‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ঘটনার দিন প্রাইভেট পড়ানোর পর সার্জেন্ট জাহিদের বাসা থেকে একজন সেনা কর্মকর্তারস্ত্রী গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ঐ সেনা কর্মকতার স্ত্রী তনুকে পরে বাড়িতে পৌছে দেয়ার কথা বললে সোহাগী জাহান তনু তার মাকে ফোন করে জানানোর চেষ্টা করে। এ সময় তার হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। আর সেনা কর্মকতার স্ত্রীকে ফোন করে বাসায় ডেকে এনেছিলেন সার্জেন্ট জাহিদের স্ত্রী। পরে তনুকে বাংলাবাজারের দিকে কোন সেনাকর্মকর্তার বাসায় নিয়ে অত্যাচার করে হত্যা করার পর তার লাশ টহল গাড়ি দিয়ে এনে অলিপুরে পাহাড় হাউসের জঙ্গলে এনে ফেলা হয়েছে।’ -সোহাগী জাহান তনুর মা আনোয়ারা বেগম বুধবার এ প্রতিবেদককে এ সব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘আমার মেয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের অলিপুরের ১২ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের কোয়াটারে সার্জেন্ট জাহিদের মেয়েকে পড়াতো। ২০ মার্চ সার্জেন্ট জাহিদের মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানোর শেষের দিকে সার্জেন্ট জাহিদের স্ত্রী কাউকে মোবাইলে ফোন করেন। এরপরই কোন একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী গাড়ি নিয়ে সার্জেণ্ট জাহিদের বাসায় গিয়েছিলেন। তনুকে তুলে নেয়ার সময় দস্তদস্তি দেখেছেন কেউ কেউ।’
তনুর মা আনোয়ারা বেগম জানান, ১৮ মার্চ সেনানিবাসে অনুষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু ২০ মার্চের অনুষ্ঠান বাতিল করেছিল।
এ দিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলা তদন্তে বুধবার মাঠে নেমে সিআইডি তদন্ত কর্মকর্তারা সিআইডি কার্যালয়ে এবং সেনানিবাসে গিয়ে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সিআইডি কার্যলয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কুমিল্লার শিল্পী সারওয়ার, মিউজিশিয়ান খোকন ও বাপ্পীকে। তারা ঐ অনুষ্ঠানে গান করার কথা ছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সারওয়ার জানান, ঐ দিন কোন অনুষ্ঠান হয় নি। তারাও সেখানে যান নি। শিল্পিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিআইডির তদন্ত সহায়ক দলের বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান ও তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা সেনানিবাসে যান। সেখানে তারা তনুর মা, ভাই এবং সার্জেন্ট জাহিদের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সিআইডির তদন্ত সহায়ক দলের সদস্য বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান জানান, আমরা অপরাধীদের খুব কাছাকাছি আছি। এটা অপরাধীরাও জেনে গেছে। তারা যতই দাম্ভিকতা দেখাক না কেন, যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন একদিন তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ৪০ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। ৪২ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে।
তিনি বলেন, এক শ বছর পরেও যে কোন ব্যক্তির ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়। আমরা তনুর কাপড়ে যে তিন জনের ডিএনএ প্রোফাইল পেয়েছি তাদের ডিএনএ প্রোফাইল বদলানোর কোন সুযোগ নেই। ফলে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবেই।
তনুর বাবা এয়ার হোসেনকে গাড়ি চাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ প্রসঙ্গে ড. নাজমুল করিম খান জানান, তাকে যদি কেউ হুমকি দিয়ে থাকে বা গাড়ি চাপা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে তাহলে তিনি জিডি করতে পারেন। আমরা বিষয়টি দেখবো। তবে তনুর বাবাকে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব স্থানীয় পুলিশের।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তনুর মোবাইলের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, সে অন্তত ২১ টি সিম ব্যবহার করেছে। ঘটনার দিন তনু তার মায়ের মোবাইল সিমও নিয়ে গিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তার মা আনোয়ারা বেগম জানান, বিভিন্ন সময় মোবাইল কোম্পানী যে সব অফার দিয়েছিল সে সময় সে সব সিম কিনেছে। কিন্তু এতো সিম না। ঘটনার দিন সে আমার ফোন নিয়েছে আমার সিমে এমবি ছিল। তা ব্যবহার করার জন্য।
©