উপকরণগুলো ছিলো। বায়তুল মোকাররম হওয়ার পরে সেখানের বৈকালিক ভ্রমনার্থীদের সংকট হয়েছে। সেই বিবেচনায় তখনকার ভ্রমানার্থীরাও ায়তুল মোকাররম উঠিয়ে দেওয়ার দাবি জানাতে পারতো, এমন কি এখন যখন ধর্মীয় রাজনীতির যাবতীয় ঝামেলা জুম্মার নামাজের পরের মিছিল, পীরের ভক্তদের ভেতরের গজারির লাঠির লড়াই শুরু হয় বায়তুল মোকাররম থেকে, এই ঝামেলার জায়গাটাকে ধ্বংস করে দেওয়ার দাবি কেউ তুলছে না। রমনার কালী মন্দিরের মানুষগুলো ঠিক কোন সমস্যা তৈরি করলো ঢাকার জনজীবনে।

আরে ভাই দেখো আজকের পেপার, আসামে মুসলিমদের মারছে হিন্দুরা। সাম্প্রদায়িকতা এতক্ষণ চাদরের আড়ালেই লুকিয়ে ছিলো, হঠাৎ চাদর সরাতেই সাম্প্রদায়িকতার সাপ বেড়িয়ে পড়লো আলোচনার টেবিলে। সবাই এই বিষয়ে একমত - মূলত আসামে যা ঘটছে সেটার প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুডের ধোঁয়া তুলে এখানে রমনার কালী মন্দির উচ্ছেদের দাবিটা আবালামী। সুতরাং বক্তা ভিন্ন পথে রওনা দিলেন, ভারতীয়রা হিংস্র, ভারতীয়রা এই করছে, মুসলিম কৌময়ের সমস্যা করছে।

যুৎসই একটা উদাহরণ লুকিয়েই ছিলো রমনা পার্কের আড়ালে, কাকরাইল মসজিদ এবং এখানে আগত তাবলীগি ভাইয়েরা ধন ঝাঁকিয়ে সারাদিন মুতছে। পার্কে ঘোরাঘুরি করছে, তাদের এই উৎপাত কেনো বন্ধ করা যায়েজ হবে না।
তার যুক্তি চলে আসে, এই মসজিদ স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই ওখানে আছে। আমরাও জানাই রমনার কালী মন্দির অন্তত কাকরাইলের মসজিদের তুলনায় ঢের বেশী পুরোনো। সেই অঞ্চলে অন্যসব স্থাপনার ভেতরে আছে শহীদুল্লাহ র কবরের পাশে শায়েস্তা খাঁয়ের নির্মিত মসজিদ। নির্মাণ কাম ১৬০৯ খ্রীষ্টাব্দ। কার্জন হল, নির্মান কাল ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দ। এই দুটোর মাঝামাঝি সময়ে নির্মীত রমনা কালী মন্দির। ঐতিহ্য বিবেচনায় কাকরাইল মসজিদের তুলনায় এটার টিকে থাকবার প্রয়োজনীয়তা বেশী।

যাই হোক অনেকক্ষণ বুঝিয়েও তাকে দিয়ে স্বীকার করানো গেলো না তার এই অবস্থান আদতে সাম্প্রদায়িক। অন্য সকল দেশের বিবেচনায় বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় অনেক বেশী নিষ্পেষিত হলেও তারা শান্তিপ্রিয়। তারা নিজস্ব পরিমন্ডলে মুসলিম ব্যতিত অন্যসব ধর্মের মানুষদের নিয়ে একটি ঐক্য পরিষদ গড়ে তুললেও তারা কোনো রাজনৈতিক দল নির্মান করে নি। তারা নিষ্পেষিত হলেও ইসলাম কায়েমের নামি বাংলাদেশে যেমন জঙ্গী দল সংগঠিত হচ্ছে এবং নিয়মিত বিকশিত হচ্ছে এদের মতো অন্য কোনো সহিংস দলের জন্ম দেয় নি।

তারা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিষ্পেষিত হলেও প্রতিক্রিয়ায় নিজস্ব জীবনের নিরাপত্তা এবং সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে নিজের স্বদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে কিন্তু নিজেদের জন্য একটা স্বাধীন জীবন যাপনের অধিকারের দাবিতে এখটা রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরিতে ভীত।

বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক নয় এই ধারাবাহিক প্রচারণার অর্থ আমি খুঁজে পাই না। বাংলাদেশের সমাজের অনেক ভেতরে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢুকে পড়েছে। হিন্দুদের ধারাবাহিক হিজরতের প্রবনতা মূলত তাদের নিরাপত্তাহীনতার প্রকাশ, তাদের ভারতপ্রীতির প্রকাশ নয় মোটেও। ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনীতির ভেতরেই এই সাম্প্রদায়িকতার অস্তিত্ব বিদ্যমান। প্রধান দুটো রাজনৈতিক দলই কম বেশী সাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে। বিএনপি প্রকাশ্য সাম্প্রদায়িকতা ধারণ করলেও আওয়ামী লীগ অপ্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক। অসাম্প্রদায়িক বাম রাজনীতিকর ঐতিহ্যও ১৯৭১এ নষ্ট হয়েছে যখন মুসলিম ও হিন্দু কমিউনিস্টের অস্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
কোথায় সাম্প্রদায়িকতার আঘাত নেই?
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×