১.
রমজানের সকাল। বাইরে মানুষের দৌড়ঝাঁপ খুব একটা নেই বললেও চলে। দোকানপাট বন্ধ। মুহাইমিনের জরুরি কল পেয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে ঘণ্টাখানেক পূর্বে বাসা থেকে বেরিয়েছে হাসান। মুহাইমিন হাসানের সহপাঠী এবং খুব কাছের বন্ধুদের একজন। হাসানকে দোকানের সামনে পায়চারি করতে দেখে বিমল মিষ্টি ভাণ্ডারের হালকাপাতলা গড়নের কর্মচারী রসুই দোকানের শাটার উপরে ঠেলতে ঠেলতে ভিতরে বসতে বললো....
দোকানের সামনে এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক অটো চালকের সাথে ভাড়া নিয়ে উচ্চস্বরে ডিল করছেন। ভদ্রলোক অতিরিক্ত এক টাকাও দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। ১৫ টাকার ভাড়ায় ২৫ টাকা সবাই দিলে উনাকেও দিতে হবে এমন টার্ম মানতে উনি নারাজ। ততক্ষণে আরো দুজন অটো চালক এসে হাজির। কি চাচামিয়া? রমজান মাস। ভাড়া ২৫ টাকা। চিল্লাচিল্লি না করিয়া দিয়া ভাগেন....
তুমি দিবায় তোমার বাবায় আইয়া দিবা.... বাকবিতণ্ডা হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে দেখে হাসান এন্ট্রি নিলে ড্রাইভারপক্ষ ক্ষ্যাপে গেলো। আজকাল পেশিশক্তিওয়ালা পক্ষ তৃতীয়পক্ষের এন্ট্রি সহজে সহ্য করতে পারে না। আশেপাশে বেশ কয়েকজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন। দুএকজন আফসোস করছেন। মাত্র কয়েকটা টাকার জন্য বাবার বয়সী একজন মানুষের কলার ধরে টানাটানি!.... অবশেষে বিমল বাবুর হস্তক্ষেপে ঘটনার সমাধান হলো কিন্তু ভদ্রলোক সবাইকে অবাক করে বিমলবাবুর উপর চড়াও হলেন-
''টেখারগরম দেখাও... টেখার গরম দেখাও... হি তুমিতাইন আমারারে শান্তিতে থাখতে দিতায় না.....
ও নেও তোমার টেখা। এবং বিড়বিড় করতে করতে প্রস্থান করলেন। উপস্থিত জনতাদের অনেকে'ই নিজেদের মতো করে মন্তব্য করতে করতে চলে গেলেন। কেউকেউ দাত বের করে হাসলেন। কেউকেউ বললেন, "চাচামিয়ারে রোজায় ধরিলাইছে বা বিমল'দা, উল্টাপাল্টা কিতা থাকি কিতা মাতিরা বুঝরা না"। বিমলবাবু মৃদু হাসলেও কিছু বললেন না। সম্ভবত তিনি ভদ্রলোকের রেগে যাওয়ার কারণ ধরতে পেরেছেন।
২.
রোদের তেজ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বাড়ছে রাস্তায় যান চলাচল। কয়েকটা টিনএজার টুকাই ছেলে রাস্তারপাশের এক বৈদ্যুতিক খুটিতে স্থানীয় এক পাতিনেতার শুভেচ্ছা পোষ্টার লাগাচ্ছে। যদিও খুটিতে ইতিমধ্যে আরো বেশ কয়েকটা রঙবেঙের পোস্টার ঝুলছে। সবগুলোই প্রায় রাজনীতি রিলেটেড। একটাসময় এইসব খুঁটিতে এটে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনী পোস্টার চোখে পড়তো। মাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে বিজ্ঞাপনী পোস্টার দেখে একবার একটা সায়ানরঙ্গের পাঞ্জাবি কিনেছিলো। পাঞ্জাবীটা....
ছেলেটার মাথার উপরে ঝুলন্ত বিদ্যুতের তার হাসানের ভাবনার মোড় ঘুরিয়ে দিলো। যেকোনো সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অথচ ছেলেটার মনে কোনোপ্রকার ভয়ডর নেই। ভয়ডরহীন মানুষই এইদেশে রাইজ করে। একটাসময় পোস্টারের এই পাতিনেতা হয়তো নামকরা নেতা হবে, আর সে হবে নেতার ডানহাত। তখন সবাই তারে একনামে চিনবে। ভয় পাবে। মাঝেমধ্যে যখন বর্তমান ক্যাডার টনির মতো শহুরের আকাশে ফাকাগুলি ছুড়ে যখন উল্লাস করবে। তখন বিমলবাবুরা ধড়ধড় করে শাটার বন্ধ করবে, পাব্লিক প্রাণভয়ে দৌড়ঝাঁপ করবে....
তার ছোটছোট ভাইবন্ধুরা গাড়ির গ্লাস ভাঙ্গবে, লুটপাট করবে। সে দেখবে। তৃপ্তি নিয়ে হাসবে......
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:৫৬