অদ্ভুত এক ভালোলাগা নিয়ে বিকেলের গভীর ঘুমটা ভেঙে গেল। অনেকদিন পর ভালো স্বপ্ন দেখেছি। আকাশের তারাগুলো অনেক কাছে চলে এসেছে, আমার সামনে একটা নদী, নদীর ওপারে পাহাড়, পাহাড় ভর্তি সবুজ গাছ। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। মন ভালো হয়ে গেল। ভালো লাগাটা ধরিয়ে রাখতে জেগে জেগে কয়েকবার স্বপ্নটাকে রিভাইস দিলাম। রিভাই দিতে দিতে কখন যে সূর্য ডুবে গেছে টেরই পায়নি। যখন টের পেলাম তখন ক্যান্টিনে বিকেলের নাস্তা শেষ হয়ে গেছে। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। বাধ্য হয়ে গেলাম ফসিলের মোড়ে।
কিন্তু কি খাবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। দোকানের সামনে এমনি এমনি দাঁড়িয়েও থাকা যায় না। দোকানদার কেমন করে যেন মুখের দিকে চেয়ে থাকে। দোকানদারের জিজ্ঞাসু চোখের দিকে হঠাত চোখ পরায় মুখ ফস্কে বলেই ফেললাম, -‘বিস্কুট আছেনা? এক প্যাকেট বিস্কুট দেন!’
বলে নিজেই নিজের কাছে আহাম্মক হয়ে গেলাম। বিস্কুট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি সেই কবেই। লাস্ট কবে খেয়েছিলাম তাও মনে নেই। বিস্কুটের প্রতি অনিহার প্রধান কারণ বিস্কুট মুখে আঠার মত লেগে থাকে, বিস্কুট বাচ্চাদের খাবার। তবে মুখ দিয়ে যখন চেয়েই ফেলেছি তখন না করাটা ভদ্রলোকের কাজ হবে না। আমি আবার ভদ্র ছেলে কিনা!
- কি বিস্কুট দেব? ‘Horlics’ না ‘Energy Plus’?
- যা মনে চায় দেন!
দোকানদার আমাকে ১৬ টাকা মূল্যের এক প্যাকেট ‘Horlics’ বিস্কুট দিলেন। টাকা দিলাম, খুচরা নাই বলে উনি টাকা ফিরিয়ে দিলেন। আমিও পেলাম সুযোগ। বিস্কুট আমি খাব না!
- তাহলে ভাই রেখে দেন। আমার কাছে ১২ টাকার বেশী খুচরা ১ টাকাও নাই
- আপাতত তাই দেন!
আশাহত হলাম। এই লোকটা এক্সট্রা এক টাকা দেইনি বলে আমাকে একদিন আমাকে উনিশ টাকা ফ্লেক্সি দিয়েছিল সেই একই লোক স্বেচ্ছায় কি করে চার চারটি টাকা বাকী দেয়? ডাইরীতে লিখে রাখার মত ব্যাপার! যাহোক রুমে এসে অনেকদিন পর খুশি মনে বিস্কুট খাওয়া শুরু করলাম। বিস্কুট জিনিসটা তো খাইতে খুব একটা খারাপ না! খাইতে খাইতে এক প্যাকেট বিস্কুটের পুরোটাই শেষ করে ফেললাম। খাওয়ার পর দাঁতের ফাঁকে যে গুলা আটকে ছিল সেগুলোও জিব্বা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খেলাম। অনেকক্ষণ ধরে!
মোরালঃ আমাদের ভালো লাগা খারাপ লাগা গুলোর সুনির্দিষ্ট কোন ভিত্তি নেই। আমারা ভালো লাগাই বলে ভালো লাগে, খারাপ লাগাই বলে খারাপ লাগে। হোক না সে দাঁতের ফাঁকে আটকে যাওয়া বিস্কুট কিংবা কোন মানুষ।