সত্যজিৎ রায় তাঁর সৃষ্ট ব্যাপক জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদার জন্য অনেক পাঠকের মনে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফেলুদাকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় গল্প লেখা শুরু করেন কোনোরকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই। বলতে গেলে একরকম বাধ্য হয়েই। কিন্তু ফেলুদা সিরিজের প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর তা এতটাই জনপ্রিয় হয় যে , তিনি তারপর ফেলুদাকে নিয়ে আর হেলাফেলা করতে পারেননি।
সত্যজিৎ রায় তাঁর নিজের কিছু ব্যক্তিগত লক্ষণও ফেলুদার মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করেছেন। সেটা নিয়েই আজকের এই লেখাঃ
* বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুলের নখ কাটতেন না সত্যজিৎ রায়, ফেলুদাও না।
* সত্যজিৎ রায়ের উচ্চতা ছিল ছ'ফুট সাড়ে চার ইঞ্চি। আর ফেলুদার উচ্চতাও ছিল ছ ফুটের উপরে। ছ'ফুট দুই।
* ফেলুদার দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত প্রখর। চোখদুটো খুবই ঝকঝকে। সত্যজিৎ রায়েরও দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিলো। তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারতো, এমন লোক কমই ছিলো।
* ফেলুদার পছন্দের পোষাক ছিলো ট্রাউজার্স এবং শার্ট। সত্যজিৎ রায় এই কম্বিনেশনটা বেশ পছন্দ করতেন। বিশেষ করে শ্যুটিং এর সময় সত্যজিৎ রায় এই পোষাকটাই বেশী পড়তেন। তাছাড়া সত্যজিৎ রায় শীতকালে কাজের সময়ে হালকা একধরনের জ্যাকেট পড়তেন। লক্ষ্য করার বিষয় হলো সত্যজিতের বহু ইলাস্ট্রেশনে ফেলুদাও জ্যাকেট পড়েছে এবং সেই জ্যাকেটের নকশা অনেকটা সত্যজিতের জ্যাকেটের মতো।
এতো গেল, বাইরের কথা বা বহিরঙ্গের কথা। আসুন দেখি, এদের বৈশিষ্ট্যগত কী কী মিল আছে:
* সত্যজিৎ রায় তাঁর গোয়েন্দাকে নিজের চরিত্র এবং স্বভাবের অনেককিছুই উপহার দিয়েছেন। আমরা দেখেছি ফেলুদার মাথাটা অত্যন্ত ঠান্ডা, সহজে ঘাবড়ায় না। বিপদের মুখে দাড়িয়েও "মগজাস্ত্র" এর ধার ভোঁতা হয়না। চট করে রাগেও না। বাস্তব জীবনে সত্যজিৎ রায় ছিলেন এরকম ঠান্ডা মেজাজের মানুষ, কারো সঙ্গে উচুঁ স্বরে কথাও বলেননি কোনোদিন।
* ফেলুদার নানা বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা। ফেলুদা নানা বিষয় সম্পর্কে আগ্রহী এবং বইও পড়ে প্রচুর। এই জিনিসটা সত্যজিৎ রায়ের মধ্যে ব্যাপক পরিমানে ছিলো। সত্যজিৎ রায় প্রচুর বই পড়তেন। ব্ল্যাক ম্যাজিক থেকে বিগ ব্যাং যেকোনো বিষয়েই তাঁর জ্ঞান ছিলো ঈর্ষণীয়।
এছাড়া আরো নানা বিষয়েই সত্যজিতের সঙ্গে ফেলুদার মিল ছিলো।
অমিল যে একেবারে নেই, তাও নয়। কিছু অমিলও আছে। যেমন, ফেলুদা প্রায়শই জিন্সের প্যান্ট পড়তেন কিন্তু সত্যজিৎ রায় কোনোদিন জিন্সের প্যান্ট পড়েননি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৯