কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
সত্য কাল্পকাহিনীর চেয়েও আষ্চর্যজনক। আর তাছাড়া, মানুষের একটি স্বাভাবজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে সে সত্যকেই সবচেয়ে বেশী সন্দেহ করে। এমতাবস্থায় আমি যতই নিজেকে নির্দোষ বলি না কেন, পাবলিক বিশ্বাস করতে চাইবে না। আমার নিক হ্যাক হবার ঘটনা এর আগেও কেউ বিশ্বাস করেনি, কিন্তু এবার করবে, এই আশা করি না। এরপর যখন আরো অনেকের নিক হ্যাক হয়েছিলো এবং ব্লগাধিপতি আরিল নিজে যখন একটা স্টিকি পোস্ট দিয়েছিলো এটা নিয়ে, তখনো কেউ বিশ্বাস করেছে কিনা জানিনা।
কিন্তু আগের নাটকটাকে গুটিকয়েক ব্লগার অবিশ্বাস করেছেন, কিন্তু এবারের নাটকটা অনেকেই অবিশ্বাস করেছেন। তারা প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছেন যে আমাকে জাস্ট ফাসানোঁর একটা চেষ্টা করা হয়েছে, বেশ ভালো রকম চেষ্টা করা হয়েছে। তাই তারা এসেমেস বা মেইল করে আমাকে অভয় দিয়েছেন, তারা সবসময় আমার পাশে আছেন এবং থাকবেন, সে আশ্বাস দিয়েছেন। সত্যি বলতে কি, তাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞার শেষ নেই। যারা আমাকে কখনো দেখেননি, শুধুমাত্র ব্লগের পরিচয়ে যারা আমাকে এতটা বিশ্বাস করতে পারেন, তাদের ঋন কখনো শোধ করার নয়। এস্কিমো ভাই, এরশাদ বাদশাহ ভাই, ইরতেজা ভাই, ক্যামেরাম্যান ভাই, গিফার ভাই এই মানুষ গুলোর কাছেও আামর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এরা সে সময় বিভিন্ন পোস্টে আমার কারনে বিব্রত ও অপমানকর পরিস্থিতে পড়েছেন। আমি তাই কড়জোড়ে তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। বুঝতে পেরেছি যে, ছোট্ট এই ব্লগ লাইফে আর কিছু না হোক, তাদের কাছ থেকে যে ভালবাসা আর বিশ্বাসটুকু পেয়েছি, সেটার মূল্য আমার কাছে অনেক অনেক বেশী। অপরপক্ষে আমার অনেক পরিচিত মানুষ এই ইস্যুটাকে কেন্দ্র করে জল ঘোলা করার চেষ্টা করেছেন, তাদের আচরনে খুব অবাক হয়েছি এবং কষ্ট পেয়েছি। একটা দিকে ভালোই হয়েছে, দুধের মাছি তো অনেকেই হতে চায় কিন্তু বিপদে না পড়লে বন্ধু চেনা যেত না।
কেন এই সাফাই গাওয়াঃ
সামহ্যোয়ারি ব্লগ তুলনামূলকভাবে এখনো খুব ছোট একটি প্লাটফর্ম! এখানে নতুন ব্লগার বেশী হলেও নিয়মিত ব্লগারের সংখ্যা খুব একটা বেশী না। অপরদিকে পুরনো ব্লগারদের অনেকেই ব্লগ ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন। সুতরাং, এখানে কারো ইমেজ যদি সেলিব্রেটিদের মত করে গড়ে উঠে, তাহলে যেমন "আমি কি হনু রে" টাইপ ভাব দেখানোর কোন কারন নেই, তেমনি এখানে কারো ইমেজ নষ্ট হলেও "আমার সব গেল রে" বলে মাথা চাপড়ানোরও কোন কারন নাই। এটা চিন্তা করে আমি এই পোস্টা না লিখলেও পারতাম। কি দরকার ছিলো অসুস্থ্য শরীরে ঘ্যান ঘ্যান করে কইফিয়ত দেবার? বাবার হোটেল ছেড়েছি ১৯ বছর বয়সে। গত কয়েকটা বছর সংগ্রাম করে আমি জীবনের এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌছেছিঁ যে, বাকী জীবনে কোন চাকরী বাকরী না করলেও, বাবার হোটেল ছাড়াই আমি হেসে খেলে কাটিয়ে দিতে পারব। তাহলে আগাছা টাইপ নিকগুলো কি বল্ল না বল্ল, কোথাকার কোন টিয়া ফিয়া কিসব হাবি জাবি দিয়ে কি পোস্ট দিয়ে "হায়! আমার সব লুট হয়ে গেল রে" বলে যে নাকি কান্না জুড়ে দিয়েছে, সেটা আমাকে কেন বিচলিত করেছে? যার ফলে এত কথা লিখতে হলো? তাহলে এই সাফাইই বা কাদের জন্য? আগাছা টাইপ নিকগুলোর জন্য নয়? অবশ্যই না। আমি জানি আমি লাইন বাই লাইন প্রমাণ ধরে ধরে যদি বলি আমি অপরাধী নই। আমি চক্রান্তের শিকার- তারা কখনোই মানবে না। কারণ তারা সেটা ধারণ করার জন্য প্রোগ্রামড নয়। আফসোস এদের মতো লোকরাই আমাদের সামাজিক বিপ্লবগুলো পিছিয়ে দেয় প্রতিবিপ্লবীর রূপে অবতীর্ণ হয়ে।
এই সাফাই আমার বন্ধুদের জন্য। যারা কিছুটা হলেও বিব্রত একের পর এক অপপ্রচারমূলক পোস্ট আর কমেন্টে। জানি এদের বেশীরভাগই নিশ্চিতভাবেই আমার উপর আস্থা রাখবেন, যে আর যাই করি আমি কখনো এমন কাজ করবো না। তাদের প্রতি এই দায়িত্ববোধটুকু থেকেই লেখেছি। নতুবা, এইসব ছোট খাট ফালতু ঘটনায় কৈফিয়ত দিয়ে ভালো মানুষি পোস্ট লেখার লোক প্রলয় হাসান নয়।
যবনিকাপাতঃ যাই হোক, জয় সত্যেরই হয়েছে। নাট্যকার যে নিকটিকে প্রধান চরিত্র বানিয়ে নাটক সাজিয়েছিলেন, সেই নিকের ব্লগটি মুছে ফেলা হয়েছে। আর আমি এখনো ব্লগে কথা বলছি। ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অসংখ্য ধন্যবাদ। মূলত তারাই নাটকের যবনিকা পাত করেছে। শুধু মাঝখান দিয়ে অনেকগুলো ব্লগারের ব্লগিং সময় নষ্ট হলো, মানুষের কাছে আমার ইমেজ ক্ষতিগ্রস্থ হলো, কিছু ব্লগারের মাঝে ভুলবোঝাবুঝি হলো, বাজে কথার বিচ্ছুরন হলো আর সর্বপরি লোকাল ফাইফ ভাইয়ের ব্লগের হিট ফাউ ৫ হাজার বাড়লো!!!
এ নাটক হতে আমার কিছু আত্মোপলব্ধিঃ
একটা ব্যাপার পরিস্কার হয়েছে, যারা যারা এই ব্যাপারটি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বেশী কথা বলেছেন, এদের সবাই আমার উপর কোন না কোন কারনে অসন্তুষ্ট। সেই ঝালটাই মিটিয়েছি শুধু। আজ আমাকে বিপদে ফেলে প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে, কাল হয়ত আরেকজন কে একইভাবে ফাসিঁয়ে ঝাল মেটানো হবে। সুতরাং, আমার ঘটনা থেকে বাকী সবার সাবধান হয়ে যাওয়া উচিৎ! (এটাই নাট্যাংশের মূল শিক্ষনীয়)
তাই ভাবছি রাজাকার আর ছাগু ছাড়া ব্লগে আর কারো সাথেই কোন বিরোধ রাখবোনা। সবার সাথে বিরোধ মিটিয়ে পুরোপুরি সুশীল হয়ে যাবার চেষ্টা করবো। নতুবা দুদিন পর পর এইভাবে আমার উপর হামলা আসবে, আর আমি পই পই করে সবাইকে বুঝিয়ে পোস্টের পর পোস্ট লিখে যাবো, এই ব্যাপারটিতে আমি খুবই ত্যক্ত-বিরক্ত। আর আমার কপাল খারাপ! ব্লগের সবচে বয়োবৃদ্ধ প্রতাপশালী ব্লগারটাই কিভাবে কিভাবে যেন আমার ঘোরতর শত্রু হয়ে বসে আছেন। তার ব্যাপারে অনেকেই এর আগে আমাকে বহুবার সর্তক করে দিয়েছিলেন যে তার সাথে একা একা না লাগতে যাবার জন্য। নতুবা পস্তাতে হতে পারে। আমি শুনিনি। যার ফলাফলে আসলেই হয়তো আমাকে এখন পস্তাতে হচ্ছে!
সেদিন আমার একজন শুভাকাংখি বল্ল, "তোমার একটা বড় প্রবলেম হচ্ছে, ব্লগের প্রায় প্রতিটি গ্রুপের সাথে একটা না একটা ঝামেলা বাধিঁয়ে বসে আছো। তাই তো বিপদে কাউকে কাছে পাও না!" আসলেই তাই। এখন থেকে তাই ভাবছি, কারো কোনকিছুতেই কিছু বলব না, প্রতিবাদ করব না। দেখেও না দেখার ভান করে বা চোখ কান বন্ধ করে সাহিত্যচর্চা করব। (যে জন্য আর কি ব্লগে আসা আমার!) কে কি করলো না করলো, যথাসম্ভব সেসবে কান না দেবার চেষ্টা করব। বোবা হয়ে থাকারও চেষ্টা করব। কারন বোবার নাকি কোন শত্রু নাই। কালাংকেল যতখুশী মেয়েদের ব্লগে লিকুইড কমেন্ট করুক, মডারেটররা যার খুশী তার স্ট্যাটাস নামিয়ে দিক, যাকে খুশী তাকে ব্যান করুক বা আনব্যান করুক, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মাহবুব সুমন্ভাই যতখুশী ধান্ধাবাত্তি পরিবারের সাথে কবজি ডুবিয়ে দাওয়াত খাক, জটিল যত খুশী ১৮+ কন্টেন্ট লিখে পোস্ট দিক, মেঘ আপায় যত খুশী মা বাপ তুলে গালিগালাজ করুক, যার যত খুশী পোস্টে ইমোটিকন দিক, যে যত খুশী বিভিন্ন নিক নিয়ে ব্লগাক, গে-লেসবিয়ান যার যে নাম ইচ্ছা সে নামে ব্লগাক, পোস্টে যত ইচ্ছা খুল্লাম খুল্লা ছবি দিক, ঘনাদা তার সবগুলা নিক নিয়ে এসে যত খুশী চাপাবাজি করুক, গাছ ভোদাই যতখুশী হরর পোস্ট দিক, যাকে ইচ্ছা ব্লক করুক, আমি আজ থেকে এইসব ব্যাপারগুলো নিয়ে আর কখনো মাথা ঘামাব না। সেইসব পোস্টে গিয়ে বলব - "ভাল লেগেছে। আপনার সাথে একমত।" আমি যতটুকু অমায়িক ছিলাম, তারচাইতেও অমায়িক হয়ে গেলাম। তবু আমার উপর এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনার অবতারনা করার চেষ্টা করা বন্ধ হোক।
আমার উপর এরকম হামলা এর আগে আসেনি। ব্লগের কেউ একজন মরিয়া হয়ে উঠেছেন (মুরুব্বি মানুষ, তাই "আপনি" করে বল্লাম, সামাঝদারকে লিয়ে ইশারাই কাফি হে)- আমাকে চুনকালি মাখিয়ে ব্লগ থেকে বিতাড়িত করতে। এবং এসবের জন্য সে যে কোন কাজ করতে রাজি। তাই শুরু থেকেই আমাকে পচাঁনোর কম চেষ্টা করা হয় নাই। এখনো করে যাচ্ছে, এর পর কি করবে খোদাই জানে! আর আমকেও ইমেজ রক্ষার লড়াইয়ে প্রতিনিয়ত অবতীর্ন হতে হচ্ছে। যা আমার সুস্থ্য ব্লগিংয়ের জন্য ব্যাপক হুমকিসরুপ।
ভাবছি নিজের জন্য ব্যক্তিগত একটি ওয়েব সাইট বানাবো। সেখানে আমার সমস্ত লেখালেখি সযতনে তুলে রাখব। ডোমেইন আর হোস্টিং কিনে ফেলেছি। সাইটের ডিজাইনের কাজও শুরু হয়ে গেছে। সব কাজ প্রায় শেষ। তাছাড়া আগামী মাস থেকে সিপিএর পড়াশোনাটাও জোরসে শুরু করতে হবে। এছাড়া সুইমিং ক্লাসেও ভর্তি হচ্ছি। এতে ব্যায়ামও হবে, সাতাঁর শেখাও হবে। অজি শিশুরা যেখানে সাগর হাচড়ে পাচড়ে বেড়ায় সেখানে ওদের সামনে লাইভ জ্যাকেট পড়ে পানিতে নামতে লজ্জা লাগে। তাই অনেকদিন ধরেই সাতার শেখার কথা ভাবছিলাম। পিসি গেইমিং থেকেও দেড়টা বছর ধরে নিজেকে দূরে রেখেছিলাম। সেটাও আবার শুরু করব। সুতরাং, নিজের সাইট, পড়াশোনা, গেইমিং, সাঁতার এইসব করেও আগের মত ব্লগে সময় দিতে পারব বলে মনে হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৬