somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অলীক চুম্বনের স্মৃতি

০৫ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝিরঝিরে একটা বৃষ্টির দিন চলে গেল। এমনি করেই একেকটা দিন চলে যায়। কখনো রৌদ্রজ্জ্বোল, কখনো বা মেঘলা। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফেরবার পথে বাসের জানালা দিয়ে বৃষ্টিভেজা শহরটাকে দেখছিলাম। অনেকদিন পর বৃষ্টি নামায় মানুষের মাঝে স্বঃস্তি ফিরে এসেছে। বাসের জানালা গলে একটা ঠান্ডা হাওয়া আসছে। রাস্তার পাশে কোথাও কোথাও এখনও পানি জমে আছে আর তাতে ঝলমল করছে দোকানপাট আর সুবিশাল শপিংমল গুলোর আলো। শরীর এলিয়ে দিয়ে অফিসভাঙ্গা শহরের ব্যস্ততা দেখছি। প্রতিটা স্টপে দাঁড়াতেই বাসের ভেতরকার ভীড় ফুলেফেঁপে উঠছে। এত এত মানুষ আর তাদের ঘরে ফিরবার কী নিদারুন ব্যস্ততা। প্রিয়পরিজন অথবা কেউ না কেউ ঠিকই অপেক্ষায় আছে ওদের। আমার অবশ্য ঘরে ফেরবার খুব বেশি তাড়া নেই। একা ঘরে ফেরবার তাড়া থাকে না।

চাইলে অবশ্য মালাদের বাসায় চলে যাওয়া যায়। মালাদের বাসায় আমি যখন তখন চলে যেতে পারি। কোন মানা নেই। তবুও ও বাসায় আমার বহুদিন যাওয়া হয় না। কেমন যেনো সংকোচ হয়। আর কিছুদিন আগের ঐ ঘটনার পর সংকোচটা আরও বেড়ে গেছে। ঘটনাটি এমন কিছু নয়। এক বৃহঃস্পতিবার সন্ধ্যায় কোন কাজ নেই, ল্যাপটপটা নিয়ে বসে ফেসবুক আর ব্লগ খুলে উদাসীন ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। হঠাৎই মালার ফোন এলো। যা সে খুব একটা করে না। কিছু এলোমেলো কথার পর হঠাৎই বলে বসল, চতুষদা তোমার সাথে খুব জরুরি কিছু কথা আছে। তোমার কি সময় হবে? এমনিতে মালা আমাকে আর সবার সামনে আপনি করে বলে, শুধুমাত্র ফোনে তুমি ডাকে। এর রহস্য আমি আজো ধরতে পারি নি। যাই হোক মালার ঐ কথার পর আমি কেমন যেনো দিশেহারা বোধ করলাম। আমার চিন্তা চেতনা লোপ পেতে লাগল। আমি কিছু না ভেবেই বললাম, 'খুব কি জরুরী কথা? আমাকে যে একটু উঠতে হয়।' বলেই আমি মালাকে আর কোন সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দিলাম।

যেই মেয়েটিকে আমি এতটা ভালবাসি, যার কথা ভেবে সারাদিন কেটে যায়, তার একান্ত গোপন কিছু কথা আমাকে বলতে চাইছে, যে কথাগুলো আমি আজো তাকে বলতে পারি নি। আমার পক্ষে এটা বলা খুব স্বাভাবিক ছিল না কি, 'মালা তোমার কথা শুনবার জন্যই তো আমি এতগুলো বছর উন্মুখ হয়ে আছি। আমারও তোমাকে অনেক কথা বলার আছে। আজ আমরা আমাদের হৃদয়ের সব কথা বলব।'

কিন্তু আমি মালাকে এড়িয়ে গিয়েছিলাম!

এমন নয় যে আমার সেদিন খুব জরুরি কোন কাজ ছিল। হা বন্ধুরা অনেকক্ষন থেকেই কল আর মিসকল দিয়ে যাচ্ছিল ওদের আড্ডায় যোগ দিতে কিন্তু তা মালার গোপন জরুরি কথার চেয়ে কোনভাবেই জরুরি নয়। আর তাই সে দিনের পর থেকে আমার ভেতর এক ধরনের অপরাধ বোধ কাজ করছে। মালা আমাকে তার গোপন কিছু কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু আমি তাকে অবহেলায় ফিরিয়ে দিয়েছি!

যদিও আমি নিশ্চিত, আজ হুট করে মালাদের বাসায় চলে গেলে সে হাসিমুখেই অভ্যর্থনা জানাবে। সে দিনের একটি কথাও তুলবে না। নিজ হাতে চা করে খাওয়াবে। তার মুখ দেখে বোঝার উপায় থাকবে না, সেদিন আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আচ্ছা, মালার কাছে চলে গেলে কেমন হয়! এই বিহ্বল বৃষ্টির সন্ধ্যায় একা ঘরে ফেরবার কোন মানে নেই!

.... কলিংবেল চাপতেই মালা দরজা খুলে দাঁড়ালো তারই ধরনে। মুখে সেই চিরপরিচিত হাসি। ভিন্নতার মাঝে একটা সবুজ রঙয়ের শাড়ি পড়ে আছে। হয়তোবা রঙটা ঠিক সবুজ নয়। রঙয়ের ব্যাপারে আমি বরাবরই যাচ্ছেতাই। মালাকে আমি শাড়িতে খুব বেশি দেখিনি।

'কেমন আছো?' মালা হেসে জানতে চাইলো।
আমি মাথা নেড়ে জানালাম, ভাল। বললাম, ভুল সময়ে এসেছি বোধহয়। কোন অনুষ্ঠানে যাওয়া হচ্ছে নাকি?
'না তো! কেন? মালা ভ্রু তুলে অবাক হয়ে জানতে চাইলো।
'হঠাৎ শাড়ি পড়েছো, তাই জিজ্ঞেস করলাম।'
মালা হেসে বলল, 'শখ হলো, তাই পড়লাম। কোন কারন নেই।'
'নাকি জানতে আমি আসবো' আমি ঠাট্টাচ্ছলে বললাম। যদিও মালার সাথে এ ধরনে হাসি ঠাট্টা করা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। তবু পৃথিবীতে এমন একেকটা দিন কি আসে না, যে দিনটি সমস্ত নিয়ম- কানুন, রীতি- নীতি, সম্ভব- অসম্ভবের হিসেব কষে না। আজও কি তেমন একটি দিন! এই যেমন, দরজা খুলেই মালা আমাকে তুমি ডেকেছে!
'আমার বয়েই গেছে, তুমি আসবে তাই আমি শাড়ি পড়ে বসে থাকব।' মালা পাল্টা জবাব দিয়েই এসো ভেতরে এসো বলে ওর ঘরে নিয়ে গেল, যা সে কখনোই করে না!
'বাসায় কেউ নেই'- কারও সাড়াশব্দ না পেয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম।
মালা বলল, না, আব্বু আম্মু সন্ধ্যের দিকে বেরুলো। কথাটা আমাকে একরকম অভিভুত করল। এভাবে মালাকে একা পেয়ে যাব ভাবিনি। নিজের শোণিতে শিরায় এক অন্যরকম উত্তেজনা টের পেলাম।

মালা বলল, তুমি বসো। আমি চা বসাচ্ছি।
আমি ঝ্‌ট করে মালার হাত ধরে ফেললাম। মালা অবাক চোখে আমার দিকে তাকাল। আমি হাসি মুখে বললাম, 'চা অন্যদিন হবে। এসো আজ শুধু দু'জনে গল্প করি।'
মালা হাসলো, হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে বলল, 'গল্প করা যাবে। আগে চা তো করতে দাও।'
আমি মালার হাত না ছেড়ে সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
মালা মুখে হাসি ধরে রেখেই বলল, 'সব কথা শুনবো। ফ্রিজে পায়েস আছে। তুমি তো পায়েস পছন্দ করো। দেই একটু?'
আমি এবার রেগে উঠলাম। দু'হাতে ওকে ধরে একটা ঝাঁকি দিয়ে বললাম, তুমি বার বার কেন কথা ঘুরাচ্ছো? আমার কিচ্ছু লাগবে না, কিচ্ছু চাই না। আমি শুধু তোমাকে..
মালা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। আমি এক হাতে ওর থিতুনি ধরে মুখটা নিজের দিকে তুলে আনলাম। মালা একবার সজল চোখে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল। ওর চোখে জল দেখে ভীষনভাবে দুলে উঠলো আমার ভেতরটা। আমি কাতর ভঙ্গিতে বললাম, মালা আমি স্যরি। সেদিন আমি ভুল করে তোমাকে...
মালা একটা গভীর শ্বাস টেনে মাথা নেড়ে বলল, 'ওসব কথা আজ থাক..'
আমি মালাকে ছেড়ে দিয়ে বললাম, 'আচ্ছা থাক। মালা শাড়িতে তোমাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।'
মালার মুখে একটা করুন হাসি ফুটে উঠল। ম্লান হেসে বলল, কেন শুধু শুধু মিথ্যে বলছো।
- বিশ্বাস করো। একবর্ণ মিথ্যে বলছি না! শাড়িতে তোমাকে ঠিক দেবী দেবী লাগছে। ইচ্ছে করছে তোমার সামনে জড়ো হয়ে বসে পুঁজো দেই।
- যাঃ! কি সব বিচ্ছিরি কথা! মালা লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিল।

আমি হাসলাম। মালাকে ওর খাটে বসিয়ে দিয়ে ওর সামনে মেঝেতে হাঁটু- ভেঙ্গে বসলাম ঠিক যেমন জল উপকূল ছুঁয়ে থাকে। তারপর অনেকক্ষন ওর চোখে তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফিরলাম, যদি কোনভাবে সে রাতের না বলা কথাগুলো জেনে নেয়া যায়। কিন্তু আমি চোখের ভাষা পড়তে জানি না।
- 'মালা সেদিন তুমি আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলে। মনে আছে?'

মালা কিছু বলল না। শুধু দু'এক মুহূর্ত কী যেন ভাবলো নিজের মনে। তারপর বললো, 'চতুষদা, তুমি আমাকে ভুলে গেছো!'

কী জ্যোৎস্না, কী হাহাকার সেই কন্ঠস্বরে!

এ কথায় মুর্হুমুর্হু বজ্রপাত হতে পারতো, অতিবৃষ্টিতে প্লাবন নামতে পারত অথবা ভুমিকম্পে একটা লোকালয় ধ্বংস হয়ে যেতে পারতো। আমি বেপরোয়ার মতো বললাম, একথা সত্যি নয় মালা। বিশ্বাস করো। হা, অনেকদিন আমি তোমার খোঁজ নেইনি, দেখা করিনি। কিন্তু তোমাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। আমি তোমাকে ভালবাসি মালা। তুমি কি আমাকে ভালবাসো না?
মালা অন্যমনষ্ক স্বরে বলল, ভালবাসি কি না জানি না। শুধু জানি তোমাকে না দেখলে আমার ভীষন কষ্ট হয়' মালার এই কথায় কোত্থেকে একটা আবেগ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি ওর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে কিছুক্ষন গন্ধ শুঁকে চুমু খেয়ে বললাম, 'তোমার হাতে কী সুন্দর গন্ধ মালা!' মালা হাতটা ছাড়িয়ে নিল না শুধু একটা অজানা আশঙ্কায় চুপ করে থাকল। আমি উঠে ওর পাশে বসে আলতো করে ঠোঁটে চুমু খেলাম। মালা চোখ বন্ধ করে রইল। চড়ুই পাখির মতো ওর ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। আমি একটা হাত মালার চুলের সোনালি বিস্তারে রেখে আরেক হাতে ধীরে ওকে শুইয়ে দিয়ে ওর উষ্ণ বুকে মুখ ডুবিয়ে গন্ধ শুঁকতে লাগলাম... যেন বহুদিনের তৃষ্ণার্ত আমি এক স্রোতস্বীনি নদীর সন্ধান পেয়েছি...

আদতে এসবের কিছুই ঘটে না। আমি আমার নিঃসঙ্গ ঘরে ফিরে মালাকে নিয়ে এমনি সব কত কী ভাবি। কত কথা হয় আমাদের দু'জনার মাঝে। শুধু মালাদের বাসায় আমার আর যাওয়া হয়ে উঠে না। জানা হয় না মালা আমাকে সেদিন তার একান্ত গোপন কিছু কথা বলতে চেয়েছিল অথচ আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। শুধু কল্পনার সেই অলীক চুম্বনের স্মৃতিটুকু আমার মনে ভাস্মর হয়ে থাকে...



সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১২ সকাল ১০:২১
৪১টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×