শ্রদ্ধা রেখেই বলছি আপনি রাগাচ্ছেন। ২০০৬ থেকে শুরু হয়েছে আপনার আমাকে রাগানো। আপনি আমাকে ঘুমুতে দেননি এক রাত। নোবেল পুরস্কার গ্রহণের রাতে টিভিতে লাইভ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান দেখে ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললাম। গ্রামের একজন
বাংলাদেশী নারীকে নিয়ে নরওয়ের রাজকীয় হলে ঢুকলেন, আর দুনিয়ার সব রাজা-বাদশা দাঁড়িয়ে গেল! এ দৃশ্য দেখে কোন্ গাধা চোখের পানি আটকে রাখতে পারে? দিলেন সে রাতের ঘুমটা নষ্ট করে। নষ্টামির আর জায়গা পেলেন না স্যার?
স্যার আপনাকে কোন্ ভূতে ধরেছিল ১৯৭৬ সনে? আমি শিওর চিটাগাঙের জোবরা গ্রামে ভূতের উপদ্রব আছে। নইলে নিজের পকেট থেকে ২৭ ডলার খরচ করে গরিব মহিলাদের ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার পাগলামি কেউ করে? পাগলামি না ভূতনামি। গ্রাম্য কথায় বলে ‘ভূতে কিলায়।’ আপনাকে ‘গরিবি কিলায়।’ ৪২ জন গরিব দিয়ে শুরু করেছিলেন, এখন ৮৩ লাখ বাংলাদেশী গরিব সচ্ছল হয়ে গেছে। গরীব পেয়ে আপনি বোকা বানিয়ে দিলেন সবাইকে? শুধু বাংলাদেশ কেন? বোকা বনে গেছে সারা বিশ্ব! আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান, আলবেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, হাইতি, কোস্টারিকা, নরওয়ে, ডেনমার্ক, জাপান, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, ঘানা, সেনেগাল এমন কি খোদ আরব বিশ্ব বোকা বনে গেছে! আপনি ডেঞ্জারাস!
বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে আপনার ‘সামাজিক ব্যবসা’ চালু হয়ে গেছে। আজব! এরা কি? বোকা নাকি? কথায় বলে ‘বিশ্ব বোকা।’ আমি বলি- ‘বিশ্ব-ই বোকা’ বোধহয়! পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত আপনার ছোটাছুটি। বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয় আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আপনি লেকচার দিয়ে বেড়ান। বাঘা বাঘা প্রফেসর আর ছাত্র-ছাত্রীরা আপনার কথা হা করে গিলে। বিশ্বের নামী সব ভার্সিটিতে আপনার ও আপনার ‘সামাজিক ব্যবসা’র জন্য ল্যাবরেটরি খোলা হয়েছে। তরুণ-তরুণীরা আপনার পেছনে ছুটছে! কি? হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়েছেন? রাগাবেন না স্যার প্লিজ! শুধু লেকচার-ল্যাবরেটরি হলেও হতো, দেশে দেশে বিভিন্ন শহর-নগরীর নাম আপনার ‘সামাজিক ব্যবসা’র নামে ‘সামাজিক ব্যবসা নগরী’ ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। আপনি কি দারিদ্র্য বিমোচনের নেপোলিয়ন বোনাপার্ট?
এবার স্টেডিয়ামেও ঢুকেছেন আপনি। বিদেশে নাকি বিশাল স্টেডিয়ামেও আপনি অতিথি হয়ে লেকচার দেন। হাজারো ছাত্র-ছাত্রী আর প্রফেসররা জড়ো হয় সেখানে। কি স্যার? মেসি-নেইমার হতে চান? নাকি স্টেডিয়ামে শাহরুখ খানের কনসার্ট দেখে শাহরুখ খান হওয়ার শখ জেগেছে? শখ কত!
শুধু বিশ্ব কেন? মহাবিশ্বেও আপনি হাত বাড়িয়েছেন। নাসা’র বিশ্বসেরা মার্কিন নভোচারী রন গ্যারন ছয় মাস মহাশূন্যে কাটিয়ে এসেছেন। কোটির ওপর মাইল ঘুরে এসেছেন। এই পৃথিবীকে প্রতিদিন ১৬ বার করে প্রদক্ষিণ করেছেন। এই নভোচারীটিকেও আপনি বোকা বানিয়েছেন। তিনি আপনার দারিদ্র্য বিমোচনের ওপর লিখিত বই সঙ্গে করে মহাশূন্যে নিয়ে গিয়েছিলেন। অবসর সময়ে আপনার বই পড়তেন। তিনি নাকি আপনার ভক্ত। কোটি মাইল মহাশূন্যে ঘুরে আসার আপনার বইটি-ই পৃথিবীতে ফিরে এসে আপনাকে অটোগ্রাফ দিয়ে গিফট করেছে। আপনার সমস্যাটা কি স্যার জানতে পারি?
এক বিদেশিনী তন্বী আমার সঙ্গে পরিচয় হওয়া মাত্র চোখে চোখে কথা বললো। লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। যেই না প্রেমে পড়তে যাবো, আমি বাংলাদেশী শুনে ওর বডি ল্যাংগুয়েজ পাল্টে গেল। মানে এক হাতে কফি দেয়ার কথা, শ্রদ্ধাভরে দুই হাতে কফি দেয়। বললাম, ‘বিষয়টা কি?’ বললো, ‘ইউ আর এ্যান অনারেবল ম্যান। তুমি প্রফেসর ইউনূসের দেশের মানুষ!’ ভালবাসা রেখে শ্রদ্ধা শুরু করে দিল। আপনি আমাকে বঞ্চিত করছেন স্যার!
এক বিদেশী ভদ্রলোক। বড় একটি কোম্পানির সি.ই.ও। আমার বন্ধু। আমি আপনার দেশের মানুষ বলে আমাকে ‘স্যার স্যার’ ডাকে। আমি বিব্রত হই। আমাকে ‘স্যার’ বানানোর রাইট আপনাকে কে দিলো স্যার? আপনি আমাকে বিব্রত করছেন! হিউম্যান রাইটস সংগঠনে যোগাযোগ করতে হবে। মানুষ মানুষকে সাধারণত চতুস্পদী জন্তুর নামে গালি দেয়। আমিও আপনাকে গালি দিচ্ছি।
আপনি একটা হাতি!
হাতি এসে মানুষের সামনে চার পা মুড়ে বসে। মানুষ তার পিঠে উঠে বসে। হাতি দাঁড়ায়। মানুষকে পিঠে নিয়ে চলে। বিষয়টা কি দাঁড়ালো? হাতি মানুষকে চড়ালো। কিন্তু আসলেই কি তাই? হাতি মানুষকে চড়ায় নাকি মানুষ হাতিতে চড়ে? সারা বিশ্ব-মহাবিশ্ব আপনার পিঠে চড়ে বেড়াচ্ছে! হাতি আপনার জন্য কম গালি-ই হয়ে গেল ইউনূস স্যার। আপনি হচ্ছে বিশ্বহাতি- দ্য কিং এলিফ্যান্ট!