somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেহেরজান এর কিচ্ছা!

২১ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশী সিনেমা নিয়ে প্রত্যাশার জায়গাটা খুব একটা গভীর না আমার। নানান প্রতিকূলতা আর সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমাদের প্রচেষ্টা কিন্তু থেমে থাকে না,এর মাঝে দিয়েই বেরিয়ে আসে কিছু কালজয়ী কাজ,অসামান্য সৃষ্টি। তেমনই কিছু অনুভুতি নিয়ে হল থেকে বের হলাম মেহেরজান দেখার পর।
সত্যি বলতে এই সিনেমাটা নিয়ে বেশি কিছু জানতাম না আমি,আজ কয়দিন ধরে টিভিতে এড আর রাস্তায় বিলবোর্ড দেখার পর আগ্রহ হল জানার। যা জানলাম,সিনেমাটা দেখার প্রতি টানার জন্যে বাংলাদেশী দর্শক হিসেবে আমার কাছে যথেষ্ট ছিল। সিনেমার পরিচালক একজন মেয়ে,রুবাইয়েত হোসেন যিনি ইউনিভার্সিটি অব পেন্সিল্ভেনিয়ার একজন স্কলার এবং পরবর্তীতে ফিল্ম এর উপর ডিপ্লোমা করা। ফিল্মে প্রথমবারের মত বাংলাদেশী কোন সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছেন জয়া বাচ্চন,ভিক্টর ব্যানার্জী,ওমার রহীম।বাংলাদেশি,ইন্ডিয়ান,পাকিস্তানী,সব মিলিয়ে বাস্তবিক অর্থেই যাকে আন্তর্জাতিক সিনেমা বলা যায়।
সিনেমার শুরুতেই সারা নামের এক ওয়ার চাইল্ড জার্মানী থেকে বাংলাদেশে আসে,যাকে কিনা যুদ্ধের পর এক জার্মান দম্পতি এডাপ্ট করেছিল। সে দেশে এসে উঠে জয়া বাচ্চনের বাসায়,এই জয়া বাচ্চন ই হচ্ছে মেহেরজান।সিনেমা শুরু হয় সারা আর জয়া বাচ্চনের ইংরেজী কথোপকথনের মধ্য দিয়ে,জানা যায় সারার রেপড হওয়া মা ছিল জয়ার কাজিন।ফিল্ম চলে যায় ফ্ল্যাশব্যাকে,দেখা যায় তরুণী বয়সের মেহেরজান(সায়না আমিন) ঢাকা থেকে পরিবার সহ তার নানার বাড়ী পালিয়ে আসছে। সেই নানা,যে তার গ্রাম কে মুক্তিবাহিনী কিংবা পাকিস্থানী,এদের সবার কাছ থেকে রক্ষা করে আসছে।পর্দায় দেখা যায় ভিক্টর ব্যানার্জ়ীকে,যে নানাজান চরিত্রের রূপদাতা। তিনি কলকাতা থেকে ৪৭ এর দেশ বিভাগের পর এই বাংলায় ঠাই নেন,এবং এলাকার সব চাইতে সম্মানিত ব্যাক্তি,যার প্রভাব পুরো সিনেমাজুড়ে দেখা গেছে। পর্দায় হাজির হয় নীলা নামক একজন,যাকে পাকিরা তুলে নিয়ে রেপ করে এবং যে কিনা সারার মা। কাহিনী এগোয় মেহের কে নিয়ে,একদিন যখন তাকে পাকিস্থানী সৈন্যরা একা পেয়ে রেপ করার চেষ্টা চালায়,তখন এক স্বত্যাগী বেলুচি সেনা তাকে উদ্ধার করে। এই সেনা বাংলাদেশে হওয়া নির্বিচার হত্যার প্রতিবাদ করায় তাকে পাকিস্থানী সেনার পক্ষ থেকে দন্ড দেয়া হয় এবং সে পালিয়ে বেড়ায় মুক্তিবাহিনী আর পাকি সৈন্য উভয় তরফ থেকে।এমত অবস্থায় মেহের এই সৈন্যকে চুরি করে আশ্রয় দেয় এবং এক পর্যায়ে তার প্রেমে পড়ে।দেশের স্বাধীনতার চরম মুহুর্তে শত্রুপক্ষের প্রেমে কাবু মেহের অনুশোচনায় কাতর হয়,তবু সে ভালবাসার কাছে পরাস্ত। একদিকে রেপড হওয়া নীলা প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে পাকিদের বিরূদ্ধে অস্ত্র ধরতে যোগ দেয় মুক্তি বাহিনীতে,অন্যদিকে মেহের ভাসতে থাকে শত্রুসৈন্যের প্রেমে!
সিনেমা এভাবেই পরিনতির দিকে এগোয়।
কাহিনীর পর যদি সিনেমা নিয়ে বলা লাগে,প্রথমেই বলতে হবে এর এপ্রোচের কথা।যুদ্ধ নিয়ে আমাদের প্রচলিত সিনেমাগুলোর লাগামহীন আবেগের পাশাপাশি এখানে বাস্তবতা এসে ঠাই নিয়েছে স্পষ্টভাবে।"যুদ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত,এখন আমি বিয়ে করে স্যাটাল্ড হতে চাই" কিংবা "আমি আমার গ্রামে কোন রক্ত চাই না" জাতীয় সংলাপ এর আগের কোন মুক্তিযুধ বিষয়ক সিনেমায় ছিল কিনা,আমার জানা নেই।
ভিক্টর ব্যানার্জ়ীর অভিনয় নিয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না,উনার অভিনয়ের তুলনা বোধ করি উনার সাথেই দিতে হবে।নানাজান চরিত্রের একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম হিসেবে তার অভিনয়ে প্রশংসার বন্যা বয়ে যাওয়ার মত কাজ তিনি করেছেন।অসাধারণ উচ্চাভিলাষী অথচ পরিমার্জিত,উচ্চ শিক্ষিত এবং সুফী ধ্যানে বিশ্বাসী তিনি।উনার শক্তিশালী অভিনয়ের কল্যাণে অনেকের অভিনয় এই ছবিতে বোধ হয় চাপা পড়ে গেছে।
তবে আমার কাছে সিনেমার সব চাইতে বিস্ময়ের চরিত্রটি করেছেন নীলা নামধারী রীতু আব্দুস সাত্তার। রেপড হবার পরেও যার মনোবল বিন্দু পরিমান ভেঙ্গে যায়নি,যে সমান তালে সাহসী,প্রতিবাদী এবং কেয়ারলেস।পাকিস্থানী ক্যাম্প থেকে ছাড়া পাবার পর সবাই তার ক্যাম্পে নির্যাতনের কথা মানুষের কাছে চেপে যেতে বল্লেও সে একেবারেই নির্ভীক এ ব্যাপারে।তার এ দৃড় চেতনা দেখে মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আবুল কালাম তাকে বিয়ের প্রস্তাব ও দেয়। এই চরিত্রের অসাধারণ অভিনয় বোধ করি আমাকে এই সিনেমার অন্য যে কোন নারী চরিত্র থেকে বেশি আকর্ষণ করেছে।
মেহের চরিত্রে আছে দুই নারী,জয়া বাচ্চন এবং সায়ান আমীন।দুই জনের অভিনয় ই অসাধারণ ছিল।জয়া বাঙ্গালী এক প্রেমময় প্রতীক্ষারত নারীর চরিত্রে অসাধারন ছিলেন,অসাধারন ছিলেন সায়ান আমীনও দ্বিধান্বিত কিন্তু ভালবাসা আর প্রেমে দৃঢচেতা নারীর ভুমিকায়।
পুরো সিনেমাজুড়ে অসাধারন সিনেমেটোগ্রাফী মন ভরিয়ে দিয়েছে।মিউজিক ডিরেকশন ভাল ছিল,তবে ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ আরেকটু ভালভাবে হতে পারতো।কস্টিঊম ডিজাইন গোছানো ছিল,তবে যে গ্রামে কারেন্টের বালাই নেই,সেখানে বারবার আজানের শব্দ শোনাটা একটু দৃষ্টিকটু লেগেছে আমার কাছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়,এই প্রথম সত্যিকার অর্থে মাটির ময়নার পর আন্তর্জাতিক একটা বাংলাদেশী সিনেমা দেখলাম,যেটায় যুদ্ধের চাইতে প্রেম ই ছিল মূখ্য বিষয়। ডেব্যু ডিরেক্টর হিসেবে রূবাইয়েত যে নিখুত কাজ দেখিয়েছেন,তাতে বলতে বাধ্য হচ্ছি,শিখে কাজ করাটা বরাবর ই মান বজায়ে এগিয়ে রাখে যে কাউকে। আশা করি আপনারা সবাই হলে গিয়ে সিনেমাটা দেখবেন এবং দয়া করে পোস্টের শেষে সিনেমার লিঙ্ক কই জাতীয় কমেন্ট এড করবেন না ;) ;) ;) X((
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:০৯
৩৩টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×