somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে Digital Question Locker -DQL সিস্টেমের প্রস্তাবনা দিলেন গোপালগঞ্জের ছেলে জুবায়ের

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্নপত্র ফাঁস বেশ কয়েকবছর ধরে চলে আসছে যা এখন মহামারী আকার ধারন করেছে। এ অনিয়ম রোধ করতে নানা মহল থেকে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা এসেছে,

তবে আমি স্টাডি করে একান্ত কিছু আইডিয়া শেয়ার করবো এবং প্রস্তাবিত কিছু উদ্যোগের ভালো খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা করবো।

আমার উদ্যোগটির নাম দিয়েছি “Digital Question Locker -DQL”

DQL হবে এক ধরনের IoT প্রজেক্ট। প্রথমে একটু বলে নিচ্ছি IoT প্রজেক্ট কাকে বলে।

The Internet of things (IoT) হচ্ছে এক ধরনের ফিজিকাল ইলেকট্রোনিক ডিভাইস যা ডিজিটাল সফটওয়্যার এর মাধ্যমে সেট্রালি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।

এবার আসি DQL পদ্ধতি কিভাবে কাজ করবে এরপর প্রশ্ন ফাঁসের ছয় কারন উল্লেখ করে সেগুলোকে কিভাবে মোকাবেলা করবে এই পদ্ধতি তা বোঝানোর চেষ্টা করবো।

DQL হবে এক ধরনের ফাইল বা বাক্স যেখানে থাকবে Automatic Lock সিস্টেম তবে আনলক করা বা খোলার জন্য কোন চাবি থাকবে না। বিজিপ্রেস থেকে প্রশ্ন ছাপানোর পরেই তা DQL ফাইলে সংরক্ষণ করা হবে। প্রতিটি DQL ফাইলের জন্য আলাদা ট্র্যাকিং নাম্বার থাকবে। ফাইলগুলো নানা হাত ঘুরে মেইন বাক্স করে চলে যাবে কেন্ত্রগুলোতে। বাক্স থেকে প্রয়োজন অনুসারে ফাইলগুলো শিক্ষকদের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে প্রতিটি হলে কিন্তু তখনও কেউ ফাইলগুলো আনলক করতে পারবে না। ছাত্ররা হলে বসবে। খাতা দিবে এবং সমস্ত প্রস্তুতি শেষে যথাসময়ে সেন্ট্রাল মনিটরিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে কমান্ড দিয়ে একই সময়ে প্রতিটি ফাইল আনলক হয়ে যাবে এবং পরীক্ষা শুরু হবে। DQL সিস্টেমে হলের ধারণক্ষমতা অনুসারে বিজিপ্রেস থেকে ফাইল পাঠানো হবে। প্রতিটি ফাইলে হলের ধারণক্ষমতা অনুসারে প্রশ্ন সংরক্ষিত থাকবে। ফলে প্যাকেট খুলতে হচ্ছে না বা DQL ফাইল আনলক করার দরকার পড়বে না।


বিজিপ্রেসে প্রশ্ন কম্পোজ, এডিট, প্রিন্ট ও প্যাকেজিং পর্যায়ে প্রায় ২৫০ ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে। তারা প্রশ্নপত্র কপি করতে না পারলেও এর সঙ্গে জড়িতরা প্রশ্ন স্মৃতিতে ধারণ করতে পারেন। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সাধারণত এই ২৫০ জনের সাথে বাইরের সকল যোগাযোগ বন্ধ থাকে তবে বিজিপ্রেসে আরো কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এবার আসি প্রশ্ন ফাঁসের ছয় কারন নিয়ে।

এক,
বিজিপ্রেস। সম্পৃক্ত ২৫০ ব্যাক্তি প্রশ্নপত্র কপি করতে না পারলেও এর সঙ্গে জড়িতরা স্মৃতিতে ধারণ করতে পারেন। বিজিপ্রেসে প্রশ্নপত্র প্রস্তুতকালীন সময়ে সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় তবে এক্ষেত্রে আরেকটু নিরাপত্তা বাড়ালে বিজিপ্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন সম্ভাবনা নেই। DQL ফাইলে প্রশ্নপত্র সংরক্ষণ করার পর প্রশ্নপত্র ১০০% নিরাপদ।

দুই,
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারি বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু অনেক কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন না ফলে ফাঁস হয় প্রশ্ন।
এক্ষেত্রে পুরোপুরি সিকিউরিটি দিবে DQL ফাইল। প্রধান বাক্সে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরারবর পর্যাপ্ত সংখ্যক DQL ফাইল যাবে। প্রধান বাক্সের চাবি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে থাকলেও প্রশ্নপত্র দেখার কোন সুযোগ নেই কারন প্রতিটি DQL ফাইল ১০০% নিরাপত্তা বলয় করে রেখেছে। মেজিস্ট্রেট DQL ফাইল প্রধানবাক্স থেকে কেন্দ্রগুলোতে পাঠাবে।

তিন,
অতিরিক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ সেখানে পর্যাপ্ত জনবল নেই। এছাড়া ভেন্যুগুলো থেকে মূল কেন্দ্রে দূরত্ব অনেক বেশি। ফলে ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্র সচিব প্রশ্নের প্যাকেট খুলতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখান থেকেও প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ রয়েছে।

এই হচ্ছে প্রশ্নফাঁসের প্রধান তিন কারন যা DQL সিস্টেম পুরোপুরি প্রতিরোধ করবে। বাকি চার, পাঁচ এবং ছয় নাম্বার কারন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ইন্টারনেট। সেগুলো কোন প্রতিবন্ধকতাই নয় এই DQL সিস্টেমে।


এবার আসি আইসিটি ডিভিশনের দেওয়া প্রস্তাবনায়। তাদের প্রস্তাবনা অনুসারে,
পাবলিক পরীক্ষায় আর প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে না বরং পরীক্ষার হলে ডিজিটাল ডিভাইসে ভেসে উঠবে প্রশ্ন। এই প্রস্তাবনাটার অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে বলে আমি মোটেও সমর্থন করতে পারছি না।

***প্রতি বছর প্রায় 300-400 কোটি টাকা খরচ হবে ডিজিটাল ডিভাইস বা ট্যাবের আমদানি এবং রক্ষনাবেক্ষনে। এছাড়া বাংলাদেশের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই গ্রামের। ডিজিটাল ডিভাইস বা ট্যাবের মাধ্যমে তাদের প্রশ্ন দেওয়াটা কতোটা যৌক্তিক সেটা ভেবে দেখার সময় আছে। ধরেন একজন কৃষকের সন্তান। কোনদিন স্মার্টফোণ বা ট্যাব ব্যবহার করেনি তাদের জন্য খুবই ভীতিকর হতে পারে বিষয়টি। এছাড়া জেএসসি, ক্লাস ফাইভের একজন ছাত্রের কাছে ট্যাব বা ডিজিটাল ডিভাইস কতোটা ইউজফুল হতে পারে সেটা নিয়েও ভাবতে হবে আমাদের। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই দামি ডিভাইস কতোটা যত্নের সাথেই বা ব্যাভার করতে পারে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এখনও প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে। কাগজে টিক দিয়ে, উল্টিয়ে পাল্টিয়ে প্রশ্ন দেখে পরীক্ষা দিবে সবাই, সেটাই তো হওয়া উচিৎ। টাচ করে, স্ক্রল করে করে কিভাবে একটা সুন্দর পরীক্ষা হতে পারে এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করার আছে।


এবার আসি বুয়েটের দেওয়া প্রস্তাবনায়,
বুয়েটের প্রস্তাবিত ডিজিটাল প্রশ্ন পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে 'স্মার্ট প্রিন্টিং সলিউশন'। বুয়েটের উপস্থাপিত মডেলে বলা হয়, পাবলিক পরীক্ষার জন্য একটি সেন্ট্রাল সার্ভার থাকবে। এতে থাকবে কয়েক সেট প্রশ্ন। এই সার্ভারের অধীনে প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্র করা হবে। এসব কেন্দ্রে ট্যাব, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিন থাকবে। এরপর পরীক্ষার আগের রাতে কেন্দ্রে থাকা ট্যাব বা কম্পিউটারে পৌঁছে যাবে প্রশ্ন। তবে এটা খোলার জন্য লাগবে পাসওয়ার্ড, যা পরীক্ষার দুই ঘণ্টা আগে সরবরাহ করা হবে। প্রশ্ন ডাউনলোড করে শুরু হবে প্রিন্ট। একেক কালার পেজে বিভিন্ন প্রশ্নের সেট প্রিন্ট করা হবে। আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে প্রিন্টিং-প্রক্রিয়া সমাপ্ত হবে। এর পরের ঘণ্টায় প্যাকেট করা প্রশ্ন পৌঁছে দেওয়া হবে প্রতিটি কেন্দ্রে। আরো উন্নয়ন ঘটাতে বলেছেন সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা। কারণ দুই থেকে তিন ঘণ্টায় বেশির ভাগ কেন্দ্রেই প্রশ্ন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি কেন্দ্রেই এ প্রশ্ন ছাপার কথাও উঠে এসেছে। আবার কেউ কেউ মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের কথা বলেছেন।

***দুই ঘন্টা আগে দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে যদি ছাপাখানা করা হয় তাহলে ঝুকিটা বাড়ছে। সব জেলা বা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো না। প্রতিটি ছাপাখানায় আলাদা নিরাপত্তা বলয় আরো অনেক কিছু মিলিয়ে এই প্রস্তাবনা শুধুমাত্র একটা ইউনিভার্সিটি বা কলেজের জন্য করা গেলেও পাবলিক পরীক্ষার জন্য রিতীমতো আশংকাজনক ও ব্যয়বহুলও বটে। এছাড়া দুই ঘন্টা আগেই প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।


Digital Question Locker –DQL সিস্টেম আমরা খুব অল্প সময়ে এবং সবথেকে কম খরচে প্রয়োগ করতে পারি এবং সেখত্রে নিরাপত্তাও সবথেকে বেশি। আপনাদের মতামত জানান। সরকার চাইলে আমরা প্রটোটাইপ উপস্থাপন করতে পারি। আইসিটি ডিভিশনকে অফিসিয়লি জানিয়েছি ইমেইলে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রশ্নফাঁস রোধ করতে হবে আমাদের। আমার প্রস্তাবনা ভালো লাগলে শেয়ার করেন। মতামত থাকলে কমেন্টে জানান।

জুবায়ের হোসেন
Founder, TOP TUBE, VAT CHECKER
CEO, EnamelBD Limited
Email: [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৮
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×