somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাতপরীর আর্তনাদ

০৫ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

−−−−−−−−−−−−−−−−−−− ( ১ ) −−−−−−−−−−−−−−−−−−−−


-“না, না ... ৫০০ টেকায় কিছু অইবনা । এই ছেমড়ি নতুন আইছে। আপনেই পরথম কাস্টমার। এক্কেবারে কুমারী । ১০০০ হাজার টেকা দেওন লাগবো । ”
- “ বেশী হয়ে গেলো না?”
-“ আপনে পুরান কাস্টমার হেল্লেইগা কমাইয়াই কইছি। নাইলে এমন মাইয়া ১২০০ র কমে ........................... , আইচ্ছা যান , ১০০ কমাইয়া দিলাম।”
-“ ঠিক আছে, জলদি আসতে বল। আমি রুমে গেলাম।”

মোটা থলথলে কুৎসিত-দর্শন রমিজা , যে কিনা পতিতা পল্লীর কত্রী হিসেবেই পরিচিত , তার সাথে দরদাম শেষ করে তপন সাহেব অপেক্ষা করতে লাগলেন কয়েক ঘণ্টার জন্য কিনে নেয়া মেয়েটিকে ভোগ করার লালসা নিয়ে।
বয়স বেশী হয়নি লোকটার, ৩০ এর কাছাকাছি। রঙের ব্যবসা করে হঠাৎ পয়সা করে নিজের মনে রঙ লাগাতে আনাগোনা শুরু করল পতিতাপল্লিতে । ইতমধ্যেই একজন চেনা ও নিয়মিত খরিদ্দার হয়ে উঠেছে এখানকার।

কাঁচুমাচু করে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো মেয়েটি.........রজনী ......... । যেন এখনো ঘোরের মাঝে আছে আর বুঝতে পারছেনা কি হতে চলেছে ......।। তপন সাহেব নিজে উঠে দরজা বন্ধ করার একটু পরেই ভেসে এল রজনীর আর্তচিৎকার ............

“ কাজ করবি আর খাবি ” – ধরনের কথা বলে রজনীকে নিয়ে আসা হয়েছিল গ্রাম থেকে...... সাধারণত যেভাবে এসব জায়গার মেয়েদের জোগাড় করা হয়। ক্ষুধা, দারিদ্র্যের কষ্টে অতো সাতপাঁচ না ভেবে চলে আসে গ্রাম থেকে। জীবনটা নরকে রূপান্তরিত হতে শুরু করল ঠিক ওই সন্ধ্যা থেকে ......... আস্তে আস্তে সেও নারকীয় জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেলো ...... অভ্যস্ত করানো হল......

কিন্তু ভুলটা প্রথমেই হয়ে গেলো। ওই রাতেই সৃষ্টি হল এক দুঃখিনীর গর্ভে আরেক দুঃখিনীর ভ্রূণ .........
তখনো সম্পূর্ণ পাথরে পরিণত হয়নি রজনী ,মায়াদয়া তখনো অবশিষ্ট ছিল মনে, তাই আরেকটি জীবনের সম্ভাবনাকে বুকে পাথর চেপে হত্যা করতে পারেনি .........

শুভ্রার জন্মের পরেই অন্ধকার গলিটা যেন আলোয় ভরে গেলো ...... আর এটাই ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ালো ওর মায়ের জন্য। সুন্দর হয়ে জন্মানোর পরিণাম যে এখানে ভয়াবহ !!!! মনকে শক্ত করলো রজনী , এই অন্ধকার দুনিয়া থেকে শুভ্রাকে আড়াল করে রাখাই একটা চেলেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালো ওর জন্য ...... যেভাবেই হোক এই পেশা থেকে ওকে দূরে রাখতে হবে......

কাছাকাছি একটা স্কুলে যেতে শুরু করলো শুভ্রা ...... কিন্তু লোভাতুর দৃষ্টিগুলো ঘুরে ঘুরে যে ওর দিকেই স্থির হয় !!! অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লাস সিক্সের পর পড়াশোনা স্থগিত রাখা হল ...... ঘর থেকে বের হতে দেয়না মেয়েকে রজনী।। এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল .........


−−−−−−−−−−−−−−−−−−−− ( ২ ) −−−−−−−−−−−−−−−−−−−

রজনী পাড়ায় নেই । অন্যকোথাও গিয়েছে।
ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে খুলে গেলো , কিন্তু ভেতর থেকে বন্ধ......
- ওই মাইয়া , দরজা খোল !!
- না , মায় না করসে , পারুম না ।
- আরে, তোর মায় আমারে পাডাইসে তোরে নিবার লাইগা , তোরে দেখবার লাগি পাত্রপক্ষ আইসে ...
অনেকক্ষণ বুঝানোর পর শুভ্রা দরজা খুলল । কয়দিন আগে আসলেই ওর মা বিয়ের কথা বলছিল । তাই বিশ্বাস না করে পারলো না। একজন এসে ওকে সাজিয়ে দিতে লাগলো, তারপর নিয়ে যাওয়া হল ওখানকার সবচাইতে দামি ঘরটাতে । নামীদামী (!!!) লোকদেরকেই ওই ঘরটা দেয়া হয় ।

১৭ বছর আগের সেই আর্তচিৎকারটা আবার ভেসে উঠলো ......

রজনী ফিরে দেখে রমিজা বসে আছে ওদের ঘরে। - “ শুভ্রা কই ?!!”
- ওরে বড়ঘরে পাডাইসি , মস্ত ব্যবসায়ী । কুমারী মাইয়া খুঁজতাসিল। আর কাউরে পসন্দ অয় নাই, শেষমেশ তোর মাইয়ারে পাডাইসি। .................. এইডা কি !!! এমন কইরা বইয়া পরলি যেন কত বড় অনর্থ অইয়া গেসে...... বেশ্যার মাইয়া বেশ্যাই হয় শেষমেশ । বুঝলি ?

.....................আর ওদিকে পৈশাচিক তৃপ্তি নিয়ে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে ভোগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তপন সাহেব । ........................
পুরনো অভ্যাস টা ছাড়তে পারেননি তপন সাহেব । বিয়ে করেছেন, সন্তানের বাবা হয়েছেন। কিন্তু তারপরেও এখানে না এসে পারেননা। আজও এসেছিলেন.........

কাছেই কোনোএকটা ঘরে বাজছিল সস্তা হিন্দিগান......... রজনী আর শুভ্রার বিলাপ চাপা পরে গেছে তার নিচে .........
ওরকম আর্তনাদ কতোই শোনা যায় , কারো কিছু যায়-আসেনা তাতে ......
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:২০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×