somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লুরে ক্যাভার্ন- প্রকৃতির এক অনন্য বিষ্ময়

২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমেরিকার জনপ্রিয়তম এবং দীর্ঘ ক্যাভার্ন গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লুরে ক্যাভার্। আমার জার্নি শুরু করার আগে এর কিছু বেসিক ইনফো না দিলেই নয়।এটা ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের সেনানদোহা ভ্যালিতে অবস্হিত এবং ১৮৭৮ সালে আবিষ্কৃত হয়, যা দৈর্ঘ্যে প্রায় ২.৪ কিমি। এতে ১০ টি হলরুমের মত আছে,সবচেয়ে বৃহৎ হল রুমটির ছাদ প্রায় ১০ তলা ভবনের সমান উচু, আরো আছে উইশিং পুল,কেউ কেউ মিরর পুলও বলে।


এত জায়গা থাকতে বড় আপু আমাকে এখানে কেন প্রথম নি্য়ে এলো তা ক্যাভার্নে প্রবেশের পর বুঝতে পারলাম। লাইন ধরে টিকেট কেটে সিড়ি বেয়ে যেন পাতালপুরীতে নামতে লাগলাম। সমতলে নেমে চারপাশ দেখে আমি বাকরুদ্ধ,মুগ্ধ,বিষ্মিত! এ কোথায় এলাম!! এ যেন এক পাথর রাজার রাজ্যে পা রেখেছি, যেখানে সবকিছু কোন এক দৈবশক্তি বলে পাথরে পরিনত হয়েছে! কিছুটা উচু নিচু সরু পথ চলে গেছে সেই রাজ্যের ভিতর দিয়ে,আর ভেজা ভেজা মাটির সেই পথ ধরে আমিও চলতে লাগলাম নানান দেশের নানান বর্নের পর্যটকদের সাথে। প্রতিটি পথ শেষ হয়েছে এক একটি হলরুমে এসে।বুঝলাম শুধু আমি একাই মুগ্ধ নই,আমার আশেপাশের জাতীয় বিজাতীয় ভাইবোন,আঙ্কেল, আন্টিরাও বিষ্মিত। সেই সরু পথ কখনও কখনও সংকীর্ন হয়ে গেছে আবার কখনও কখনও দৃষ্টি দুই ধারের সৌন্দর্যের সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে।

ছাদ থেকে নেমে এসেছে অসংখ্য অসংখ্য সূচালো মাথা বিশিষ্ট লম্বাটে ধরনের পাথর, অনেকটা আমাদের দেশের সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের শ্বাসমূলের মত। কোথাও কোথাও এই লম্বাটে মাথা আরো লম্বা হয়ে মাটির কাছাকাছি চলে এসেছে আবার ঠিক উল্টো দিক থেকে মানে মেঝে থেকেও আরেকটি লম্বাটে পাথর উপরের দিকে উঠে এসেছে। এভাবে একসময় তাদের মিলন ঘটে, তারা একত্রিত হয়ে এক অনন্য খাজকাটা ডিজাইন সম্বলিত পিলার তৈরী করে। সারাটা ক্যাভ জুড়ে এই পিলারের জীবনচক্রের বিভিন্ন ধাপ দেখা যায়। আসলে যত সহজে বললাম তত সহজে একটি পিলার তৈরী হয়না। পাহাড়ের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা জলরাশি, খনিজ পদার্থ,বালি মাটি ইত্যাদি নিয়ে পাথুরে ছাদ চুয়ে মাটিতে পড়তে থাকে।হাজার হাজার বছর ধরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ঐ জলমিশ্রিত বালি মাটি মিলে একেকটি পিলার তৈরী হয়।এই একই সিস্টেম আমাদের বাসা বাড়ির ফ্রিজেও দেখা যায়। কিছুদিন ফ্রিজ পরিষ্কার না করলে ফ্রিজের বরফ চেম্বারের ছাদ থেকে আর ফ্লোর থেকে সরু সরু বরফের পিলার তৈরী হয়। আমি আসলে বেশী বুঝিয়ে ফেলছি।

সম্পূর্ন ক্যাভ জুড়ে নানা বর্নের মনোমুগ্ধকর লাইটিং করা ফলে পর্যটকদের কাছে এক রহস্যময় আলোআধারি পূর্ন অচিন জগত বলে মনে হতে থাকে। এখানে তাপমাত্রা কিছুটা ঠান্ডা,সবকিছু কেমন ভেজা ভেজা,পাথর ধরলে হাতে পানি লেগে যায়। কোথাও কোথাও পানি জমে ছোটখাটো জলাধার তৈরী হয়েছে,তাতে প্রতিচ্ছবি পড়েছে সূচালো পাথর আর পিলার গুলোর।পানি এতটাই স্বচ্ছ যে প্রতিচ্ছবিকে সত্যি ভেবে ভ্রম হতে বাধ্য। আর সেই সৌন্দর্যের কথা কি বলব! কেবল হা করে তাকিয়ে থাকতে হয়। উইশিং লেকে টুরিস্টরা কয়েন ফেলছে। পুরো তলদেশ ভরে গেছে কয়েনে। বছরে ৩০হাজার ডলার আসে এই ছোটখাটো লেক থেকে যা পরে চ্যারিটিতে দান করা হয়। সম্পূর্ন জার্নিটিতে স্কুল কলেজ পড়ু্য়া অল্প বয়সী গাইডরা সাথে থাকে আর মজার মজার কথা বলে সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

বের হয়ে সুভ্যেনির সপ থেকে এ্যামারেল্ড স্টোনের একটা আকরিক কিনতে বাধ্য হলাম,এত সুন্দর জিনিসটা ফেলে যেতে পারলাম না। সম্পূর্ণ ক্যাভটি দেখতে এক দেড় ঘন্টা লেগে গেলো। এরপর পাশেই ছিল কার মিউজিয়াম। সেখানেও ডু মারলাম। সেটা আরেক দেখার মত জিনিস।সেই গল্প আজ থাক। নটে গাছটি মুড়লো আমার গল্পটি শেষ হলো।


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×