নীরব রাত। দূরের ঝাউবনে সুরকরে ডাকছে কয়েকটা শেয়াল। মাঝেমধ্যে দু'একটা কুকুরও ঘেউঘেউ করছে। গল্পকার ফয়েজ সালেহীন বসেবসে গল্প লিখছেন। আজকের গল্পের নাম "একজন আত্মহত্যাকারীর আত্মহননের পূর্বের সাড়ে তিন ঘন্টা।" হ্যাঁ, গল্পের সম্পূর্ণ কাহিনী একজন মৃত্যু পথের পথিকের মৃত্যুর পূর্ববর্তী সময়ের অনুভূতি নিয়ে সাজাবেন। ফয়েজ সালেহীন লিখছেন, লিখছেন....
(ছবিঃ অন্তর্জাল)
কিন্তু একি! তিনি যে কোনভাবেই মৃত্যুপূর্বকালীন অনুভূতিগুলো অনুভব করতে পারতেছেন না। কি করবেন? ভাবনায় পড়ে গেলেন বাস্তববাদী উন্মাদ সাহিত্যিক ফয়েজ সালেহীন। অবশেষে অনেক ভেবে মৃত্যু ছুঁয়ে দ্যাখে মৃত্যুপর্বকালীন অনুভূতি উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিলেন।
রাত তখন তিনটে বেজে ১০ মিনিট। ফয়েজ সালেহীন পাশের বাসার ওবায়দুলকে ফোনে জরুরী তলব করলেন। ঘুমে অবচেতন ওবায়েদুল আসছি বললেও সালেহীন সাহেব জানেন, ওর আসা- না আসার সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি। আর যদি আসে তবে এখানে আসতে প্রায় ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগবে। অতএব, মৃত্যু ছুঁয়ে অনুভূতি উদ্ধারের এটাই একমাত্র উপযুক্ত পান্তা। তাই দেরী না করে মৃত্যু ছুঁয়ে দেখার মানসিক প্রস্তুতি নিতে নিতে গল্পের শেষ লাইনের শেষে একটি শূন্যস্থান টেনে আস্তে আস্তে সিলিং ফ্যানের নিচে এসে দাঁড়ালেন। বাইরে শীতল মৃদ্যু বায়ু বইছে। দুরের ঝিঝিপোকা, চাঁদ তারা সারা প্রকৃতি কি অদ্ভুত মায়াবলে নিজেদের দিকে টানছে। ফয়েজ সালেহীন এসবে সাড়া না দিয়ে নির্দ্বিধায় রশিতে ঝুলে পড়লেন। মিনিট দুয়েকের মধ্যে পৌঁছে গেলেন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। তারপর, মৃত্যু স্পর্শ করে- সর্বশক্তি দিয়ে পা নাড়িয়ে, হাত উপরে তুলে মৃত্যু পূর্বকালীন অনুভূতি নিয়ে পৃথিবীতে ফেরার চেষ্টা করলেন। কিন্তু, ফিরতে পারলেন না। মৃত্যু উনাকে কিছুতেই ছাড়লো না!
-
[সমাজে ফয়েজ সালেহীনের মতো একপ্রকার অতি কৌতূহলী মানুষ আছেন, যারা স্রেফ অনুভূতির জন্য মৃত্যু-মৃত্যু খেলায় মেতে উঠতেও দ্বিধাবোধ করেন না। অনেকে তাঁদের সাহসের, আগ্রহের প্রশংসা করলেও আমার দৃষ্টিতে ঐসব মানুষগুলো (অতি-কৌতূহলী, অতি বাস্তববাদী) একপ্রকার উন্নতশ্রেণীর উন্মাদ। যাদের অদ্ভুত উন্মাদনা যখনতখন সমাজ তথা মানবতার বড়সড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।]
(ফেবু টাইমলাইন থেকে- পুরানো পোস্ট)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১২