somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিপ্লোমা ডাক্তার সমাচার !

০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পটভূমি:
আমাদের দেশে এমবিবিএস ডাক্তারের সংখ্যা এখনও যথেষ্ট নয়। তার পরেও যারা এমবিবিএস পাশ করেন, তারা মফস্বলে গিয়ে থাকতে চান না। সরকার পদায়নে বাধ্য করলেও তারা বদলি নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন, বা ডিউটি করেন না (এমনকি অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শহরের প্রাইভেট হসপিটালে যোগদান করেন)। তাই দেশর বৃহত্তম জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্য নামের মৌলিক অধিকার বঞ্চিত ন হয়। সেই অভাব পূরণ করতে দেশের প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা দ্রুত পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সালে ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ (State Medical Faculty) এর আওতায় প্রথমে সরকারি উদ্যোগে ম্যাটস্ স্থাপিত হয়। এর পরে ক্রমশ বেসরকারি উদ্যোগে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়। শুরুতে এই কোর্সটির মেয়াদ ছিল ৩ বছর। বর্তমানে এই কোর্সটি আরও আধুনিক করা হয়েছে এবং ৪ বছর মেয়াদে উন্নীত করা হয়েছে।
ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠান থেকে DMF ডিগ্রি নিয়ে ১৯৭৯ সালে থেকে গ্রাম/ইউনিয়ন এবং উপজেলা-পর্যায়ে নিযুক্ত হয়ে মেডিকেল এ্যাসিষ্ট্যান্টগন চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন।
মেডিকেল এ্যাসিষ্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল বা ম্যাটস্ কি?
Medical Assistant Training School (MATS) হল এক ধরনের বিশেষায়িত মেডিক্যাল ডিপ্লোমা স্কুল। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করে। অনুমোদনের পরে সব ম্যাটস্ বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ (State Medical Faculty) এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অনুষদের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাঠদান করা হয় এবং অনুষদের সরাসরি তত্বাবধানে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।
ম্যাটস কোর্স এর সিলেবাস ওকারিকুলাম নিচে দেয়া হলো: (কোর্সকারিকুলাম)
1st year: 1)Basic English 2)Basic Computer Science 3)Basic Community Health & Medical Ethics 4)Basic Anatomy & Physiology
2ndyear: 1)Basic Pharmacology 2) Basic Pathology & Microbiology
3rd year: 1)Basic Medicine& pediatrics 2) Basic Surgery 3) Basic Gynecology & Obstetrics 4)Basic Community Medicine & Health Management
4th year: Internship
ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি Diploma of Medical Faculty (DMF) কি?
Diploma of Medical Faculty (DMF) ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত একটি কোর্সের নাম। এই কোর্সের মেয়াদ বর্তমানে ৪ বছর। সরকার অনুমোদিত যেকোনো ম্যাটস্ পাঠ্যক্রম সম্পন্ন করে যারা উত্তীর্ণ হন তাদেরকে Diploma of Medical Faculty (DMF) ডিগ্রি দেয়া হয়। ডিগ্রি গ্রহণ করে এসব চিকিৎসক-গন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন/লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়ে চাকুরী বা প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিস কাজ করতে পারেন।
চাকরী:
DMF ডিগ্রিধারীরা সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অধীনে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্রে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে, স্কুল হেলথ ক্লিনিক, বিভিন্ন আধাসরকারী/কর্পোরেশন- যেমন- তিতাস গ্যাস, বি,আই,ডব্লিউ, টি,সি, বিজি প্রেস, বাংলাদেশে বিমান ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানে যেমন-ব্র্যাক, গণস্বাস্থ্য, কেয়ার, গণসাহায্যে সংস্থা, আই সি ডিডিআরবি, Save the Children (USA)/(UK), ইহা ছাড়াও দেশী বিদেশী নানা প্রতিষ্ঠানে DMF ডিগ্রি প্রাপ্তগন নিয়োগ পেয়ে থাকে।
কাজের সুযোগ:
ম্যাটস কোর্স সম্পন্ন করে অনেকেই সরকারী হাসপাতাল/বেসরকারি হাসপাতাল/কমিউনিটি হাসপাতাল সহ নানান প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
সরকারী পর্যায়ে যেমন-
জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক
বেসরকারি পর্যায়ে যেমন-
বেসরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক, বিভিন্ন এনজিও, ডায়াগনস্টিক সেন্টার,বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি।
এছাড়াও নিজস্ব চেম্বার এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।
ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা আমাদের দেশে অবহেলিত !!! অনেক সাধারণ জনগন ডিপ্লোমা ডাক্তারদের প্যারামেডিকেল বা হাতুড়ে ডাক্তার হলে অবহেলা করেন। তবে এখনও দেশের অনেক মানুষের অসময়ে পাশে থাকেন প্রত্যন্ত এলাকার এই ডাক্তারগন। সচেতনতার এই যুগেও অনেকেই জানেনই না ডিপ্লোমা ডাক্তার কি ? কিছু ওষুধ বিক্রেতা, এলএমএফ (৬মাস কোর্স), ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, ডাক্তারদের ব্যাক্তিগত সহকারী, হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়-আয়া, দালাল , কিছু এনজিওর কর্মী , সরকারী সিএইচসিপি কর্মী সবাইকে ডাক্তার মনে করে। উক্ত ব্যাক্তিগনও ডাক্তার সেজে অভিনয় করতে পারদর্শী । ডিপ্লোমা ডাক্তারদেরকে সবাই উক্ত অভিনেতাদের মতোই মনে করেন অনেকেই। ইতি মধ্যে এই অবহেলিত জাতি নানান ভাবে আন্দলন করে নিজেদের অস্তিত্ব জানিয়ে দিয়েছেন। আন্দলন হয়তো সফল নয় তবে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির দপ্তর পর্যন্ত তারা তাদের দাবিগুলোর কথা স্মারকলিপি আকারে পৌঁছে দিয়েছে, কিন্তু তাতেও সাড়া মিলছে না রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষ থেকে।


আন্দলনের কিছুচিত্র !
কর্তৃপক্ষের অনিহা দেখে যে কেউ ভাবতে পারেন, ম্যাটস শিক্ষার্থীরা হয়তো অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। অথবা এসব দাবি মেটানো সরকারের পক্ষে অত্যন্ত ব্যয় বহুল। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা সরকার এ ব্যাপারে কান-মুখ নাড়ার প্রয়োজন মনে করছে না। বিষয়টি আসলে কি তাই? মোটেই না। বরং প্রতিটি দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী। ম্যাটস শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ১. উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা; ২. উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারদের বেতন-ভাতা ১১তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে উন্নতিকরণ; ৩. কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নতুন পদ সৃষ্টি এবং তাতে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের পদায়ন; ৪. মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মেডিক্যাল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ’ নামে স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন এবং ৫. ইন্টার্নি শিক্ষার্থীদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন এবং ভাতা প্রদান।

উচ্চ শিক্ষার অধিকার যে কোনো নাগরিকেরই আছে। অবাক করার বিষয় হলো, ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে মধ্যম মানের ডাক্তার তৈরি করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিৎ করার লক্ষ্যে ম্যাটস কোর্স চালু করা হলেও তাদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে তিন বছরের তত্বীয় এবং এক বছরের হাতে-কলমে শিক্ষার মধ্যেই বনসাই হয়ে আছে ম্যাটস কোর্স সম্পন্নকারীরা। চাকরির ক্ষেত্রে না আছে তাদের পদোন্নতি, না আছে দক্ষতা বৃদ্ধির কোনো সুযোগ। অথচ স্বল্প সময়ে এবং অল্প ব্যয়ে মধ্যম মানের চিকিৎসক তৈরির সিদ্ধান্তটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। প্রথম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনাতেই তিনি এটি রেখেছিলেন এবং এই মধ্যম মানের চিকিৎসকদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করার কথাও বলেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৭৬ সালে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস)-এর যাত্রা শুরু হয়। ৪০ বছর অতিবাহিত হয়েছে, অথচ এর পরও এই কোর্স সম্পন্নকারীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ না পাওয়াটাকে কীভাবে মেনে নেয়া যেতে পারে?

বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৫০ হাজার ডিপ্লোমা ডাক্তার (ডিএমএফ) আছেন যাদের প্রায় অধিকাংশই বেকার !!! আবহেলিত এই জাতির ভবিষ্যত নিয়ে কেউ ভাবে কি ???
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×