somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Walk asleep!

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত এখন প্রায় দেড়টা হবে, কিশোর শোয়েছিল। আনমনে প্রতিরাতের মত, আজকে শুধু ব্যতিক্রম একটি জিনিসই আর তা হঠাৎ করে সে খুব বেশি সচেতন হয়ে গেল! ঘুম আসার পূর্বের খানিকটা সময় যখন ষস্ট ইন্দ্রিয় অচল হয়ে পড়ে সম্ভবত পন্ঞম ইন্দ্রিয় ক্রমস জাগ্রত হয়। চারপাশের নৈঃশব্দিক কোলাহলে যে কেউই একটু খেয়াল করলে বোঝতে পারবেন অজানা অনেক ধরণের অদ্ভুত শব্দ আমাদের কানে আসে। আর সহজ করে বলতে গেলে রাতের খাবারের পর যখন নিদ্রার জন্য আমরা ঘুমুতে যাই সেই সময়টাতে। আজকেও তেমনি একটি রাত, বাথরুমের ট্যাপের পানির টপটপ ফুটা পড়ার শব্দ সাথে প্রতিনিয়ত জ্বি জ্বি পোকার সেই এগঘেয়েমি আওয়াজটা চলছেই। সেটাকে বেশি পাত্তা দিলে মনটাই বিষন্ন হতে থাকে, তাই অন্য কিছুতে মন বসাতে চাওয়া। বৃষ্টির রাত তাই রুমের বাতাস অনেকটাই শীতল। কিশোর এমনি সময়ে শোয়ে আছে- আর চোখ বোজলেই আরো কিছু অদ্ভুত শব্দ তার কর্ণপাত হচ্ছে, যেমন- কোন এক শিশুর কান্নার আওয়াজ আর তাকে কেউ সামলাতে অনেক চেষ্ঠা করছেন। কিন্তু তার কান্না যেন কোনমতেই থামবার নয়। এমনটি শব্দ প্রায়ই শোনা যায়! অনেক সময় শিশুটিকে প্রহার করার আবাসও পাওয়া যায়। তখন অনেক সময় দৌড়ে গিয়ে দেখতে ইচ্ছে করলেও আরেকটু মনোযোগ দিয়ে শোনলে বুঝতে পারা যায় এটা নিছক মনের একটি কল্পনা মাত্র। ঘুমের সময় এমন শব্দ প্রায়ই কানে আসে। আজকে অবশ্য এই কান্নার সাথে সাথে আরেকটি অদ্ভুত শব্দ যোগ হয়েছে। এই শব্দটা আলাদা ও আরো দূরের! এখানে এক মহিলা মিছকা সূরের কান্না যেমনটি তেমনি করে তবে সূরটা বিষন্ন, মনটা হুহু করে ওঠে। এই ব্যাপারগুলা কিশোরের জীবনে খুবই স্বাভাবিক। আসলে এগুলো মনের গহীনের কোন অজানা রহস্যই যা প্রায়সই উপলব্ধি করা যায় কিন্তু গুরুত্বে তা আমাদের কাছে অপ্রয়োজনীয়। সেটাই মনে মনে ভেবে সে গভীর নিদ্রাতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আওয়াজের প্রখরতা করুন থেকে বেদনাতে গিয়ে অচিরেই অন্তরের গহীনে যেন বিদতে থাকল। ঘুমের ঘোড়েই সে চিন্তা করছে- শব্দটাকে প্রতিদিনকার মতন অগ্রাহ্য করে সে ঘুমিয়ে যাবে! না আজকে ব্যতিক্রম হয়ে আওয়াজটার উৎস খোজে বের করবে? আবার এমনটাই মনে হচ্ছে যে চোখ খোললেই শব্দটা নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে। ব্যাপারটা অনেকটাই ইনসেপসনের মতন, তবে এটা বাস্তবিক কারণ এখনও সে ঘুমিয়ে পড়ে নি। তার মনে হচ্ছে শব্দটাকে আজকে চাইলেই সে খোঁজে বের করতে পারবে। এমনটি মনে হল যদি আবার পথে চোখ বন্ধ করে চেষ্ঠা করে তাহলে ঠিকই শব্দটি আবার কাণে এসে ধরা দেবে। যেই ভাবা সেই কাজ। বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধোয়ে এসে, সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটারটা পকেটে নিল। এমনভাবে বেরুতে হবে যাতে ঘড়ের মানুষ টের না পান। অবশ্য কয়েক মাস আগে এমনিভাবে চুরি করে বেড়িয়ে পরে ঘড়ে ধরা পড়েছিল, সেটা অন্য এক কাহিনী- পুলিশের কাছে ধরা পরে সে রাত লকাপে কাঠাতে হয়েছিল। হুমম এখন এসব দুশ্চিন্তা করার সময় নেই। আজকের ঘটনা ভিন্ন, সেদিন ধরা পড়ার যথেষ্ঠ কারণও ছিল। যাই হোক রুমের পাশের বেলকনির গ্রিলের পূর্ব দিকের কোণটায় ছোট্য একটি দরজার মতন বেরুবার জায়গা আছে। যা দিয়ে সে অনায়াসেই শরীলটাকে পাচার করে নিজেকে রাতের বাইরের জগতে নিয়ে যেতে পারে।

যেহেতু, আজকে লুকিয়ে বের হতে হয়েছে তাই কিশোরের পায়ে জুতো নেই!
যখন ঘুমিয়ে ছিল সে লক্ষ্য করেছিল সে আওয়াজটা পূর্বদিক থেকে আসছিল। যেদিকটা একটু ঢালু ও সমতল, হাতের ডান দিক দিয়ে হাটলে বেশি নয় ১০ মিনিটের রাস্তা পেড়িয়েই পাহাড়ি চাঁ বাগানের তৃণভূমি। শব্দটা সম্ভবত সেদিক থেকেই এসেছিল। হুমম সেটা পরীক্ষা করতে নির্জন জায়গা মতন আলো-আধারীতে চোখ বুঝে শোনতে হবে। খালি পায়ে হাঠতে কেমন শিরশিরে লাগছে, হঠাৎ করে অনেকদিন পর! ব্যাপারটাকে সে উপভোগই করছে। কার্পেটের মত ধরণী যেন আদর করে পায়ে সুরসুরী দিচ্ছে। আজকের রাতটা মেঘলা, মাঝে মধ্যেই আকাশে বিদ্যুত চমকাচ্ছে। তবে বৃষ্টি আসার এখন কোন সম্ভাবণা নেই্। পকেটে একটি কানা-কড়িও নেই যে টহল পুলিশ ধরলে বোঝ দেওয়া যাবে। রাস্তার শেষ মাথার বাম দিকের দুই রাস্তার মোড়ে দু'জন পাহাড়াদার বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে আর গল্প করছেন। তাদের পাশ কাঠিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশের অন্ধকারে সে শব্দটা আবার শোনার পরিকল্পনা নিল।

প্রথমে কিছুই শোনতে পায় নি, সবকিছু মনে হচ্ছিল আজগুবি ও বানোয়াট। ঘড় থেকে এমনিতে বের হবার মনের একটি বাহানা মাত্র!
কিন্তু আরেকটু ঝিমাতে শুরু করলেই সেই শব্দটা আবার শোনতে পেল, এবার এতটা করুন ও বিকট নয়। অনেকটাই মোলায়েম ও মিহি-তে চলে এসেছে! কান্নার পর সেটাকে অল্প অল্প ঝিইয়ে রাখতে ফুপিয়ে কাদার মতন। শব্দটার উৎপত্তি চায়ের বাগানের কোন বস্তির কাছ থেকেই হবে। এবার মনে মনে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করতে থাকে কিশোর তাহলে আওয়াজটার উৎস আজকে পাওয়া গেল তাও বেশি না আর মাত্র কয়েক মিনিটের পথ তারপরেই চাঁ- বাগানের ঠিলা ঘেসে সেই বস্তির অবস্থান। এই ভেবে পা দুটোও যেন দ্রুত ছুটতে থাকে।

পাহাড়ের কাছে আসার পর আবার শব্দটা পাবার আশায় সে চোখ দুটো বোঝে আবার ঝিমুনিতে চলে যায়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করে শব্দটা প্রায় মিহি হয়ে গেছে যার অল্পই এখন শোনা যাচ্ছে, যেন যে কোন সময়েই থেমে যাবে তবে শব্দটা এখন অনেকটাই কাছে কিন্তু চা-বাগানের ভিতর থেকে আসছে! যেহেতু ছোটবেলা থেকেই এ পথেই তার যাওয়া-আসা তাই জানা আছে ভিতরে দুই একটা কুঠিরের মাটির ঘড় আছে। চোখ খুলে সে তা্ই ভাবতে থাকে, তবে বাস্তবিক এই মেঘলা শীতের সময় শেয়ালের মুখোমুখি হওয়ার নির্ঘাত সম্ভাবনা আছে। নাহ এতকিছু ভেবে কিছুই হবে না, কান্নাটাও যেন হঠাৎ শেষ হয়ে যাবে। তাই সে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে পা বাড়ায় দু্ই পাহাড়ের মধ্যখানের সুরঙ্গ পথটি দড়েই। ভুলে যায় সে একা, সাথে কেউ নেই। আর এটা নিস্তব্ধ পাহাড়ি জঙ্গল, ভিতরটা কোলাহলমুক্ত নিঃশব্দের আবাসভুমি।



খালি পায়ে ঘাসের মধ্যে হাটতে হাটতে তার মনে ফুর ফুরে বাতাস বয়ে যায়। মনে হতে থাকে বব মার্লের সেই বিখ্যাত কথা- Life must be somewhere to be found instead of a concrete jungle! এভাবেই সে পাহাড়ি পথ ধরে বাগানের ভিতরে প্রবেশ করতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ করে মনে ভাবনা আসে, সে আসলে করছেটা কি? এমন করে একা একা এই নির্জন স্থানে তার কোন বিপদও হতে পারে। এরই মধ্যে খালি পায়ের মধ্যে একটা কিছুর অস্তিত্ব বোঝতে পেরে চেয়ে দেখে ঝুঁকে দড়েছে। হাতের কাছে কচুপাথা পেয়ে সেটা দিয়েই সে ঝোঁকটা ছোটায়। সেটা বাম পায়ের গুড়ালিতে কামড় বসিয়ে রক্ত খাচ্ছিল, রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। ঝোঁকের কামড়ের এই একটা সমস্যা ব্লিডিং হতেই থাকে। মাটিও বৃষ্টিতে ভিজে আছে যে তা লাগানো যাবে। উপায়ান্তর না দেখে সেখানেই সে বসে পড়ে, কচুপাতা দিয়ে আপাত রক্তপাতটা বন্ধ করতে হবে!
এসবই ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই পিছনে কাধের পাশে, গড়ম নিঃশ্বাস উপলব্ধি করে। এটা কী শেয়াল? না শোয়ালের নিঃশ্বাস এতটা বিকট হতে পারে না। ঠিক যেন গড়ীলার মতন কোন এক অদ্ভুত প্রানী যার নিঃশ্বাস নেকড়ের মতন। লোমষ বিশাল হাতটা যেন সে কিশোরের কাধে মাত্র রাখতে যাবে।
এদিকে কিশোর যে দৌড়েও পালাবে সেই শক্তিটুকোও নেই, চিৎকার করে যে সাহায্য চাইবে সেই স্বরটাও যেন ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেছে। এসবকিছুই যেন দুঃস্বপ্নের মতন। নিজেকে বারংবার তিরস্কার করছে কেন অবান্তরভাবে শুধু শুধু একটি শব্দের খোজে এখানে আসতে গেল। এটাই কি তার শেষ সময়? মনে মনে আল্লার নাম নিয়ে মারা যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল মাত্র!
সময়টাকে তার কেমন যেন মনে হল পূর্ব পরিচিত! আগেও কোন একটা সময় এই অনূভুতিটা হয়েছিল তার।

ঠিক তখন কে তার কানের মধ্যে ফিসফিসিয়ে বলল- তুমি স্বপ্ন দেখছ!




ছবি- সংগ্রহিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:৪৯
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×