জন্মঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে স্বীয় জন্ম তারিখ সম্পর্কে কোন বিবরণ পাওয়া যায়না। তাঁর জীবনীকার দের মধ্যে তিনি কবে জন্ম গ্রহণ করেছেন তা নিয়ে মতভেদ আছে। তবে
বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের তারিখ ছিল ১২ ই রবিউল আউয়াল, ইংরেজি সন মোতাবেক ৫৭০ খৃস্টাব্দে। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে ৫৭০ সনই ব্যবহার করেছেন। তবে নবীর প্রকৃত জন্মতারিখ বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। এজন্যই এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন এক বর্ণনা মতে তাঁর জন্ম ৫৭১ সালের ২০ বা ২২ শে এপ্রিল। সাইয়েদ সোলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে শেষোক্ত মতই ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশী নির্ভরযোগ্য। যাই হোক, নবীর জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের ঘটনা ঘটে এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহনের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই।
মৃত্যুঃ
সর্বসম্মতভাবে রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যু দিবস হল ১২ রবিউল আউয়াল। বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর হিজরী ১১ সালের সফর মাসে মুহাম্মদ (সাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের তাপমাত্রা প্রচন্ড হওয়ার কারণে পাগড়ির ওপর থেকেও উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছিল। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি এগারো দিন নামাজের ইমামতি করেন। অসুস্থতা তীব্র হওয়ার পর তিনি সকল স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রাঃ)এর কামরায় অবস্থান করতে থাকেন। তাঁর কাছে সাত কিংবা আট দিনার ছিল,মৃত্যুর একদিন পূর্বে তিনি এগুলোও দান করে দেন। বলা হয়, এই অসুস্থতা ছিল খাইবারের এক ইহুদি নারীর তৈরি বিষ মেশানো খাবার গ্রহণের কারণে। অবশেষে ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে তিনি মৃত্যবরণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। আলী (রাঃ) তাকেঁ গোসল দেন এবং কাফন পরান। আয়েশ (রাঃ)এর কামরার যে স্থানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন,জানাযার পর সেখানেই তাকেঁ দাফন করা হয়। এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে দিনটিতে আমাদের প্রিয় নাবীর জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয় সে দিনটি তাঁর মৃত্যু দিবস ও। সুতরাং এদিনটি পালন করতে হলে এক্ই সাথে উৎসব ও দুঃখ প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু আমরা দুঃখ প্রকাশ না করে ঈদে মিলাদুন্ববী অর্থাৎ খুশিকেই বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রকারন্তে এটাকে দুঃখের দিনে খুশি হওয়ার সামিল।

একই দিনে বিশ্বের সর্ব শ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম কিংবা মৃত্যু দিবস পালন হোক তা হয়তো সৃষ্টিকর্তা চান না বলেই একই দিনে তাঁর মৃত্যু ও জন্ম দিবস নির্ধারণ করেছেন। তাই ঈদে-মিলাদুন্নবি প্রথাটি কুর’আন অথবা সহিহ সুন্নাহ এমনকি নবীজির জিবদ্দশায় যেমন পালন করা হয় নাই তেমনি কোন সাহাবিদের আমল থেকে প্রমাণিত নয়। যদি এটা শুধু কল্যাণের কাজই হতো তাহলে আমাদের চেয়ে তারাই এ কাজটি বেশী করতেন। কেননা তারা আমাদের চেয়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বেশী সম্মান করতেন ও ভালবাসতেন এবং কল্যাণের কাজে তারা ছিলেন বেশী আগ্রহী। সুতারাং এই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কতটুকু যুক্তি সংগত যে দিন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর ওফাত দিবসে। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জন্ম ও মৃত্যু দিবস একই তারিখে হবার কারণে কেউ যাতে খুশি ও শোক পালন না করেন সেই উদ্দেশ্য সৃষ্টিকর্তা চাননা এই দিনটা মানুষ উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করুক আবার দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে পালন করুক। খুশি ও বেদনা হত এই দিনটি যেন কোন ভাবেই পালন না করে নীরবে তার উপর দরুদ (সঃ) পড়ে।
অপরদিকে ঈদে মিলাদুন্নবী হলো আমাদের পেয়ারা নবীরজীর জন্মদিনের মাঝে সীমাবদ্ধ, এতে তাঁর জীবনের সামান্যতম অংশই আলোচনা করার সুযোগ থাকে অথচ সিরাতুন্নবী হিসেবে বছরের যে কোন দিনে তার জীবনী আলোচনা করে আমরা দো জাহানের অশেষ নেকী অর্জন করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহি বুঝ বুজবার তৌফিক দান করুন। আমিন-

বিঃদ্র্রঃ ঈদে মিলাদুন্নবী দিবসে আমার গত বচরের পোস্ট দ্রষ্টব্যঃ
১২ রবিউল আউয়ালঃ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী অথবা সিরাতুন্নবী!
লিংকঃ
Click This Link