আজকে ইচ্ছা ছিল খুব বড়সর একটা কবিতা লিখবো তোমায়, কিন্তু কি হয়ে গেল দেখ! ঘুরের মাথায় কিছুই আসতে চায় না। শুধু জানি তুমি ছিলে একমাত্র যে আমাকে প্রথম জন্মদিনের উইস করেছিল। আমি জানি মানুষ আমি সুবিধার নই সব কিছু ভুলে একা হয়ে বড় সুখেই আছি- এটাই মনে হয়। আজ শ্যাম বালিকার শুভ জন্মদিন। আহা দেখছ আমি ঠিকই শুদ্ধ বাংলাতেই বলেছি কিন্তু তুমি আর তা জানতে পারছ না। আজকে সবাইকে বলে দেই তোমার কিছু কথা, উচুতে সে ছিল আর সব বাঙালি মেয়েদের ছেয়ে বেশি না একটু লম্বা। পাখি আর বাচ্চাদের প্রতি উনার আহ্লাদের শেষ নাই। নামায পড়েন, কুরআন পড়েন আর সন্ধ্যা হলে বাবার কাছে তালিম নিতে মাথায় কাপড় দিয়ে বড়তে বসেন। এরই মধ্যে সুবর্নের আগমন! দড়জাটা একটু ভিড়িয়ে মোমবাতির আলোয় শ্যাম বালিকা এশার নামায সেরে ফেলছেন- আর সূবর্ন নির্বাক হয়ে তার নামায পড়া দেখতে থাকে। সে সালাম ফিরিয়ে ডান পাশে চেয়ে দেখে সূবর্নের হাসিমাখা মুখ চেয়ে আছে তার দিকে। তার হাসিতে একটি ভালোলাগা মিশে থাকে যেটাতে তার আত্মা-তে তখন সুখের আলোড়ন সৃষ্টি হত। সে এসে তার পাশে বসলে, আলতো করে নরম হাতটা জড়িয়ে ধরত তার দুটি হাতে। সূবর্নের মায়ভরা দু-চোখের পলকহীন চেয়ে থাকায় কয়েক মূহুর্তের বেশি দৃষ্টি রাখতে পারে না শ্যামা। কি অদ্ভুত করেই না সূবর্ন বলত তখন- এই আরেকবার তাকাও, আমার চোখে। মুচকি হাসে বালিকা, আহারে কি ঝিনুকমাখা অকৃত্রিম হাসি। সূবর্নের আবদার কি কখনও ফেলতে পারে সে? তাই চোখে কিছুটা ভিতির সাথে লজ্জা আর ভালোবাসা নিয়ে আবার সে চোখ খোলে তাকালে, মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে সূবর্ন অপলক তাকিয়ে থাকে। এইবারও তার সরল চাহনীতে বেশিক্ষণ চোখ রাখতে পারে না সে। হঠাৎ করে সূবর্নের অদ্ভুত সব আবদার। শোনে শ্যামা কি যেন ভাবত, তবে সেসব আবদারে তার ভালই লাগতো- সেটা সূবর্ন ঠিকই বোঝতে পারে। যেমন প্রথম যখন সে তার হাত ধরে পরে সাথে সাথেই সূবর্ন যে লজ্জাটা পায় সেটাতে সূবর্ণা বরং মজাই পেয়েছিল। আহারে বেচারা লাল হয়ে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে বসে থাকত তখন তাকেই আবার হাতটা ধরে ব্যাপারটা হালকা করতে হচ্ছে। তখন বিস্ময়ে ছেলেটা জানতে চাইত আচ্ছা তোমার কোলে শোয়া যাবে? মাথাটাকে খুব অদ্ভুতভাবে ডান দিক থেকে নিয়ে মুচকি হেসে তার সম্মতিতে সে তখন মাথাটা তার কোলে নিয়ে যেত। কোলেতেও যেন মাথার ভার বেশী না পড়ে সেদিকেও ছেলেটার সচেতনতার ঘাটতি ছিল না। এভাবেই তাদের সময় চলে যেত। তারা দুজনেই হয়তো মনে মনে ভাবত তারা কি কখনও একজন আরেকজনকে কিস করতে পারবে? জিজ্ঞেস করবে কি, কখনও তারা একজন আরেকজনকে লজ্জায় ব্যাপারটা তুলেও ধরতে পারে নি তাই হঠাৎ করে কখন যে সূবর্ন তাকে চুমু দেয় সেটা তারা বোঝতে বোঝতেই যেন কাজটা ঘটে যায়। পরে ঘটক সাহেব এই অল্পক্ষণের চুমুতে এমন ঘাবড়ে ছিলেন যে ফোনে লজ্জায় কথাই বলতে পারছিল না। এটা ছিল তাদের জীবনের প্রথম চুমু। সূবর্ন ফোনে তাকে অনেকবার বলছে এবার নিশ্চয়ই তাদের বিয়ে করতে হবে। লজ্জায় ব্যাপারটাকে পাপ বলেও নিজেকে দোষারূপ করতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না। পরের দিন শ্যাম বালিকার অনেক নির্ভয় আশ্বাস প্রদানের পর সূবর্ন এসে এক বেগ গোলাম দিয়ে দ্রুত সঠকে পরে। তবে ফোনে এবার স্বীকার করতেই হল তাকে- ব্যাপারটা চমৎকার ও যাদুময় ছিল।
-- হুমম
-- কি করছ?
-- কিছু না, তোমার সাথে কথা বলি।
-- হুমম। নিশ্চয়ই তুমি আমাদের চুমুর কথা ভাবছ, আমি অনেক খারাপ ছেলে। তাই না।
-- ঠিকই! তবে সেই চুমুটা আমার ভালই লেগেছিল ভুলতেই পারছি না।
-- বল কি? সত্যি তোমার ভাল লেগেছে?
-- হা, সত্যি! বাবা। তুমি এত ফুল কেন দিছ এখন ঘ্রাণে আমার সারা রুম ভরে গেছে।
-- সত্যি তোমার ভাল লাগছে। তবে আর তোমাকে বিয়ে করেই আমি চুমু দেব।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আমাকে বিয়ে করেই চুমু দিও তাও এবার ব্যাপারটাকে হালকা করে নাও। আর কথাটাকে না বাড়িয়ে সূবর্নও ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যায়। কপালে তখন শ্যাম বালিকা হাত বুলিয়ে স্নেহ মাখা কন্ঠে বলত তুমি নির্দ্বিধায় সম্পূর্ন মাথার ভার আমার কোলে রাখতে পার। তার কোমল হাত দিয়ে চোখ দুটি মোজে দিয়ে, সূবর্নের মসৃণ ঘন চুলে বিলি কেটে যেত। অনেক সময় উকুন খোজতে লেগে পড়ত। সূবর্ন অবাক হয়ে বলত আরে আমার মাথায় উকুন নেই। ব্যাপারটা নিয়ে দুজনি হাসতো। সেই প্রথম কিস দেওয়ার পর সে সত্যি যেন কিস দিতে ভুলেই গেল, এরপর শুধু তার কোলে মাথা রাখা, হাতে-হাত দড়া ও তার চুলে বিলি কেটে যাওয়া। এমনি করেই তাদের সময় চলে যেত ঘন্টার পর ঘন্টা যেন এক নিমিষেই!
বাবুই পাখি বাসা বাধে ঝড় এসে হানা দিয়ে যায়, তাই সূবর্ন বাসা বানাল মনের সব শৈল্পিক ভাবনাকে কল্পনার রূপ দিয়ে। একদিন মে মাসের আজকের দিনে তার পাখিকে আমন্ত্রণ জানালো ঘর দেখাতে। তাকে জানিয়ে দিতে ভুলে গেল না, ঘরটা গহীন বনে তাই এটা সম্পূর্ন ভূমিকম্প নিরুদক। ভালোবেসে শ্যামা ঘর বাধল সেখানে, বিকেলে সে ডিমে থাঁ দিত মা হবে বলে। আর পুরুষ বাবুই যেত তাদের খাবার সরবরাহ করতে। কত পরিশ্রমী স্বামী তার। আহারে ঘাম ঝরে তার সোনার দেহে, পিঁপড়ার মতন পরিশ্রমী সুখ পাখি তার বাবুই। তাঁকে ভালোবেসে বাবুই কাঠবেড়ালি বলে ডাকে। প্রত্যেকদিন ডিমের খবর নিতে তার ভুল হয় না, ব্যাপারটাতে সাহেবার অনেক লজ্জা লাগে তাই ছেলেটাও ভীষণ ছেলে মানুষিতে ব্যাপারটি-কে পাশ কাঠিয়ে তার দুটি পাখা দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে রাখত। ঝড় তোফান আসলে অভয় দিয়ে বলতো ব্যাপার না, আসমানে একটু সমস্যা চলতেছে- বাতাস একটু এদিক সেদিক দৌড়তেছে! সেও কথাটা শোনে নির্ভয়ে তার বুকের ভিতরে সিটকে পরে। এই একটিমাত্র জায়গা যেখানে সে সম্পূর্ন নিরাপদ। ছোট বাবুই হলে কি হবে তার স্বামী একজন শিকারী, সে শুধু হিংস্র ঈগলকে শিকার করে তাকে শিক বানিয়ে খেতে দেয়। বারে তারা মুরগির ছানা-কে কিভাবে নির্দয়ভাবে ছো-মেরে নিয়ে যায়।
আসলে বনের গহীণে বাসা হওয়ায় পৃথিবীর সাথে প্রায় তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন! পুরুষ বাবুই বাজারে গেলে তার জন্য পত্রিকা, মাঝেমধ্যে ম্যাগাজিনও নিয়ে আসে। তার গল্প বই পড়তে ভাল লাগে তাই উপন্যাসও তাকে সংগ্রহ করতে হয়। আর অবসরে বসে বসে শ্যামা সেগুলা পড়তে থাকে। তাকে বারংবার নিষেধ করে যায় একা ঘর থেকে বের না হতে, সে আসলে যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যাবে। শ্যামা জানে তাই কখনও তার কথার অবাধ্য হয় না। বাবুই-টা তার স্বপ্নের মতন জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। কত জায়গায়ই না সে চিনে। উত্তরমেরু থেকে দক্ষিণমেরু সবি যেন মানচিত্রের মতন তার স্বামীর অতি পরিচিত। অবশ্য এখন ছোট বাবুটারে নিয়া পাশের বাড়ির প্রতিবেশী পেঁচার বাড়িতে প্রায়ই বেড়াতে যাওয়া হয়, সে তার স্বামির খুব ভাল বন্ধু। তার বাড়ি পাশে হওয়ায় উনার সম্মতি পাওয়া গেছে। সে পেঁচার সাথে তার জন্য নতুন কিনে আনা হলুদ শাড়ির কথা গল্প করছে। এবারের ‘পাখি মেলায়‘ সেটা সে পড়বে। প্রতিবারের মতন পেঁচাও তাদের সাথে মেলাতে ঘুরতে যাবে। সাথে এবার ছোট বাবুটা আর পেঁচার বউ ও তাদের দুই ছেলেমেয়ে।
মায়ামাখা মধুময় সেই দরদী, বুকের মাঝে বসত করে তবু অনেক দূরে- চাইলে তারে মিলে না, বারে! কাঁদিয়ে হাসিয়ে/ দু:খ সুখের গভীর জলে ভাসায় আবার হারায়!
গতকাল শ্যামবালিকার জন্মদিন ছিল আর লেখাটি অসম্পূর্ন থাকায় প্রকাশ করতে বিলম্ব হল।
HappY BirThDaY To YoU
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৪