“লাশের রাজনীতি” তো অনেকদিন ধইরা দেইখা আসতেছি। কিন্তু “লাশ নিয়া ব্লগিং” ও যে দেখতে হইব এই কথা জীবনেও কল্পনা করিনাই। গত ৩৬টা ঘণ্টা ধইরা হুমায়ুন আহমেদ স্যারের লাশ কোথায় দাফন করা হইব এইটা নিয়া যা সার্কাস চলতাছে সামু’তে সেইটা আসলেই সহ্যের সীমা ছাড়ায় গেছে। একেকজনের পোস্ট দেইখা মনে হয়, হুমায়ুন আহমেদের কোন স্বজন পরিজন কিচ্ছু ছিলনা। বাংলাদেশের ১৬কোটি মানুষই তার সবচেয়ে কাছের মানুষ আর আমাদেরই দায়িত্ব শাওন কিংবা জাফর ইকবাল স্যারের টানাটানি থেকে লাশটাকে বাঁচানো। সকাল থেইকা এই নিয়া ফেসবুকে আর সামুতে মিনিমাম ১০টা লেখা চোখে পড়ল। এর আগেও কতোগুলা পোস্ট পড়লাম শাওনের ফাস্টক্লাস টিকেট লাগব, তাই লাশ দেশে আনতে দেরি হইতাছে! আরে ভাই, মানুষটা মরছে তারে এইবার একটু শান্তি দে না রে ভাই। এত চুলকায় ক্যান তোগো? বাইচা থাকতে লোকটারে তোরা শান্তি দেশ নাই। সমানে কানাঘুষা করছস সে মেয়ের বয়সী শাওনকে বিয়া করছে দেইখা। আরে আবালেরা, একটা মানুষ আরেকটা মানুষরে ভালবাইসা সামাজিক স্বীকৃতি দিয়া বিয়া করলেই দোষ?! আর আমাগো আধুনিক পশ মিডিয়ার লোকজন কিংবা হাই-ক্লাস সোসাইটির হোমড়া-চোমড়া লোকজন যে বেহায়ার মত পরকীয়া কইরা বেড়াইতেছে, যাগো আকাম-কুকাম ওপেন সিক্রেট-হেরা সব সাধু, না? এই হুমায়ুন আহমেদ আমাদেরকে শিখায় গেছেন কিভাবে নিজের ভালবাসাটাকে ডিফেন্ড করতে হয়, কিভাবে নিজের ভালবাসার জন্য সবকিছু ছেড়েছুড়ে আসা যায়। কিন্তু সমস্যা তো একটাই। আমরা বাঙ্গালের জাত, কারো নামে একটা কথা কানের ভিতর দিয়া মগজ পর্যন্ত যাওয়ার আগে আমাগো মুখ খুইলা যায়। যা ইচ্ছা তাই কাদা ছিটাইয়া মজা না নিলে তো আমাগো পেটের ভাত হজম হয় না শালার।
বহুত হইছে বাজানেরা, এইবেলা ক্ষান্ত দাও। লোকটার আত্মারে একটু শান্তি দাও। ওর ফ্যামিলি আছে। ফ্যামিলিতে যত সমস্যাই থাকুক না কেন, এইটা ওরাই ডিসিশন নিবে স্যারের দাফন কোথায় হবে। তোমরা নিজের নিজের কামে যাও (যদি না তোমরা পেইড ব্লগার হয়ে থাকো)।
লোকটা আমার খুব প্রিয় আছিলো। তার মারা যাওয়ার খবরটা পাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত নিছিলাম ওনার মৃত্যু নিয়া কিংবা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে কিছু লিখব না। কারণ ওনারে নিয়া লেখার বিন্দুমাত্র যোগ্যতা আমার নাই আর ওনার প্রতি যে শ্রদ্ধা, সেইটা একান্তই আমার নিজস্ব, লোক দেখানোর জন্য না। কিন্তু যেই নোংরামি শুরু হইছে, না লিখে পারলাম না। আর মডূ প্যানেল কোন ঘোড়ার ঘাস কাটতে গেছে বুঝলাম না। গতকালই এক *** পোস্ট দিছিলো হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু যেই ভাইরাসের কারণে হয়েছে, সেই ভাইরাস আমাদের মাঝেও ছড়াতে পারে, তাই তার লাশের প্রতি যেন জনসমাগমে শ্রদ্ধা না জানানো হয়। স্বয়ং জানা ওই পোস্টে কমেন্ট করছে যার মানে মডু প্যানেল ঘোড়ার ঘাস কাটতেছে না, ভালভাবেই নজর রাখতেছে। তাহলে এইসব ফালতু পোস্ট ৫মিনিটের বেশি টিকে কেমনে?!?!?